আদালতের গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির পর দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেছেন থাইল্যান্ডের ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইংলাক সিনাওয়াত্রা। শুক্রবার (২৫ আগস্ট) দুপুরে তিনি দেশ ছেড়েছেন বলে আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমের খবরে জানানো হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে চালে ভর্তুকি প্রকল্পের আওতায় কৃষকদের কাছ থেকে বাজারমূল্যের চেয়ে ৫০ শতাংশ বেশি মূল্যে ধান কেনা হয়। এই কর্মসূচি কৃষকদের কাছে ছিল বেশ জনপ্রিয়। এই কর্মসূচির কারণে দেশটিতে চালের বিশাল মজুদ সৃষ্টি হয় এবং ক্ষতি হয় ৮০০ কোটি ডলার।
দায়িত্বে অবহেলা করে কোটি কোটি ডলার ক্ষতির কারণে তার বিরুদ্ধে এ অভিযোগ আনা হয়। এরপর তার বিরুদ্ধে মামলা করা হয়। বিভিন্ন সময় তিনি আদালতে হাজিরাও দিয়েছেন। শুক্রবার ওই মামলার রায় ঘোষণা করার কথা ছিল। কিন্তু অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে তিনি আদালতে হাজির হননি। ইংলাকের আইনজীবীরা আদালতকে জানান, তিনি (ইংলাক) অসুস্থ। তাই সময়ের আবেদন করেছেন।
এ ব্যাখ্যার স্বপক্ষে কোনো ধরনের চিকিৎসার ব্যবস্থার কাগজপত্র দেখাতে পারেননি আইনজীবীরা। তাই তা খারিজ করে ইংলাকের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন দেশটির সুপ্রিম কোর্ট।
একই সঙ্গে ২৭ সেপ্টেম্বর মামলার রায় ঘোষণার জন্যে পরবর্তী দিন ধার্য করা হয়। এরমধ্যেই খবর পাওয়া যায়, ইংলাক পালিয়ে গেছেন। তার রাজনৈতিক দল পিউ থাই পার্টি (পিটিপি) সূত্র বলছে, তিনি ‘নিশ্চিতভাবেই থাইল্যান্ড’ ছেড়েছেন। তবে তার অবস্থান সম্পর্কে বিস্তারিত কিছু জানানো হয়নি।
এমনকি ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষের কাছেও ইংলাকের দেশ ত্যাগের বিষয়ে কোনো রেকর্ড নেই। তবে খবরে দাবি করা হয়, পালিয়ে পার্শ্ববর্তী লাওস বা কম্বোডিয়ায় পালাতে পারেন ইংলাক। কেউ কেউ বলছেন, দুবাইয়ে ভাইয়ের কাছেই যাচ্ছেন ইংলাক। ২০০৮ সালে সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পর স্বেচ্ছা-নির্বাসনে দুবাই থাকছেন।
২০১৪ সালের ২২ মে সেনাবাহিনী ক্ষমতা দখল করার মাত্র কয়েক দিন আগে আদালতের এক ‘বিতর্কিত’ আদেশে ক্ষমতাচ্যুত হন শ্যাম দেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী ইংলাক সিনাওয়াত্রা। ভাই থাকসিন সিনাওয়াত্রার পর ২০১১ সালে দেশটির প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন তিনি।
এ বিষয়ে দেশটির উপ-প্রধানমন্ত্রী প্রায়ুথ ওয়াংসুওয়ান বলেন, ইংলাকের অবস্থান সম্পর্কে কোনো তথ্য নেই। তবে শোনা যাচ্ছে তিনি ব্যাংককে একটি সভায় যোগ দিয়েছিলেন।
‘কিন্তু পরে শুনেছি তিনি পালিয়ে গেছেন। সীমান্তের তল্লাশি চৌকিগুলোকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’
এদিকে প্রকল্পটিতে থাইল্যান্ডের কোটি কোটি ডলারের বেশি ক্ষতি হওয়ার অভিযোগ উঠলেও বরাবরই কোনো ধরনের অপরাধের কথা নাকচ করে দিয়েছেন ইংলাক। যদি দুই বছর ধরে চলা এ বিচার প্রক্রিয়ায় তিনি দোষী সাব্যস্ত হলে তার সর্বোচ্চ ১০ বছরের কারাদণ্ড হতে পারে। একই সঙ্গে আজীবন রাজনীতিতে নিষিদ্ধ হতে পারেন তিনি।