বিশ্বকাপের চতুর্থ ও শেষ কোয়ার্টার ফাইনালে আসরের হট ফেবারিট নিউজিল্যান্ডের সামনে প্রতিরোধই গড়তে পারল না ওয়েস্ট ইন্ডিজ।
ক্যারিবিয়ানদের ১৪৩ রানে হারিয়ে সেমিফাইনালে উঠেছে কিউইরা। আর হেরে বিশ্বকাপ থেকে বিদায় নিয়েছেন ক্রিস গেইল, মারলন স্যামুয়েলসরা। আগামী মঙ্গলবার অকল্যান্ডে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সেমিফাইনাল খেলবে নিউজিল্যান্ড।
এ নিয়ে সপ্তমবারের মতো বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে উঠল নিউজিল্যান্ড। ফলে অস্ট্রেলিয়ার রেকর্ডে ভাগ বসাল কিউইরা। গতকাল আসরের তৃতীয় কোয়ার্টার ফাইনালে পাকিস্তানকে হারিয়ে রেকর্ডটি গড়ে অসিরা।
শনিবার ওয়েলিংটনের ওয়েস্টপ্যাক স্টেডিয়ামে টস জিতে আগে ব্যাট করে মার্টিন গাপটিলের ডাবল সেঞ্চুরিতে ৬ উইকেটে ৩৯৩ রানের পাহাড় গড়ে নিউজিল্যান্ড। জবাবে ৩০.৩ ওভারে ২৫০ রানে অলআউট হয়ে যায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ।
লক্ষ্যে খেলতে নেমে শুরুতেই উইকেট হারায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। দলীয় ৪ রানে ওপেনার জনসন চার্লসকে (৩) বোল্ড করেন কিউই পেসার ট্রেন্ট বোল্ট। এরপর দলীয় ২৭ রানে ওই বোল্টের বলেই মার্টিন গাপটিলের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন লেন্ডল সিমন্স (১২)।
তৃতীয় উইকেটে মারলন স্যামুয়েলসকে নিয়ে প্রতিরোধ গড়েন ক্রিস গেইল। তবে ইনিংসের দশম ওভারে দলীয় ৮০ রানে স্যামুয়েলসকে (২৭) ফিরিয়ে প্রতিরোধ ভাঙেন বোল্ট। ডিপে বাউন্ডারিতে এক হাতে অসাধারণ ক্যাচ নেন ড্যানিয়েল ভেট্টোরি। গেইল-স্যামুয়েলস জুটিতে আসে ৫৩ রান। একই ওভারে ডাক মেরে বিদায় নেন দিনেশ রামদিন। এলবিডব্লিউয়ের ফাঁদে পড়েন তিনি।
এরপর দলীয় ১২০ রানে এক প্রান্তে ‘বিধ্বংসী’ হয়ে ওঠা ক্রিস গেইলকে বোল্ড করেন অ্যাডাম মিলনে। মাত্র ৩৩ বলে ৮ ছক্কা ও ২ চারে ৬১ রান করেন গেইল।
১২০ রানেই ৫ উইকেট হারানোর পর দলের হাল ধরেন জনাথন কার্টার ও ড্যারেন স্যামি। তবে স্যামিকে ফিরিয়ে ৪৬ রানের জুটি ভাঙেন কোরি অ্যান্ডারসন। লুক রনকির গ্লাভসবন্দি হন স্যামি। ১৬ বলে ৩ চার ও এক ছক্কায় ২৭ রান করেন তিনি। ৭ রানের ব্যবধানে কার্টারও বিদায় নেন। ভেট্টোরির বলে বোল্ড হওয়ার আগে ৩২ রানে করেন কার্টার।
এরপর অধিনায়ক জেসন হোল্ডার, আন্দ্রে রাসেল ও জেরম টেলরের ব্যাটে শুধু পরাজয়ের ব্যবধানই কমাতে পারে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ৪২ রান করে শেষ ব্যাটসম্যান হিসেবে আউট হন হোল্ডার।
নিউজিল্যান্ডের পক্ষে ৪ উইকেট নেন ট্রেন্ট বোল্ট।
এর আগে টস জিতে আগে ব্যাট করতে নেমে মার্টিন গাপটিলের ডাবল সেঞ্চুরিতে ৬ উইকেটে ৩৯৩ রানের পাহাড় গড়ে নিউজিল্যান্ড। বিশ্বকাপ ইতিহাসের দ্বিতীয় ডবল সেঞ্চুরির রেকর্ড গড়ে ২৩৭ রানে অপরাজিত থাকেন গাপটিল। তার মাত্র ১৬৩ বলের ইনিংসে ছিল ২৪টি চার ও ১১টি ছক্কার মার।
ব্যাট করতে নেমে দলীয় ২১ রানে জেরম টেলরের বলে জেসন হোল্ডারের দারুণ এক ক্যাচে পরিণত হন ম্যাককালাম। ৮ বলে একটি করে চার ও ছক্কায় ১২ রান করেন কিউই ওপেনার।
দ্বিতীয় উইকেটে কেন উইলিয়ামসনকে নিয়ে প্রতিরোধ গড়েন আরেক ওপেনার মার্টিন গাপটিল। তবে দলীয় ৮৯ রানে আন্দ্রে রাসেলের বলে ক্রিস গেইলের তালুবন্দি হন উইলিয়ামসন। ৩৫ বলে ৫ চারে ৩৩ রান করেন তিনি। গাপটিল-উইলিয়ামসন জুটিতে আসে ৬২ রান।
এরপর তৃতীয় উইকেটে রস টেলরের সঙ্গে জুটি বেঁধে দলতে এগিয়ে নিতে থাকেন এক প্রান্ত আগলে রাখা গাপটিল। ইনিংসের ৩৫তম ওভারে মারলন স্যামুয়েলসের বল লং অনে পাঠিয়ে দিয়ে আসরে টানা দ্বিতীয় সেঞ্চুরি পূরণ করেন গাপটিল। নিউজিল্যান্ডের প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে বিশ্বকাপে টানা দুই সেঞ্চুরি করেন তিনি।
দলীয় ২৩২ রানে সুলেমান বেনের বলে রানআউটের শিকার হয়ে বিদায় নেন টেলর। ফলে গাপটিলের সঙ্গে তার ১৪৩ রানের বড় জুটি ভাঙে। ৬১ বলে ২ চারে ৪২ রান করেন টেলর। এরপর দলীয় ২৭৮ রানে আন্দ্রে রাসেলের বলে ক্রিস গেইলের তালুবন্দি হন কোরি অ্যান্ডারসন। ১৬ বলে একটি করে চার ও ছক্কায় ১৫ রান করেন তিনি।
দলীয় ৩৩৩ রানে গ্র্যান্ট এলিয়ট ফেরেন ২৭ রান করে। এরপর ৪৮তম ওভারে রাসেলের বলে চার মেরে বিশ্বকাপ ইতিহাসের দ্বিতীয় ডাবল সেঞ্চুরি তুলে নেন গাপটিল। ১৫২ বলে ডাবল সেঞ্চুরি পূরণ করেন তিনি। এর পরের ওভারে লুক রনকি ৯ রান করে ফিরলেও ২৩৭ রানে অপরাজিত থেকে দলের স্কোর পাহাড়ে তোলেন গাপটিল। ২ বলে ৮ রানে অপরাজিত ছিলেন ড্যানিয়েল ভেট্টোরি।
ম্যাচসেরার পুরস্কার জেতেন মার্টিন গাপটিল।