Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

দৃষ্টান্ত হোক সিউলের বাংলাদেশ দূতাবাস

সারাবিশ্বের প্রায় আট নয় মিলিয়ন প্রবাসীর কাছে দূতাবাসগুলো অনেকটাই হয়রানির জায়গা। প্রায়ই দূতাবাসগুলো নিয়ে নানা অভিযোগ করে থাকেন প্রবাসীরা। দেশে স্বজনদের ফেলে কষ্ট করে বিদেশের মাটিতে দেশের জন্য আয় করা এইসব মানুষ নিয়ে ভাবার অবকাশ হয়না দূতাবাসগুলোর। দায়িত্বের আওতায় যা করা উচিত তা থেকেও বঞ্চিত হন প্রবাসীরা। দক্ষিণ কোরিয়ার সিউলস্থ বাংলাদেশ দূতাবাস কিছুটা ব্যতিক্রম। নানা অভিযোগ থাকলেও বিভিন্ন কার্যক্রমের মাধ্যমে প্রশংসা কুড়িয়েছে সিউলস্থ বাংলাদেশ দূতাবাস। দূতাবাসের বিভিন্ন কার্যক্রম নিয়ে বাংলা টেলিগ্রাফের দুই পর্বের বিশেষ প্রতিবেদনের প্রথম পর্ব আজ প্রকাশিত হল। 

———————————————————

chardike-ad

সিউলের বিদেশী পর্যটকদের প্রাণকেন্দ্র ইথেউওনে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাস। কোরিয়ায় বসবাসরত প্রায় ১৪ হাজার প্রবাসীকে বিভিন্ন কাজে দ্বারস্থ হতে হয় এই দূতাবাসের। প্রবাসীদের সমস্যা সমাধান,  দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক রক্ষা, অর্থনৈতিক তৎপরতা বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখাসহ বাংলাদেশ থেকে বিভিন্ন সময়ে কোরিয়া সফরে আসা মন্ত্রী, এমপি এবং প্রশাসনের গুরুত্বপুর্ণ ব্যক্তিদের সফরকে সফল করার দায়িত্ব বর্তায় দূতাবাসের উপর। অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে বাংলাদেশের জন্য দক্ষিণ কোরিয়া গুরুত্বপুর্ণ হওয়ায় এসব কাজ নিয়েও দূতাবাসকে ব্যস্ত থাকতে হয়। সেবা প্রদান এবং সমস্যা সমাধানে বিভিন্ন সময়ে নানা অভিযোগ থাকলেও সাম্প্রতিক সময়ে সিউলস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসের কিছু কার্যক্রম প্রশংসা কুডিয়েছে কোরিয়া প্রবাসীদের।

রবিবারের স্পেশাল ভিসিট

দূতাবাস বেশ কয়েকবছর ধরে রবিবারে কোরিয়ার বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন করে কোরিয়া প্রবাসীদের সেবা দিয়ে আসছে। এমআরপি পাসপোর্ট, পাসপোর্ট নবায়নসহ দূতাবাসের সেবাগুলো যাতে প্রবাসীরা সহজে পেয়ে যান সেই লক্ষ্যে এই কার্যক্রম চালিয়ে আসছে। কর্মদিনে বেশিরভাগ কর্মী চাইলেও ছুটি নিয়ে সিউলে দূতাবাসে যেতে পারেন না। অন্যদিকে রবিবারে দূতাবাস বন্ধ থাকে ফলে অনেকেই বিপদে পড়ে যান। তাদের জন্য রবিবারের এই স্পেশাল কার্যক্রম কার্যকর ভূমিকা রেখেছে। বাংলাদেশী অধ্যুষিত এলাকাগুলোতেই রবিবারের এই বিশেষ কার্যক্রম বেশি চালিয়েছে দূতাবাস।

ফেসবুক কার্যক্রম

embassy 1
সিউলস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসের ফেসবুক পেইজ

দূতাবাস একবছরের বেশি সময় ধরে ফেসবুক পেইজের মাধ্যমে দূতাবাসের বিভিন্ন কার্যক্রমের খবরাখবর জানিয়ে আসছে। দূতাবাসের নোটিশগুলোও নিয়মিত পোস্ট করা হয় ফেসবুক পেইজে। এতে খুব সহজেই ফেসবুক ব্যবহারকারীরা তথ্যগুলো পেয়ে যান। ফেসবুক পেইজে বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তরও দিতে দেখা যায় দূতাবাস থেকে।

ছুটির দিনেও দূতাবাস খোলা থাকবে!

ছুটির দিনেও খোলা থাকবে দূতাবাস। বাংলাদেশের কোন দূতাবাসের ক্ষেত্রে অনেকে এইটা ভাবতেই পারবেন না। কিন্তু রমজান মাসে এক ইফতার মাহফিলে এমন ঘোষণা দিয়েছেন নতুন রাষ্ট্রদূত জুলফিকার রহমান। খুব শীঘ্রই আনুষ্টানিকভাবে জানানো হবে বলে জানান দূতাবাসের কাউন্সিলম খন্দকার মাসুদুল আলম। তিনি জানান মাসে দুই রবিবারে (এক সপ্তাহ পরপর) দূতাবাসের এইসব সেবা কার্যক্রম চালানো হবে।

নতুন রাষ্ট্রদূতের তৎপরতা

embassy 1.jpg 3
দক্ষিণ কোরিয়ার রাষ্ট্রপতি পার্কের সাথে সাক্ষাত শেষে রাষ্ট্রদূত জুলফিকার রহমান

এই বছরের মে মাসে দ্বায়িত্ব নিয়ে কোরিয়া আসেন রাষ্ট্রদূত জুলফিকার রহমান। আসার পর থেকে নানা তৎপরতায় ব্যস্ত থাকেন তিনি। তৎপরতাগুলোর মধ্যে লক্ষণীয় ছিল বাংলাদেশী বিভিন্ন কমিউনিটির অনুষ্ঠানগুলোতে যোগদান, কমিউনিটির সাথে মিটিং এবং সমস্যা সমাধানে বিভিন্ন পদক্ষেপ।  সিউল পৌঁছার পরদিনই যোগ দেন বাংলাদেশ কমিউনিটি ইন কোরিয়া আয়োজিত বাংলাদেশ উৎসবে। রোজার একমাস ব্যস্ত থাকেন কোরিয়ার বিভিন্ন প্রান্তে ইফতার মাহফিলগুলোতে। একদিনে তিনটি ইফতার মাহফিলেও যোগ দিতে দেখা যায় রাষ্ট্রদূতকে। প্রায় সকল অনুষ্ঠানে তিনি কমিউনিটির বিভিন্ন সমাধান, ইপিএস কর্মীদের মধ্যে সচেতনতামূলক বক্তব্য দিতে দেখা যায়।

এছাড়া দীর্ঘদিনধরে অসুস্থ কোরিয়া প্রবাসী ইমরানকে দেখতে যান রাষ্ট্রদূত। দূতাবাসের পক্ষ থেকে ইমরানকে সবদিক থেকে সহযোগিতা করার ঘোষণা দেন তিনি। সম্প্রতি কোরিয়া অকালমৃত্যুতে পৃথিবী থেকে চলে যাওয়া আব্দুল্লাহ’র লাশ পাঠানো এবং তাঁর পরিবারকে বিশেষ সহযোগিতার ক্ষেত্রেও নতুন রাষ্ট্রদূতের তৎপরতা ছিল লক্ষ্য করার মতো।

ফেসবুকে একজন কোরিয়ান প্রবাসী সেলিম হোসাইন নতুন রাষ্ট্রদূতকে নিয়ে লিখেছেন ‘আপনার মতো মানুষের সেইসব দেশে প্রয়োজন যেসব দেশে বাংলাদেশীদের চোখের পানি দেখার কেউ নেই। কোরিয়ায় আমাদের আপন বলতে কেউ ছিলনা কিন্তু যেদিন প্রথম আনসানে আপনাকে দেখি সেদিন থেকে মনে হলো আমাদের সব আছে’।

 

ইপিএস কর্মীদের সমস্যা সামধানে উদ্যোগী

2
বাংলাদেশ থেকে আগত ইপিএস কর্মীদের অভ্যর্থনা ও ব্রিফিং প্রদান করছেন দূতাবাসের প্রথম সচিব জনাব জাহিদুল ইসলাম ভূঁইয়া

কোরিয়া প্রবাসীদের বেশিরভাগই ইপিএস কর্মী। দূতাবাসের বিরুদ্ধে ইপিএস কর্মীদের খবরাখবর না রাখার অভিযোগ ছিল অনেকের। সাম্প্রতিক সময়ে ইপিএস কর্মীদের নিয়ে দূতাবাসের বিভিন্ন তৎপরতা লক্ষ্য করা যায়। এ নিয়ে কিছুটা হলেও ইপিএস কর্মীদের মনে আশা সঞ্চার হয়েছে। কোরিয়াতে যাতে আরো বেশি ইপিএস কর্মী আসতে পারে সেলক্ষ্যে বর্তমানে কর্মরত ইপিএস কর্মীদের মধ্যে সচেতনতামুলক কার্যক্রমও চালিয়ে যাচ্ছে দূতাবাস। সম্প্রতি ইপিএস কর্মীদের নিয়ে বিশেষ মতবিনিময় সভারও আয়োজন করে দূতাবাস।

 

 

দ্বিতীয় পর্বে প্রকাশিত হবে ‘দূতাবাসের বিরুদ্ধে যত অভিযোগ এবং নানা প্রত্যাশা’।