Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

জিতে গেলেন পুতিনও!

base_1478703045-putin-trump

ট্রাম্পের বিজয় ঘোষিত হওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্রের ইউরোপীয় মিত্রদের প্রতিক্রিয়াটা সম্ভবত এরকমই ছিল। তবে ক্রেমলিন কিন্তু খুশিই। ট্রাম্পের বিজয় সংবাদ শুনে পুতিন নিশ্চয় শ্যাম্পেনের ছিপি খুলবেন! কারণ ট্রাম্প তার মতোই ন্যাটো এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) সমালোচক। এছাড়া আইএস এবং সিরিয়া ইস্যুতে ট্রাম্পের অবস্থান পরোক্ষভাবে পুতিনের পক্ষেই যায়।

chardike-ad

রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিসেবে ট্রাম্প অনেক আগ থেকেই ন্যাটোর বিষয়ে সংশয় প্রকাশ করে আসছেন। ২০০০ সালে প্রকাশিত তার লেখা ‘আমেরিকা উই ডিজার্ভ’ বইতে ট্রাম্প বলেন, আমেরিকান হস্তক্ষেপ ছাড়াই পূর্ব ইউরোপীয় দেশগুলো তাদের পুরনো বিরোধ মিটিয়ে ফেলুক এটা চান তিনি।

সাবেক যুগোস্লাভিয়া যুদ্ধের অভিজ্ঞতাই সম্ভবত ট্রাম্পকে এমন দৃষ্টিভঙ্গি দিয়েছে। বর্তমান সময়ে ইউরোপের নিরাপত্তা উদ্বেগ মূলত রাশিয়ার পুতিনের দিক থেকে আসা হুমকির প্রতি নিবদ্ধ।

ট্রাম্প কিন্তু এসব নিয়ে ভাবছেন না। নির্বাচনী প্রচারণার সময় তিনি আভাস দিয়েছেন, ন্যাটো জোটের যেসব রাষ্ট্র তাদের প্রতিরক্ষা খাতে বাজেটে নির্ধারিত পুরো অংশ ব্যয় করবে যুক্তরাষ্ট্র শুধু তাদেরকেই রক্ষা করবে। অর্থাৎ প্রতিরক্ষায় বাজেট বাড়ানোর কথা বলছেন তিনি।

ট্রাম্পের সম্ভাব্য পররাষ্ট্র মন্ত্রী নিউট গিংরিচ বলেছেন, এস্তোনিয়াকে রাশিয়ার আক্রমণ থেকে যুক্তরাষ্ট্রের রক্ষা করা
উচিত কি না সে বিষয়ে তিনি সন্দিহান। কারণ ছোট এ বাল্টিক রাষ্ট্রটি সেন্ট পিটার্সবার্গের একটি উপশহরের মধ্যে ছিল। যদিও রুশ শহরটি থেকে এদেশের সীমান্ত বেশ দূরে, ৫০ মাইল। তাছাড়া এস্তোনিয়া হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র যারা ন্যাটো নির্ধারিত তাদের মোট জিডিপির ২ শতাংশ প্রতিরক্ষা খাতে ব্যয় করে।

তবে ১৯৪১ সাল থেকে ইউরোপের নিরাপত্তায় যুক্তরাষ্ট্রের দেয়া অঙ্গীকার ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হওয়ায় বেশ ধাক্কা খাবে। কারণ নিজেদের নিরাপত্তার জন্য ন্যাটোর সামরিক শক্তি, গোয়েন্দা তথ্য ও দক্ষ কূটনীতির সহায়তা পেতে ইউরোপ এখনো যুক্তরাষ্ট্রের ওপর নির্ভরশীল।

ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গির ব্যক্তি হিসেবে ট্রাম্প এখন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। ফলে ইউরোপীয় দেশগুলো এখন তাদের এ দুর্বলতা ঘোচাতে মরিয়া হয়ে উঠবে। এখন তারা আফসোস করবে কেন আরো আগে এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেয়নি। যেখানে
জ্যেষ্ঠ মার্কিন কর্মকর্তারা বেশ কয়েক বছর ধরেই ইউরোপীয় দেশগুলোকে প্রতিরক্ষা ব্যয় বাড়ানোর তাগিদ দিয়ে আসছেন।

অন্যদিকে ট্রাম্পের জয়ে বলতে গেলে একজন মিত্র পেয়ে গেলেন রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিন। তার ১৭ বছরের শাসনামলে বলা যায় সবচেয়ে বড় সহযোগী পেলেন তিনি। পুতিনের অন্যতম লক্ষ্যই হচ্ছে ইউরোপীয় নিরাপত্তা রূপরেখাকে নতুন করে লেখা।

ফলাফল ঘোষণার পরই যুক্তরাষ্ট্রের ৪৫তম প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে অভিনন্দন জানিয়েছেন রুশ প্রেসিডেন্ট। এক বার্তায় তিনি বলেছেন, তিনি আশা করেন মস্কো এবং ওয়াশিংটনের মধ্যে সংলাপ শুরু হবে এবং তা উভয়দেশের স্বার্থ সংরক্ষিত রেখেই একটা সমঝোতায় পৌঁছানো সম্ভব হবে।

পশ্চিমা দৃষ্টিভঙ্গি থেকে দেখলে, ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের ভাঙ্গনের পর থেকে ইউরোপের দেশগুলোর নিরাপত্তা প্রশ্নাতীতভাবে ভালো অবস্থানে আছে। বড় রাষ্ট্রগুলো তাদের জাতীয় স্বার্থ রক্ষার্থে আত্মনির্ভরশীল হয়েছে। ছোট রাষ্ট্রগুলো তাদের অধিকার ও অসঙ্গতি নিয়ে কথা বলতে পারছে। বলপ্রয়োগ বা অস্ত্রের ব্যবহার ছাড়াই পারস্পরিক বিরোধ আদালত ও আলোচনার টেবিলে নিষ্পত্তি করা যাচ্ছে।

তবে ক্রেমলিনের দৃষ্টিতে, এ ধরনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা অসহ্য। তাদের ক্ষোভ, এই খেলার নিয়মটা লেখা হয়েছে সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে যাওয়ার পর রাশিয়া যখন দুর্বল ছিল। এই নিয়মটা বিশ্বের বৃহত্তম দেশ এবং ইউরোপের বৃহত্তম ভূখণ্ডকে প্রতিপক্ষ খেলোয়াড়ের মতো বিবেচনায় রেখে প্রণয়ন করা হয়েছে।

রাশিয়া সব সময়ই ক্ষমতার ভারসাম্য বিন্দুতে থাকতে চেয়েছে। পশ্চিমে সে তার সক্ষমতা প্রমাণে ২০০৭ সালে এস্তোনিয়াতে সাইবার হামলা চালিয়েছে। ২০০৮ সালে জর্জিয়া যুদ্ধে জড়িয়েছে এবং ২০১৪ সালে ইউক্রেনের কাছ থেকে ক্রিমিয়াকে কেড়ে নিতে চেয়েছে। পশ্চিমা বিরোধিতা উপেক্ষা করে সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদকে সব ধরনের সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছেন পুতিন। তুরস্কে ব্যর্থ সামরিক অভ্যুত্থানের পর এরদোয়ানকে সমর্থন দেন।

রাশিয়ার এই আচরণ ন্যাটোর মধ্যে বিভক্তি ও অবিশ্বাস তৈরি করেছে। তাছাড়া মার্কিন বিদ্রোহী চর এডওয়ার্ড স্নোডেনকে আশ্রয় দেয়াও এখানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। এছাড়া পশ্চিমা দেশগুলো এবং বিশেষ করে মার্কিন নির্বাচনী প্রচারণায়ও রাশিয়ার প্রভাব আলোচনায় এসেছে।

এবং এসব আইন ভাঙার কারণে রাশিয়াকে সেভাবে মূল্য দিতে হয়নি। আর এখন সে এমন প্রেসিডেন্টকে প্রতিপক্ষ হিসেবে পেল যিনি নিজেও এসব আইনে বিশ্বাস করেন না। ইউরোপের রাজনীতির মাঠ এখন পুতিনের জন্য প্রস্তুত। খেলা এখন তার হাতেই!

দ্য ইকোনমিস্টের সিনিয়র এডিটর এডওয়ার্ড লুকাস এর নিবন্ধ থেকে ভাষান্তরিত