Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

উচ্চশিক্ষার মান নিয়ন্ত্রণে আইন হচ্ছে

higher studyগবেষণার মাধ্যমে নতুন জ্ঞান সৃষ্টি ও তা বিতরণ— এই হচ্ছে উচ্চশিক্ষার মূল দর্শন। কিন্তু সে দর্শন থেকে বেশ দূরেই আছে দেশের উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো। বিশেষ করে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার মান নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে বিভিন্ন মহলে। তাই উচ্চশিক্ষার গুণগত মান নিয়ন্ত্রণে আইন করতে যাচ্ছে সরকার।

গত কয়েক বছরে দেশে উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান অনেক বেড়েছে। নতুন করে অনুমোদন দেয়া ছয়টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশে বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা ১২৬। এসব উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও প্রতিষ্ঠানের প্রোগ্রামগুলোর অ্যাক্রেডিটেশন (অভিস্বীকৃতি) প্রদান ও মান নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে সম্প্রতি ‘অভিস্বীকৃতি (অ্যাক্রেডিটেশন) কাউন্সিল আইন, ২০১৬’-এর খসড়া তৈরি করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। এ অভিস্বীকৃতি কাউন্সিল উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করে তাদের স্বীকৃতি ও কনফিডেন্স সনদ প্র্রদান করবে। দেশের সব সরকারি, বেসরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয় এ আইনের আওতায় থাকবে।

chardike-ad

এ বিষয়ে জানতে চাইলে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেন, উচ্চশিক্ষার মানোন্নয়নে একটি অ্যাক্রেডিটেশন কাউন্সিল থাকা দরকার। এ কাউন্সিল গঠনের লক্ষ্যে একটি খসড়া আইন তৈরি করা হয়েছে। সরকারি হোক বা বেসরকারি, সব বিশ্ববিদ্যালয় এ আইনের আওতায় একই সারিতে থাকবে। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে শিগগিরই এ আইন চূড়ান্ত করা হবে। তবে এ আইন বাস্তবায়ন হলে কিছু বিশ্ববিদ্যালয় তাদের অস্তিত্ব হারাবে।

আইনের খসড়া অনুযায়ী, অ্যাক্রেডিটেশন কাউন্সিল একাডেমিক প্রোগ্রাম ও উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে স্বীকৃতি দেবে।

অ্যাক্রেডিটেশন সার্টিফিকেট পাওয়ার জন্য উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো প্রয়োজনীয় তথ্যাদি ও ফি প্রদানের মাধ্যমে কাউন্সিল বরাবর আবেদন করবে। এর পর কাউন্সিলের বিশেষজ্ঞ সদস্যের একটি অ্যাসেসমেন্ট কমিটি সরেজমিন বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্যাবলি পর্যবেক্ষণ করে মতামতসহ প্রতিবেদন দেবে। পরবর্তীতে প্রয়োজনীয় শর্তসাপেক্ষে কাউন্সিল উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে কনফিডেন্স ও অ্যাক্রেডিটেশন সনদ দেবে।

কোয়ালিটি অ্যাসিউরেন্স ও অ্যাক্রেডিটেশন বিষয়ে অভিজ্ঞ জ্যেষ্ঠ অধ্যাপকদের কাউন্সিলের চেয়ারম্যান ও সদস্য করা হবে। চেয়ারম্যান কাউন্সিলপ্রধানের দায়িত্বে থাকবেন। বাংলাদেশের স্বীকৃত যেকোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথিতযশা তিনজন অধ্যাপক পদমর্যাদার শিক্ষাবিদ পূর্ণকালীন সদস্য হবেন। এক্ষেত্রে তাদের বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে ২০ বছর শিক্ষকতার অভিজ্ঞতা ও অধ্যাপক হিসেবে ১০ বছরের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন হতে হবে।

কোয়ালিটি অ্যাসিউরেন্স ইউনিটের মাধ্যমে নির্দিষ্ট ক্ষেত্র ও মানদণ্ডের আলোকে উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও এর আওতাভুক্ত প্রোগ্রামগুলোর যোগ্যতা নিরূপণ করা হবে বলে খসড়ায় উল্লেখ রয়েছে। অ্যাক্রেডিটেশন কাউন্সিলের সংবিধিতে বলা হয়েছে, মেডিকেল, ইঞ্জিনিয়ারিং, এগ্রিকালচার, বিজনেস, আইন, সোস্যাল সায়েন্স, আর্টস, বায়োলজিক্যাল সায়েন্স, ফিজিক্যাল সায়েন্সসহ অন্যান্য বড় ডিসিপ্লিনের জন্য আলাদা অ্যাক্রেডিটেশন কমিটি থাকবে।

খসড়ায় অভিস্বীকৃতি কাউন্সিল আইনের প্রাধান্য বিষয়ে বলা হয়েছে, বিদ্যমান আইনগুলোর সঙ্গে অসঙ্গতি বা দ্বন্দ্ব সুষ্ঠু হইলে এ আইন বলবৎ থাকবে।

অভিস্বীকৃতি (অ্যাক্রেডিটেশন) কাউন্সিল আইন, ২০১৬-এর ১৩ ধারায় কিছু নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। এগুলো হলো— কাউন্সিল প্রদত্ত সার্টিফিকেট ছাড়া কোনো প্রতিষ্ঠান তাদের প্রসপেক্টাস বা ব্রশিয়রে অভিস্বীকৃতিপ্রাপ্ত উল্লেখ করতে পারবে না, কোনো উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সার্টিফিকেট প্রত্যাহার করার পর ওই প্রতিষ্ঠান কাউন্সিল কর্তৃক নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সার্টিফিকেট সমর্পণে বাধ্য থাকবে এবং কোনো উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিদর্শনকালে কোনোরূপ ভুল তথ্য উপস্থাপন বা কোনো তথ্য গোপন করা যাবে না।

১৩ নং ধারার এসব নিষেধাজ্ঞা ভঙ্গে শাস্তির ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে। দোষ প্রমাণ হলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে অনূর্ধ্ব ১০ লাখ টাকা জরিমানা বা পাঁচ বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত করা যাবে।

আইনের এ খসড়া কবে চূড়ান্ত করা হবে, জানতে চাইলে শিক্ষা সচিব মো. সোহরাব হোসাইন বলেন, দেশের উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোয় আবাসন সুবিধা ও গবেষণা কম হওয়ায় আমরা বিশ্ব র্যাংকিংয়ে পিছিয়ে পড়ছি। উচ্চশিক্ষার মানোন্নয়নে একটি খসড়া আইন ও একটি খসড়া সংবিধি প্রণয়ন করা হয়েছে। শিক্ষক সমাজের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে আইন চূড়ান্ত করা হবে। এ আইনে শিক্ষাবিদদের আশার প্রতিফলন ঘটবে।

এর আগে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার মানোন্নয়ন ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে উন্নীতকরণের লক্ষ্যে ২০১০ সালে একটি খসড়া নীতিমালা তৈরি করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে জমা দেয় ইউজিসি। ইউজিসির সর্বশেষ প্রকাশিত বার্ষিক প্রতিবেদনেও অ্যাক্রেডিটেশন কাউন্সিল প্রতিষ্ঠার জন্য সরকারের কাছে সুপারিশ করা হয়।

ইউজিসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবদুল মান্নান এ বিষয়ে বলেন, ইউজিসি নীতিমালা প্রণয়ন করলেও অ্যাক্রেডিটেশন কাউন্সিল হবে একটি স্বতন্ত্র প্রতিষ্ঠান। এ কাউন্সিল দেশের উচ্চশিক্ষার মানোন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।

অ্যাক্রেডিটেশন কাউন্সিলের প্রয়োজনীয়তা বিষয়ে ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির বোর্ড অব ট্রাস্টির চেয়ারপারসন ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন বলেন, আমরা দীর্ঘদিন ধরে এ কাউন্সিল গঠনের প্রস্তাব করে আসছি। দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশ ও মিয়ানমার ব্যতীত সব দেশে অ্যাক্রেডিটেশন কাউন্সিল রয়েছে। তাই অতিদ্রুত এ কাউন্সিল গঠন করা দরকার। এছাড়া ন্যাশনাল ফ্রেমওয়ার্ক না থাকলে বিশেষজ্ঞদের মতামতের ভিত্তিতে তা প্রণয়ন করতে হবে।

এদিকে খসড়া আইনে কিছু সংযোজন ও বিয়োজনের প্রস্তাব দিয়েছে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সমিতি। প্রস্তাবনার মধ্যে রয়েছে— কাউন্সিলের তিনজন পূর্ণকালীন সদস্যের মধ্যে একজন অধ্যাপক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নেয়া ও দণ্ডের বিধান ব্যক্তিপর্যায়ে না রেখে প্রতিষ্ঠান পর্যায়ে নিয়ে অর্থদণ্ডের বিধান রাখা।