সিউল, ১০ অক্টোবর ২০১৩:
বিনিয়োগ বাড়াতে সরকার এখন প্রবাসীদের দিকে নজর দিচ্ছে। এ লক্ষ্যে আগামী বছর ২৫ প্রবাসীকে ‘বাণিজ্যিক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি’ বা সিআইপি (এনআরবি) হিসেবে নির্বাচিত করা হবে। এ ব্যাপারে গত ১ আগস্ট প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় থেকে একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছে। তবে সিআইপি হিসেবে নির্বাচিতরা বিশেষ কী সুবিধা পাবেন তা বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়নি।
জানা গেছে, বাংলাদেশে প্রবাসীদের বিনিয়োগে উত্সাহিত করতেই সরকার এ উদ্যোগ নিয়েছে। তবে যে কেউ ইচ্ছা করলেই বাণিজ্যিক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি হতে পারবেন না। এজন্য যোগ্যতার শর্ত পূরণ করতে হবে। পাশাপাশি মন্ত্রণালয়ের নির্ধারিত ফরমে আবেদন করতে হবে। এনআরবি সিআইপিরা সাধারণ সিআইপিদের সমান মর্যাদা পাবেন। তারা বিমানবন্দর, বাংলাদেশী দূতাবাস, সরকারি কার্যালয়ে সেবার ক্ষেত্রে বিশেষ সুবিধা পাবেন।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, দেশে শিল্প ক্ষেত্রে সরাসরি বিনিয়োগকারী, বৈধ চ্যানেলে সর্বাধিক বৈদেশিক মুদ্রা প্রেরণকারী এবং বিদেশে বাংলাদেশী পণ্যের আমদানিকারক— এ তিন ক্যাটাগরিতে সিআইপি (এনআরবি) নির্বাচন করা হবে। এ বিষয়ে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বণিক বার্তাকে বলেন, প্রবাসীরা দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছেন। কিন্তু তারা সে হিসেবে স্বীকৃতি পান না। তাদের সম্মানিত করতে এ উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এতে প্রবাসীদের মধ্যে উদ্দীপনার সৃষ্টি হবে। পাশাপাশি বিনিয়োগও বাড়বে।
বাংলাদেশের শিল্প খাতে ৫ লাখ ডলার বিনিয়োগ করলে প্রথম ক্যাটাগরিতে আবেদন করা যাবে। এক্ষেত্রে শিল্প প্রতিষ্ঠানটি যদি বাস্তবায়নাধীন হয়, তাহলে যন্ত্রপাতি পাঠানোর প্রমাণপত্র লাগবে। প্রমাণ হিসেবে বিল অব ল্যান্ডিং, বিল অব এন্ট্রি, লেটার অব ক্রেডিট ইত্যাদিতে বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেনের পরিমাণ উল্লেখ থাকতে হবে। এ ক্যাটাগরিতে সরকার ১০ জন সিআইপি নির্বাচিত করবে।
দ্বিতীয় ক্যাটাগরিতে বাংলাদেশে বৈধ চ্যানেলে নির্দিষ্ট পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা প্রেরণকারী প্রবাসীরা আবেদন করতে পারবেন। এক্ষেত্রে অপ্রত্যাবাসনযোগ্য বৈদেশিক মুদ্রার পরিমাণ ন্যূনতম ১ লাখ ৫০ হাজার মার্কিন ডলার হতে হবে। এ ক্যাটাগরিতেও ১০ জনকে নির্বাচিত করা হবে।
তৃতীয় ক্যাটাগরিতে বিদেশে বাংলাদেশী পণ্যের আমদানিকারক প্রবাসী বাংলাদেশীরা গুরুত্ব্বপূর্ণ বাণিজ্যিক ব্যক্তি হিসেবে নির্বাচিত হতে পারবেন। এজন্য আবেদনকারীকে ন্যূনতম ৫ লাখ ডলারের বাংলাদেশী পণ্য আমদানি করতে হবে। যেসব আমদানিকারক অধিক মূল্য সংযোজনকারী পণ্য আমদানি করেছে তাদের অগ্রাধিকার দেয়া হবে।
কোনো আবেদনকারী দেশে বা বিদেশে ঋণখেলাপি হলে অথবা বিদেশী ক্রেতাদের সঙ্গে বাণিজ্যিক বিরোধ থাকলে নির্বাচনের অযোগ্য হিসেবে বিবেচিত হবেন। শুধু তাই নয়, আবেদনকারী যদি ওই বিরোধ নিষ্পত্তিতে আগ্রহী না থাকেন কিংবা দীর্ঘসূত্রতার পথ অবলম্বন করেন তাহলেও তিনি অযোগ্য বিবেচিত হবেন।
বিজ্ঞপ্তিতে আরো বলা হয়, আবেদনকারী ব্যক্তি যদি আদালত কর্তৃক সাজাপ্রাপ্ত হন এবং সাজা ভোগের পর পাঁচ বছর অতিবাহিত না হলেও তিনি আবেদনের অযোগ্য বলে গণ্য হবেন। এছাড়া কোনো কারণে আবেদনকারী অবাঞ্ছিত ব্যক্তি বিবেচিত হলে এবং আবেদনপত্রে ভুল তথ্য দিলে অযোগ্য বলে বিবেচিত হবেন।
এ ব্যাপারে প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের এমডি সিএম কয়েস সামী বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতিতে তিনটি খাত সবচেয়ে বেশি অবদান রাখে। এর একটি হচ্ছে প্রবাসীদের রেমিট্যান্স। অন্য দুটি হচ্ছে কৃষি ও গার্মেন্ট। গার্মেন্টের টাকা আসেও বেশি আবার দেশের বাইরে চলেও যায়। তবে প্রবাসীদের রেমিট্যান্সের টাকা বাংলাদেশেই থাকে। এদের আরো উত্সাহিত করলে দেশে রেমিট্যান্সের পরিমাণ বাড়বে। অর্থনীতির উন্নতি হবে। এজন্যই সরকার এ উদ্যোগ নিয়েছে। সূত্রঃ বণিকবার্তা