২০০৬ সালের ডিসেম্বর মাসে ঈদুল আজহার দিন সকালে আম্মানে এক বাড়িতে বসে টেলিভিশনের সামনে বসে ছিলেন রাগাদ হুসেইন, তার বোন ও তাদের সন্তানেরা। বাবা সাদ্দাম হোসেকে ফাঁসি কাষ্ঠে নিয়ে যাওয়ার দৃশ্য দেখা যাচ্ছিল টিভি পর্দায়। ঘরের সবক’টি প্রাণির চোখ ভিজে ওঠে তীব্র বেদনা আর অসহায়ত্বে।
১৯৭৯ সাল থেকে ২০০৩ সালে মার্কিন হামলায় ক্ষমতাচ্যুত ও আটক হওয়ার আগ পর্যন্ত ইরাক শাসন করেছেন যেই মানুষটি সেই প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হোসেন এই ঈদের দিন ফাঁসিতে ঝুললেন।
সেদিন সরাসরি টেলিভিশন সম্প্রচারে দেখানো হয়, ফাঁসির দড়ি গলায় জড়ানোর আগে সাদ্দাম হোসেনের চোখে কোনো পানি নেই। এমনকি তিনি ফাঁসির টুপি পরতেও অস্বীকার করেন। হঠাৎ করেই এ দৃশ্য সম্প্রচার বন্ধ করে দেয় ইরাকি টেলিভিশন চ্যানেলটি। তবে ফাঁসি কার্যকরের কয়েক ঘণ্টা পর একটি ভিডিও প্রকাশ পায়, যেখানে সাদ্দাম হোসেনের ফাঁসির দৃশ্য পুরোটা দেখা যায়। ভিডিওটি একটি মোবাইল ক্যামেরায় ধারণ করা হয়েছিল।
ভিডিওটি ক্ষমতাচ্যুত একজন নেতাকে অপমানের দৃষ্টান্ত বহন করে চলেছে। ১৯৮২ সালে ইরাকের শিয়া সম্প্রদায়ের ১৪৮ জন মানুষকে হত্যার দায়ে মানবতাবিরোধী অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হয়েছিলেন সাদ্দাম। ভিডিওতে দেখা যায়, কিছু মানুষ তার ফাঁসিতে জঙ্গি শিয়া ধর্মীয় নেতা মোকতাদা আল সদরের নামে স্লোগান দিচ্ছে।
বাবার ফাঁসি কার্যকর হওয়ার ১০ বছর পর মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএনকে একটি সাক্ষাৎকার দেন সাদ্দাম হোসেনের বড় মেয়ে রাগাদ। তিনি বলেন, বাবার ফাঁসির দৃশ্য কখনো দেখেননি, দেখতেও চান না।
২০০৩ সালে ইরাকে মার্কিন হামলার পর থেকেই জর্দানের রাজধানী আম্মানে শরণার্থী হিসেবে আশ্রয় নিয়েছেন রাগাদ। সেখান থেকে সিএনএনকে টেলিফোনে দেয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, তার বাবার মৃত্যুর বিবরণ অত্যন্ত ঘৃণ্য এবং বেদনাদায়ক। তবুও এটি সম্মানজনক মৃত্যু।
তিনি বলেন, আমি মনে করি না তার মৃত্যু এর চেয়েও ভালো হতে পারতো। কারণ তিনি এমনভাবে মৃত্যুকে বরণ করেছেন, যা আমাকে, আমার বোনকে এবং আমাদের সন্তানকে গর্বিত করেছে। যারা তাকে ভালোবাসতেন তাদেরও গর্বিত করেছে এবং তাদের হৃদয়ে রয়েছে তার জন্য একটি জায়গা।
সাক্ষাৎকারে ইরাকে সহিংসতা ও বিশৃঙ্খলার জন্য যুক্তরাষ্ট্রকে দায়ী করেছেন রাঘাদ। এর সঙ্গে তিনি এ প্রত্যাশাও করেছেন, নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তার পূর্বসূরিদের চেয়ে আলাদা হবেন।
রাগাদ বলেন, ডোনাল্ড ট্রাম্প কেবল নেতৃত্বে গেছেন। আপাতদৃষ্টিতে মনে হচ্ছে, তার রাজনৈতিক প্রজ্ঞা রয়েছে, যা আগের প্রেসিডেন্টের চেয়ে তাকে ব্যতিক্রমভাবে উপস্থাপন করবে। তিনি তার পূর্বসূরীদের ভুলগুলো জনসম্মুখে প্রকাশ করবেন, বিশেষ করে ইরাকে কী ঘটেছিল এবং আমার বাবার সঙ্গে কী হয়েছিল।
প্রসঙ্গত, ডোনাল্ড ট্রাম্প তার নির্বাচনী প্রচারণায় ইরাক যুদ্ধের বিরোধিতা করে বলেন, সাদ্দাম হোসেন সন্ত্রাস দমনে একজন দক্ষ নেতা ছিলেন। যদিও তিনি ইরাক যুদ্ধের আগে ও পরে প্রকাশ্য সাক্ষাৎকারে ইরাকে মার্কিন আগ্রাসনকে সমর্থন করে সাদ্দাম হোসেনকে খারাপ মানুষ হিসেবে উল্লেখ করেন।
সূত্র: সিএনএন