Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

কোরিয়ানদের মাঝে দেশ ত্যাগের হার বাড়ছে

কোরিয়ান নাগরিকদের মধ্যে স্থায়ীভাবে দেশত্যাগের হার আশংকাজনকভাবে বাড়ছে। কেউ কাজ না পেয়ে দেশ ছাড়ছেন, কেউবা আবার কোরিয়ান সমাজের ‘প্রতিযোগিতামূলক’ স্বভাবের সাথে তাল মেলাতে না পেরে বিদেশ বিভূঁইয়ে পাড়ি জমাচ্ছেন।

কোরিয়ার আইন মন্ত্রণালয়ের ভাষ্য অনুসারে ২০১৩ থেকে ২০১৫ সালের জুলাই মাস পর্যন্ত ৫২ হাজার ৯৩ জন কোরিয়ার নাগরিকত্ব ত্যাগ করেছেন। আর অন্য কোন দেশ থেকে কোরিয়ায় গিয়ে নাগরিকত্ব গ্রহণ করেছিলেন এমন ব্যক্তিদের মধ্যে ১ হাজার ৩৩২ জন গত বছর দ. কোরিয়ার নাগরিকত্ব ছেড়ে দিয়েছেন যা কিনা আগের বছরের (৬৭৭) চেয়ে ৯৫ শতাংশ বেশী।

chardike-ad

একই সময়ে দ্বৈত নাগরিকত্বের অধিকারি আরও ১৮ হাজার ১৫০ জন কোরিয়ার নাগরিকত্ব বর্জন করেছেন। এদের মধ্যে ৬১ শতাংশ বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে, ১৮ শতাংশ কানাডা, ১১ শতাংশ জাপান ও ৬ শতাংশ অস্ট্রেলিয়ায় নাগরিকত্ব নিয়ে বসবাস করছেন।

বিপরীতে দ. কোরিয়ার নাগরিকত্ব লাভের জন্য আবেদনকারীর সংখ্যা ২০১১ সাল থেকেই হ্রাস পাচ্ছে। গত বছর মাত্র ১৭ হাজার বিদেশী কোরিয়ার নাগরিক হয়েছেন যা ২০১৩ সালের (২১ হাজার ২৬৬) তুলনায় ২৫ শতাংশ কম।

উল্লেখ্য, দ. কোরিয়ায় বর্তমানে চাকরির বাজার বেশ মন্দা যাচ্ছে। নতুনদের মাঝে বেকারত্বের হার বিগত ১৫ বছরের মধ্যে সবচেয়ে খারাপ অবস্থায় এসে দাঁড়িয়েছে। সদ্য পড়াশুনা শেষ করা তরুণদের জন্য চাকরি পাওয়াটা তাই দিনকে দিন কঠিন থেকে কঠিনতর হয়ে পড়ছে।

জুং নামের ২৭ বছর বয়সী এক তরুণ হন্যে হয়ে খুঁজে একটি চাকরি না পেয়ে এখন দেশ ছাড়ার পরিকল্পনা করছেন, “এমন কোন দেশে চলে যেতে চাই যেখানে কাজের সুযোগ অনেক বেশী আছে।”

সন্তানদের অনিশ্চিত ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে বাবা-মারাও এখন বিদেশে পাড়ি জমাতে শুরু করেছেন। ৪৬ বছর বয়সী ছো যেমন পরিবার নিয়ে চলে গেছেন ফিলিপাইন, “কোরিয়ার সর্বনাশা শিক্ষা ব্যবস্থায় আমি আমার মেয়েদের জীবন দুর্বিষহ করতে চাই নি। যে সমাজের কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় মেধা বলতে কেবল পরীক্ষার খাতায় প্রাপ্ত নম্বর বোঝে সে সমাজ সময় থাকতে পরিত্যাগ করাটাই শ্রেয় মনে করেছি। এখানেই কি শেষ? পড়াশুনার পাট চুকিয়ে আবার এমন একটা চাকরির জন্য যুদ্ধ কর যে চাকরি আপনি আদৌ করতেই আগ্রহী নন।”

বিদেশে পড়াশুনা ও অভিবাসনের ব্যাপারে সহায়তা দিয়ে থাকতে এমন একটি সংস্থা কুকজে ইমিগ্রেশন ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশনের প্রধান পার্ক সু ইয়ন বলছেন, এখনকার যেসব কোরিয়ান তরুণ পড়াশুনা করতে বাইরে যেতে চাচ্ছেন তাঁরা যতোটা না পড়াশুনার বিষয়ে জানতে আগ্রহী, তারচেয়ে ঢের বেশী আগ্রহী বিদেশে স্থায়ীভাবে বসবাসের সুযোগ সম্পর্কে খোঁজ নিতে।

কিন্তু ব্যাপারটা তো এমন নয় যে কোরিয়ানরা আগে কখনও কাজের খোঁজে অন্য দেশে যায় নি। তবে বর্তমানে ধারাবাহিক উন্নতির পথে থাকা দেশটি ছেড়ে বিদেশ যাবার হার কেন এতো বাড়ছে? পার্ক মনে করছেন উন্নত জীবনের নিশ্চয়তার খোঁজেই কোরিয়ানদের এভাবে দলে দলে দেশত্যাগ, “আগে কেবল তাঁরাই দেশ ছেড়ে যেতো যাদের খেয়েপরে বাঁচার জন্য অন্য কোন গতি ছিল না। কিন্তু এখনকার লোকজন দেশ ছাড়ে মূলত সন্তানদের ভবিষ্যৎ তথা নিজেদের জন্য নিরাপদ জীবন নিশ্চিত করার প্রয়াসে।”