Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

সৌদি-রাশিয়া তেলযুদ্ধে নতুন মাত্রা

RussiaSaudiপ্রথমবারের মতো রাশিয়ার দীর্ঘদিনের ক্রেতা পোল্যান্ডের কাছে তেল বিক্রি করল সৌদি আরব। এর মধ্য দিয়ে সৌদি-রাশিয়া তেলযুদ্ধে নতুন মাত্রা যোগ হলো। এদিকে রুশ গ্যাসে নির্ভরশীলতা কমাতে লিথুয়ানিয়া, লাটভিয়া ও এস্তোনিয়াকে নিয়ে একটি পাইপলাইন নির্মাণের ঘোষণা দিয়েছে পোল্যান্ড। খবর ব্লুমবার্গ।

পোল্যান্ডের বাজারে সৌদি আরবের প্রবেশে স্পষ্টতই উদ্বিগ্ন রাশিয়া। দেশটির বৃহত্তম তেল কোম্পানি রোজনেফটের প্রধান নির্বাহী ইগর সেচিন সৌদি আরবের বিরুদ্ধে ডাম্পিংয়ের অভিযোগ তুলে বলেছেন, তেলের বাজারে ধসের মূল কারণ এটাই। এর আগে বৃহস্পতিবার মস্কোয় অনুষ্ঠিত এক গোলটেবিল আলোচনায় আরেকটি রুশ কোম্পানি তাতনেফতের পদস্থ নির্বাহী নিকোলাই রুবশেনকভ সৌদি আরবের এ উদ্যোগে প্রশ্ন তুলে বলেন, এটা কি পশ্চিমা বিশ্বে তেলের বাজারের মানচিত্র পাল্টানোর প্রথম পদক্ষেপ নয়? রাশিয়ার পশ্চিমের বাজারে দেশের স্বার্থ সংরক্ষণে সরকারকে জরুরি সুরক্ষা ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানান রুবশেনকভ।

chardike-ad

ইউরোপের ব্যবসায়ী ও শোধনাগার মালিকরা জানান, সৌদি আরব বেশ ছাড় দিয়েই তেল বিক্রি করছে। এ কারণে আরব তেল অপরিশোধিত রুশ জ্বালানির চেয়ে আকর্ষণীয হয়ে উঠছে। পূর্ব ইউরোপের বেশির ভাগ তেল শোধনাগার এখনো প্রযুক্তিগতভাবে অপরিশোধিত রুশ জ্বালানির ওপর নির্ভরশীল।

সত্তরের দশকে সৌদি আরবের তেল রফতানির অর্ধেক যেত ইউরোপে। এর পর পশ্চিম সাইবেরিয়ার তেলকূপগুলোর বিপুল মজুদে ভর করে সোভিয়েত ইউনিয়ন রফতানি পাইপলাইনের কাজ শেষ করে। এদিকে সৌদিরা সরে আসে এশীয় বাজারে, যেখানে তখন তেলের চাহিদা বাড়ছিল। ধীরে ধীরে ইউরোপে অপরিশোধিত তেলের বাজারে সৌদি অংশ কমতে থাকে। ২০০৯ সালে সর্বনিম্ন ৫ দশমিক ৯ শতাংশে নেমে আসে ইউরোপে সৌদি আরবের বাজার অংশ। অন্যদিকে ২০১১ সাল নাগাদ ইউরোপে রাশিয়ার বাজার অংশ ছিল ৩৪ দশমিক ৮ শতাংশ। সাম্প্রতিক বছরগুলোয় এশীয় বাজারে চাহিদার অধোগতির কারণে সৌদি আরব আবারো ইউরোপে বাজার ফিরে পেতে উদোগী হয়েছে। ২০১৩ সাল নাগাদ ইউরোপে সৌদি তেলের বাজার ৮ দশমিক ৬ শতাংশে উন্নীত হয়। ইউরোপে অন্যত্র বাজার প্রসারের চেষ্টা করলেও সৌদি আরব কখনো পোল্যান্ডে হাত দেয়নি।

মধ্য ও পূর্ব এশিয়ার সিংহভাগ দেশের মতো পোল্যান্ডও দীর্ঘদিন ধরে রুশ কোম্পানিগুলোর কাছ থেকে তেল কিনছে। গত বছর দেশটির জ্বালানি আমদানির তিন-চতুর্থাংশই এসেছিল রাশিয়া থেকে। বাকি এক-চতুর্থাংশ আমদানি হয়েছিল কাজাখস্তান ও কয়েকটি ইউরোপীয় দেশ থেকে। এদিকে একই সময় রাশিয়া ক্রিমিয়া উপদ্বীপকে অঙ্গীভূত করলে ইউরোপীয় দেশগুলো রুশ গ্যাসে নির্ভরশীলতা কমানোর উদ্যোগ নেয়। ইউরোপীয় ইউনিয়নের এ-সংক্রান্ত উদ্যোগের কেন্দ্রে রয়েছে পোল্যান্ড। উপরন্তু পোল্যান্ড ইউক্রেনের প্রতিবেশী। রাশিয়ার সঙ্গে ক্রিমিয়ার সংযোগের পর পোল্যান্ড নিজেদের প্রতিরক্ষা ব্যয় বাড়ায়। পাশাপাশি দেশটি নিজের ক্ষুদ্রতর প্রতিবেশীদের সঙ্গেও এ ব্যাপারে কাজ করছে। বৃহস্পতিবার পোল্যান্ড একটি চুক্তির ঘোষণা দিয়েছে। চুক্তির আওতায় পোল্যান্ড, লিথুয়ানিয়া, লাটভিয়া ও এস্তোনিয়া বাল্টিক দেশগুলোর মধ্যে একটি গ্যাস পাইপলাইন নেটওয়ার্ক নির্মাণ করবে। এতে রুশ গ্যাসের

ওপর নিজেদের নির্ভরশীলতা কমাতে সমর্থ হবে এসব দেশ।

রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্কের এমন পর্যায়ে তেলের নির্ভরযোগ্য কোনো উৎস হাতে আসা বাল্টিক অঞ্চলের দেশগুলোর জন্য বিরাট সুখবর। এদিকে সৌদিদেরও নতুন বাজার দরকার। কারণ চীনা ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অর্থনীতির গতি হ্রাস পাওয়ায় এশিয়ায় অপরিশোধিত তেলের চাহিদাও কমেছে।

২০০০ সাল নাগাদ রাশিয়ার রফতানি তেলের প্রায় পুরোটাই যেত ইউরোপে। তবে গত বছর নাগাদ ইউরোপে রাশিয়ার রফতানি দুই-তৃতীয়াংশের নিচে নেমে আসে।

এদিকে এশিয়ার বাজারে সৌদি আরবের শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে নিজেকে উপস্থাপন করছে রাশিয়া। সাময়িকভাবে হলেও মে মাসে এমনও দিন গেছে যে, চীনে রাশিয়ার সরবরাহ সৌদি সরবরাহের চেয়ে বেশি ছিল। এখন সৌদিরা নিজেদের বাজার অংশ সম্প্রসারণে বেপরোয়া মূল্যযুদ্ধে মেতেছে। আগামী দিনগুলোয় এ মূল্যযুদ্ধ বিশ্বের অন্যতম বৃহত্তম তেল রফতানিকারক দুটি দেশের সম্পর্কে আরো উত্তেজনা যোগ করতে পারে।

ওপেক ও আন্তর্জাতিক শক্তি সংস্থা (আইইএ) বলছে, আগামী বছর তেলের চাহিদা কিছুটা বাড়বে।

রাশিয়া ও সৌদি আরব— উভয় দেশই তেল বিক্রির আয়ের ওপর অনেকটা নির্ভরশীল। তেলের মূল্য নিয়ে দুই দেশের লড়াই আগামী দিনগুলোয় আরো জোরালো হবে। রাশিয়া হয়তো আশা করছে, ইরানের মতো মিত্র দেশ বাজারে ফিরলে রাশিয়া লাভবান হবে। সিরিয়ার মাধ্যমে রাশিয়া ও ইরানের সরবরাহ লাইন সম্প্রসারণ হতে পারে।