কাউকে যদি প্রশ্ন করা হয়, মেঘমুক্ত আকাশের রং কি? সহজেই বলে দিবে ‘ নীল ‘। কিংবা যদি জিজ্ঞাসা করা হয় গাছের পাতার রং কি? উত্তর সবারই জানা – সবুজ। তেমনি যদি জিজ্ঞাসা করা হয়, পানির রং কি ? এটিও চোখ বন্ধ করে বলে দেয়া যাবে। বর্ণহীন একটি পদার্থ হচ্ছে পানি। তবে এর পারিপার্শ্বিক অবস্থার বিবেচনায় অবস্থানভেদে রং আলাদা হতেই পারে। যেমন আটলান্টিক মহাসাগরের বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে পানির রং সবুজ।
কিন্তু সবচেয়ে অবাক করা বিষয় হচ্ছে, পশ্চিম অস্ট্রেলিয়ার মধ্যভাগে একটি হ্রদ রয়েছে, যার পানির রং গোলাপী। এই হ্রদটির নাম হিলিয়ার হ্রদ (Lake Hillier)। বিশেষ কোনো সময়ে নয়, একেবারে স্থায়ীভাবেই এই হ্রদের পানির রং গোলাপী। বিস্ময়কর এই গোলাপী রঙের পেছনে Dunaliella salina নামক ক্ষুদ্র শ্যাওলাকে চিহ্নিত করা হয়। এর আধিক্যের কারণে পানির রঙে বিচিত্রতা এসেছে বলে প্রমান পাওয়া গেছে। এছাড়া Halophile ব্যাকটেরিয়ার উপস্থিতিতে পানির রঙ গোলাপী হয়। ১৮০২ সালের ১৫ জানুয়ারি, ইংলিশ অভিযাত্রি ম্যাথু ফ্লিন্ডার সর্বপ্রথম এই লেক আবিষ্কার করেন।
৬০০ মিটার লম্বা এবং ২৫০ মিটার চওড়া এই লেক ইতিমধ্যে পর্যটকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে নিয়েছে। লেকের চারপাশে রয়েছে বালুর আস্তরণ ও ইউক্যালিপ্টাস গাছের বনভূমি। এ লেকের কাছে যাওয়ার সবচেয়ে সহজ উপায় হচ্ছে হেলিকপ্টারে করে সেখানে গিয়ে নামা।
বিচিত্র রঙের পাশাপাশি এই লেকের আরেকটি চমকপ্রদ তথ্য হচ্ছে, এই লেকের পানি সমুদ্রের পানির চেয়ে প্রায় ১০ গুন বেশি লবনাক্ত। তাই, যে কেউ সহজেই পানিতে ভেসে থাকতে পারবে। আশ্চর্যের ব্যাপার হচ্ছে, পৃথিবীর আদিম যুগের কিছু অণুজীবের সন্ধান এই লেকের পানিতে পাওয়া গেছে।
তবে পৃথিবীব্যাপী আরও কিছু হ্রদ রয়েছে, যার পানির রং স্বাভাবিকের চেয়ে আলাদা। যেমনঃ
লাল এবং হালকা কমলা পানির ‘লাগুনা কলোরাডা’ হ্রদ- বলিভিয়া
তিন রঙের ‘কেলিমেতু’ হ্রদ- ইন্দোনেসিয়া
জমাট বাধা নীল রঙের ‘লেক পুকাকি’- নিউজিল্যান্ড
বরফ পিন্ডের মত দেখতে ‘জকুল-সারলন’ হ্রদ- আইসল্যান্ড
অনেকগুলো রঙের মিশেলে সৃষ্ট ‘ফাইভ ফ্লাওয়ার লেক’- চীন