Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

মধ্যপ্রাচ্য ইস্যুতে নিরপেক্ষ বাংলাদেশ

qatar-bangladeshiকাতারের সঙ্গে সাতটি দেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্নের প্রেক্ষিতে সৃষ্টি মধ্যপ্রাচ্যের পরিস্থিতির উপর নজর রাখছে বাংলাদেশ। তবে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর সাম্প্রতিক বিরোধে বাংলাদেশ কারও পক্ষে অবস্থান নেবে না। একই সঙ্গে সেখানকার পরিস্থিতি বাংলাদেশের সঙ্গে দেশগুলোর সম্পর্কে কোনো নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে না বলেও মনে করছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

কাতারের সঙ্গে সৌদি আরবসহ উপসাগরীয় দেশের সম্পর্কচ্ছেদ বাংলাদেশের শ্রমবাজার এমনকি কাতারসহ সংশ্লিষ্ট দেশের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে কোনো প্রভাব ফেলবে না বলে মনে করছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। একই সঙ্গে সৃষ্ট এ উত্তেজনায় বাংলাদেশ নিরপেক্ষ অবস্থানে থাকার চেষ্টা করবে। তবে বিশ্লেষেকেরা বলছেন, বাংলাদেশ মূলত এক ধরনের মনস্তাত্বিক চাপে পড়েছে। কারণ, সরাসরি যেকোনো দিকে ঝুঁকে যাওয়াটা দেশের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। তাই আপাতত পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করাটাই শ্রেয়।

chardike-ad

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, কাতার-সৌদি আরবসহ অন্যান্য দেশগুলোর এই বিরোধে বাংলাদেশ কোনো বিশেষ পক্ষ নেবে না। এ ছাড়া মধ্যপ্রাচ্যের দেশেগুলোর এই বৈরি সম্পর্ক বাংলাদেশের শ্রম বাজারেও বিশেষ কোনো নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে না।

প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব জাবেদ আহমেদ জাগো নিউজকে বলেন, ‘কাতার-সৌদি আরব বিরোধ ও বাংলাদেশের শ্রমবাজার একেবারেই ভিন্ন ইস্যু। তাই আমার মনে হয় না, উপসাগরীয় দেশগুলোর মধ্যকার বিরোধ আমাদের শ্রমবাজারে প্রভাব ফেলবে।’

কূটনৈতিক সূত্র বলছে, উদ্ভূত পরস্থিতি সম্পর্কে নিজ নিজ দেশে অবস্থান করা কূটনীতিকদের ব্রিফিং করেছে সৌদি আরব ও কাতারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এসব ব্রিফিংয়ে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতরাও অংশ নিচ্ছেন। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলছে, নেতিবাচক কোনো প্রভাব পড়বে -এমন ইঙ্গিত তারা পাননি।

এদিকে, কাতারে অবস্থান করা বাংলাদেশিদের পরিস্থিতি সম্পর্কে আশ্বস্ত করতে দূতাবাসের পক্ষ থেকে একটি বিবৃতি দেয়া হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, কাতার এবং উপসাগরীয় অন্যান্য কয়েকটি দেশের মধ্যকার উদ্ভূত রাজনৈতিক পরিস্থিতি বাংলাদেশ দূতাবাস সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণ করছে এবং সশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ অব্যাহত রয়েছে। পরিস্থিতির পরিবর্তিত প্রেক্ষাপট পর্যবেক্ষণ ও যথাযথ বিশ্লেষণের মাধ্যমে বাংলাদেশিদের করণীয় সম্পর্কে দিক নির্দেশনা দেবে দূতাবাস। একই সঙ্গে উদ্ভূত এ পরিস্থিতিতে প্রবাসীদের যেকোনো সিদ্ধান্ত এককভাবে না নিয়ে দূতাবাসের পরামর্শ গ্রহণ করার জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছে।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, পরিস্থিতি কাতার সরকারের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে রয়েছে এবং এ ব্যাপারে অহেতুক আতঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ নেই বলে দূতাবাস মনে করে।

এর আগে ২০১৪ সালেও একবার কাতার থেকে নিজেদের রাষ্ট্রদূতকে প্রত্যাহার করে নিয়েছিল সৌদি আরব। তবে এবার সম্পর্ক ছিন্ন করার মতো সিদ্ধান্ত নিয়েছে দেশটি। সৌদি কর্তৃপক্ষ বলছে, ১৯৯৫ সালের উপসাগরীয় সহযোগিতা সংস্থার চুক্তি অনুযায়ী সন্ত্রাসীদের অর্থায়ন না করতে এবং অন্য দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করার বিষয়ে ফিরে গেলেই কাতারের সঙ্গে সৌদিসহ প্রতিবেশিদের সম্পর্ক পূর্বের অবস্থায় ফিরে যাওয়া সম্ভব।

কাতার-সৌদি বিরোধ ও বাংলাদেশের অবস্থান সম্পর্কে জানতে চাইলে সাবেক পররাষ্ট্র সচিব মহিউদ্দিন আহমেদ জাগো নিউজকে বলেন, ‘বাংলাদেশকে অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করতে হবে। হুট করেই কোনো পক্ষে অবস্থান নিলে চলবে না।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন কূটনৈতিক জাগো নিউজকে বলেন, ‘নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের জন্য কিংকর্তব্যবিমূঢ় পরিস্থিতিতে রয়েছে। কারণ, কিছুদিন আগেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সৌদি আরব সফরে গিয়ে দেশটির সঙ্গে ইরানবিরোধী জোটে হাত মিলিয়েছে। আবার কুয়েতও বাংলাদেশের অন্যতম বন্ধুপ্রতীম দেশ।’

তিনি আরও বলেন, ‘মধ্যপ্রাচ্যের অন্য যেকোনো দেশের তুলনায় শ্রমবাজার হিসেবেও কাতার অত্যন্ত স্থিতিশীল। তাই এমন পরিস্থিতিতে যদি সৌদি আরব কখনো বাংলাদেশকে কাতারের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করতে চাপ দেয়, তাহলে দারুণ এক সঙ্কটে পড়তে হবে।’

আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ক বিশ্লেষক ড. তারেক শামসুর রেহমানের মতে, ‘আরব দেশগুলোর এই মতবিরোধের মধ্যে বাংলাদেশ বেশ ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। সৌদি আরবের সঙ্গে সন্ত্রাসবিরোধী সামরিক জোটেও রয়েছে বাংলাদেশ। তাছাড়া মুসলিম বিশ্বের বিরাট অংশকে সৌদি আরব নিয়ন্ত্রণ করে। সুতরাং তাদের কোনো অনুরোধ উড়িয়ে দেয়া বাংলাদেশের জন্য সহজ হবে না। যদিও কাতার কিংবা ইরানের সঙ্গেও বাংলাদেশের সুসম্পর্ক রয়েছে।’

উল্লেখ্য, উপসাগরীয় অঞ্চলে সন্ত্রাসবাদকে সমর্থনের অভিযোগ এনে কাতারের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করেছে সৌদি আরব, মিসর, বাহরাইন, আরব আমিরাত, লিবিয়া এবং ইয়েমেন। তবে যে অভিযোগে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করা হয়েছে তা ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দিয়েছে দোহা।

এ ছাড়া কাতারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তরফ থেকে জানানো হয়েছে, তাদের সঙ্গে সন্ত্রাসবাদের কোনো সম্পর্ক নেই। তাদের উপর অবিচার করা হচ্ছে। যে অভিযোগ করা হয়েছে তার কোনো ভিত্তি নেই। একই সঙ্গে একটি উন্মুক্ত এবং আন্তরিক সংলাপের আহ্বান জানিয়েছে দেশটি।