Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

যেখানে নারীদের প্রবেশ নিষিদ্ধ!

greekমাউন্ট অ্যাথস। খ্রিষ্টান সন্ন্যাসীদের জন্য পবিত্র একটি স্থান। গ্রিক উপদ্বীপের হালকিডিকিতে অবস্থিত এই পাহাড় পুরোপুরি স্বায়ত্বশাসিত। এটিই পৃথিবীর একমাত্র অঞ্চল যেখানে, নারীদের প্রবেশ পুরোপুরি নিষিদ্ধ।

মাউন্ট অ্যাথসকে নিয়ে অনেক কাহিনীই আছে ইতিহাসে। গ্রিক মিথলজি অনুযায়ী, জাইজ্যান্টরা একসময় গ্রিক দেবতাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছিল। এদের মধ্যে অ্যাথস সমুদ্রের দেবতা পোসাইডানকে লক্ষ্য করে বিশাল পাথর ছুড়ে মেরেছিল । সেই পাথর এসে পড়ে এজিয়ান সাগরে। পরে সেটাই মাউন্ট অ্যাথসে রুপ নেয়। তবে মিথে অন্যরকম কাহিনীও আছে। এতে বলা হয়, অপদেবতাকে হত্যা করে পোসাইডন এই পাহাড়টি দিয়ে তাকে চাপা দিয়ে রেখেছিলেন।

chardike-ad

হোমারের মহাকাব্য ইলিয়ডে মাউন্ট অ্যাথসের উল্লেখ আছে। ইতিহাসের জনক হিরোডেটাস তার বই ইতিবৃত্তিতেও মাউন্ট অ্যাথসের উল্লেখ করেছেন। ৪৯২ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে গ্রিকদের বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়েছিল পারস্য। দ্বীপটি ঘোরার সময় উত্তরের প্রবল বায়ুতে পারস্যের সেনাবাহিনীর কমান্ডার মারদোনিউস তিনশ নৌকা ও ২০ হাজার যোদ্ধা নিয়ে ধ্বংস হয়ে যান।

তবে অ্যাথসে বসবাসরত খ্রিষ্টান সন্যাসীদের মতে, কুমারী মেরি (মরিয়ম) গসপেলের লেখক সেন্ট জনের সঙ্গে ইসরায়েলের জোপ্পা থেকে নৌকায় করে ল্যাজারাসকে দেখতে সাইপ্রাস যাচ্ছিলেন। এক পর্যায়ে বাতাসের তোড়ে নৌকাটি অ্যাথস উপকূলে গিয়ে ভীড়ে। দ্বীপটির সৌন্দর্য্যে রীতিমতো মুগ্ধ হন এবং তিনি একে তার বাগান করে দেওয়ার জন্য যীশুর কাছে প্রার্থনা করেন। এসময় বাতাসে একটি কণ্ঠস্বর শুনতে পান মেরি। কণ্ঠটি তাকে বলে, ‘ এ স্থানটি হোক তোমার উত্তরাধিকার ও বাগান এবং যেসব পাপমুক্তিকামী রক্ষা পেতে চায় তাদের জন্য একটি নন্দনকানন ও স্বর্গ’। সেই তখন থেকেই অ্যাথসকে ‘কুমারী মেরির বাগান’ বলে বিবেচনা করা হয় এবং নারীদের জন্য নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়।

তবে সন্ন্যাসীদের আস্তানা হিসেবে পাহাড়টি ৮শ খ্রিষ্টাব্দ থেকে ব্যবহৃত হতে শুরু করে। বাইজান্টাইন শাসকরা এখানে মঠ প্রতিষ্ঠা করেন। সন্ন্যাসীদের কাছে দ্বীপটি প্রত্যার্পণ এবং একে পবিত্র প্রতীক হিসেবে প্রতিষ্ঠার জন্য ৮৪৩ খ্রিষ্টাব্দে সম্মেলনের ডাক দেন বাইজান্টাইন সম্রাজ্ঞী থিওডরা।৮৮৫ সালে সম্রাট প্রথম বাসিলিস এক ফরমানে অ্যাথস কেবল সন্যাসিদের জায়গা বলে ঘোষণা দেন। সেই সঙ্গে একে ‘কুমারী মেরির বাগান’ বলে ঘোষণা করা হয় এবং এতে সন্ন্যাসী ছাড়া সাধারণ লোকদের প্রবেশ নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়।

বর্তমানে দ্বীপটিতে অর্থডক্স খ্রিষ্টানদের ২০টি মঠ রয়েছে। এসব মঠে ২ হাজার সন্ন্যাসী বাস করছেন।এদের অধিকাংশই গ্রিস, সাইবেরিয়া, রাশিয়া ও সার্বিয়াসহ পূর্ব ইউরোপের দেশ থেকে আসা।

দ্বীপটিতে হাজার বছরেরও বেশি সময় ধরে কোনো নারীর পা পড়েনি। এখানে নারীদের প্রবেশ পুরোপুরি নিষিদ্ধ। শুধু মানবীই নয়, বরং মুরগি থেকে শুরু করে স্ত্রী-জাতীয় কোনো প্রাণীই এখানে প্রবেশ করতে পারে না। তবে পাখিদের তো আর দরজা দিয়ে প্রবেশ করতে হয় না। সেক্ষেত্রে তারাই একমাত্র ব্যতিক্রম। তবে বাইরের দুনিয়ার ধার্মিক ও শান্ত স্বভাবের পুরুষরা চাইলে এক রাত অ্যাথসের ভেতরে থাকার সুযোগ পেতে পারেন। এ ব্যাপারে অনুমতির জন্য অবশ্য তাদের অনেক কাঠখড় পোড়াতে হবে।

সন্ন্যাসীদের মতে, নারীর অনুপস্থিতি তাদের জীবনকে আরো সহজ করেছে। তাদের দৃঢ় বিশ্বাস আধ্যাত্মিক জীবনের যে পথ তারা বেছে নিয়েছেন, নারী সেই জীবনব্যবস্থাকে পুরোপুরি নষ্ট করে দিতে পারে।

দ্বীপটিতে যেসব সন্ন্যাসী বাস করেন, তাদেরকে বাধ্যতামুলকভাবে আট ঘন্টা গির্জায় সময় ব্যয় করতে হয়। এরপর যে সময়টুকু থাকে তারা গির্জার বাইরেই কাটান। তবে গল্পগুজবের সুযোগ নেই এখানে। গির্জার সময় ছাড়া অন্য সময় প্রার্র্থনার মধ্য দিয়ে তাদের কাটাতে হয়। ঘুমাতে যাওয়ার আগ পর্যন্ত ঈশ্বরের স্মরণে তাদের ঠোট নড়তে থাকে।

সন্ন্যাসীদের খাবার জোটে মোটে দুই বেলা। এ জন্য তারা ১০ মিনিট করে মোট ২০ মিনিট সময় পান। খাবারের মেন্যুতে কোনো ধরণের মাংসের উপস্থিতি নেই। খাবার টেবিলেও সন্যাসিদের আলোচনার সুযোগ নেই। কারণ ওই সময়েও তাদের ঈশ্বরকে স্মরণ করতে হয়।