Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

আমিরাতে বর পাচ্ছেন না পাকিস্তানি তরুণীরা

pakistani-girlমধ্যপ্রাচ্যের দেশ আরব আমিরাতে পাড়ি জমানো পাকিস্তানি তরুণীদের হতাশা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। অধিকাংশ তরুণীরা জীবনসঙ্গী সঙ্কটে ভুগছেন। খুঁজলেও সহজে পাচ্ছেন না পছন্দের বর।

পাকিস্তানি প্রবাসী নিলার বয়স এখন ৩৬ বছর। বিয়ের বিষয়টি এখন আর অগ্রাধিকার তালিকায় নেই তার। আমিরাতে তিনি ও তার পরিবার দীর্ঘদিন ধরে উপযুক্ত পাত্র খুঁজেছেন। কিন্তু সব চেষ্টা ব্যর্থ হয়ে যাওয়ায় এখন নিজের একটি পরিবার গড়ার স্বপ্ন, এমনকি জীবনসঙ্গীর আশাও ছেড়ে দিয়েছেন তিনি।

chardike-ad

নিলার এক ঘণিষ্ঠ বান্ধবী আমিরাতের জাতীয় দৈনিক খালিজ টাইমসকে বলেন, তার কাছে বিয়ের অনেক প্রস্তাব এসেছিল। কিন্তু বিভিন্ন কারণে শেষ অবধি কেউই বিয়ে পর্যন্ত পৌঁছাতে পারেনি।

দুবাইয়ে পরিবার নিয়ে বসবাস করছেন নিলা। কাজ করেন শারজাহ শহরে; নিজেকে সবসময় কাজের মধ্যেই ব্যস্ত রাখেন তিনি। আমিরাতে বর সঙ্কটে থাকা পাকিস্তানি তরুণী শুধু নিলাই নন। আরো অনেক পাকিস্তানি তরুণী একই ধরনের সঙ্কটে ভুগছেন।

আমিরাতে বিভিন্ন ধরনের সামাজিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত পাক নারী আয়েশা সোহালী বলেন, এখানে এর প্রধান কারণ সামাজিক সার্কেলের অভাব।

তিনি বলেন, আমরা এখানে অনেক লোককে চিনি, কিন্তু তারা বিভিন্ন দেশের ও সম্প্রদায়ের। এছাড়া পারিবারিক ও সামাজিক আয়োজন খুবই সীমিত। প্রাপ্তবয়স্ক দুই মেয়ের জন্য আমিরাতে বর খুঁজছেন পাকিস্তানি এই নারী।

সামাজিক যোগাযোগ বিচ্ছিন্নতার কারণে এখানে তরুণীরা বিয়ে করতে পারছেন না। তিনি বলেন, পাকিস্তানে বিয়ে ও অন্যান্য সামাজিক অায়োজন পরষ্পরকে জানতে সহায়তা করে। একই সঙ্গে বিয়ের ব্যবস্থাও হয়ে যায়। কিন্তু এখানে এসব দেখা যায় না।

তবে এখানে বিয়ে করতে ব্যর্থ অনেক তরুণ-তরুণী সঠিক সঙ্গীর খোঁজে দেশে ফিরে যাচ্ছেন। আয়েশা সোহালীর মতো অনেক প্রবাসী বাবা-মা তাদের সন্তানদের জন্য পাত্র-পাত্রী খুঁজছেন। সন্তানের জন্য পাত্র খুঁজে না পাওয়ায় পাকিস্তানি বাবা-মা’রা হতাশায় ভুগছেন। পাকিস্তানি তরুণ-তরুণীদের জীবনসঙ্গী খুঁজতে সহায়তার জন্য সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি গ্রুপ চালু করেছেন তিনি। ওই গ্রুপে নিবন্ধনের পর যারা বিয়ে করতে আগ্রহী তাদের সঙ্গে আলোচনা করতে পারেন।

দুঃস্বপ্নের ঘটকালি
আয়েশা বলেন, এখানে পুরুষ অথবা নারীদের জন্য ঘটকালি করাটা খুব স্বাভাবিক কোনো ঘটনা নয়। কিন্তু অনেকেই এর বিনিময়ে পরিবারগুলোর কাছ থেকে অর্থ নেন এবং অনেক সময় কাজ করেন না। ২৫ বছর বয়সী সকিনার পরিবারে হাসি ফুটেছিল। এক ঘটক তাদেরকে বলেন, বরের পরিবার কোনো ধরনের যৌতুক নেবেন না।

সকিনা দুবাইয়ে পরিবারের সঙ্গে থাকেন এবং সেখানেই কাজ করেন। বিয়ের ব্যাপারে চূড়ান্ত আলোচনার জন্য বরের পরিবারের সদস্যরা সকিনাদের বাড়িতে আসেন। কিন্তু সকিনার পরিবারের আনন্দ মুহূর্তেই হতাশায় রূপ নেয়। দুবাইয়ে ব্যবসায়ীকভাবে প্রতিষ্ঠিত করে দিলেই সকিনাকে বিয়ে করবেন বলে জানায় বর।

তবে এই সমস্যা শুধু তরুণীদের ক্ষেত্রেই নয়, তরুণরাও একই ধরনের সমস্যার মুখোমুখি। আয়েশার ওই উদ্যোগ পাকিস্তানি বাবা-মায়েদের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। জীবনসঙ্গী খুঁজে পেতে অনেক তরুণী নিজেই এই গ্রুপে নিবন্ধন করছেন। গ্রুপটি চালুর এক সপ্তাহের মধ্যে অন্তত ৩০০ অবিবাহিত তরুণ-তরুণী ও তাদের বাবা-মা সেখানে ঢুঁ মেরেছেন।

উদ্ধারকর্তার ভূমিকায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম?
বিয়েতে আগ্রহীদের জন্য তিন বছর আগে তেহমিনা উরুজ নামে পাকিস্তানি এক আমিরাত প্রবাসী সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি প্লাটফর্ম গড়ার উদ্যোগ নেন। এই গ্রুপের সদস্যসংখ্যা ছয় শতাধিকের বেশি; তবে এর মধ্যে কমপক্ষে ৫০০ জনই তরুণী।

এই গ্রুপটি একক যোগাযোগে আগ্রহীদের সহায়তা করে থাকে। অন্তত ১৪ সদস্য এই গ্রুপে যোগাযোগ করে পরিণয়ের বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছেন।

তেহমিনা বলেন, ‘তবে বর খুঁজে পেতে পাক তরুণীদের ব্যাপক সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়। এর কারণ পাকিস্তানি তরুণীরা এখন অনেক বেশি স্বাধীন, শিক্ষিত ও খোলামেলা মানসিকতার। তারা এমন একজন সঙ্গী চান যিনি এতে বাধা হয়ে দাঁড়াবেন না; যা খুঁজে পাওয়া অত্যন্ত কঠিন।

তিনি বলেন, আমিরাতে বসবাসকারী অনেক তরুণীর বয়স এখন ৩০ পেরিয়ে গেছে; কিন্তু তারা জীবনসঙ্গী খুঁজে পাননি।

সূত্র : খালিজ টাইমস।