Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

দালালই যখন বিশেষজ্ঞ ডাক্তার!

welfare-doctorউন্নত ও নিবিড় চিকিৎসা সেবা প্রদান ও বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের সুচিকিৎসার প্রলোভন দেখিয়ে সরকারি হাসপাতাল থেকে রোগীদের ভাগিয়ে প্রাইভেট হাসপাতালে ভর্তি করতে নিয়ে যাচ্ছে দালাল চক্র। খোদ রাজধানীতে সম্প্রতি দালালচক্রের সদস্যরা নিজেদের বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে। ফলে প্রতারণার শিকার হচ্ছেন সুচিকিৎসার জন্য ঢাকায় আসা সাধারণ মানুষ।

প্রতারণার অভিযোগে রাজধানীর মোহাম্মদপুরে নিউ ওয়েলকেয়ার হাসপাতালের সঙ্গে জড়িত ১২ জনকে আটক ও জিজ্ঞাসাবাদের পর এমন তথ্য উঠে এসেছে। মাদক সেবন, ভুয়া চিকিৎসক ও ভুতুড়ে বিল তৈরিসহ বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগে রোববার রাত ১০টা থেকে সোমবার বিকেল ৩টা পর্যন্ত র‌্যাব-২ পরিচালিত ভ্রাম্যমাণ আদালত প্রতিষ্ঠানটির আটক ১২ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড ও জরিমানা প্রদান করেন।

chardike-ad

র‌্যাব-২ এর উদ্যোগে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন র‌্যাব সদর দফতরের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারওয়ার আলম। দণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন, বাবুল হোসেন (৩২), প্রশান্ত হালদার (৩০), জাহিদ আহমেদ (৩৯), সাদেক (৩৪), রিয়াজ আহমেদ (৩৪), সোহাগ (৩১), বি আর আহমেদ শরীফ (৪০), দেলোয়ার হোসেন (৬২) জাহিদ হোসেন (২৩), মিজানুর রহমান (৩৬), সাইফুল ইসলাম (৩২), মো. ইসলাম (২৫)।

ভুক্তভোগীদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শেরেবাংলা নগরস্থ জাতীয় পঙ্গু হাসপাতাল থেকে রোগীদের নিউ ওয়েলকেয়ারে নিয়ে ভর্তি করাচ্ছে দালালচক্র। এজন্য কখনও কখনও দালালরা নিজেরাই বিশেষজ্ঞ ডাক্তার হিসেবে পরিচয় দিয়ে প্রতারণা করে আসছেন।

ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারওয়ার আলম বলেন, শেরেবাংলা নগরস্থ জাতীয় পঙ্গু হাসপাতাল থেকে দালালচক্র রোগীদের সুচিকিৎসার প্রলোভনে ও বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের মৌখিক রেফার্ড করার মিথ্যা কথা বলে নিউ ওয়েলকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করে মোটা অঙ্কের অর্থ বাণিজ্য করে আসছিল।

চিকিৎসার নামে প্রথমেই বিভিন্ন ধরনের ডায়াগনস্টিক টেস্ট, ওষুধ ও সার্জিকেল সামগ্রী ক্রয় ও সার্ভিস চার্জসহ একটি ভুতুড়ে বিল ধরিয়ে দিয়ে রোগী ও আত্মীয়-স্বজনদের কাছ থেকে বিপুল অংকের অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে।

অভিযান চলাকালে দেখা যায়, হাসপাতালটিতে গ্রামের অসহায় নিম্ন-মধ্যবিত্ত রোগীই বেশি। তাদের ভয় দেখিয়ে বলা হয়, পঙ্গু হাসপাতালে ভর্তি করালে রোগীর হাত-পা কেটে ফেলতে হয়, আমাদের ক্লিনিকে আসুন ওষধ দিয়ে আরোগ্য লাভ করবে। ফাঁদে পড়ে অনেকেই গিয়ে ভোগান্তি ও প্রতারণার শিকার হন।

ভর্তি করানোর পর অপারেশনসহ ওষধের বিল বাবদ লাখ লাখ টাকা দাবি করে, এমনকি টাকা পরিশোধ করার জন্য অনেকেই নিজের ভিটে-মাটি বিক্রয় করেও নিষ্কৃতি পাচ্ছে না। অনেক অসহায় রোগীকে রক্ত দেয়ার নাম করে রক্তের ব্যাগ ঝুলিয়ে রেখে রক্ত চলছে জানিয়ে গ্রামের রোগীদের কাছ থেকে টাকা আদায় করে নিচ্ছে।

ভ্রাম্যমাণ আদালতের জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, দালালরা নিজেরাই বিশেষজ্ঞ ডাক্তার হিসেবে পরিচয় দেয়। আটককৃত বি আর আহমেদ শরীফ জানান, তিনি প্রায় ২ বছর যাবৎ বিশেষজ্ঞ অর্থোপেডিক ডাক্তার পরিচয় দিয়ে প্রতারণা করে আসছেন। তিনিই পঙ্গু হাসপাতাল থেকে ভাগিয়ে আনা রোগীদের ব্যবস্থাপত্র প্রদান করে থাকেন।

অন্যদিকে আটক শরীফ নাম পরিবর্তন করে ডা. বি আর আহমেদ শরীফ, এমবিবিএস, এফসিপিএস (অর্থোঃ) পার্ট-২, এসব পদবি ব্যবহার করলেও ডাক্তারি ব্যবস্থাপত্র বা রোগের কোন বিবরণ বলতে পারেন না। তবুও বিভিন্ন ধরনের ডিগ্রি ব্যবহার করে আসছেন। তিনি স্বীকার করেন যে, রোগীর চিকিৎসার জন্য ওষুধ লেখার বিএমডিসির অনুমতি নাই এবং তাদের দেয়া প্রেসক্রিপশনে একদিনে দশবার ইনজেকশন দিতে হবে লেখা থাকলেও বাস্তবে তা রোগীদের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নেয়ার অপকৌশল মাত্র।

র‌্যাব-২ এর সহকারী পরিচালক (মিডিয়া) সিনিয়র এএসপি মোহাম্মদ রবিউল ইসলাম বলেন, বিশেষজ্ঞ ডাক্তার পরিচয়ে রোগীদের অখ্যাত হাসপাতালসমূহে কমিশনের লোভে রোগীদের পাঠিয়ে দিয়ে আসছে। অভিযানকালে হাসপাতালের একটি রুম থেকে বিদেশি মদ ও গাঁজা জব্দ করা হয়। পরে ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্দেশে হাসপাতালের মালিকপক্ষ ও তাদের এজেন্ট দালালচক্রের মোট ১২জনকে আটক করে র‌্যাব-২।

আটককৃতদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, পঙ্গু হাসপাতালে যেসব রোগীদের রাতের বেলায় ভর্তি করতে আনা হয় তাদের কৌশলে ভাগিয়ে নেয়ার জন্য দালালচক্র পঙ্গু হাসপাতালের বিভিন্ন পয়েন্টে অবস্থান নেয়। আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।