Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

বাংলাদেশ ফুটবলের ‘অস্ট্রেলিয়া’ পরীক্ষা আজ

এশিয়ার শ্রেষ্ঠত্বের শিরোপা ঘরে উঠেছে ক’দিন আগেই। র‍্যাংকিংয়ে এগিয়ে ১০৯ ধাপ। বিশ্বকাপে অংশ নেয়ার টিকেট মিলেছে ৪ বার। ২০০৬ এ দ্বিতীয় রাউন্ডে ইতালির কাছে বিতর্কিত ভাবে হেরে বাদ না গেলে বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ সাফল্যের গ্রাফটা আরো এক ধাপ উপরেই থাকতো। সংক্ষেপে অস্ট্রেলিয়া ফুটবল দলের পরিচিতি!

২০০৩ সালে সাফ জয়ী বাংলাদেশ টানা গত দুই সাফে পার করতে পারেনি গ্রুপ পর্বের বাধা। বঙ্গবন্ধু কাপের ফাইনালেও হতাশার এক হারে একটি ট্রফির জন্য প্রতীক্ষার সময় বাড়লো আরো। ফিফা র‍্যাংকিং এ পেছাতে পেছাতে ১৭০ অবস্থান এখন।

chardike-ad

পরিসংখ্যানের বিচারে একে অপরের যোজন যোজন দূরে অবস্থান করা এই দুল অস্ট্রেলিয়ার পার্থে মুখোমুখি হচ্ছে আজ। ফিফা ২০১৮ বিশ্বকাপ ও এশিয়াকাপের বাছাইপর্বের এ ম্যাচ দিয়েই ১০ বছর পর পার্থের মাঠে ফিরছে আন্তর্জাতিক কোন ম্যাচ। বাংলাদেশ সময় বিকেল ৫ টায় শুরু হবে খেলাটি।

ausvban

২০০১ সালে প্রথমবারের মত ইউরোপে খেলতে যাওয়ার পর এই প্রথম এশিয়ার বাইরে বাংলাদেশ ফুটবল দল! সেবার বসনিয়ার কাছে ২-০ গোলে হেরে ফেরত এসেছিলো বাংলাদেশ। ২০০৬ সালে ফুটবল মানচিত্রে এশিয়া মহাদেশে ঠাই পাওয়া অস্ট্রেলিয়ার সাথে এইবারই প্রথম কোন আন্তর্জাতিক ম্যাচে মুখোমুখি হচ্ছে বাংলাদেশ দল। বাংলাদেশের ফুটবলের জন্য তাই কঠিন এক চ্যালেঞ্জ। গত এক দশকের মধ্যে বাংলাদেশ দলের জন্য সবচেয়ে বড় ম্যাচও বটে!

সামনে যখন চোখ রাঙাচ্ছে অস্ট্রেলিয়া তখন শিষ্যদেরকে ভালো ভাবেই সামলাচ্ছেন ডি ক্রুইফ। গত ম্যাচে মালয়েশিয়ার বিপক্ষে গোল হজম না করার কৌশল অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে কতখানি কাজে দেবে তা মাঠের খেলাতেই প্রমাণ হবে। অস্ট্রেলিয়ার শক্তিই নিজেদের মাঠে আরো সাবধানী করে তুলবে বলে বিশ্বাস এই টাইগার কোচের। সকারু ডট কমকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে ‘এখানে ঘুরতে আসিনি’ বলে তার দল যে লড়াই ছাড়াই ফিরে আসবে না মাঠ থেকে- সেরকমই এক ইঙ্গিত দিলেন এই ডাচ কোচ, “অবশ্যই ওরা এশিয়ার এক নম্বর দল। ওদের অভিজ্ঞতা অনেক, ইউরোপে খেলা অনেকেই আছে। আমরা আন্ডারডগ এ ব্যাপারে সন্দেহ নেই। তবে আমাদের নিজস্ব কৌশল আছে, ওদের খেলা আমরা বিশ্লেষণও করেছি। আমাদের খেলোয়াড়েরা ভীত নয়, আমরা এখানে ভ্রমণ করতে আসিনি।”

কেমন হবে বাংলাদেশ দল?

এমন এক অগ্নি পরীক্ষার আগে দলের রক্ষণভাগের উপরেই ভরসা রাখতে হচ্ছে বাংলাদেশ দলকে। গোলরক্ষক সোহেলের আগের ম্যাচের দারুন নৈপুণ্য কিছুটা হলেও স্বস্তি ফিরিয়ে এনেছে দলের রক্ষণভাগে। ৪-২-৩-১ ফরমেশনে দেখা যেতে পারে বাংলা টাইগারদের। ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার জামাল ভুঁইয়া হয়ে যেতে পারেন এ ম্যাচে বাংলাদেশ দলের নায়ক। তাঁর সাথে অধিনায়ক মামুনুলের জুটির উপরেই আসলে নির্ভর করছে বাংলাদেশ দলের ভাগ্য। কাউন্টার অ্যাটাকিং এ সাফল্যের ভার অনেকটাই নির্ভর করবে এমিলি, এনামুলদের ওপর। মাঝমাঠে ইঞ্জুরি থেকে ফেরা উইঙ্গার জাহিদকে দেখা যেতে পারে তরুণ জুয়েল রানার সাথে। সেট পিস থেকে পাওয়া বল গুলো কাজে লাগাতে পারলে পার্থের মাঠে বাংলা গৌরব গাঁথা লেখা হলেও হতে পারে!

এ ম্যাচকে ঘিরে বাংলাদেশের গণমাধ্যম যতো না সরগরম তার চেয়ে অস্ট্রেলিয়ানরাই এগিয়ে। বাংলাদেশের পেপার পত্রিকার খেলার পাতায় ম্যাচ শুরুর দু’দিন আগেও বাংলাদেশ অস্ট্রেলিয়া ম্যাচটি তেমন কোন প্রাধান্য না পেলেও অস্ট্রেলিয়ার ফুটবল পাড়া কিন্তু সরগরম! প্রতিপক্ষ কাগজে কলমে যতই পিছিয়ে থাক না কেন! ফিফা বিশ্বকাপ বাছাইপর্ব বলে কথা। পার্থে গতকাল অস্ট্রেলিয়া দলের অনুশীলন দেখতে হাজির হয়েছিল হাজার খানের দর্শক। তাদের সাথে ছবি তুলে, অটোগ্রাফ দিয়ে সামিল হয়েছিলেন কেহিল, উইলকিনসনেরা। ইঞ্জুরির কারণে দলে নেই সকারু অধিনায়ক জেদনিয়াক। টমি জুরিক, ক্রুসরাও দল বাদ পড়েছেন একই সমস্যায়। অস্ট্রেলিয়ার সাবেক খেলোয়াড় ও দলের বর্তমান কোচ পোস্টেকোগ্লু অবশ্য এটিকে দেখছেন তরুণদের নিজেদের প্রমাণ করার সুযোগ হিসেবে।

কেমন হতে পারে অস্ট্রেলিয়া দল?

নিয়মিত গোলরক্ষক ম্যাট রায়ানের ইঞ্জুরির কারনে দলে সুযোগ পেতে পারেন বর্ষীয়ান গোলরক্ষক গালেকোভিচ। রক্ষণভাগে বেসিকতাসের আযিয ও ইংলিশ ক্লাব হাডারস্ফিল্ডের ডেভিডসনের মধ্যে কাকে সুযোগ দেবেন সকারু কোচ তা জানতে অপেক্ষা করতে হবে শেষ পর্যন্ত। ইঞ্জুরি থেকে ফেরা সেল্টিক মিডফিল্ডার টম রজিককে দেখা যেতে পারে মিডফিল্ডে। জার্মান ক্লাব ইংগ্লোস্ট্যাডের হয়ে গত সপ্তাহে গোল করা স্ট্রাইকার ম্যাথু লেকি চাইবেন তাঁর গোলের ট্যালি বাড়িয়ে নিতে। অস্ট্রেলিয়ার হয়ে সর্বোচ্চ গোলের (৬১) মালিক টিম কেহিলের হাতে উঠতে পারে অধিনায়কের আর্মব্যান্ড। এই দুই স্ট্রাইকারই তাদের দলে হয়ে খেলেছেন ব্রাজিল বিশ্বকাপে।

বাছাইপর্বে অস্ট্রেলিয়ার এটি দ্বিতীয় ম্যাচ। কিরগিজস্তানের বিরুদ্ধে ২-১ এ জয়ের পর বাংলাদেশের সাথেও জয়ের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে চাইবে সকারুরা।  অপরদিকে  কিরগিজস্তানের বিরুদ্ধে ৩-১ এ হার আর শেষ মুহূর্তে গোল হজম করে ড্র নিয়ে তাজিকিস্তানের সাথে পয়েন্ট ভাগাভাগি করা বাংলাদেশ দলের জন্য এটি তৃতীয় ম্যাচ। গ্রুপের প্রথম বা দ্বিতীয় স্থান নয়, বাংলাদেশের লক্ষ্য গ্রুপের শেষ স্থানটি এড়ানো। মাথা উঁচু করে মাঠে লড়াই করার কথা বলেছেন ডি  ক্রুইফ, হারকে অবধারিত জেনেও লড়াই করতে পারলেই এই ম্যাচ থেকে সেটাই হবে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি।