Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

উত্তর কোরিয়ার পারমাণবিক সাফল্যের নেপথ্যে তিনজন

kim-with-three-personপ্রায় প্রতিটি সফল ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষার পরই তিনজন ব্যক্তির সঙ্গে উল্লাস করতে দেখে গেছে উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উনকে। দেশটিতে এই তিন ব্যক্তি রীতিমতো সেলিব্রেটির মর্যাদা পেয়ে গেছেন। কিমের সঙ্গে বিভিন্ন ছবিতে এবং উত্তর কোরীয় গণমাধ্যমের টিভি ফুটেজে বারবার দেখতে পাওয়া গেছে এই তিনজনকে। আর এ কারণে দেশটির ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা বিষয়ক গবেষণায় পশ্চিমা গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর সর্বোচ্চ প্রাধান্যের তালিকায় আছেন তারা।

এই তিনজনকে নিয়ে আগ্রহের শেষ নেই গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের। কারা এই তিন ব্যক্তি? আল জাজিরার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে- এই তিনজনের একজন হচ্ছেন, রি পিয়ং চোল। উত্তর কোরিয়ার বিমান বাহিনীর সাবেক শীর্ষ জেনারেল তিনি। আরেকজন হচ্ছেন, রকেট বিজ্ঞানী কিম জং সিক এবং অপরজন জাং চ্যান হান। উত্তর কোরিয়ার অস্ত্র উন্নয়ন ও ক্রয় সংক্রান্ত প্রধান জাং।

chardike-ad

বিভিন্ন ছবি এবং টিভি ফুটেজ থেকে স্পষ্টই বোঝা যায়, কিমের সবচেয়ে পছন্দের ব্যক্তি এই তিনজন। উত্তর কোরিয়ার এই নেতার প্রতি তাদের অচরণও অন্যদের চেয়ে ভিন্ন। যেখানে তরুণ কিমের সামনে তার জ্যেষ্ঠ সব কর্মকর্তাও মাথা নত করে সম্মান প্রদর্শন করেন, সেখানে এই তিনজনের আচরণ একেবারেই বন্ধুসুলভ।

এদের মধ্যে দুইজন কিমের ব্যক্তিগত বিমান ‘গোসাক-১’ নিয়েই চলাফেরা করেন। উত্তর কোরিয়ার জাতীয় পাখির নাম অনুসারেই নামকরণ করা হয়েছে এই বিমানের। দেশটির ক্ষমতাসীন ওয়ার্কাস পার্টিতে, সামরিক এবং বৈজ্ঞানিক ক্ষেত্রে এই তিন ব্যক্তিকে দেখা হয় অপরিহার্য হিসেবে। বিচ্ছিন্ন দেশটি গত বছরের শুরু থেকে এ পর্যন্ত জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে দুটি পারমাণবিক পরীক্ষা এবং কয়েক ডজন ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা চালিয়েছে।

বর্তমানে দক্ষিণ কোরিয়ার রাজধানী সিউলে বসবাসরত সাবেক উত্তর কোরীয় সেনা কর্মকর্তা অ্যান চান ইল বলেন, ‘আমলাদের মাধ্যমে কোনো কাজ সম্পন্ন না করিয়ে কিম জং উন ওই তিনজনকে সার্বক্ষণিক তার পাশে রাখেন, যাতে তিনি তাদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করতে পারেন এবং যেকোনো বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে বলতে পারেন। এতে বোঝা যায়, খুব দ্রুত ক্ষেপণাস্ত্র উন্নয়ন ঘটাতে চান কিম।’ উত্তর কোরীয় নেতার তিন বিশ্বস্ত সহচরের মধ্যে কিম জং সিক এবং জাং কোনো উচ্চবিত্ত পরিবার থেকে আসেননি বলেও জানান তিনি।

এদিকে নাম প্রকাশ না করার শর্তে দক্ষিণ কোরিয়ার এক কর্মকর্তা বলেন, ‘কিম জং উন তার বাবার চেয়ে ভিন্ন ধরনের লোকদের নিয়ে পরামর্শকদের একটি নতুন প্রজন্ম গড়ে তুলছেন।’ প্রসঙ্গত, ২০১১ সালে মারা যান কিম জং উনের বাবা কিম জং ইল। এরপরই তার স্থলাভিষিক্ত হন কিম।

তবে এই তিনজনের মধ্যে বিমান বাহিনীর সাবেক শীর্ষ জেনারেল রি পিয়ং চলকে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ (বিগ পটেটো) মনে করেন বিশ্লেষকরা। সব সময় হাস্যোজ্জল এই কর্মকর্তা বর্তমানে ওয়ার্কাস পার্টির যুদ্ধোপকরণ বিভাগের উপপরিচালক। দক্ষিণ কোরিয়া ও মার্কিন সরকারের তথ্য মতে, উত্তর কোরিয়ার ব্যালেস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচি দেখভালের দায়িত্বে আছে এই বিভাগটি। ২০১০ সালে মার্কিন ট্রেজারি এই বিভাগকে কালো তালিকার অন্তর্ভুক্ত করে।

উত্তর কোরিয়া বিষয়ক বিশ্লেষক মিখায়েল ম্যাডেন বলেন, ‘তিনজনের মধ্যে বিগ পটেটো হচ্ছেন, রি পিয়ং চল। কিমের প্রত্যেকটি গুরুত্বপূর্ণ আলোচনাতেই তাকে দেখা গেছে।’ ১৯৪৮ সালে জন্ম নেয়া রি পড়াশোনা করেছেন রাশিয়াতে। দুইবার চীন এবং রাশিয়া সফরও করেছেন তিনি।

উত্তর কোরীয় গণমাধ্যমের তথ্য মতে, ২০০৮ সালে বিমান বাহিনীর প্রধান থাকা অবস্থায় চীনের প্রতিরক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেছেন রি। ২০১১ সালে রাশিয়ার ফাইটার জেট কারখানা পরিদর্শনের সময়ও কিম জং ইলের সঙ্গে ছিলেন এই কর্মকর্তা।

তিনজনের একজন রকেট বিজ্ঞানী কিম জং সিক। বেসামরিক বিমান টেকনিশিয়ান হিসেবে কাজ শুরু করলেও বর্তমানে সামরিক পোশাকে দায়িত্ব পালন করছেন অস্ত্র কারখানা বিভাগে। ২০১২ সালে উত্তর কোরিয়ার প্রথম সফল রকেট উৎক্ষেপণের পরই আলেচনায় আসেন এই বিজ্ঞানী। বিভিন্ন সময়ে কিমের ব্যক্তিগত বিমানে চড়তে দেখা গেছে তাকে।

তিনজনের মধ্যে সবচেয়ে কম পরিচিত ব্যক্তি জাং চাং-হা। উত্তর কোরিয়ার ন্যাশনাল ডিফেন্স সায়েন্স অ্যাকাডেমির প্রেসিডেন্ট তিনি। বর্তমানে দেশটির গোপন গবেষণা ও অস্ত্র ব্যবস্থার উন্নয়ন নিয়ে কাজ করে এই অ্যাকাডেমি। এর মধ্যে আছে ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচি ও পরমাণু পরীক্ষা কার্যক্রম।

ম্যাডেনের ভাষায়, ‘এই তিন ব্যক্তিই উত্তর কোরিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচিকে একুশ শতকের উপযোগী করে তুলেছে।’