Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

যুক্তরাষ্ট্রের কারাগারে ৪৬ বাংলাদেশির অনশন

usaযুক্তরাষ্ট্রে অনুপ্রবেশের দায়ে আটককৃত ৮২ জন বাংলাদেশি নাগরিকের মধ্যে ৪৬ জন টেক্সাসের কারাগারে আমরণ অনশন শুরু করেছেন। যুক্তরাষ্ট্র সরকার আটককৃতদের বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর যে উদ্যোগ নিয়েছে তার প্রতিবাদে তারা ওই আন্দোলন শুরু করেন বলে জানা গেছে।

সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, টেক্সাসের ‘এল পাসো’ কারাগারের ওই ৮২ জন হাজতি গত বুধবার থেকে আমরণ অনশন ধর্মঘটে যান। এর আগে তারা সবাই আমেরিকায় রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদন করেছিলেন। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র সরকার তাদের সে আবেদন নাকচ করে দিচ্ছে কারাগারে এমন খবর ছড়িয়ে পড়লে বন্দিদের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দেয়। চট্টগ্রামের ফয়েজ আহম্মেদকে ২৫ সেপ্টেম্বর দেশে ফেরত পাঠানোর পর এ আতংকে নতুন মাত্রা যোগ হয়।

chardike-ad

প্রসঙ্গত, আমেরিকায় ব্যঙ্গ করে অবৈধ অভিবাসীদের ডাকা হয় ‘ভিনগ্রহের প্রাণী’।

আমেরিকার মানবাধিকার সংস্থা ‘ডেজিজ রাইজিং আপ অ্যান্ড মুভিং’ (ড্রাম)-এর কর্মী কাজী ফৌজিয়া অনশনরত সিলেটের বিয়ানীবাজারের মাহবুবুর রহমানকে উদ্ধৃত করে বলেন, আন্দোলনকারীরা বলছেন, ‘আমাদের হারানোর কিছু নেই; আর তাই আমরা এখন আন্দোলনে!’ ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট-এর সদস্যরা আমাদেরকে হুমকি দিচ্ছে অনশন ভঙ্গ না করলে পাঁচ থেকে ১০ বছরের সাজা দেয়া হবে। আমরা বলছি সাজা পেতে রাজি আছি, কিন্তু দেশে পাঠাবেন না।

কাজী ফৌজিয়া আরো জানান, চার মাস থেকে শুরু করে বছর খানেক আগে আমেরিকায় আশ্রয় নেন ওই ৮৩ জন বাংলাদেশি। ‘বিএনপি’র কর্মী বলে দেশে তাদের জীবন বিপন্ন হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে’। তারা সবাই এই যুক্তিতে আমেরিকায় রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদন করেছেন। আর মাস দুয়েক হলো তাদের ওই আবেদন বাতিল হওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।

তিনি আরো জানান, প্রেসিডেন্ট ওবামার আদেশ অনুযায়ী ২০০ মাইল রাস্তা পার হওয়া ইমিগ্রান্টদের সাথে মানবিক অধিকারের বিষয়ে প্রশাসনকে বেশি যত্নশীল হতে হবে। সেই জায়গায় বাংলাদেশের লোকজন প্রায় ১২ হাজার মাইল পাড়ি দিয়ে ১৭ থেকে ১৮টি রাষ্ট্র পায়ে হেঁটে, অমানবিক কষ্ট সহ্য করে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করেছেন। তাই বিষয়টি মানবিকভাবেই নিষ্পত্তি হওয়ার কথা।

নোয়াখালির কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার মোহাম্মদ শাহজাহান জানান, আট মাস ধরে এলপাসো কারাগারে আছি। আমি রাজনৈতিক আশ্রয় চেয়েছি। কিন্তু আমার আবেদন গ্রহণ হয়নি। বাংলাদেশে বিএনপি করতাম। আমাকে সন্ত্রাসী আখ্যা দিয়ে আবেদন গ্রহণ করেননি বিচারক। নিরুপায় হয়ে দুই দিন হলো আমরা অনশন করে যাচ্ছি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ওয়াশিংটনস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসের প্রেস মিনিস্টার শামীম আহমেদ জানান, মানবিক কারণে আটককৃতদের বিরুদ্ধে যাতে কোনো ব্যবস্থা নেয়া না হয় সেজন্য যুক্তরাষ্ট্র সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করে যাচ্ছে বাংলাদেশ দূতাবাস।

এদিকে, আমেরিকার অভিবাসন সংস্থা ও ‘হোমল্যান্ড সিকিউরিটি’র কাছে এমন অভিযোগ রয়েছে যে, বিএনপি একটি সন্ত্রাসী দল। যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বিএনপি জামায়াতকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে আখ্যা দিতে স্টেট ডিপার্টমেন্ট, হোমল্যান্ড সিকিউরিটিসহ গুরুত্বপূর্ণ সরকারি সংস্থাগুলোতে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ করে আসছিল। যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতারা এ দাবিতে গেল দুই বছর ধরে বিক্ষাভ সামবেশ করে আসছেন। এর ফলে বিষয়টি যুক্তরাষ্ট্রের হোমল্যান্ড সিকিউরিটির নজরে আসে বলে জানায় নিউ ইয়র্কে মানবাধিকার নিয়ে কাজ করা সংগঠন ‘ডেজিজ রাইজিং আপ অ্যান্ড মুভিং-ড্রাম।

যুক্তরাষ্ট্রের আরেকটি প্রতিষ্ঠিত মানবাধিকার সংগঠন ‘ন্যাশনাল ইমিগ্রেশন প্রজেক্ট অফ দ্যা ন্যাশনাল ল’ইয়ার্স গিল্ড’ জানায়, গেল তিনমাস ধরে বিএনপি সংশ্লিষ্ট রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদনগুলো নাকচ করে আসছেন আদালত। বিএনপির মতো গণতান্ত্রিক দলকে সন্ত্রাসী আখ্যা দেয়া অন্যায় এবং অযৌক্তিক দাবি করে এর বিরুদ্ধে ইতোমধ্যে কাজ শুরু করেছে সংগঠনটি। তারা বলছে, বিএনপি বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম রাজনৈতিক দল। সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে তাদের জড়িত থাকার অভিযোগ তুলে অভিবাসীদের অধিকার ক্ষুণ্ণ করা যাবে না। তারা যুক্তরাষ্ট্রের আইন অনুযায়ী, অভিবাসীদের আইনগত অধিকার সমুন্নত রাখার আহবান জানিয়েছেন। পাশাপাশি আলাপাসোতে আটক হওয়া বাংলাদেশিদের সহায়তা দিতে ইতোমধ্যে কাজ শুরু করেছে সংগঠনটি।

হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগের অভিযোগ, আবেদনকারী ৮২ জন বাংলাদেশির সবাই বিএনপির সদস্য বলে নিজেদের আবেদনে উল্লেখ করেছেন। তবে আবেদনকারীদের যুক্তি, বাংলাদেশে এখন বিএনপির বিরুদ্ধে সরকারের যথেচ্ছ নির্যাতন, দমন-পীড়ন চলছে।

প্রসঙ্গত: উল্লেখ্য যে, বিএনপি এবং জামায়াত-শিবিরের লোকজনকে প্রাথমিক দৃষ্টিতে ‘সন্ত্রাসী’ হিসেবে মনে করে হোমল্যান্ড সিকিউরিটি ডিপার্টমেন্ট। এ ধরনের মনোভাব সঠিক নয় বিধায় তা নিয়ে আপিল করেছিলেন নিউইয়র্কের এটর্নি অশোক কর্মকার। আশোক কর্মকারের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বিএনপি সন্ত্রাসী সংগঠন নয় মর্মে একটি রায় কয়েক সপ্তাহ আগে নিউজার্সির একজন ইমিগ্রেশন জজ প্রদান করেছেন।

তবে, আরিজোনা, টেক্সাস, ক্যালিফোর্নিয়া প্রভৃতি স্থানের বিচারকরা এখনও বিএনপিকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবেই মনে করছেন।(নয়াদিগন্ত)