সন্তান ও ক্যান্সারে আক্রান্ত স্ত্রী রেখেই যুক্তরাষ্ট্র ছাড়তে হতে পারে

talukder-familyক্যান্সারে আক্রান্ত স্ত্রী ও দুই সন্তানকে যুক্তরাষ্ট্রে রেখেই বাংলাদেশে ফেরত যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে এক বাংলাদেশিকে। যুক্তরাষ্ট্র থেকে বহিষ্কারের আতঙ্কে নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন রিয়াজ তালুকদার নামের এই প্রবাসী বাংলাদেশি।

আগামী ২০ নভেম্বর তার ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট (আইসিইই) চেক-ইনের কথা রয়েছে। আর এ চেক-ইন নিয়ে ভয় ও অনিশ্চয়তার মধ্যে রয়েছেন তিনি। সোশালিস্ট ওয়ার্কার ডট অর্গ নামের ওয়েবসাইট বলছে, ২০ নভেম্বরই তার যুক্তরাষ্ট্রের থাকা না থাকার বিষয়টি নির্ধারিত হবে।

১৩ বছর বয়সে একজন বাংলাদেশি অভিবাসী হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমান রিয়াজ তালুকদার। বর্তমানে তার বয়স ৪৯ বছর। তার দুই সন্তানের একজনের বয়স ১৫ বছর; অন্যজনের বয়স ১১ বছর। তার স্ত্রী বর্তমানে থাইরয়েড ক্যান্সারের চিকিৎসা নিচ্ছেন। তরুণ বয়সে যুক্তরাষ্ট্রে এসে এখানেই নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন রিয়াজ তালুকদার। পরিবার নিয়ে বসবাস করছেন মার্কিন মুলুকে।

১৯৯০ সালে রিয়াজ তালুকদার সিএসএস-এর অ্যামনেস্টি প্রোগ্রামের যোগ্যতা অর্জন করেন। ওই প্রোগ্রামের আওতায় ১৯৮২ সালের আগে যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়া ব্যক্তিদের দেশটিতে বৈধভাবে স্থায়ী হওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়।

রিয়াজ তালুকদার ইতিপূর্বে বাংলাদেশ সফর করেছেন। কিন্তু নিজ দেশে রাজনৈতিক হুমকি থাকায় তিনি যুক্তরাষ্ট্রে স্থায়ীভাবে বসবাসের জন্য আশ্রয় চান। একপর্যায়ে ইমিগ্রেশন আইনে পরিবর্তন আসে। ১৯৯৯ সালে তার অনুপস্থিতিতে তার বিরুদ্ধে নির্বাসন আদেশ জারি করা হয়। ২০১০ সালের ১৮ আগস্ট ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট তার বাড়িতে অভিযান চালায়। ওই অভিযান তাকে পরিবার থেকে দূরে নিয়ে যায়। এর কয়েক মাস পর তিনি আটক অবস্থা থেকে মুক্তি পান। তবে একই সঙ্গে তাকে নিয়মিত ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট (আইসিইই) চেক-ইনের নির্দেশ দেওয়া হয়। এর উদ্দেশ্য হচ্ছে তার বসবাস বা বাসস্থানের হালনাগাদ তথ্য সম্পর্কে কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা।

সোশালিস্ট ওয়ার্কার ডট অর্গ নামের ওয়েবসাইট বলছে, ওবামা প্রশাসনের সময়ে বছরে একবার চেক-ইন দিতেন রিয়াজ তালুকদার। কিন্তু ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার পর এ নিয়ম বদলে যায়। প্রতি তিন মাসে একবার চেক-ইনের নিয়ম চালু করা হয়। এতে তার যুক্তরাষ্ট্রে থাকার সম্ভাবনা সংকুচিত হয়ে আসে। ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট দপ্তরও কার্যত তার দেশটির স্থায়ী হওয়ার সম্ভাবনার ব্যাপারে নেতিবাচক মনোভাব দেখায়। মানবিক কারণে এমন সুযোগ দিতে রাজি নয় তারা। বরং পাসপোর্টসহ কাগজপত্র দেখানোর জন্য তাকে এক মাসের সময় দেওয়া হয়েছে। অন্যথা ওয়ান-ওয়ে টিকিট নিয়ে তাকে বাংলাদেশের পথ ধরতে হবে।

গত ১৮ অক্টেবার বেশ কিছু অভিবাসী অধিকার সংগঠন একটি সম্মেলনে মিলিত হয়। এর উদ্দেশ্য ছিল অভিবাসী সম্প্রদায়ের ভয় বা আতঙ্ক নিয়ে সচেতনতা বাড়ানো। সেখানেও উঠে আসে রিয়াজ আহমেদ এবং তার পরিবারের সদস্যদের কথা। নির্বাসনে পাঠানো ব্যক্তিদের স্ত্রীদের গল্পও উঠে আসে এতে।

চেক-ইনের প্রাক্কালে রিয়াজ আহমেদের পাশে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন দুটি কমিউনিটির সদস্যরা। এ দুটি কমিউনিটি হচ্ছে জ্যাকসন হাইটস ইমিগ্র্যান্ট সলিডারিটি নেটওয়ার্ক এবং নিউ স্যাঙ্কচুয়ারি কোয়ালিশন।

এর আগে গত ১১ অক্টোবর যুক্তরাষ্ট্র থেকে ১১ বাংলাদেশি অভিবাসীকে বলপূর্বক বের করে দেওয়া হয়। ভোরে অ্যারিজোনার ডিপোর্টেশন কেন্দ্র থেকে তাদের বাংলাদেশগামী বিশেষ ফ্লাইটে তুলে দেয় কর্তৃপক্ষ। ওই ১১ জনের মধ্যে ১০ জনই নিউ ইয়র্কে বসবাস করতেন।

আগামী ২০ নভেম্বর তার ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট (আইসিইই) চেক-ইনের দিন ধার্য হওয়ায় তিনি স্ত্রী সন্তান নিয়ে আতঙ্কে রয়েছেন। এ জন্য প্রবাসীদের সহযোগিতা কামনা করে একটি আবেদনপত্রে তিনি প্রবাসীদের স্বাক্ষর সংগ্রহ করছেন বলে তার নিকটতম আত্মীয়রা জানিয়েছেন। কালের কণ্ঠ