Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

দ. কোরিয়ার দৃষ্টিতে বাংলাদেশ

s.koreaবাংলাদেশে নিযুক্ত দক্ষিণ কোরিয়ার রাষ্ট্রদূত ১৯৮১ সালে সুংক্যুয়ানকুন ইউনিভার্সিটি থেকে অর্থনীতিতে স্নাতক পর্বের পড়াশোনা সম্পন্নের পর মাস্টার ডিগ্রি নেন সিউল ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি থেকে। পরবর্তীতে অর্থনীতিতে আরেকবার মাস্টার্স এবং ইউরোপীয় রাজনীতিতে এম ফিল করেন লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিকস অ্যান্ড পলিটিক্যাল সায়েন্স (এলএসই) থেকে। ১৯৮৭ সালে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে যোগদানের পর থেকে এ পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেছেন আইভরিকোস্ট, বেলজিয়াম, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশে। মাঝে কিছুদিন ছিলেন দেশটির বৈদেশিক বাণিজ্য নীতি পরিকল্পনার নেতৃত্বে। সম্প্রতি আলোচিত কেইপিজেড প্রকল্প, বৈদেশিক বিনিয়োগ আকর্ষণে দুর্বলতা-সবলতা, কোরিয়ার শিল্পনীতি, বিনিয়োগ সম্ভাবনা, স্থানীয় জাহাজ নির্মাণ শিল্প প্রভৃতি বিষয়ে তিনি খোলামেলা কথা বলেছেন বণিক বার্তার সঙ্গে। সাক্ষাত্কারটি নিয়েছেন জায়েদ ইবনে আবুল ফজল।

আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সম্প্রতি নানাভাবে উচ্চারিত হচ্ছে বাংলাদেশের নাম। জানতে ইচ্ছে হয়, দক্ষিণ কোরিয়ার দৃষ্টিতে আমাদের অবস্থান কোথায়?

chardike-ad

রাষ্ট্র হিসেবে যাত্রারম্ভের পর থেকেই স্বাধীন, সার্বভৌম ও গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের প্রতি আকর্ষণ বোধ করতে থাকে রিপাবলিক অব কোরিয়া। বিচ্ছিন্ন ভূখণ্ডে অবস্থান সত্ত্বেও তার মূল কারণ আমি বলব— একাত্মবোধ। ভাবটা আরেকটু সম্প্রসারণ করে বলা যায়, অর্থনীতি ও রাজনৈতিক ইতিহাসে পারস্পরিক কিছু সামঞ্জস্য। ঔপনিবেশিক শক্তির করায়ত্ত হওয়ার আগে কোরিয়া বড় দেশ ছিল। প্রথম সহস্রাব্দের বেশির ভাগ সময় কোরীয় উপত্যকা ছিল তিন রাজ্যের অন্তর্গত, যার অধীন ছিল প্রাচীন মাঞ্চুরিয়া। এলাকাটা চীনের হাতে চলে যায় সপ্তম দশকে। প্রায় একই সময়ে রাজনৈতিক ক্ষমতা থেকে ছিটকে পড়ে তিন রাজ্যের একটি। তার পর কোরীয় উপত্যকা একত্র ছিল দীর্ঘদিন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তী সময়ে এর দক্ষিণাংশ মার্কিন ও উত্তরাংশ রুশ প্রভাব বলয়ে অন্তর্ভুক্ত হলে পুনরায় দেখা দেয় বিভক্তি। বর্তমানে রিপাবলিক অব কোরিয়া বিশ্বমানচিত্রে অনেক ছোট। অথচ দেশের আকার কখনো এত ক্ষুদ্র হবে, তা দুঃস্বপ্নেও ভাবেননি আমাদের পূর্বসূরিদের কেউ।

সাম্রাজ্যবাদ কোনো দেশকেই পূর্ণ স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব দেয় না। আরো বড় অসুবিধা হলো, এটি নিজস্ব সক্ষমতা গড়ে তোলার উৎস ধ্বংস করে দিয়ে যায়। কোরিয়ার ইতিহাসে এ বঞ্চনা বহুদিনের। এমনকি জাপানি সাম্রাজ্যের কবলমুক্ত হওয়ার পরও রাষ্ট্র গঠনের অনুমতি পাইনি আমরা। আবার যখন চূড়ান্তভাবে স্বাধীনতা পেলাম, দুই বছরের মাথায় দেখা দিল ভয়াবহ গৃহযুদ্ধ। ফলে কোরিয়ার উত্থান আক্ষরিক অর্থেই একেবারে ধ্বংসস্তূপ থেকে। বাংলাদেশ ঔপনিবেশিক শক্তির অধীনে ছিল দুইশ বছরের বেশি সময়; তাকেও চরম ত্যাগ স্বীকার করতে হয়েছে চূড়ান্ত স্বাধীনতা অর্জনে। এ দেশের দিকে তাকালে আমাদের মাথায় প্রথমেই চলে আসে বিষয়টা। ফলে বাংলাদেশের প্রতি আমাদের দৃষ্টিভঙ্গিটা প্রাথমিকভাবে সমব্যথী স্বজনের।

ষাটের দশক থেকেই তো কোরিয়ার অর্থনৈতিক পারফরম্যান্স চোখ ধাঁধানো, টাইগার অর্থনীতির সূচনা…

এক অর্থে স্বাধীনতার পর কোরিয়া পোড়ামাটির বেশি কিছু পায়নি। এমন কিছু মূল্যবান অবশিষ্ট ছিল না, যাকে অবলম্বন করে ঘুরে দাঁড়ানো যায়। সে সময় আমাদের প্রতি বহির্বিশ্বের ধারণা স্পষ্ট হবে একটি ঘটনা বললে। ১৯৫৪ কি ৫৫ সালের দিকে অভ্যন্তরীণ অবস্থাদৃষ্টে কোরিয়া উপত্যকার ভবিষ্যৎ অনুমানে উদ্যোগ নেয় মার্কিন কংগ্রেস। (খুব সম্ভব) তারা ইন্টারনাল রেভিনিউ সার্ভিসকে (আইআরএস) দায়িত্ব দিয়েছিল প্রতিবেদন তৈরির জন্য। তাতে জানতে চাওয়া হয়, কত দিনে কোরিয়া নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারবে। জবাব আসে, ওই দেশের পক্ষে ১০০ বছর টিকে থাকাও সম্ভব নয়; বাঁচাতে চাইলে কোরিয়া পুনর্গঠন করতে হবে। প্রতিবেদনটি একেবারে ভিত্তিহীন ছিল বলা যাবে না। ১৯৬০ সালের কোরিয়া ছিল স্বল্পোন্নত দেশগুলোর অন্যতম, মাথাপিছু জিডিপি মাত্র ৬২ ডলার। আমাদের তুলনায় টানা হতো কেনিয়া, ঘানার উদাহরণ। একবার কিন্তু আমরা তত্কালীন পশ্চিম পাকিস্তানেও বিশেষ প্রতিনিধি পাঠিয়েছিলাম উন্নয়নের কলাকৌশল শিখতে।

কোরিয়ার অর্থনৈতিক ইতিহাসের মোড় ঘুরে ১৯৬২ সালে। প্রথম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার বাস্তবায়ন শুরু করেন তত্কালীন প্রেসিডেন্ট পার্ক চুন-হু। এর ভিত্তি ছিল তিনটি নীতি-দর্শন। এক. অর্থনীতিতে নানা দুষ্টচক্র ক্রিয়াশীল; সঠিক দিকনির্দেশনা ছাড়া সেগুলো হবে দুরতিক্রম্য। দুই. জনগণ অবহেলিত, বঞ্চিত ও শোষিত; তাদের অনুপ্রাণিত করতে হবে ভবিষ্যৎ অভিমুখে এবং আত্মবিশ্বাস জোগাতে হবে নিজ ও দেশের উন্নয়নে। তিন. প্রতিষ্ঠান ও দক্ষ মানবসম্পদ গড়ে তুলতে হবে; উপযুক্ত শিক্ষা ও প্রশিক্ষণে জনগণের সম্মিলিত অংশগ্রহণ ব্যতীত সম্মানজনক জীবনযাত্রা নিশ্চিত করা কঠিন হবে।

আপনাদের বিস্তারিত শিল্পনীতি কি প্রবর্তিত হয়েছিল এর ভিত্তিতেই?

পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হয় মোট সাতটি— ১৯৬২ থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত। তবে ষাটের দশকে আমাদের শিল্প ভাবনায় ছিল প্রধানত হালকা শিল্প। সত্তরের দশকে কৌশল বদলে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়, আমরা ভারী শিল্পে যাব। সে লক্ষ্যে বুনিয়াদি খাত চিহ্নিত করা হয় পাঁচটি— স্টিল, অটোমোবাইল, জাহাজ নির্মাণ, ইলেকট্রনিক ও পেট্রোকেমিক্যাল। উল্লিখিত খাতগুলোয় বিশ্বের সেরা ১০ কোম্পানির তালিকা দেখুন। প্রতিটি ক্ষেত্রে প্রথম পাঁচের মধ্যে পাবেন কোনো না কোনো কোরীয় কোম্পানিকে। মৌলিক শিল্পনীতির দূরদৃষ্টি ছাড়া তা সম্ভব হতো বলে মনে করি না আমি।

সরকারের অবদানের কথা বললেন। কোরিয়ার উন্নয়নে জনগণ তথা বেসরকারি খাতের ভূমিকা কেমন ছিল?

সৌভাগ্যবশত আমরা সমর্থ রাজনৈতিক নেতৃত্ব পেয়েছিলাম। আর জনগণ ছিল পরিশ্রমী ও আত্মবিশ্বাসী। প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রে তারা আস্থার সঙ্গে অনুসরণ করেছেন নেতাদের। পাশাপাশি একই সময়ে কোরিয়ায় উঠে এসেছিলেন কয়েকজন আইকন উদ্যোক্তা। তাদের প্রত্যেকে ছিলেন অত্যন্ত প্রতিভাবান ও কর্মোদ্যোগী এবং তারা জনগণকে অনুপ্রাণিত করেছেন দৃষ্টান্ত দ্বারা। হুনদাই গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা চুং জু-ইয়ুনের গল্পটা হয়তো শুনে থাকবেন। এখন তো তাদের শিপবিল্ডিং ইয়ার্ডে দাঁড়ালে দিগন্ত খুঁজে পাওয়া যায় না। অথচ একসময় সেখানে কিছুই ছিল না। প্রতিষ্ঠাতা ভদ্রলোক নাকি লন্ডনে গিয়েছিলেন শুধু সমুদ্রসৈকতের একটা ছবি আর কোরিয়ান টার্টল শিপের মডেল হাতে নিয়ে। সেগুলো দেখিয়েই তিনি ব্রিটিশ বিনিয়োগকারীদের আশ্বস্ত করেন, জাহাজ নির্মাণ নামক বস্তুটা কোরিয়ানদের ডিএনএতে রয়েছে এবং পর্যাপ্ত বিনিয়োগ পেলে তারা সেটা দেখিয়েও দিতে সক্ষম!

আরেকটি বিষয়, আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপট যথেষ্ট সহায়ক ছিল। কোরিয়ার উত্থানের সময়টায় বিশ্বের কোথাও বড় রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক বা সামাজিক উত্কণ্ঠা দেখা দেয়নি। বরং তখন সংরক্ষণবাদী মনোভাব পরিত্যাগ করে একের পর এক দেশ অবগাহন করছিল মুক্ত অর্থনীতির ধারায়।

উদ্যোক্তার কথা জানলাম। উন্নয়নের জন্য যে দক্ষ মানবসম্পদ প্রয়োজন, তাদের কীভাবে পেলেন?

আমাদের দক্ষ মানবসম্পদ গড়ে তোলার পেছনে মুখ্য ভূমিকা রেখেছে জাতীয় ঐতিহ্য এবং সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি। শৈশবের অভিজ্ঞতা বলি। দেখতাম, এক অঞ্চলের রাজমিস্ত্রি, কাঠমিস্ত্রি কিংবা ইলেকট্রিশিয়ান অন্য অঞ্চলের রাজমিস্ত্রি-কাঠমিস্ত্রিদের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করছে। সবাই নিজ কাজের উত্কৃষ্টতা অর্জনে ব্যস্ত। আশির দশকের আরেকটা ঘটনা মনে পড়ে। হয়তো (সামান্য) কিছু একটা করে নিজ এলাকার বাইরে একবার একজন স্বীকৃতি পেলেন। এলাকাবাসী ফুল দিয়ে তাকে বরণ করে নিল। তার পর এমন উষ্ণ অভ্যর্থনা দেয়া হলো ওই ব্যক্তিকে যে, বাইরের কারো মনে হতে পারত, উনি বুঝি স্বর্ণপদক জিতে এসেছেন অলিম্পিকে!

জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি মুন কোরীয় নাগরিক। বিশ্বব্যাংকের প্রধান ড. জিম ইয়ং কিম কোরীয় বংশোদ্ভূত। আপনার দেশের সং স্যান-হুন ২০১৫ সাল পর্যন্ত ইন্টারন্যাশনাল ক্রিমিনাল কোর্টের প্রেসিডেন্ট ছিলেন। একে সফটপাওয়ার বৃদ্ধির লক্ষণ বলে ধরা যায় নিশ্চয়ই?

সতর্কভাবে লক্ষ করলে দেখবেন, ১৯৫৩ সালের ২৭ জুলাই স্বাক্ষরিত যে চুক্তির মাধ্যমে কোরিয়া যুদ্ধের অবসান হয়, সেটি কিন্তু যুদ্ধবিরতি চুক্তি ছিল; স্থায়ী শান্তি চুক্তি ছিল না। তার মানে, কোরিয়ার যুদ্ধ এখনো শেষ হয়নি, টেকনিক্যালি। এখন আমরা সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছি এমন স্থিতিশীল আইনগত পরিকাঠামো পেতে, যেটি অন্তত কোরীয় উপত্যকার সামরিক স্থিতি নিশ্চিত করবে।

দক্ষিণ চীন সাগরে সৃষ্ট উত্তেজনার পরিপ্রেক্ষিতে বলতে হয়, কোরিয়ার আঞ্চলিক অবস্থান কৌশলগতভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিশ্বে চীন এখন ২ নম্বর অর্থনীতি, জাপান ৩ এবং আমরা ১০ কিংবা ১১। চীন-জাপানের সঙ্গে মাঝে মধ্যে নানা ইস্যু নিয়ে আমাদের বিরোধ হয়; অন্য সময় চমত্কার বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় থাকে। আর বিশ্বসম্প্রদায় চাইলে আমরা অবশ্যই দক্ষিণ চীন সাগরের বিরোধ মেটাতে এগিয়ে আসতে পারি।

প্রত্যক্ষ বিদেশী বিনিয়োগ (এফডিআই) বিবেচনায় আমাদের অর্থনীতির সবচেয়ে পুরনো আন্তর্জাতিক বন্ধু কোরিয়া। বিনিয়োগ গন্তব্য হিসেবে প্রাথমিকভাবে আপনারা বাংলাদেশকে বেছে নিয়েছিলেন কেন?

১৯৭১ সালে স্বাধীনতা অর্জনের অব্যবহিত পর প্রায় কোনো দেশের বিনিয়োগকারীই আসতে চাননি যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশে। আমরা কেন একাত্মবোধ করেছিলাম, তা শুরুতেই বলেছি। তবে কোরীয় পথিকৃৎ বিনিয়োগকারীর আগ্র্রহের ভিত্তি উল্লিখিত আদর্শিক কারণ ছাড়াও বাস্তবতা ছিল। ওই সময় চীন কিংবা ভিয়েতনাম নিজ অর্থনীতি সংরক্ষণে নিবিষ্ট। অথচ বাংলাদেশ তখন আন্তর্জাতিক বাজারের প্রতি মুক্ত এবং ইতিবাচকভাবে এফডিআই চায়। তাই ১৯৭৯ সালে যখন দেশ গার্মেন্টের মধ্য দিয়ে স্থানীয় গার্মেন্ট খাতের সূচনা হলো, যৌথ উদ্যোগের মাধ্যমে তাতে শরিক হয় কোরীয় শিল্প গ্রুপ দাইয়ু। শুরুতেই তারা কয়েকশ বাংলাদেশী কর্মীকে কোরিয়া পাঠায় প্রশিক্ষণের জন্য। আমাদের উদ্দেশ্য ছিল, শুধু বিনিয়োগ করব না, এমনভাবে সহায়তা জোগাব— যাতে এ দেশের কারিগরি ভিত্তি মজবুত হয়। লক্ষ করবেন, ওই সময়ে যারা কোরিয়ায় প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন, তাদের প্রায় সবাই পরবর্তীতে গার্মেন্ট শিল্পের উদ্যোক্তা-ব্যবসায়ী হিসেবে সাফল্য লাভ করেছেন; অর্থনৈতিক উন্নয়নে নেতৃত্ব দিয়েছেন।

কোরিয়ান এক্সপোর্ট প্রসেসিং জোন (কেইপিজেড) নিয়ে সৃষ্ট জটিলতা এরই মধ্যে গণমাধ্যমে বেশ আলোচিত। এ বিষয়ে আপনার ব্যক্তিগত মনোভাব জানতে পারি কি?

বিশদ ব্যাখ্যায় যাব না। আগে একটু ইতিহাস বলি। কেইপিজেড প্রকল্প প্রস্তাব প্রথম পেশ করে বাংলাদেশ সরকার— ১৯৮৫ সালের দ্বিপক্ষীয় শীর্ষ সম্মেলনে। তার মানে, এর উদ্যোক্তা ছিল বাংলাদেশ। কাজ শুরু হয় চার বছর পর। অথচ ১৯৮৯ সালে কোরীয় বিনিয়োগকারীরা প্রজেক্ট সাইটে গিয়ে একটা গাছও খুঁজে পাননি। তাদের দেয়া হয়েছিল অনুর্বর পরিত্যক্ত জমি। একই সময় পাশে চলছিল কর্ণফুলী ফার্টিলাইজার কোম্পানি লিমিটেডের (কাফকো) কাজ। ওই প্রকল্পের ভূমি উন্নয়নের জন্য আমাদের সাইট থেকে বারবার মাটি সরানো হয়েছে। এখন হয়তো কেইপিজেডের লাখ লাখ গাছ আর জলাশয়গুলো দেখে এসব কথা মনেই জাগবে না কারো। যাহোক, ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অব নেচার অ্যান্ড ন্যাচারাল রিসোর্সেস (আইইউসিএন) ও রামসার এরই মধ্যে কয়েকবার কেপিজেডকে নির্বাচিত করেছে বিশ্বের সর্বাপেক্ষা পরিবেশবান্ধব উন্নয়ন অঞ্চল হিসেবে। উন্নয়ন ও পরিবেশের মাঝে সমন্বয় সাধনকারী এমন প্রকল্প নিঃসন্দেহে গর্বের।

আমরা আশা করেছিলাম, কেপিজেডকে অন্তত ‘রোল মডেল’ হিসেবে দাঁড় করাবে বাংলাদেশ সরকার। অথচ এক্ষেত্রে উদ্ভূত জটিলতা অত্যন্ত অনাকাঙ্ক্ষিত। তার বিস্তারিত খবর পত্রপত্রিকায় কম ছাপা হয়নি। এ নিয়ে নতুন করে কিছু বলার আছে বলে মনে হয় না।

কেইপিজেড তাহলে কোরীয় বিনিয়োগকারীদের হূদয়ভঙ্গের কারণ?

বাংলাদেশী যেসব কর্মী দক্ষিণ কোরিয়ায় থাকেন, তাদের জিজ্ঞেস করে দেখুন— তারা চাকরিতে বৈষম্যের শিকার হন কিনা? ন্যূনতম মজুরি থেকে শুরু করে স্বাস্থ্য বীমা পর্যন্ত একজন কোরীয় শ্রমিককে যে সুবিধা দেয়া হয়, বাংলাদেশী শ্রমিক তার চেয়ে কোনোক্রমেই কম পান না। আবার ডলার হিসাবে কোরিয়ায় কর্মরত একজন সাধারণ বাংলাদেশী শ্রমিকের আয় দেখেন মধ্যপ্রাচ্যের শ্রমিকদের কয়েক গুণ বেশি। দুঃখজনক হলো, কেইপিজেডের ঘটনায় আমরা অনুভব করছি যে, এখানে আমাদের সমান দৃষ্টিতে দেখা হচ্ছে না। অথচ আমরা কোনো অন্যায় বা বাড়তি সুবিধা চাই না। প্রত্যাশা শুধু, আইনে যা আছে কেবল তার আলোকে সব সিদ্ধান্ত নেয়া হোক। অন্যান্য বিনিয়োগকারীর সঙ্গে যে আচরণ করা হয়, কোরীয়রা যেন তা থেকে অন্তত বঞ্চিত না হন।

বাংলাদেশ-দক্ষিণ কোরিয়া উন্নয়ন সহযোগিতা কি তবে ওই নেতিবাচক অভিজ্ঞতায় আটকে যাবে?

অবশ্যই না। কার্যত তা আটকেও নেই। খেয়াল করে দেখবেন, গত কয়েক বছরে পশ্চিমা দেশগুলো প্রদত্ত অফিশিয়াল ডেভেলপমেন্ট অ্যাসিস্ট্যানসের (ওডিএ) পরিমাণ কমিয়েছে। সেখানে কোরিয়া বাড়িয়ে দিয়েছে ওডিএ। আমাদের তালিকার ২ নম্বর দেশ হলো বাংলাদেশ। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে ১ হাজার বেডসম্পন্ন সাধারণ হাসপাতাল সুবিধার সম্ভাব্যতা যাচাই সম্পন্ন হয়েছে এরই মধ্যে। ২০১৬ সালের মধ্যে এ প্রকল্প সম্পন্ন হওয়ার কথা। তাতে একপর্যায়ে মাল্টি-ডিসিপ্লিনারি ও সুপার-স্পেশালাইজড হাসপাতাল সেবা প্রদান করা হবে। সেখানে প্রাথমিকভাবে বাংলাদেশী ডাক্তারদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করবেন কোরীয়রা। পরবর্তীতে ব্যবস্থাপনা থেকে শুরু করে সব দায়িত্ব নেবেন বাংলাদেশীরা। সুবিধাটি চালু হলে উচ্চ চিকিৎসার্থে এ দেশের মানুষকে আর থাইল্যান্ড-সিঙ্গাপুর যেতে হবে না। আমাদের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প, খিলগাঁওয়ে ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব অ্যাডভান্সড প্র্যাকটিস নার্স। আশা করি, ২০১৮ সালে এর কাজ শেষ হবে ১৩ দশমিক ৮ মিলিয়ন ডলার প্রাক্কলিত ব্যয়ের মধ্যেই।

স্থানীয় গার্মেন্ট শিল্পের সূচনা থেকে এখন পর্যন্ত কোরীয় বিনিয়োগকারীদের অবদান অনস্বীকার্য। ইদানীং জাহাজ নির্মাণ শিল্পে বাংলাদেশের সম্ভাবনা দেখা গেছে। আর এ শিল্পে কোরিয়ার সুনাম বিশ্বব্যাপী। এক্ষেত্রে বাংলাদেশকে কীভাবে অধিকতর সহায়তা দিতে পারে কোরিয়া?

চলমান বাস্তবতার কথা বলি আগে। ২০০৮ সালে সৃষ্ট বৈশ্বিক আর্থিক সংকটের প্রভাবে জাহাজ নির্মাণকারী প্রায় সব কোম্পানিই এখনো বিপাকে। কোরিয়া এর ব্যতিক্রম নয়। আমাদের বৃহৎ সব জাহাজ নির্মাণ প্রতিষ্ঠানের মূল ভরসাস্থল বর্তমানে জ্বালানি কোম্পানি। তাই গত কয়েক বছরে যেসব বড় জাহাজ তৈরি হয়েছে, সেগুলোর সিংহভাগ হয় অয়েল ট্যাংকার নয়তো এলএনজি ক্যারিয়ারের সমতুল্য। এক্ষেত্রে কিন্তু বাংলাদেশ পিছিয়ে রয়েছে সক্ষমতায়। এটি আমাদের বা অন্য কারো সহায়তায় কৃত্রিমভাবে বাড়িয়ে তুলে হুট করে বৈশ্বিক বাজারে প্রবেশ করলে শ্রমসাধ্য মূল্য প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করতে হবে বাংলাদেশকে। বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের ওই ঝুঁকি এ মুহূর্তে বাংলাদেশের নেয়া উচিত হবে না বলেই আমি মনে করি।

আমি চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি অন্যত্র। চীনে জাহাজ নির্মাণকর্মীদের মজুরি বাড়ছে। বাংলাদেশ ভালো গন্তব্য হতে পারে সেক্ষেত্রে। একাধিক কোরীয় কোম্পানি এখানে ড্রাই ডক রিলোকেট করতে আগ্রহী। প্রাযুক্তিক অংশীদারিত্বের এমন সুযোগ কাজে লাগাতে হবে। তাতে বাংলাদেশে বিপণন ব্যবস্থাপনাগত জ্ঞানে সমৃদ্ধ মানবসম্পদও বাড়বে।

ডিজিটাল ইলেকট্রনিক পণ্যে স্যামসাংয়ের উত্থান অসাধারণ…

একসময় সনির পেছনেই ছিল স্যামসাং। কোম্পানিটিকে সামনে নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠাতা লি বুং-চুলের এক যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত। অ্যানালগ যুগেই তিনি সিদ্ধান্ত নেন, ডিজিটাল প্রযুক্তিতে বিনিয়োগ বাড়ানো হবে। স্যামসাং এখন ফল কুড়াচ্ছে। সেলফোন, টিভি থেকে প্রায় সব ইলেকট্রনিক পণ্যেই তাদের প্রাধান্য।

কোম্পানিটি ভিয়েতনামে ব্যাপক বিনিয়োগ করেছে। বাংলাদেশে কেন আসছে না?

ভিয়েতনামে স্যামসাংয়ের অভিজ্ঞতা অতি মধুর। ২০০৯ সাল থেকে তাদের স্মার্টফোন তৈরি হচ্ছে সেখানে। হ্যানয়ের এক কারখানা কেবল গত বছরই বিক্রি করেছে (স্যামসাং) ২৫ বিলিয়ন ডলারের সেলফোন। এটি দেখে ভিয়েতনামমুখী হয়েছেন বহু কোরীয় বিনিয়োগকারী। ইলেকট্রনিক বর্তমানে ভিয়েতনামেরও প্রধান রফতানি পণ্য। ট্রান্স-প্যাসিফিক পার্টনারশিপ (টিপিপি) চুক্তির সম্ভাবনাও বিনিয়োগকারীদের উৎসাহ বাড়াতে পারে।

কয়েক বছর আগে স্যামসাংয়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বাংলাদেশে এসেছিলেন। যত দূর জানি, আগামীতে সম্ভাব্য বিনিয়োগ গন্তব্য হিসেবে তারা দুটি দেশকে বিবেচনা করছেন— বাংলাদেশ ও মিয়ানমার। সার্বিক পরিস্থিতি মূল্যায়ন করে দীর্ঘমেয়াদি সিদ্ধান্ত নিতে চান তারা। ব্যক্তিগতভাবে আমি চেষ্টা করছি, বাংলাদেশে যেন বিনিয়োগটি আসে।

আশানুরূপ এফডিআই আকর্ষণের জন্য বাংলাদেশের কী কী উদ্যোগ নেয়া উচিত?

বাংলাদেশের দুটি বড় সুবিধা মুক্ত অর্থনীতি ও বিদেশী বিনিয়োগে আগ্রহ। তার সঙ্গে এ দেশের কৌশলগত অবস্থান সম্ভাব্য বিনিয়োগকারীদের নজর কাড়বে। আর আছে সস্তা শ্রমের সুবিধা। এগুলো দৃশ্যমান উপাদান। উল্লিখিত সুবিধাগুলো চীন, ভিয়েতনাম যখন সেভাবে বাজারে আসেনি, তখনো কিন্তু ছিল। সে সময় উন্নত দেশে আলোচনা হতো বাংলাদেশকে নিয়ে। ১৯৯০-৯১ সালের দিকে হঠাৎ সম্ভাবনার মঞ্চ থেকে উধাও হলো বাংলাদেশ। এ ঘটনা আমাদের জন্য খুবই বেদনাদায়ক। কেননা ভিয়েতনাম, ইন্দোচীনের চেয়ে আমাদের স্বপ্ন একটু বেশিই ছিল বাংলাদেশ ঘিরে। আমার ধারণা, ওই সুযোগটা মিস হয় আন্তর্জাতিক অঙ্গনে উপযুক্ত ভাবমূর্তি গড়ে তোলার অভাবে। প্রেক্ষাপট আরো পাল্টেছে। তখন দরজায় সামান্য কড়া নাড়লে হতো। এখন বিনিয়োগ-বাণিজ্য বাড়াতে তীব্র প্রতিযোগিতা করতে হবে। শুধু সস্তা শ্রমের লোভ দেখিয়ে হবে না। অনেক কোরীয় বিনিয়োগকারী ইথিওপিয়া যাচ্ছেন ইদানীং। জিজ্ঞেস করে জানলাম, সেখানে কাপড়ের মান ভালো; শ্রমও সস্তা। পাশাপাশি আরো অনেক রকম আর্থিক ও অর্থবহির্ভূত সুবিধা দিচ্ছে বিভিন্ন দেশ। ফলে বিদেশী বিনিয়োগকারীদের হাতে এখন চয়েস আছে। এ অবস্থায় এফডিআই আগমনের প্রাক্কলন করতে চাইলে গোটা পরিস্থিতির বাস্তবসম্মত তুলনামূলক বিশ্লেষণ জরুরি। বাইরে থেকে শুধু এটুকু বুঝি, আন্তর্জাতিক বাজারের প্রতিটি মুহূর্ত এখন চ্যালেঞ্জিং।

একটি কথা শুনে হতাশবোধ করি। একশ্রেণীর বাংলাদেশী উদ্যোক্তা বলেন, আরে এখানে না এসে বিদেশী বিনিয়োগকারীদের উপায় আছে, এত সস্তা শ্রম কোথায় পাবে প্রভৃতি। এতটা আত্মতুষ্টিতে ভোগা বোধহয় ঠিক না। একজন বিনিয়োগকারী যখন সিদ্ধান্ত নেন, তখন নানাভাবে প্রস্তাব বিবেচনা করেন। গন্তব্য দেশের অবকাঠামোগত হাল কেমন, প্রতিযোগিতা সক্ষমতা কতটুকু, আমলাতন্ত্র সহায়ক কিনা, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও ব্যবসার প্রতি নীতিনির্ধারকদের মনোভাব কী, বিদ্যুৎ-জ্বালানির সরবরাহ কেমন ও দাম কত প্রভৃতি। তার সঙ্গে এবার মিলিয়ে দেখুন। কেইপিজেডের লাইসেন্স পেতে সময় লাগে প্রায় এক যুগ। পরিবেশ অধিদফতরের অনুমোদন, কোম্পানি পরিচালন লাইসেন্স— এগুলো পেতে চলে যায় আরো কয়েক বছর। তাহলে বিনিয়োগকারী কবে পণ্য উৎপাদন ও রফতানি করবে?

ওই প্রকল্প সূচনার প্রায় এক দশক পর প্রথম একটি কারখানা উৎপাদন পরিচালনার অনুমোদন পায়— কর্ণফুলী সু ফ্যাক্টরি; তাও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের হস্তক্ষেপে। অথচ ইপিজেড আইন অনুযায়ী, কোন প্রতিষ্ঠান সেখানে ব্যবসা করবে, সে অনুমতি দেয়ার কথা ছিল কেইপিজেড কর্তৃপক্ষের। নিন্দুকরা বলেন, ইপিজেড নিয়ন্ত্রণের নীতি-দর্শন নিয়ে কিছু দ্বিধা রয়েছে সরকারের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে। স্পেশাল ইকোনমিক জোন (এসইজেড) গঠনের সিদ্ধান্ত, বাংলাদেশ ইকোনমিক জোনস অথরিটি (বেজা) গঠন প্রভৃতি নাকি তারই প্রমাণ। আমার কথা হলো, ধরুন কাউকে দাওয়াত দিয়ে বাসায় আনলেন; তাকে চেয়ারে বসিয়ে হাত-পা বেঁধে খাবার সামনে রেখে বললেন— খাও। ওই ব্যক্তির কী করার আছে?

স্থিতিশীলভাবে কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় বিদেশী বিনিয়োগ পেতে চাইলে আরো বিষয় আছে। যেমন— নির্ভরযোগ্য বিদ্যুৎ সরবরাহ। কেইপিজেডের বিদ্যুতের লাইন নাকি কিছুদিন পর পর কেটে যায়। এটি সম্ভাব্য বিনিয়োগকারীদের ভালোবার্তা দেয় না।

আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, সাকসেস স্টোরি না দেখিয়ে সাধারণ এফডিআই আনা যায় না। কেননা কোথাও বিনিয়োগের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে যে কেউ অবশ্যই দেখতে চাইবেন, সেখানে অতীতে কেউ সফল হয়েছে কিনা এবং হলে কীভাবে। ফলে এফডিআই আকর্ষণে বাংলাদেশের একটা ভালো সাকসেস স্টোরি হতে পারত কেইপিজেড। দুটো ইস্যুতেই আমরা বাংলাদেশ সরকারের কাছ থেকে ইতিবাচক সাড়া পাওয়ার অপেক্ষায় আছি।

তুলনামূলকভাবে ছোট হলেও দক্ষিণ কোরিয়া আমাদের গুরুত্বপূর্ণ শ্রমবাজার। বাংলাদেশীদের নিয়ে কোরিয়ার অভিজ্ঞতাটা জানতে চাই। আরেকটি ইস্যু, আগামীতে এ দেশ থেকে আরো কর্মী গ্রহণের সম্ভাবনা কতটা?

এশিয়ায় আমাদের ১৫টি এমপ্লয়মেন্ট পারমিট সিস্টেম (ইপিএস) বর্তমানে চালু। এর মাধ্যমেই জনশক্তি আমদানি করা হয়। বাংলাদেশ ওই ব্যবস্থার সঙ্গে সংযুক্ত। গত বছর আনুমানিক ৩ হাজার বাংলাদেশী কোরিয়া গেছেন এর মাধ্যমে। শুধু কোরিয়ায় না, বাইরের দেশে কর্মরত কোরীয় কোম্পানিও কর্মী নিয়োগে বাংলাদেশীদের প্রাধান্য দেয়। উদাহরণ হিসেবে বলতে পারি, দুবাইয়ে বুর্জ আল খলিফায় স্যামসাং কনস্ট্রাকশন অ্যান্ড ট্রেডিং কোম্পানিতে কাজ করেছেন বহু বাংলাদেশী শ্রমিক।

সার্বিকভাবে বাংলাদেশীরা সুনামের সঙ্গেই আমাদের দেশে কাজ করছেন। তবু মাঝে মধ্যে কিছু দুর্বলতার কথা কানে আসে। যেমন— একটু বাড়তি সুবিধা পাওয়ার লোভে নাকি কয়েক মাস চাকরি করেই কোম্পানি বদলান অনেক বাংলাদেশী। এসব দিকে সংশ্লিষ্টদের নজর দিতে হবে।

আমাদের উদ্দেশে আপনি বিশেষ কিছু বলতে চান?

ছয়ের ঘরে আটকে না থেকে প্রবৃদ্ধি ১০-এর দিকে নিয়ে যেতে হবে বাংলাদেশকে। টেকসই উন্নয়নের পথে অগ্রসর হতে চাইলে ইনভেস্টমেন্ট টু জিডিপি রেশিও বাড়াতে হবে আরো কমপক্ষে ১০ শতাংশ। ১৯৬০-৬৫ সালের দিকে কিন্তু দ্রুত প্রবৃদ্ধি (প্রায় ১০ শতাংশ) অর্জনের সৌভাগ্য উপভোগ করেছি আমরা। উন্নয়নের ওই শুভ চক্রে বাংলাদেশ বর্তমানে আসীন। তবে এটি অনন্তকাল চলবে না। আবার এখন পর্যাপ্ত গতি না উঠলে চলমান প্রবৃদ্ধির সদ্ব্যবহার থেকে আশানুরূপ আর্থসামাজিক সুফল অর্জন ও তা বণ্টন করা কঠিন। তাই বাংলাদেশের উচিত হবে কোরিয়ার ভুল থেকে শেখা, তাদের সমাধানগুলো কাজে লাগানো। আর সে ব্যাপারে আমরা প্রয়োজনীয় সহায়তা দিতে রাজি।

বাংলাদেশের তরুণ সমাজ বুদ্ধিদীপ্ত, ভবিষ্যত্মুখী। স্বাধীনতার পর থেকেই আমরা এ দেশে আছি। স্থানীয় অর্থনীতির অন্যতম ভিত্তি গার্মেন্ট খাতে আমাদের অবদান রয়েছে। সহযোগিতার এ দিগন্ত আরো প্রসারিত করতে চায় কোরিয়া। আমরা হয়তো আপনাদের দূর কিংবা নিকট কোনো কোনো প্রতিবেশীর মতো বড় দেশ নই। কিন্তু কোরিয়া উন্নয়ন অংশীদার হিসেবে যথেষ্ট সক্ষম এবং সৎ বন্ধু হিসেবে আমরা সন্তুষ্টি খুঁজি কেবল বাংলাদেশের উন্নয়নে অংশগ্রহণের মধ্যে।(বণিক বার্তা)