Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

একের পর এক জাপানি অপহরণ

megumi
চার দশক আগে স্কুল থেকে ফেরার পথে নিখোঁজ হয়েছিল ১৩ বছরের মেগুমি ওকোতা। উত্তর কোরিয়ার গোয়েন্দাদের জাপানের ভাষা ও সংস্কৃতি প্রশিক্ষণের জন্য অপহরণ করা হয়েছিল তাকে।

৪০ বছর আগে স্কুল থেকে ফেরার পথে নিখোঁজ হয়েছিল ১৩ বছরের মেগুমি ওকোতা। ১৯৭৭ সালের ওই দিনটি থেকে এখন পর্যন্ত মেয়েকে খোঁজ করে চলেছেন হতভাগ্য বাবা সিংয়েরু ও মা সাকি। কোনো তদন্তেই জানা যায় না মেগুমির পরিণতি। এত দিনে মেয়ে বেঁচে আছে না মারা গেছে, এ খবরও জানতে পারেননি তাঁরা।

তদন্তে এতটুকু বের হয়ে আসে যে উত্তর কোরিয়া অপহরণ করেছিল মেগুমি ওকোতাকে। পুলিশি তদন্তে জানা যায়, উত্তর কোরিয়ার গোয়েন্দাদের জাপানের ভাষা ও সংস্কৃতি প্রশিক্ষণের জন্য অপহরণ করা হয়েছিল তাকে।

chardike-ad

সিংয়েরু বয়স এখন ৮৪ বছর, সাকির বয়স ৮১। মেয়েকে ফিরে পাওয়ার আশা এখনো করেন জাপানি এই বয়স্ক দম্পতি। তাই এবার যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছে আরজি জানালেন কিছু করার জন্য। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর প্রথমবারের মতো এশিয়া সফরে আসছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। জাপান সফর দিয়ে শুরু হয়েছে তাঁর এই সফর। টোকিওতে আজ সোমবার বিভিন্ন সময়ে নিখোঁজ ব্যক্তিদের পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন তিনি।

জাপানের গণমাধ্যম বলছে, এই সমস্যা সমাধানে পিয়ংইয়ংয়ের ওপর চাপ প্রয়োগ করতেই ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠক করেছে এসব পরিবার। তবে আলোচনার মাধ্যমে কতটুকু অগ্রগতি অর্জন সম্ভব, তা এখনো পরিষ্কার নয়। কারণ ২০১৪ সালে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার জাপান সফরের সময়ও তার সঙ্গে দেখা করেছিলেন মেগুমির বাবা মা। কিন্তু কোনো সমাধান এখনো হয়নি।

১৯৭০ থেকে ১৯৮০ সালের মধ্যে ১৭ জন জাপানি নাগরিককে অপহরণ করে উত্তর কোরিয়া—এমনটাই বিশ্বাস করে টোকিও। তবে পিয়ংইয়ং ২০০২ সালে প্রথমবারের মতো স্বীকার করে, তারা সত্তর ও আশির দশকে ১৩ জন জাপানি নাগরিককে অপহরণ করে। সে সময় অপহৃত ব্যক্তিদের ব্যাপারে বিস্তারিত তথ্য না দেওয়ায় জাপান ক্ষুব্ধ হয়। এর ফলে দুই দেশের সম্পর্কোন্নয়নের আলোচনার পথও ব্যাহত হয়।

জাপান মনে করে, ওই নাগরিকদের অপহরণের উদ্দেশ্য ছিল নিজেদের গোয়েন্দাদের জাপানি ঐতিহ্য ও ভাষা শেখানো। এই জাপানি নাগরিকদের কয়েকজনকে জাপানের উপকূলীয় এলাকা থেকে অপহরণ করে উত্তর কোরিয়ার চরেরা। অন্যদের বিদেশ থেকে অপহরণ করা হয়। অপহৃত ব্যক্তিদের মধ্যে সবচেয়ে কম বয়সী ছিল মেগুমি।

২০০২ সালেই অপহৃত পাঁচজনকে ফেরত পাঠায় উত্তর কোরিয়া। জানানো হয়, বাকি আটজন বিভিন্ন সময়ে মারা গেছেন। তবে তাদের মৃত্যুই হয়েছে- এর কোনো সঠিক প্রমাণ তারা দেয়নি। আর এই আটজনের মধ্যেই রয়েছে মেগুমি। ২০০৪ সালে মেগুমির পরিবারকে কিছু হাড় পাঠানো হয় পিয়ংইয়ংয়ের তরফ থেকে। তবে ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে জানা যায় হাড়গুলো মেগুমির নয়। আর তাই এখনো আশা ছাড়েনি পরিবার। জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে বলেছেন, উত্তর কোরিয়ায় জাপানের অপহৃত নাগরিক উদ্ধারের বিষয়টি অধিক প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে।

জাপান পুলিশ বলছে, এমন অন্তত ৮০০ জন নিখোঁজ ব্যক্তি আছেন- যাদের অন্য রাষ্ট্র অপহরণ করেছে এমন সম্ভাবনা বাদ দেওয়া যায় না। তবে কেবল জাপানের নাগরিকদেরই অপহরণ করা হয়েছে এমনটা নয়। ২০১৪ সালে পিয়ংইয়ংয়ের মানবাধিকার সংক্রান্ত নথিপত্র ঘেঁটে জাতিসংঘ জানায়, গত কয়েক দশকে বিভিন্ন দেশের প্রায় ২ লাখ মানুষকে অপহরণ করেছে উত্তর কোরিয়া। এর মধ্যে অবশ্য ১৯৫০ থেকে ১৯৫৩ সালে কোরীয় যুদ্ধের সময় অনেক দক্ষিণ কোরিয়ায় নাগরিক আটকা পড়ে উত্তর কোরিয়ায়। তবে ১৯৬০ থেকে ১৯৮০ সালের মধ্যে লেবানন, থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, রোমানিয়া ও ফ্রান্স থেকেও অনেক মানুষকে অপহরণ করা হয়েছে।

জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, সাম্প্রতিক সময়ে চীন থেকে নিজের দেশ ও দক্ষিণ কোরিয়ার নাগরিকদের অপহরণ করছে উত্তর কোরিয়া।

২০১৪ সালে স্টকহোমে এক চুক্তিতে জাপানের আহ্বানে সাড়া দিয়ে অপহৃত জাপানি নাগরিকদের সর্বশেষ অবস্থা সম্পর্কে তদন্ত করতে রাজি হয় উত্তর কোরিয়া। আর এটিই দুই দেশের সম্পর্ক উন্নয়নের অন্যতম সাফল্য বলে মনে করা হয়। তবে এরপর আবার থমকে গেছে এই আলোচনা।

জাপানি নাগরিক অপহরণের ঘটনা উত্তর কোরিয়া ও জাপানের সম্পর্ক উন্নয়নের পথে প্রধান প্রতিবন্ধক হয়ে রয়েছে। এর সঙ্গে এখন যুক্ত হয়েছে উত্তর কোরিয়ার সাম্প্রতিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলার ঘটনা। প্রতিবেশী এ দুটি দেশের মধ্যে আনুষ্ঠানিক কূটনৈতিক সম্পর্ক নেই।

সৌজন্যে: প্রথম আলো