মরণঘাতী করোনা ভাইরাস মার্সের বিস্তার ঠেকাতে দক্ষিণ কোরিয়ায় দুই শতাধিক প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। মিডল ইস্ট রেসপিরেটরি সিন্ড্রোম (মার্স) পূর্ণ নামের ভাইরাসটির সংক্রমণে দুই কোরিয়ানের মৃত্যুর একদিনের মাথায় সরকারি পরামর্শে এমন সিদ্ধান্ত নিতে শুরু করেছে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।

কোরিয়ার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ভাষ্য অনুসারে, বুধবার বেলা ১১টা পর্যন্ত অন্তত ২৩০টি স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদেরকে পরবর্তী ঘোষণা না দেয়া পর্যন্ত স্কুলে যেতে বারণ করা হয়েছে। তবে এই সংখ্যা কোরিয়ার মোট ২০ হাজার স্কুলের মাত্র ১ শতাংশ। এগুলোর মধ্যে আবার ১৮৪টিই মার্স ভাইরাসের প্রথম সংক্রমণস্থল খিওংগি প্রদেশে। বাকিগুলো খিওংগির নিকটবর্তী উত্তর ও দক্ষিণ ছুংছংয়ে। এছাড়া রাজধানী সিউলেরও একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় আগামী শুক্রবার পর্যন্ত বন্ধ রাখার ঘোষণা দেয়া হয়েছে।

chardike-ad
উত্তর ছুংছংয়ের একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ফাঁকা শ্রেণীকক্ষ। ছবিটি আজ সকালে তোলা। ইয়নহাপ নিউজ।
উত্তর ছুংছংয়ের একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ফাঁকা শ্রেণীকক্ষ। ছবিটি আজ সকালে তোলা। ইয়নহাপ নিউজ।

মন্ত্রণালয় বলছে যে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সম্ভাব্য করণীয় নির্ধারণ করে একটি দিকনির্দেশনা দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পাঠানো হয়েছে। তবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণের ভার প্রতিষ্ঠান প্রধানের হাতেই রাখা হয়েছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তরফে মার্স সতর্কতা ‘পর্যবেক্ষণ’ পর্যায় থেকে ‘আশঙ্কাজনক’ পর্যায়ে উন্নীত না হওয়া পর্যন্ত দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধের নির্দেশ দেয়া সম্ভব হচ্ছে না বলেও জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

এর আগে বুধবার সকালে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহে মার্সের বিস্তার ঠেকাতে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বনের কথা জানান শিক্ষা মন্ত্রী হাং উয়ে। তবে বৃহস্পতিবার দেশব্যাপী পূর্ব নির্ধারিত কলেজ ভর্তির মৌখিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে বলেও নিশ্চিত করেন  তিনি।

এদিকে আজ সকালে আরও ৫ জন কোরিয়ানের দেহে মার্সের সংক্রমণ নিশ্চিত করা হয়েছে। এর ফলে দেশটিতে মার্স আক্রান্তদের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩০ জনে।

উল্লেখ্য, ভাইরাসটি কোরিয়ায় প্রথমবারের মতো সংক্রমণের দুই সপ্তাহের মাথায় গতকাল মঙ্গলবার এতে আক্রান্ত দু’জন মারা যান। মৃত দু’জনের একজন ৫৮ বছর বয়সী নারী ও অপরজন ৭১ বছর বয়সী পুরুষ। তবে নিরাপত্তাজনিত কারণে তাঁদের কারও নাম-পরিচয় প্রকাশ করা হয় নি। এদের দু’জনেই মে’র মাঝামাঝিতে স্থানীয় একটি হাসপাতালে কোরিয়ার প্রথম মার্স আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে গিয়ে ভাইরাসটি দ্বারা আক্রান্ত হন।

প্রসঙ্গত, ২০১২ সালের এপ্রিলে মার্স ভাইরাসটি সর্বপ্রথম সৌদি আরবে সনাক্ত করা হয়। ওই সময় দেশটিতে এ ভাইরাস সংক্রমণের শিকার হয়ে মারা যান শতাধিক মানুষ। এ পর্যন্ত গোটা বিশ্বে এ ভাইরাসে আক্রান্তের মোট সংখ্যা ১১শ’ ছাড়িয়ে গেছে। নতুণ এক গবেষণা বলছে উট থেকেই মানুষের দেহে এর প্রাথমিক বিস্তার ঘটেছে। এর আগে ২০০৩ সালে সমগোত্রীয় সার্স ভাইরাসে বিশ্বজুড়ে প্রায় ৮শ’ মানুষ প্রাণ হারান।

এখনও পর্যন্ত মার্সের কোন প্রতিষেধক বা চিকিৎসা আবিষ্কার করা সম্ভব হয় নি।