Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

বিদেশী বিনিয়োগকারীদের কাছে নিরাপদ স্বর্গ দক্ষিণ কোরিয়া

৯ সেপ্টেম্বর ২০১৩, সিউল:

বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ও চলতি হিসাবে সন্তোষজনক উদ্বৃত্তের কারণে বিদেশী বিনিয়োগকারীদের কাছে ‘নিরাপদ স্বর্গ’ বিবেচিত হচ্ছে দক্ষিণ কোরিয়া। মার্কিন আর্থিক নীতি ও অন্যান্য বাস্তবতায় এশিয়া থেকে বিদেশী বিনিয়োগ তুলে নেয়ার প্রবণতায় বিশেষ ক্ষতিগ্রস্ত হবে না এশিয়ার চতুর্থ বৃহত্তম অর্থনীতির দেশটি। স্থানীয় ইয়োনহাপ নিউজ এজেন্সির এক জরিপে অর্থনীতিবিদরা এ মত দেন। খবর ইয়োনহাপের।

chardike-ad

আর্থিক সংকটের শুরুর দিকে দক্ষিণ কোরিয়া থেকে বিপুল বিদেশী পুঁজি চলে গেলেও নিজেদের বৈদেশিক মুদ্রার হিসাবগুলো আরো শক্তিশালী করে এ ধাক্কা সামলে নিয়েছে তারা। এ সময়ে ভারত, ইন্দোনেশিয়ার মতো এশিয়ার উদীয়মান অর্থনীতিগুলো চলতি হিসাবে ঘাটতি ও বিনিময় হার হ্রাস ঠেকাতে হিমশিম খাচ্ছে। মার্কিন কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেড তাদের মুদ্রানীতি আরো কঠোর করবে— এমন আশঙ্কায় এসব দেশ থেকে পুঁজি সরিয়ে উন্নত দেশগুলোয় নিচ্ছেন বিনিয়োগকারীরা। দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে এ দেশগুলোর আর্থিক বাস্তবতার ব্যবধান অনেক।

ইয়োনহাপকে ই-মেইলে দেয়া উত্তরে বিভিন্ন দেশের অর্থনীতিবিদরা জানান, চলতি হিসাবে উদ্বৃত্ত, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বৃদ্ধি এবং স্বল্পমেয়াদি বৈদেশিক ঋণের পরিমাণ কমায় এশিয়ায় সাম্প্রতিক কালে যেসব আশঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে, তা থেকে মুক্ত দক্ষিণ কোরিয়া।

বার্কলেস ক্যাপিটালের অর্থনীতিবিদ ওয়েই হো লিউং বলেন, ‘বিনিয়োগকারীদের হিসেবে দক্ষিণ কোরিয়া এখন একটি নিরাপদ স্বর্গ। আর্থিক ভিত্তি অনেক উন্নত হয়েছে দেশটির। স্বল্পমেয়াদি বৈদেশিক ঋণ ও রিজার্ভ বাড়ার পাশাপাশি সরকারের বাজেটও অনেক শক্তিশালী হয়েছে। কোরিয়ায় আরেকটি ১৯৯৭ আসবে না, এ ব্যাপারে আমি আত্মবিশ্বাসী।’

১৭-১৮ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত হবে ফেডের মাসিক বোর্ডসভা। প্রতি মাসে বন্ড ক্রয় কর্মসূচিটির কলেবর ছোট করে আনার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হতে পারে সেখানে। তবে ফেড চেয়ারম্যান বেন বারনানকে অর্থনীতির অবস্থা ভালো হলে প্রণোদনা তুলে নেয়া হবে বলে জানান। এতে ডলারের সরবরাহ কমার আশঙ্কায় উদীয়মান অর্থনীতিগুলোয় বিদেশী বিনিয়োগকারীরা আরো আগ্রাসীভাবে তাদের বিনিয়োগ সরিয়ে নিতে থাকেন।

১৯৯৭ ও ২০০৮ সালের আর্থিক বিপর্যয়ের সময় হঠাৎই বিপুল বিদেশী পুঁজি প্রত্যাহারের কারণে বৈদেশিক লেনদেনে প্রায় অচলাবস্থা সৃষ্টি হয়। বিনিময় হার অনেক নেমে যায়। ১৯৯৮ সালে দেশটির জিডিপি কমে ৫ দশমিক ৭ শতাংশ। ২০০৮ সালের বিপর্যয়ের পরের বছর সংকোচন না হলেও বেড়েছে মাত্র শূন্য দশমিক ৩ শতাংশ। প্রথম সংকটটি ছিল এশিয়ার মুদ্রাসংকট। দ্বিতীয় বিপর্যয়টি মূলত ওয়াল স্ট্রিটভিত্তিক। যদিও এর ঢেউ ছড়িয়ে পড়ে বিশ্বের সব প্রান্তেই।
সে অভিজ্ঞতার আলোকে দক্ষিণ কোরিয়ার নীতিনির্ধারকরা এবার তাদের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৩৩০ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করেছেন। হঠাৎই বিদেশী বিনিয়োগ প্রত্যাহার রোধে আর্থিক খাতের বিধি-বিধানেও এনেছেন নানা পরিবর্তন।

imagesজুলাইয়ে টানা ১৮ মাসের মতো চলতি হিসাবে উদ্বৃত্ত রয়েছে দেশটির। স্বল্পমেয়াদি বৈদেশিক ঋণ ছয় বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন ১১৯ দশমিক ৬ বিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছে।

আগস্টেও দেশটির শেয়ারবাজার থেকে ১ দশমিক ৩৭ বিলিয়ন ডলার মূল্যের শেয়ার কিনেছেন আস্থাশীল বিদেশী বিনিয়োগকারীরা। স্থানীয় এক অর্থনীতিবিদ মত দেন, মার্কিন মুদ্রানীতি পরিবর্তন কিংবা অন্যান্য বাহ্যিক ঝুঁকি মোকাবেলায় যথেষ্ট সক্ষমতা রয়েছে দক্ষিণ কোরিয়ার। উৎপাদন ও রফতানি বৃদ্ধি, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ এবং চলতি হিসাবে উদ্বৃত্ত সবকিছু মিলিয়ে ফেডের প্রণোদনা প্রত্যাহারের প্রভাব তাদের ওপর খুব বেশি পড়বে না।
সূত্রঃ বণিকবার্তা