কেক পেস্ট্রি- শুনলে মানস পটে ভেসে ওঠে সুস্বাদু এক খাবারের চিত্র। কিন্তু এই কেক বা পেস্ট্রির উপরে যে নকশাচিত্র আমরা দেখতে পাই সেখানেও লুকিয়ে থাকতে পারে হাজারো গল্পগাঁথা। ইদিনার তৈরি কেক থেকে গ্রাহকের মনে এমন ধারণা তৈরি হয়।
ইদিনা ওবাইদ ইশফা বয়সে তরুণ। ব্যবসায় প্রশাসনের শিক্ষার্থী। কিন্তু এগুলো তার পরিচয় নয়। তার পরিচয় আপন শৈলীতে। তার তৈরি কেক মানেই সেখানে নকশায় থাকবে কোনো না কোনো কল্পগল্প। কেকের মিষ্টি স্বাদের পাশাপাশি যেখান থেকে গ্রাহক পেতে পারেন সাফল্য, সম্ভাবনা, বহুদূর যাওয়ার অনুপ্রেরণা। ইদিনা বাসায় বসে এমন শিল্পিত কেক বানিয়ে এই বয়সেই রীতিমত বিখ্যাত। বলা যায়, কেক বানিয়ে তিনি এখন লাখপতি। ২০১৫ সালের অক্টোবর থেকে ইদিনার এই সাফল্যের গল্পের সূচনা। এখন সাফল্য ছড়িয়েছে নগরজুড়ে। সবচেয়ে সুস্বাদু আর শৈল্পিক কেক, পেস্ট্রি আর ডেজার্ট বানানোর ক্ষেত্রে ইদিনা এখন চট্টগ্রামে মাস্টার শেফ।
ইদিনা ওবাইদ ৬ ভাইবোনের মধ্যে সবার ছোট। কিন্তু তার সাফল্য সমাজে এখন অনেকের পাথেয়। ফেসবুকে তার বন্ধু হওয়ার সুযোগ বন্ধ হয়েছে অনেক আগেই। তার ফ্যান পেইজে চট্টগ্রামের তারুণ্য হুমড়ি খেয়ে পরে। যদিও তার নেই কোনো ফ্যাক্টরি, দোকান কিংবা শোরুম। রয়েছে এই একটিমাত্র ফেসবুক পেইজ- সুইট বাজ। এই পেইজের মাধ্যমে এবং ব্যক্তিগত ফোনে কেকের অর্ডার নেন ইদিনা। এরপর চাহিদা অনুযায়ী সরবরাহ করেন। ব্যক্তিগত পর্যায়ে যে কোনো অনুষ্ঠানের পাশাপাশি বড় বড় কর্পোরেট হাউজের অনুষ্ঠানের জন্যও তিনি কেকের অর্ডার পান। সর্বনিম্ম ৩ পাউন্ড থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ৪০ পাউন্ড পর্যন্ত কেক বাসায় বসেই বানাতে পারেন তিনি। প্রতি পাউন্ড কেকের মূল্য ৬০০ টাকা।
ইদিনা জানান, ২০১৫ সালের অক্টোবর মাস থেকেই তিনি চট্টগ্রাম শহরে বাণিজ্যিকভাবে কেকের অর্ডার নিতে শুরু করেন। এর আগে তিনি চট্টগ্রামের বেক এন্ড ফাস্ট বেকারী এবং তারকা হোটেল আগ্রাবাদের দু’জন শেফ’র কাছে কেক বানানোর প্রাথমিক জ্ঞান ও প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। এরপর ইদিনা সবার চেয়ে আলাদা এবং বৈচিত্র্যপূর্ণ কেক কীভাবে বানানো যায় সে বিষয়ে গবেষণা শুরু করেন। ইচ্ছাশক্তি আর অধ্যাবসায়ের প্রতি আস্থা রেখে ঢাকার একাধিক শেফের কাছে কেক বানানোর প্রশিক্ষণ নেন। এরপর থেকেই ঘরে বসে কেক বানিয়ে বাণিজ্যিকভাবে বিক্রি শুরু করেন।
ইদিনা বলেন, ‘আমার তৈরি কেক বা পেস্ট্রির প্রধান বৈশিষ্ট্য আমি থিম বেজড কেক তৈরি করি। আমার বানানো প্রতিটি কেকের একটি গল্প থাকে। কেকের উপরের ডেকোরেশন বা শিল্পিত রূপ দেখে যে কেউ অনায়াসে এর পেছনের গল্প পড়তে পারবেন। জন্ম দিন, বিয়ে বার্ষিকী, ভালোবাসা জানানো বা যে কোনো উদযাপনে তৈরি প্রতিটি কেক-এ ভিন্ন ভিন্ন গল্প থাকে। এ ছাড়া প্রতিটি কেক, পেস্ট্রির মধ্যে আমি বিদেশী এবং সবচেয়ে উন্নত উপকরণই ব্যবহার করি। স্বাস্থ্যমান রক্ষায় আমি ছাড় দেই না। এ কারণেই আমার তৈরি কেক চট্টগ্রাম শহরে জনপ্রিয়।’
ইদিনা আরো জানান, শুরুর দিকে প্রতিদিন তিনি গড়ে ৪টি পর্যন্ত কেকের অর্ডার নিতেন। প্রতিমাসে তিনি কেক সরবরাহ করতেন একশ থেকে ১২০টি পর্যন্ত। বর্তমানে পড়ালেখার পাশাপাশি নগরীর একটি বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে সহকারী ব্যবস্থাপক হিসেবে চাকরি করছেন। ফলে এখন দিনে একটির বেশি কেকের অর্ডার গ্রহণ করেন না। দৈনিক একটি কেক বানিয়ে প্রতিমাসে তার আয় ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা। সাফল্যের সঙ্গে এগিয়ে যাওয়া ইদিনা ওবাইদ তার ভবিষ্যত পরিকল্পনা সম্পর্কে বলেন, ‘কেক, পেস্ট্রি এবং ডেজার্ট নিয়ে আমি বড় একটা শো-রুম করতে চাই। এখন আমি চাহিদা অনুযায়ী সরবরাহ করতে পারছি না। কিন্তু ফেসবুক পেইজ এবং ব্যক্তিগতভাবে আমি প্রচুর অর্ডার পাই। তাই নগরীর ভালো এবং শিল্পিত গল্পের কেকের চাহিদা পূরণে বড় আকারে কিছু করতে চাই। কেক বানানোর উদ্দেশ্য টাকা আয় করা নয়। আমার কাছে এটা একটি শিল্প। এটা আমার ভালোবাসা। আমি এই ভালোবাসার সাথেই থাকতে চাই।’