Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

শুধু আমদানি নির্ভরতায় ঝুঁকি দেখছে জাইকা

jicaদেশে নির্মাণাধীন ও প্রস্তাবিত কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের সংখ্যা ২৫টি। বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো পরিকল্পনা করা হয়েছে আমদানিনির্ভর কয়লার ভিত্তিতে। যদিও রফতানিকারক দেশগুলোর অনেকেই নিজস্ব চাহিদার কথা বিবেচনায় নিয়ে কয়লা রফতানি সীমিত করে এনেছে। এছাড়া আমদানি করা কয়লা হ্যান্ডলিংয়ের সঙ্গেও বড় অঙ্কের অর্থ জড়িত। তাই শুধু আমদানিনির্ভর কয়লায় বিদ্যুৎ প্রকল্পগুলো টেকসই হবে না বলে মনে করে জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা (জাইকা)।

‘পাওয়ার সিস্টেম মাস্টারপ্ল্যান ২০১৬’-এর চূড়ান্ত খসড়া গত জুনে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ে জমা দিয়েছে জাইকা। এতে আমদানিনির্ভর কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের ঝুঁকির বিষয়টি উঠে এসেছে।

chardike-ad

খসড়ায় বলা হয়েছে, আন্তর্জাতিক বাজারে বর্তমানে কয়লার দাম কম হওয়ায় দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোয় কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র দ্রুত বাড়াচ্ছে। একই কারণে এ ধরনের প্রকল্পের সংখ্যা বাড়ছে বাংলাদেশেও। তবে সবাই কয়লানির্ভর হলে ভবিষ্যতে এর সরবরাহ ও দাম অস্থিতিশীল হয়ে পড়বে।

চীন ও ভারতের অভ্যন্তরীণ চাহিদার কারণে কয়লার আন্তর্জাতিক বাজার অস্থিতিশীল হতে পারে বলে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন গবেষণায় উঠে এসেছে। যুক্তরাষ্ট্রের এনার্জি ইনফরমেশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের পরিসংখ্যান বলছে, চীন তাদের চাহিদার ৭ শতাংশ কয়লা আমদানি করে। ভারত আমদানি করে চাহিদার ১১ শতাংশ। দুটি দেশেই কয়লাভিত্তিক অনেক শিল্প রয়েছে। এ চাহিদা ক্রমেই বাড়ছে। দেশ দুটির বর্ধিষ্ণু অভ্যন্তরীণ চাহিদা বিশ্ববাজারে কয়লা সরবরাহে নানা অনিশ্চয়তা তৈরি করতে পারে।

আন্তর্জাতিক বাজারে কয়লার গুরুত্বপূর্ণ উত্স দেশ ইন্দোনেশিয়া। অভ্যন্তরীণ মজুদ ও চাহিদার কথা বিবেচনায় নিয়ে কয়লা রফতানিতে ধীরে ধীরে নিষেধাজ্ঞা জারি করছে দেশটি। এর ওপর রয়েছে আমদানি করা কয়লা হ্যান্ডলিং ও পরিবেশের বিষয়টি।

টেকসই ফলাফল পেতে তাই দেশীয় কয়লা উত্তোলনের ওপর জোর দেয়ার সুপারিশ করেছে জাইকা। মাস্টারপ্ল্যানের খসড়ায় সংস্থাটি বলেছে, বাংলাদেশে উন্নত মানের কয়লা রয়েছে। এ কয়লা উত্তোলনের প্রক্রিয়া যদিও এখনই শুরু করা হয়, তার পরও উত্তোলনে অন্তত ১০ বছর লেগে যাবে। কয়লা খনিগুলো উন্নয়নে তাই এখনই প্রস্তুতি নেয়া প্রয়োজন।

এখন পর্যন্ত দেশে কয়লা খনি আবিষ্কৃত হয়েছে সাতটি। এগুলো হলো— বগুড়ার কুচমা; জয়পুরহাটের জামালগঞ্জ; দিনাজপুরের বড়পুকুরিয়া, দীঘিরপাড়া ও ফুলবাড়ী; রংপুরের খালাশপির এবং সুনামগঞ্জের টাকেরঘাট। এর মধ্যে জামালগঞ্জের পাহাড়পুর খনিতে ১৫০ কোটি, বড়পুকুরিয়ার ৩০ কোটি ও সুনামগঞ্জে ৩০ কোটি টন কয়লা মজুদ রয়েছে বলে জানা গেছে।

জাইকা বলছে, বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর জ্বালানি হিসেবে ২০৪১ সাল নাগাদ কয়লা প্রয়োজন হবে ৭ কোটি ১০ লাখ টন। এর মধ্যে ছয় কোটি টনই আমদানি করতে হবে। আর দীঘিরপাড়া, খালাশপির ও ফুলবাড়ী কেন্দ্র উন্নয়ন সম্ভাবনা ধরে নিয়েই বলা হয়েছে দেশীয়ভাবে উৎপাদন হবে ১ কোটি ১০ লাখ টন। যদিও এ উৎপাদন নিয়ে সংশয় রয়েছে।

জানতে চাইলে বিদ্যুৎ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব ড. আহমাদ কায়কাউস বণিক বার্তাকে বলেন, সুযোগ থাকলে অন্যের সম্পদের ওপর নির্ভর না করাই ভালো। তবে দেশীয় কয়লা উত্তোলন করা হলে পরিবেশের ওপর কী প্রভাব পড়ে, সে বিষয়টিও বিবেচনায় নিতে হবে।

তিনি বলেন, কোনো বিষয় নিয়ে যখন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়, তখন বিকল্প একাধিক খাত বা উত্সকে বিবেচনায় রাখতে হয়। দেশীয় কয়লা ব্যবহার করা হবে কিনা, হলে কখন থেকে তাও রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের বিষয়। তবে জাইকার পর্যবেক্ষণগুলো এখনো চূড়ান্তভাবে গ্রহণ করা হয়নি। পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে।

আমদানি নির্ভরতায় টেকসই না হওয়ার পেছনে হ্যান্ডলিং খরচের বিষয়টিকেও গুরুত্ব দিয়েছে জাইকা। তারা বলছে, সাগরে ভাসমান ক্রেনের মাধ্যমে কয়লা লোড-আনলোডের খরচ অনেক বেশি। মানের বিষয়ে সংস্থাটি বলছে, কয়লা সরবরাহের প্রক্রিয়ার ফলে জীববৈচিত্র্যের ওপর এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।

দেশীয় কয়লা উত্তোলনে জনমতের সঙ্গে বোঝাপড়ার বিষয়টিও এসেছে জাইকার প্রতিবেদনে, যেখানে সরকারকে উদ্যোগী হতে বলা হয়েছে। মজুদ বেশি এমন খনি থেকে কয়লা উত্তোলনে এখনই প্রস্তুতি নেয়া উচিত বলে জানিয়েছে সংস্থাটি। এক্ষেত্রে তারা উল্লেখ করেছে দীঘিরপাড়া ও খালাশপির কয়লা খনির কথা। বড়পুকুড়িয়া খনিতে পরীক্ষামূলক উত্তোলনের পর ক্ষুদ্র পরিসরে উন্মুক্ত পদ্ধতিতে কয়লা উত্তোলনেরও পরামর্শ দিয়েছে তারা।

তবে জাইকার পর্যবেক্ষণ ইতিবাচক বলে মন্তব্য করেন জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. ম তামিম। তিনি বলেন, কয়লা আমদানির ক্ষেত্রে মান ও মূল্য নিয়ে এক ধরনের ভালনারেবলিটি থাকেই। তবে বাণিজ্য ছাড়া বিশ্ব অর্থনীতি চলে না। দাম আন্তর্জাতিক বাজারের ওপর অনেকটা নির্ভর করলেও মানের দিকে সতর্ক থাকতে হবে।

উত্তোলন পদ্ধতি সম্পর্কে তিনি বলেন, যেখানে কয়লা উত্তোলন হবে, সে এলাকার জনগণের যাতে ক্ষতি না হয়, সেটি দেখতে হবে। যে পদ্ধতিতে খনন করলে ক্ষতি কম হয়, সেটি গ্রহণ করতে হবে।

বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, কয়লাভিত্তিক ২৫টি বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদনক্ষমতা ২২ হাজার ৯২ মেগাওয়াট। এর মধ্যে সরকারি প্রকল্প রয়েছে সাতটি। এগুলোর উৎপাদনক্ষমতা ৭ হাজার ৯৫৫ মেগাওয়াট। বেসরকারি আটটি প্রকল্পে উৎপাদনক্ষমতা ৩ হাজার ৮১৭, নয়টি জয়েন্ট ভেঞ্চার প্রকল্পে ১০ হাজার ১৭০ ও একটি বাণিজ্যিক কেন্দ্রের বিদ্যুৎ উৎপাদনক্ষমতা ১৫০ মেগাওয়াট।

 বণিকবার্তা থেকে।