Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

কোরিয়াতে ইসলাম আগমনের ইতিহাস

seoul-centeral-mosqueকোরিয়ান এবং মুসলমানদের মধ্যে প্রথম যোগসূত্র পাওয়া যায় নবম শতাব্দী বা তার কিছু আগে। সপ্তম শতাব্দীতে যখন আরব এবং পারস্যের ব্যবসায়ীরা শিলা শহরে (কোরিয়ার প্রাচীন ৩ রাজ্যের একটি) আসে, তখন কোরিয়ানরা প্রথম মুসলমানদের সংস্পর্শে আসে। সেসময় ব্যবসায়ীরা মূলত ব্যবসা কেন্দ্রিক চিন্তাভাবনা করত। ইসলাম প্রচারের চিন্তা তখনও আসেনি। কেউ কেউ এই এলাকায় চাকুরী নিয়ে স্থায়ী হবার চিন্তাও করে।

গোড়ীয় যুগ (৯১৮-১৩৯২): রাজা তেজো ওয়াং যখন শিলা, হুবায়েকজে এবং হুগোগুরয়ো কে একত্রিত করে গোড়ীয় রাজতন্ত্র স্থাপন করেন, মুসলিমদের বিস্তার তখন এক নতুন মাত্রা পায়। এগারো শতকে আরব বণিকেরা চায়না থেকে কিছু দুর্লভ ঔষধ নিয়ে এই অঞ্চলে আসে। বিনিময়ে রাজা তেজো তাদের স্বর্ণ এবং পোষাক দিয়ে পুরস্কৃত করেন।

chardike-ad

মংগল ইউয়ান রাজতন্ত্র (১২৭৯-১৩৬৮): যখন চায়নাতে বিস্তার লাভ করে, তখন ইউরো-এশিয়া সড়ক পথ উন্মুক্ত করে দেয়া হয়। এরফলে মুসলিমরা সমুদ্রপথের পরিবর্তে স্থলপথ ব্যবহার শুরু করে। এই সময়ে অনেক নন-মংগোলীয়দের চাকুরী হয়। এদের মধ্যে অনেকেই আরবীয়, পারসিয়ান, মধ্য এশিয়ান মুসলিম, তুর্কি ছিলো। তারা সৈনিক এবং প্রশাসনিক পদে চাকুরী পেয়ে রাজতন্ত্রে সহায়তা করত। এই সময়ে মংগলীয়দের মধ্যে থেকে কিছু মুসলিম প্রতিনিধিদের পাঠানো হয় গোড়ীয় রাজতন্ত্র নির্দেশনামত চলছে কি না তা পর্যবেক্ষণ করার জন্য। এভাবে কিছু মুসলমান বণিকদের কোরিয়াতে আসার এবং ব্যবসায়ের সুযোগ সৃষ্টি হয়।

জোসেওন রাজতন্ত্র (১৩৯২-১৯১০): মুসলিমদের দ্রুত বিস্তার হঠাৎ করে সাময়িক বাধার সম্মুখীন হয়। সেজং দ্যা গ্রেট এর জোসেওন রাজতন্ত্রের সময়ে মুসলমানদের ধর্মীয় অনুষ্ঠানাদি পালন এবং ধর্মীয় পোষাক পরিধানের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। এই রাজতন্ত্র শুধুমাত্র চায়না-জাপানের সাথে সম্পর্ক বজায় রাখলেও বাকীদের থেকে বিচ্ছিন্ন অবস্থান নেয়। এভাবে ১৪২৭ সাল থেকে মুসলমানদের সাথে কোরিয়ানদের যোগাযোগ কার্যত স্থবির হয়ে পড়ে।

মুসলমানদের পুন:প্রবেশ: ১৯৫০ সালের শুরুর দিকে উত্তর কোরিয়ার সংগে দক্ষিণ কোরিয়ার ৩ বছরব্যাপী যুদ্ধ হয়। তখন আমেরিকা তুর্কি সৈন্যদের মাধ্যমে দক্ষিণ কোরিয়াকে সাহায্য করতে পাঠায়। যদিও তুর্কি সৈন্যদের প্রধান উদ্দেশ্য কোরিয়ানদের ইসলামের সাথে পরিচয় করানো ছিলোনা, তবুও তাদের কিছু দাওয়াতি কাজেই এই সময়েই প্রথম কোরিয়ান মুসলিম কমুউনিটি গড়ে ওঠে।

প্রথম বছরেই মুসলিম কমুউনিটির সদস্য সংখ্যা বেড়ে ২০০ তে গিয়ে দাঁড়ায়। ১৯৬০ সাল নাগাদ সেটি ৩০০০। ১৯৬৭ সালে কোরিয়ান মুসলিম ফেডারেশন গঠিত হয় এবং ১৯৭৬ সালে ইতেওনে কোরিয়ার কেন্দ্রিয় মসজিদ স্থাপিত হয়। এখান থেকে কোরিয়ানদের মধ্যে ইসলামের প্রতি আগ্রহ বাড়তে থাকে এবং কয়েকবছর পরেই মুসলমানদের সংখ্যা ১৫০০০ ছাড়িয়ে যায় যা ১৯৯০ সাল নাগাদ ৩০০০০ ছাড়িয়ে যায় এবং ৫ টি মসজিদ স্থাপিত হয়। বর্তমানে দক্ষিণ কোরিয়াতে ১.৫ লক্ষের বেশি মুসলমান রয়েছে যার মধ্যে প্রায় ৫০০০০ কোরিয়ান মুসলিম এবং বাকী বিভিন্ন মুসলিম দেশ থেকে আসা ইমিগ্রেন্ট।

আধুনিক কোরিয়ান মুসলিম কমুউনিটি: বর্তমানে কোরিয়ার প্রায় সর্বত্র হালাল রেস্টুরেন্ট এবং মুদি দোকান পাওয়া যায়। বিদেশি মুসলমানদের জন্য কোরিয়ার সবচেয়ে প্রিয় জায়গা সিউলের ইতেওয়ান। সেখানে মুসলমানের আলাদা একটা রাস্তাই আছে যেখানে সবসময় মুসলমানদের সমাগমে মুখরিত থাকে। এখানে বেশকিছু হালাল রেস্টুরেন্ট এবং দোকান পাওয়া যায়।

ইসলামিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানও এখানে বাদ পড়েনি। ২০০৯ সালে প্রথম প্রিন্স সুলতান আজিজ ইসলামিক প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপিত হয়। এখানে কোরিয়ান মুসলিম-অমুসলিম এবং বিদেশি মুসলিমদের ইসলামের বেসিক শিক্ষাদান করা হয়ে থাকে।

বর্তমানে কোরিয়াতে ১৫ টির বেশি মসজিদ এবং ৬০ টির বেশি নামাজ ঘর রয়েছে। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়, বড় বড় শপিং মল এমনকি এয়ারপোর্টেও নামাজের ঘর রয়েছে। মুসলমানরা এখানে বাধাহীনভাবে তাদের ধর্মীয় এবাদত করতে পারে।

তথ্যসুত্র :
1. https://goo.gl/SmWDer
2. https://goo.gl/0qSi2P
3. https://goo.gl/DA9JxB
4. https://goo.gl/Zg1Wvz

অনুবাদ ও সংকলন: এনামুল হক মনি
পিএইচডি গবেষক, কিয়ংপুক ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, দক্ষিণ কোরিয়া