Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

আমলা থেকে জনপ্রিয় রাজনীতিবিদ এমকে আনোয়ার

mk-anwarমোহাম্মদ খোরশেদ আনোয়ার। দেশের জনপ্রিয় এক রাজনীতিকের নাম। কিন্তু তিনি এমকে আনোয়ার হিসেবেই বেশি পরিচিত। ছাত্র রাজনীতির মাধ্যমে রাজনৈতিক জীবন শুরু হলেও মাঝখানে দীর্ঘ ৩৪ বছর তিনি ছিলেন সরকারি আমলা। ছিলেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব। তবে এসব পরিচয় ছাপিয়ে তিনি রাজনীতিবিদ হিসেবেই দেশের মানুষের মনে স্থান করে নিয়েছেন।

ঢাকা কলেজে পড়ার সময় ছাত্র সংসদের সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন এমকে আনোয়ার। এছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া করার সময় ফজলুল হক হলের ছাত্র সংসদের সভাপতি নির্বাচিত হন তিনি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক। ফজলুল হক হলের ছাত্র থাকা অবস্থায় এমকে আনোয়ার ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে সম্পৃক্ত হয়েছিলেন।

chardike-ad

এমকে আনোয়ার ১ জানুয়ারি ১৯৩৩ সালে কুমিল্লার হোমনায় জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৪৮ সালে মেট্রিকুলেশন, ঢাকা কলেজ থেকে ১৯৫০ সালে আইএসসি পরবর্তিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএসসি (সম্মান) এবং পরিসংখ্যাণে এমএসসি করেন তিনি।

পড়াশোনার পাঠ চুকিয়ে ১৯৫৬ সালে পাকিস্তান সিভিল সার্ভিসে যোগ দেন এমকে আনোয়ার। ফরিদপুর ও ঢাকার ডেপুটি কমিশানর, জুটমিল করপোরেশনের সমিতি, টেক্সটাইল মিল করপোরেশনের সভাপতি, বাংলাদেশ বিমানের সভাপতি এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ পদে বহাল ছিলেন তিনি। ছিলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব।

এমকে আনোয়ার ১৯৭২ থেকে ১৯৯০ পর্যন্ত প্রশাসনে বিভিন্ন উচ্চপদে দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি একজন সিএসপি কর্মকর্তা। ১৯৭১ সালে ঢাকা জেলা প্রশাসক ছিলেন তিনি। তার পেশাগত জীবনের এক সময় পাকিস্তানের সাবেক রাষ্ট্রপতি লেঘারীর অধীনে চাকরি করেছেন দক্ষ এই আমলা।

দীর্ঘ ৩৪ বছরে সফল কর্মজীবন শেষ করেন ১৯৯০ সালে। নব্বইয়ের গণআন্দোলনে এরশাদ সরকারের পতনের পর এমকে আনোয়ারকে মন্ত্রিপরিষদ সচিবের পদ থেকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছিল।

এরপর ১৯৯১ সালে রাজনীতির মাঠে নামেন এমকে আনোয়ার। বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হন। পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে, কর্মজীবনে মতোই রাজনীতিতেও সফলতার মুখ দেখেছেন। কুমিল্লার হোমনা আসন থেকে পাঁচবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন জনপ্রিয় এই রাজনীতিক। বিএনপি সরকারের আমলে এমকে আনোয়ার দুই মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করেন।

এমকে আনোয়ার ১৯৯৭ সালে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান হন। পরবর্তিতে তিনি দলের স্থায়ী কমিটির অন্যতম সদস্য হিসেবে দলের জন্য আমৃত্যু কাজ করেছেন।

দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে এমকে আনোয়ারকে বেশ কয়েকবার কারাবরণও করতে হয়েছে। সর্বশেষ হত্যা ও বিস্ফোরক দ্রব্য আইনের দুই মামলায় জামিন আবেদন নাকচ করে তাকে কারাগারে পাঠিয়েছে কুমিল্লার একটি আদালত। এর আগে ২০১৩ সালেও তিনি কারাবরণ করেন। এখন পর্যন্ত তার নামে বেশ কয়েকটি মামলা রয়েছে।

এমকে আনোয়ার সোমবার দিনগত রাত একটা ৪০ মিনিটে রাজধানীর এলিফ্যান্ট রোডের বাসভবনে ইন্তেকাল করেন। মৃত্যুকালে এমকে আনোয়ারের বয়স হয়েছিল ৮৫ বছর। তিনি দুই ছেলে ও এক মেয়েসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।

এক শোক বার্তায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বলেন, ‘এমকে আনোয়ার রাজনীতিতে যোগ দিয়ে যখনই গণতন্ত্র বিপদাপন্ন হয়েছে, তখনই স্বৈরাচারের কবল থেকে দেশকে গণতন্ত্রের পথে উত্তরণের জন্য কাজ করছেন। গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হিসেবে দেশের উন্নয়নের জন্য এমকে আনোয়ারের গৌরবময় অবদান দেশবাসী ও বিএনপি চিরদিন শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করবে। তার মৃত্যু জাতীয়তাবাদী শক্তির জন্য মর্মস্পর্শী।’

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘তিনি (এমকে আনোয়ার) শুধু কুমিল্লার নন, সমগ্র বাংলাদেশে অত্যন্ত জনপ্রিয় নেতা ছিলেন। আজীবন তিনি গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করেছেন। গণতন্ত্রকে সমুন্নত রাখতে সব সময়ই ত্যাগ স্বীকার করেছেন এবং জনগণকে উজ্জীবিত করেছেন।’

দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেছেন, ‘এমকে আনোয়ারের মৃত্যুতে বাংলাদেশ একজন সৎ, নিষ্ঠাবান রাজনীতিককে হারালো। তার শূন্যতা কোনো দিন পূরণ হবে না।’