Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

কোরীয় উপদ্বীপ পুনরুদ্ধারের ৭০তম বার্ষিকীতে, উত্তর-দক্ষিণ সম্পর্ক এখনো অচলাবস্থায়

korean-flagজাপানের ঔপনিবেশিক শাসন থেকে কোরীয় উপদ্বীপ মুক্ত হওয়ার ৭০তম বার্ষিকী ছিল গত ১৫ আগস্ট। এ উপলক্ষে দক্ষিণ কোরিয়া সরকার সিউলে এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। দেশটির প্রেসিডেন্ট পার্ক গেউন-হায়ে তার ভাষণে বলেছেন, জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে ১৪ আগস্ট যে ভাষণ দিয়েছেন, তাতে তিনি অনেক দুঃখ বোধ করেছেন। তিনি পুনরায় জাপান সরকারকে কার্যকরভাবে পূর্ববর্তী মন্ত্রিসভার ঐতিহাসিক মূল্যায়নের ওপর ভিত্তি করে প্রতিবেশী দেশ এবং আন্তর্জাতিক সমাজের আস্থা পুনরুদ্ধারের তাগিদ দিয়েছেন। অন্যদিকে কোরীয় উপদ্বীপ পুনরুদ্ধারের ৭০তম বার্ষিকী উপলক্ষে উত্তর-দক্ষিণ সম্পর্ক এখনও অচলাবস্থায় রয়েছে বলে আক্ষেপ করেছেন তিনি। বিস্তারিত খরব জানতে দক্ষিণ কোরিয়ায় সিআরআই’র সংবাদদাতা ছেন মেংয়ের রিপোর্ট শুনুন।

১৫ আগস্ট সকালে দক্ষিণ কোরীয় সরকার সিউল সেজং সাংস্কৃতিক কেন্দ্রে উদযাপনী অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। দেশটির প্রেসিডেন্ট পার্ক গেউন-হায়ে, প্রধানমন্ত্রী হোয়াং কিও-আহন, কংগ্রেসের স্পিকার চুং ই-হুয়াসহ দেশের নেতারা, স্বাধীন সেবা প্রতিষ্ঠান ও শহীদ পরিবারের সদস্যরা, দক্ষিণ কোরিয়ায় নিযুক্ত কূটনীতিক ও সমাজের বিভিন্ন মহলের প্রতিনিধিসহ ৩ হাজারের বেশি মানুষ অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছেন। প্রেসিডেন্ট পার্ক গেউন-হায়ে তাঁর ভাষণে বলেন, ১৯৬৫ সালে দক্ষিণ কোরিয়া ও জাপানের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্বাভাবিক হওয়ার পর ‘কোনো ক্ষমা’ ও ‘তোমিচি আলোচনা’সহ জাপানের পূর্ববর্তী মন্ত্রিসভার উল্লেখিত ঐতিহাসিক সচেতনতা হলো দক্ষিণ কোরিয়া-জাপান সম্পর্কের ভিত্তি। এই অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে, প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে বিশ্বযুদ্ধের ৭০তম বার্ষিকী উপলক্ষে যে বক্তব্য দিয়েছেন, তাতে অনেক ব্যথিত হয়েছে। ইতিহাসের সত্যতা কখনও গোপন করা যায় না। ভবিষ্যতে জাপান সরকারকে তার সদিচ্ছার পরিচয় দিতে হবে এবং দেশটির পূর্ববর্তী মন্ত্রিসভার ইতিহাস সংক্রান্ত ধারণার বিষয়ে প্রতিশ্রুতি পালন করে, নিকটবর্তী দেশ ও আন্তর্জাতিক সমাজের আস্থা পুনরুদ্ধার করতে হবে।

chardike-ad

চলতি বছর শুধু কোরীয় উপদ্বীপ পুনরুদ্ধারের ৭০তম বার্ষিকীই নয়, বরং দক্ষিণ কোরিয়া ও জাপানের মধ্যে স্বাভাবিক কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০তম বার্ষিকী। চলতি বছরের প্রথম দিক থেকে ঐতিহাসিক সমস্যা ও ভূখণ্ড বিরোধের কারণে দুপক্ষের শীতল সম্পর্ক প্রশমনের লক্ষণ দেখা দিয়েছিল। জুন মাসে দু’দেশের শীর্ষ নেতারা আলাদাভাবে একে অপরের দূতাবাসে অনুষ্ঠিত কূটনৈতিক সম্পর্ক স্বাভাবিক হবার অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছেন। একই সময়ে দক্ষিণ কোরিয়ার চলতি সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রথমবারের মতো জাপান সফর করেছেন। কিন্তু কোনো কোনো দক্ষিণ কোরীয় পণ্ডিতের মতে, বর্তমানে দু’দেশের সম্পর্ক স্বাভাবিক হওয়া, ‘প্রয়োজনীয় হলেও সংকট উত্তরণ কঠিন’। বর্তমানে দু’দেশের সম্পর্ক বেশ নাজুক। দক্ষিণ কোরিয়ার হোসেও বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনৈতিক অর্থনীতির অধ্যাপক চুন কা-লিম বলেন, বাইরে থেকে দেখা যায়, বর্তমানে দক্ষিণ কোরিয়া-জাপান সম্পর্ক অচলাবস্থায় রয়েছে। আসলে দু’দেশের সম্পর্কের পারস্পরিক প্রয়োজনীয়তা স্বীকৃত। একদিকে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বন্ধুত্বের সম্পর্কের জন্য মৈত্রী ও পারস্পরিক সহযোগিতা দরকার। অন্যদিকে, উত্তর কোরিয়ার হুমকি কিছুটা বেড়ে যাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে দক্ষিণ কোরিয়া ও জাপানের মধ্যে সহযোগিতা জোরদারের প্রয়োজন হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে, গোয়েন্দা তথ্য বিনিময় ও আদান-প্রদানের গুরুত্ব বেড়েছে। কিন্তু বিভিন্ন রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে দু’দেশের সম্পর্ক বর্তমানে বিভিন্ন দিক থেকে সীমিত হয়ে এসেছে। একদিকে আদান-প্রদান ও সহযোগিতা চালাতে হয়। অন্যদিকে, রাজনৈতিক সীমাবদ্ধতার কারণে প্রয়োজন বাস্তবায়ন করা খুব কঠিন হয়ে পড়েছে।

চুন কা-লিমের মতে, গত ১৪ আগস্ট বিশ্বযুদ্ধের ৭০তম বার্ষিকীতে জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবের ভাষণ দক্ষিণ কোরিয়া সরকারকে সন্তুষ্ট করতে পারেনি। তবে দু’দেশের মধ্যে বাস্তব চাহিদা কিছুটা হলেও দু’দেশের সম্পর্ককে উষ্ণ করেছে। কিন্তু অন্যদিকে কোরীয় উপদ্বীপ পুনরুদ্ধারের ৭০তম বার্ষিকী উপলক্ষে দক্ষিণ কোরিয়া-উত্তর কোরিয়া সম্পর্ক এখনও অচলাবস্থায় রয়েছে। ২০১৪ সালে দক্ষিণ ও উত্তর কোরিয়ার সম্পর্ক বেশ কয়েক বছর অচলাবস্থায় থাকলেও বিচ্ছিন্ন পরিবারগুলোর পুনর্মিলনের ব্যবস্থা চালু হয়েছে। উত্তর কোরিয়ার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ইনচিওন এশিয়ান গেমসের সুযোগে দক্ষিণ কোরিয়া সফর করেছেন। কিন্তু উল্লেখিত গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপারগুলো ধারাবাহিকভাবে চলতি বছর বজায় থাকেনি। চলতি বছর ধারাবাহিকভাবে দক্ষিণ ও উত্তরের মধ্যে বিরোধ ও বিতর্ক বেড়েই চলেছে। সমুদ্র ও স্থলে দু’পক্ষের গুলি বিনিময়ের ঘটনাও ঘটেছে। চলতি মাসের প্রথম দিকে পুনরায় বেসামরিক অঞ্চলে স্থলমাইন বিস্ফোরণে দু’জন দক্ষিণ কোরীয় সেনা গুরুতর আহত হয়। ফলে দক্ষিণ-উত্তর সম্পর্কের জন্য পুনরায় অবিশ্বাসের ছায়া পড়ে। ১৫ আগস্ট বিশ্বযুদ্ধের ৭০তম বার্ষিকীর অনুষ্ঠানে পার্ক গেউন-হায়ে কোরীয় উপদ্বীপ সমস্যার ‘শক্তিশালী চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা’র অবস্থান পুনরায় ঘোষণা করেছেন। তিনি বলেন, আমাদের উত্থাপিত বেশ কয়েক দফা সংলাপ প্রস্তাবের প্রতি উত্তর কোরিয়া সাড়া দেয়নি। যা দক্ষিণ-‌উত্তর শান্তি সহযোগিতার বিপরীত। ধারাবাহিকভাবে পারমাণবিক প্রকল্প ও সাইবার হামলা চালানোয় দক্ষিণ কোরিয়া ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নিরাপত্তার উপর হুমকি সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষ করে সম্প্রতি সংঘটিত বেসামরিক অঞ্চলে মাইন বিস্ফোরণের আচরণটি ‘যুদ্ধবিরতি চুক্তি’ এবং দক্ষিণ ও উত্তর কোরিয়ার পারস্পরিক যুদ্ধবিরতি চুক্তি লঙ্ঘন করেছে। দক্ষিণ কোরিয়া সরকার দেশটির নাগরিকদের নিরাপত্তার জন্য হুমকিমূলক যেকোনো প্ররোচনামূলক আচরণের দৃঢ় মোকাবিলা করবে।

পাশাপাশি পার্ক গেউন-হায়ে পুনরায় জোর দিয়ে বলেছেন যে, উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে সংলাপের জানালা, বিশেষ করে বিচ্ছিন্ন পরিবারগুলোর সমস্যায় দু’পক্ষের মতৈক্য গুরুত্বপূর্ণ। তিনি বলেন, কোরীয় উপদ্বীপের পরিস্থিতি যত কঠোর হোক, মানবিক দিক থেকে দক্ষিণ ও উত্তর কোরিয়ার উচিত একসঙ্গে বিচ্ছিন্ন পরিবারগুলোর সমস্যার মৌলিক সমাধান খুঁজে বের করা। বিচ্ছিন্ন পরিবারের অস্তিত্ব নিশ্চিত করার প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে দক্ষিণ কোরিয়া উত্তর কোরিয়াকে ৬০ হাজারের বেশি দক্ষিণ কোরিয়াস্থ বিচ্ছিন্ন পরিবারের তালিকা সরবরাহ করবে। আশা করা যাচ্ছে, উত্তর কোরিয়া সক্রিয়ভাবে তার জবাব দেবে এবং চলতি বছরের মধ্যে বিচ্ছিন্ন পরিবারের তালিকা বিনিময় করবে।

বর্তমানের উত্তর-দক্ষিণ কোরিয়া সম্পর্কে দক্ষিণ কোরিয়ার জনমত হলো, স্বল্পস্থায়ী অচলাবস্থা ভেঙ্গে দিয়ে বিরাট সাফল্য অর্জন খুব কঠিন। হোসেও বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনৈতিক অর্থনীতিবিদ ছুন কা-লিম বলেন, বর্তমানে উত্তর-দক্ষিণ সম্পর্ক খুব খারাপ অবস্থায় রয়েছে। এটি পুনরুদ্ধারে বিশ্বযুদ্ধের ৭০তম বার্ষিকীর যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। কিন্তু আসলে দক্ষিণ ও উত্তরের যৌথ কোনো কার্যক্রম নেই। সুতরাং আমি মনে করি, বর্তমানে দক্ষিণ-উত্তর সম্পর্ক উন্নত হবার সম্ভাবনা খুবই কম। বর্তমানে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি হলো, মাইন বিস্ফোরণের ঘটনায় মতভেদ বা সশস্ত্র সংঘর্ষ শুরু না করা।(সিআরআই)