Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

আরো বিনিয়োগ হারাতে পারে বিকাশমান এশিয়া

২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৩:

মার্কিন কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভের (ফেড) মুদ্রানীতি নিয়ে আশঙ্কায় এরই মধ্যে এশিয়ার বিকাশমান বাজারগুলো থেকে অনেক বিদেশী বিনিয়োগ সরিয়ে নেয়া হয়েছে। এসব অর্থনীতির সাম্প্রতিক ধীরগতিতে এ প্রবণতা আরো জোরদার হয়েছে। ভবিষ্যতে ফেড বন্ড ক্রয় প্রণোদনা প্রত্যাহার করলে আরো বিনিয়োগ হারাতে পারে এসব দেশের আর্থিক বাজার। এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (এডিবি) তাদের সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানায়। খবর ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের।

chardike-ad

url_17387‘এশিয়া বন্ড মনিটর’ শীর্ষক প্রতিবেদনে এডিবি জানায়, দ্বিতীয় প্রান্তিকে এশিয়ার বিকাশমান অর্থনীতিগুলোর প্রবৃদ্ধি কমে গেছে অনেকটাই। নীতিগত অবস্থানে পরিবর্তন ও ঋণ নিয়ন্ত্রণের কারণে দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি চীনের উৎপাদনশীল কর্মকাণ্ডে ধীরগতি যার অন্যতম একটি কারণ। ইন্দোনেশিয়ার মতো এশিয়ার অনেক দেশই চীনে কাঁচামাল ও অন্যান্য পণ্য রফতানির ওপর অনেকাংশে নির্ভরশীল। ফলে চীনের অর্থনেতিক সমস্যার প্রভাব পড়েছে এসব দেশের ওপর।

এডিবির রিজিওনাল ইন্টিগ্রেশন বিভাগের প্রধান আইওয়ান আজিস বলেন, নব্বই দশকের সংকটের সময়ের তুলনায় এশীয় দেশগুলোর সামর্থ্য অনেক বেড়েছে সত্য। এখন কথা হলো, বর্তমান উচ্চ সুদের হার ও সম্পদের মূল্য হ্রাসের মধ্যেই কতটা এগুতে পারবে তারা। এসব কারণে করপোরেট উদ্বৃত্তপত্রের আকার ছোট হয়ে আসতে পারে। প্রবৃদ্ধি হ্রাসের আশঙ্কা তো রয়েছেই।
এদিকে গত মে মাসে প্রণোদনা (প্রতি মাসে বাড়তি ডলার ছাপিয়ে বন্ডে বিনিয়োগ) কমিয়ে আনার আভাস দেয় ফেড। আর আগামী বছরের মাঝামাঝি কোনো সময় থেকে তা পুরোপুরি বন্ধ করে দেয়ার কথাও বলা হয়।

সহজলভ্য এ ডলারের একটি বড় অংশ উদীয়মান বাজারের আর্থিক পণ্যগুলোয় বিনিয়োগ হচ্ছিল। ডলারের সরবরাহ কমে এলে বেড়ে যেতে পারে মুদ্রাটির দাম এবং এ বিনিয়োগ ফেরত নেয়ার সময় ডলারের অঙ্কে কমে আসতে পারে তাদের তহবিলের আকার— এ আশঙ্কায় দ্রুত বিনিয়োগ তুলে নেয়ার একটি প্রবণতা দেখা যায়।
একই সময়ে বেড়ে যায় উন্নত দেশগুলোর অর্থনীতি নিয়ে আশাবাদ, শেয়ার ও সম্পত্তির বাজার। বাড়ে মার্কিন বন্ডের ইল্ডও।

অন্যদিকে বিভিন্ন ঘাটতি ও বিনিময় হার হ্রাসের কারণে প্রবৃদ্ধি বাড়াতে বছরের শুরুর দিকে নেয়া পদক্ষেপগুলো থেকে সরে এসে উল্টো সংকোচনমূলক অবস্থানে চলে যেতে বাধ্য হয় ভারত ও ইন্দোনেশিয়ার মতো দেশগুলো। এতে প্রবৃদ্ধি কমার ধারা আরো শক্তিশালী হয়। বিনিয়োগকারীদের মধ্যে জন্ম দেয় বাড়তি নৈরাশ্য। উদীয়মান বাজার ছাড়তে শুরু করে আরো বেশি বিনিয়োগকারী।
নানা ঘটনাপ্রবাহের পর ১৭-১৮ সেপ্টেম্বরের বোর্ডসভা শেষে বাজারকে কিছুটা অবাক করেই ফেড চেয়ারম্যান বেন বারনানকে জানান, যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার সম্পর্কে নিশ্চিত হতে আরো সময় প্রয়োজন। আপাতত কমানো হচ্ছে না প্রণোদনা। আমদানি নিয়ন্ত্রণ, সংকোচনশীল মুদ্রানীতি ও ফেডের সিদ্ধান্তে আপাত স্বস্তি— সবকিছু মিলিয়ে বিনিময় হার কিছুটা বাড়াতে পেরেছে সমস্যাগ্রস্ত দেশগুলো।
তবে ফেড তার প্রণোদনা আপাত অব্যাহত রাখলেও এরই মধ্যে অনেক বিনিয়োগ হারিয়েছে বিকাশমান দেশগুলো। এশিয়ায় ভারত ও ইন্দোনেশিয়া থেকে সবচেয়ে বেশি বিনিয়োগ প্রত্যাহার হয়েছে। বাজেট ও চলতি হিসাবে ঘাটতি, বিনিময় হার হ্রাস ও মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাওয়া এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে গৃহীত নীতির ফলে প্রবৃদ্ধি আরো কমে যাওয়া— সবকিছু মিলিয়ে নৈরাশ্য বিনিয়োগকারীদের বিমুখ করেছে। এর মধ্যে ফেড প্রণোদনা বন্ধ করে দিলে নতুন করে সমস্যায় পড়তে হবে এসব দেশকে।

এডিবিও মনে করছে, এ সংকট পুরোপুরি চলে যায়নি। ফেডারেল রিজার্ভ পরবর্তীতে সংকোচনশীল মুদ্রানীতি গ্রহণ করলে এ সমস্যা আবারো ফিরে আসতে পারে উদীয়মান এশিয়ায়। আরো বিনিয়োগ চলে যেতে পারে সংকটে থাকা অর্থনীতিগুলো থেকে। বিশ্লেষকরা বলছেন, এক্ষেত্রে একটি ভারসাম্যপূর্ণ অবস্থানে থেকে সরকারগুলোকে প্রবৃদ্ধি ও ঋণমানের মধ্যে সমন্বয় করে এগুতে হবে।

ক্যাপিটাল ইকোনমিকসের এশিয়া বিশ্লেষক ডেনিয়াল মার্টিন মনে করছেন, এশিয়ার প্রধান দুই-তিনটি উদীয়মান অর্থনীতি ও তাদের আর্থিক বাজারের ওপরই আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারীদের মূল দৃষ্টি ছিল। এর বাইরেও অনেক উন্নয়নশীল দেশ, বিশেষ করে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশ ফিলিপাইন, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর এমনকি ইন্দোনেশিয়ার সামনেও সুযোগ আছে তাদের আর্থিক বাজারে বড় বড় বিদেশী বিনিয়োগ আকর্ষণের। মার্টিন আরো বলেন, ‘আর্থিক বাজারের বাস্তবতার সঙ্গে অর্থনৈতিক বিষয়াদির সংযোগের বিষয়টির পাশাপাশি তাদের মধ্যকার ব্যবধানটিও বিবেচনায় রাখতে হবে। দীর্ঘমেয়াদি প্রবৃদ্ধি ও উন্নয়নের ওপর আর্থিক সংকটের প্রকৃত প্রভাবটিও থাকতে হবে পরিস্থিতি বিশ্লেষণে।’
সূত্রঃ বণিকবার্তা