প্রশান্ত মহাসাগরের একদম পূর্ব কোণে ৬৮০০টি দ্বীপ নিয়ে গড়ে ওঠা ছোট্ট একটি দেশ জাপান। কিন্তু ছোট্ট এই দেশটি তাদের কঠোর পরিশ্রম আর সততার দ্বারা জায়গা করে নিয়েছে বিশ্ব অর্থনীতিতে ও মানুষের মনে। প্রযুক্তিতে তাদের অবদান খুব বেশি। আর জাপানি প্রোডাক্ট মানেই কোয়ালিটি। আমরা চোখ বন্ধ করে তার উপর নির্ভর করতে পারি। জাপান যে শুধু প্রযুক্তিতে এগিয়েছে তা নয়, শিল্প সাহিত্যে চিত্রকলা সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে তাদের রয়েছে অবাদ বিচরণ। সূর্যোদয়ের দেশ জাপানের কিছু মজার তথ্য নিয়ে আজকের এই আয়োজন।
১) জাপানে স্কুলের ছাত্ররা তাদের শিক্ষকদের সাথে প্রতিদিন ১৫ মিনিট করে তাদের স্কুল পরিষ্কার করে। যা তাদেরকে একটি পরিচ্ছন্ন জাতি হিসেবে গড়ে তুলতে সাহায্য করে।
২) জাপানে আবর্জনা ক্লিনারদের হেলথ ইঞ্জিনিয়ার বলে, তারা মাসিক ৫০০০-৮০০০ ডলার বেতন পায়।
৩) জাপানে শিক্ষাজীবনের প্রথম ৬ বছর শেখানো হয় নৈতিকতা ও কিভাবে মানুষের সাথে চলতে হবে।
৪) জাপানের কোন প্রাকৃতিক সম্পদ নেই এবং প্রতি বছর শত শত ভূমিকম্প হয় তবু তারা বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি।
৫) হিরোশিমায় বোম মারার মাত্র ১০ বছরে হিরোশিমা তার আগের জায়গায় ফিরে আসে।
৬) জাপানে রেস্টুরেন্ট ও ট্রেনে মোবাইল ফোন ইউজ করা নিষেধ।
৭) জাপানীরা রাস্তায় ময়লা ফেলে না, তাদের ধূমপায়ীরা ব্যাগে করে ছাইদানি নিয়ে ঘুরে, জাপানের রাস্তায় যে সিগারেটের ছাই পর্যন্ত ফেলা নিষিদ্ধ!
৮) বিশ্বের একটি ধনী দেশ হয়েও জাপানিরা তাদের জন্য কোন কাজের মানুষ রাখেনা। সকল কাজের দায়িত্ব মা, বাবাকে করতে হয়।
৯) জাপানে শিক্ষাজীবনের প্রথম ৩ বছর কোন পরীক্ষা হয়না। কারন তারা মনে করে লেখাপড়া চরিত্র গঠনের জন্য, পরীক্ষা নেয়ার জন্য না।
১০) জাপানিজরা খাবার অপচয় করে না, রেস্টুরেন্টে গেলে দেখবেন, মানুষ যার যতটুকু দরকার এর বেশি নেয়না।
১১) জাপানের ট্রেন দেরি করে আসার গড় সময় বছরে ৭ সেকেন্ড! তারা প্রতিটা সেকেন্ডের হিসেব করে চলে।
১২) দীর্ঘজীবী মানুষের তালিকায় জাপানের অবস্থান তৃতীয়। গড়ে প্রায় ৮৩ বছর বাঁচে জাপানিরা।
১৩) জাপানে স্টুডেন্টদের খাওয়ার জন্য আধ ঘন্টা বিরতি দেয়া হয় সঠিক হজমের জন্য। কারণ তারা স্টুডেন্টদের জাতির ভবিষ্যত মনে করে।
১৪) জাপানিদের আত্মসম্মানবোধ খুব বেশি। সম্মানের খাতিরে জীবন বিলিয়ে দেওয়ার অনেক উদাহরণ রয়েছে দেশটিতে। জাপানের বেশ কয়জন প্রধানমন্ত্রী অল্প কয়টি নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি পূরণ করতে ব্যর্থ হওয়ায় স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করেছেন, কথা দিয়ে সে কথা রক্ষার ব্যাপারে তারা এতটাই কঠোর।
১৫) টাইটানিক জাহাজডুবি থেকে যে কয়জন জাপানি বেঁচে ফিরে আসতে পেরেছিলেন, দেশে ফিরে তাদের প্রবল জনরোষের সম্মুখীন হতে হয়। “সহযাত্রীদের বাঁচাতে যদি নাই পারলে, তবে তাদের সাথেই প্রাণ কেন দিলে না!” এই ছিলো জনতার আক্ষেপ!
১৬) নির্ধারিত সময়ের পরও কাজ করার জন্য “ওভারটাইম” নামে একটি শব্দ প্রচলিত দুনিয়াজুড়ে, শুধুমাত্র জাপানে এই শব্দটির কোন অর্থ নেই। জাপানিরা স্বভাবগতভাবেই অফিসের সময় শেষ হওয়ার পরও দীর্ঘ সময় পড়ে থাকে কাজ নিয়ে। ঊর্ধতন কর্মকর্তার আগে অফিস ত্যাগ করার কথা কল্পনাতেও ভাবতে পারে না তারা, যত জরুরী তাড়াই থাকুক না কেন ঘরে ফেরার।
১৭) সাধারণত আমাদের দেশে অফিসে ঘুমানো খুবই খারাপ হিসেবে ধরা হয়। কিন্তু জাপান এর সম্পূর্ণ উল্টো! জাপানে অফিসে ঘুমালে ভাবা হয় ঘুমন্ত ব্যক্তির ওপর কাজের প্রচুর চাপ ছিল। তখন বসের সামনে তার ভাবমূর্তি খারাপ না হয়ে আরও ভালো হয়!
১৮) অনেক সময় সমস্যা মোকাবিলায় বা দুশ্চিন্তায় আরামের জন্য একক বিছানায় থাকার প্রবণতা চলে আসে। জাপান এ ধরনের সমস্যা মোকাবিলায় ক্যাপসুল হোটেল তৈরি করে থাকে, যেখানে শুধু একটি বিছানার সমপরিমাণ স্থান রয়েছে। তবে এই ঘরে ওয়াইফাই সুবিধা রয়েছে। এই ক্যাপসুল হোটেল শুধু ছেলেদের জন্য তৈরি করা হয়।
১৯) জাপান অনেক উন্নত দেশ। হয়তো ভাবতে পারেন তাদের জমি অনেক উর্বর। যেখানে প্রচুর ফসল ফলে। কিন্তু তা নয়। জাপানে শতকরা ৭০ ভাগ ভূমি হচ্ছে পাহাড়ি। এ ছাড়াও দেশটিতে ২০০-এর মতো আগ্নেয়গিরি রয়েছে!
২০) জাপানে মোট প্রকাশিত বইয়ের ২০% হচ্ছে কমিকস বই।
২১) জাপানে প্রতি ২ লক্ষ জনে একজন খুন হয়।
২২) সন্তান দত্তক বা পালক সন্তান গ্রহণতো পুরো বিশ্বেই রয়েছে। জাপানে মোট দত্তক গ্রহণের শতকরা ৯৮ ভাগের বয়স ২০-৩০ বছর! অর্থাৎ তারা বয়স্কদের দত্তক গ্রহণ করে! ব্যবসায়িক পরিবার কিন্তু ছেলে নেই, তখন তারা দত্তক নেয়। আবার অনেকের ক্ষেত্রে, যদি নিজের ছেলে বাবা-মা রাখতে অক্ষম হয় তবে অন্য একজনের ছেলে নিয়ে আসে।
২৩) জাপানে শ্রম আইন বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় অনেক ভাল। এজন্য কোন কোম্পানি চাইলেই তার কর্মী বিদায় করতে পারে না। এজন্য মোটা অঙ্কের টাকা গুণতে হবে! তাই বলে কোম্পানির মালিক পক্ষরাও কিন্তু বোকা নন। তারা যে কর্মীকে ছাঁটাই করতে চান তাকে বিরক্তিকর কাজ দিয়ে থাকেন। হতে পারে সারাদিন টিভি পর্দার সামনে বসিয়ে রাখা। এসবের জন্য আবার আলাদা শাস্তি কক্ষ রয়েছে।
২৪) আমাদের দেশে সাধারণত দাঁত সঠিক ও সুন্দর গঠনের হতে হয়। কিন্তু জাপানে গত কয়েক বছর আগে প্লাস্টিক সার্জারির মাধ্যমে যুবক-সংবাদ যুবতীরা তাদের দাঁতের গঠন সৌন্দর্য না বাড়িয়ে ত্রুটিপূর্ণ আকার দিয়ে সৌন্দর্য আরো কমিয়ে ফেলত!
২৫) জাপানে স্বাক্ষরতার হার শতকরা ১০০ ভাগ। তাদের পত্রিকায় আমাদের দেশের মত দূর্ঘটনা, রাজনীতি, সিনেমার সংবাদ ইত্যাদি ছাপানো হয় না। সেখানে শুধু প্রয়োজনীয় ও আধুনিক জগৎ সম্পর্কে সংবাদ ছাপা হয়।