Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

কোরিয়ায় বাংলা মুভি ‘লাভ ইন কোরিয়া’ মুক্তি পাচ্ছে আগামীকাল

অনলাইন প্রতিবেদক, সিউল, ৭ আগষ্ট ২০১৩:

কোরিয়ার ৮ টি সিনেমা হলে আগামীকাল শুক্রবার মুক্তি পাচ্ছে বাংলা ডকুমেন্টারী মুভি লাভ ইন কোরিয়া। মেগাবক্সের ৪টি হলসহ আটটি হলে দর্শকরা এই মুভি দেখার সুযোগ পাবেন। মুভিটির প্রধান চরিত্রগুলোতে অভিনয় করেছেন মাহবুব আলম, নিরব এবং নুপুর। ছবিটি পরিচালনা করেছেন বান্ধবী ছবির সহ-পরিচালক বাক জে উক।

chardike-ad

মুভিটি মেগাবক্স বেকসগ (백석), মেগাবক্স ইয়ংথোং (영통), মেগাবক্স নামিয়াংজু (남양주), মেগাবক্স ফিয়ংথেক (평택), সংনাম মিডিয়া সেন্টার (성남미디어센터), কোরিয়ান মানহোয়া মিউজিয়াম (부천 만화박물관), কোরিয়া মানহোয়া কন্টেন্ট এজেন্সী (한국만화영상진흥원) এবং খোইয়াং মিডিয়া সেন্টার (고양영상미디어센터) এ দেখানো হবে।

1001899_10201677993697471_127936639_nছবির প্রযোজক ও অভিনেতা মাহবুব আলম জানিয়েছেন ‘দীর্ঘ ৩ বছর পর মুভিটি মুক্তি পাচ্ছে। একটি সত্য ঘটনার উপর নির্মিত এই মুভিতে প্রবাস জীবন, ভালবাসা, রোমান্সের ছোঁয়া পাবেন দর্শকরা। এছাড়া কোরিয়ানদের অভিবাসীদের সম্পর্কে একটা ভাল ধারণা দেওয়া যাবে এই মুভির মাধ্যমে। আশা করি মুভিটি দর্শকরা উপভোগ করবেন’

কাহিনী সংক্ষেপঃ

একটি সত্য ঘটনার উপর নির্মিত ডকুমেন্টারী ফিল্ম লাভ ইন কোরিয়া। ঘটনাটি সংক্ষেপে পাঠকদের উদেশ্যে তুলে ধরেছেন লাভ ইন কোরিয়া মুভির প্রযোজক এবং অভিনেতা মাহবুব আলম।

২০১০ সালের কথা। বাংলাদেশ থেকে আমার এক বন্ধু জানাল তারা কোরিয়াতে একটি টেলিফিল্ম বানাতে চায়। আমাকে অনুরোধ করল কোরিয়াতে শুটিং, ক্যমেরার ব্যাপারে তাদেরকে সহায়তা করার জন্য। কারা অভিনয় করবেন জানতে চাইলে জানাল মডেল নিপুন আর নিরব মূল চরিত্রে অভিনয় করবেন। পরিচালক ওয়াকিল আহমেদ, প্রযোজক রিয়াজ, সহকারীসহ ৯ জনের টিম শ্যুটিং এর জন্য কোরিয়াতে আসবেন।

বন্ধুকে বললাম আমিতো তাদেরকে চিনি না। কোরিয়া এসে যদি পালিয়ে যায়? এই ধরণের অনেক ঘটনা আগে ঘটেছে। সে দাবি করল এই টিম ভূয়া টিম না। নিরব, নিপুন জনপ্রিয় শিল্পী, প্রযোজক বাংলাদেশ দূতাবাসে পরিচিত। কাজেই কোন সমস্যা হবে না।

টিম আসি আসি করে আর আসেনা। উনার সেই পরিচিত দূতাবাসের লোক আমাকে জানাল উনি সরকারী লোক তাই ফিল্ম মেকিং এর টিমকে তিনি ইনভাইটেশন লেটার পাঠাতে পারবেন না। আমাকে অনুরোধ করলেন আমি যেন আমাদের সংগঠন থেকে ইনভাইটেশন লেটার পাঠাই। আমি সরাসরি না বললাম।

যাহোক, উনারা বললেন ভিসার ব্যবস্থা উনারা করবেন এবং আমাকে জানানো হয়েছিল ক্যামেরা, ক্যামেরাম্যান, লাইটম্যানসহ প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র সাথে নিয়ে আসবেন। আমি লোকেশন, থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করলে হবে।

এরপর দিন যেতে থাকল উনাদের কোন খবর নাই। প্রায় ৪ মাস পর হঠাৎ একদিন প্রযোজক রিয়াজ জানাল পরেরদিন তারা টিম নিয়ে আসবেন। আমি সব ব্যবস্থা করব বলে নিশ্চিত করলাম।

পরের দিন আমি যথাসময়ে ইনছন এয়ারপোর্টে অপেক্ষা করতে লাগলাম। ইমিগ্রেশন থেকে একটা ফোন আসল আমার মোবাইলে। একজন ইমিগ্রেশন অফিসার আমাকে জিজ্ঞেস করলেন উনাদের আমি চিনি কিনা। আমি জানালাম তাদেরকে আমি চিনি এবং তাদের সকল ধরণের ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব আমার।

ইমিগ্রেশন অফিসার আমার আইডি নাম্বার চাইলেন। জানালেন উনারা ভিসা নিয়ে আসলেও এখানে কোন গ্যারান্টার নেই। যদি কোন সমস্যা হয় এর দায়িত্ব কে নিবে? তাছাড়া উনারা কোরিয়াতে মুভির শ্যুটিং করার জন্য কোন পারমিশন নিয়ে আসেননি। এইসব শুনে চিন্তা করলাম উনাদেরকেতো আর এয়ারপোর্টে বসিয়ে রাখা যায় না। আমার আইডি কার্ড দিয়ে নিয়ে আসলাম।

এয়ারপোর্ট থেকে বের হওয়ার পর দেখলাম ৯ জনের টিম। যার মধ্যে নায়ক নিরব, নায়িকা নিপুন, পরিচালক ওয়াকিল আহমেদ, প্রযোজক রিয়াজ এবং বাকি পাঁচ জন কেউ লাইট, ক্যামেরা, সাউন্ড পরিচালনার লোকজন বলে পরিচয় পেলাম। এরপর বড় বড় ব্যগ টেনে উনারা রওনা হলেন আমার সাথে। প্রথমে ৫দিনের শুটিংয়ের জন্য এত ব্যাগ কেন? একটু সন্দেহ হয়েছিল। চিন্তা করলাম ক্যামেরা শুটিং এর জন্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র হবে হয়ত।এয়ারপোর্ট থেকে লিমুজিন বাসে করে সিউলের সবচেয়ে জনপ্রিয় টুরিস্ট এন্ড ট্রেডিশনাল এলাকা ইনসাদোংয়ের একটা গেস্ট হাউজে নিয়ে আসলাম। বাংলাদেশি ভাই বোনদের যেন থাকা খাওয়ার কোন সমস্যা না হয় তার জন্য সতর্ক ছিলাম। আশেপাশে বাংলাদেশি রেস্টুরেন্ট না থাকায় ইন্ডিয়ান এক দোকানদার বন্ধুকে বলে ৩ বেলা দেশীয় স্টাইলে খাবারের ব্যবস্থা করলাম।

রাতের খাবার শেষে জানতে পারলাম উনারা কোন ক্যামেরা, ক্যামেরা অপারেটার, লাইট ইন্সট্রুমেন্ট কিছুই আনেন নি! অথচ পরেরদিন সকাল থেকে শুটিং করতে হবে। অল্প সময়ে এসব কিভাবে যোগাড় করি? তাছাড়া এত বড় দলে ক্যামেরাম্যান নেই কেন? যাইহোক রাতের মধ্যেই কোরিয়ান বন্ধু পাকজেউকের সাহায্যে যন্ত্রাদি ও ক্যামেরাম্যানের ব্যবস্থা করলাম। পরের দিন সকাল থেকে সিউলের নামসান টাওয়ার, ইনসা দোং, খোয়াংহোয়ামুন সহ ট্যুরিস্ট স্পটগুলোতে কাজ শুরু করলাম। পরিচালক, প্রযোজক ও আভিনেতা ২ জন ছাড়া বাকিরা কোন কাজেই সাহায্য করছেনা! পরিচালক জানাল নতুন জায়গা বলে ফিট হতে সময় লাগছে তার দলের সদস্যদের। আমি আর বাড়াবাড়ি করলাম না। আমরা টানা দুইদিন শ্যুটিং করলাম।

২দিন পরের ঘটনা, রাতে শুটিংয়ের সময় আমার এক কাছের বন্ধু আমাকে ফোন করে জানাল সে খবর পেয়েছে এই টিমে আদম (কাজ করার উদ্দেশে আসা প্রবাসী) আছে। সে আমাকে সাবধান করল। তখন কি করা উচিত সেটা বুঝতে পারছিলাম না। ওইদিকে শুটিং চলছিল। আমাদের কোরিয়ান টিমকে বললাম শুটিং বন্ধ করতে। সেই সাথে বাংলাদেশ থেকে আগত সকলকে হল রুমে আসতে বললাম, জরুরি কথা আছে বলে। কিছু লোক বাইরে ছিল, তাদেরকে আনতে কয়েকজন গেল। পরিচালক ওয়াকিল আহমেদ ও প্রযোজক রিয়াজ, অভিনেতা নিরব আর নিপুনকে নিয়ে বসলাম। পরিচালককে আদম সংক্রান্ত ঘটনাটি বললাম। পরিচালক স্বীকার করলেন না। উনি বললেন দেশে আমি ২২টির ছবি বানিয়েছি, আমি এসবে থাকব কেন? উনি উনার হোটেলরুমে যাবেন বলে সরে গেলেন। এরপর প্রযোজক রিয়াজ বললেন আমরা ভুল মনে করছি। অনেক রকম কসম কেটে উনাকে বিশ্বাস করতে বললেন। তবে উনার উপর রাখা বিশ্বাসে আর কাজ হলো না। যারা বাকি কয়েকজনকে ডেকে নিয়ে আসতে গিয়েছিলেন তারাও ফিরে আসছেন না। শুধু তাই নয়, পরিচালক ওয়াকিল আহমেদও তার ঘরে নেই! আমাদের কোরিয়ান স্টাফসহ অভিনয় শিল্পীরা ভয় পেয়ে যাই। কি হচ্ছে এসব! পরিচালক গেল কোথায়? বাকিদের কথা না হয় বাদ দিলাম। রাত ১২টা পার হল, কেউ আর ফিরে আসলেন না, তাই বাধ্য হয়ে পুলিশের কাছে গেলাম। সেখান থেকেও কোন সহযোগিতা পেলাম না। তাই নাটের গুরু রিয়াজের পাসপোর্ট আমি নিজের কাছে রেখে, আমার আইডি কার্ড তার হাতে দেই। তাকে সময় দেই সত্য কথা বলার। ব্যস্ত নায়ক নায়িকাদের পরের দিন বাংলাদেশে পাঠাই। এদিকে আমি প্রতিদিন এসে রিয়াজের খবর নিয়ে যাই। একদিন রিয়াজ আমাকে ধরে খুব কেঁদে কেঁদে নিজের মেয়ের কথা বলল। আমি উনাকে না ছেড়ে দিলে উনি মরে যাবে, এভাবে আর পারছেন না।

রিয়াজ কি আসলেই দোষী কিনা বুঝতে পারতেছিলাম না। আমাদের হাতে কোন প্রমাণ ছিল না। আর ইমিগ্রেশন আমার নাম লিখিয়েছিল গ্যারান্টার হিসাবে। কি যে করব? তাই আমি আর বাকজেউক (জেক) সিদ্ধান্ত নিলাম এই ঘটনা নিয়েই একটা ছবি নির্মাণ করব।