Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

ব্যাংক পাচ্ছেন সন্দ্বীপের এম এ কাশেম

নতুন ব্যাংকের জন্য ২০১১ সালে আবেদন চায় বাংলাদেশ ব্যাংক। জমা পড়ে ৩৭টি আবেদন। সরকারের ইচ্ছাকে প্রাধান্য দিয়ে নয়টি ব্যাংকের অনুমোদনও দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। যদিও আর কোনো ব্যাংকের অনুমোদন না দেয়ার পক্ষেই মত ছিল আর্থিক খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থাটির। ২০১২ সালে ওই নয় ব্যাংকের অনুমোদনের পর গত বছরও অনুমোদন পায় বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) উদ্যোগে সীমান্ত ব্যাংক। এখন অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে আরো দুটি ব্যাংক।

জানা গেছে, ‘পিপলস ইসলামী ব্যাংক’ নামে একটি ব্যাংকের অনুমোদন পাচ্ছেন চট্টগ্রামের সন্দ্বীপের বাসিন্দা যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী এম এ কাশেম। যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সহসভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন তিনি। আর ‘বাংলা ব্যাংক’-এর আবেদন করেছেন বেঙ্গল গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান মো. জসিম উদ্দিন।

chardike-ad

ব্যাংক দুটি অনুমোদনের জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে গত সপ্তাহে বাংলাদেশ ব্যাংকে চিঠি পাঠানো হয়েছে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ ব্যাংকও অনুমোদনের প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে।

ব্যাংক দুটির বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকে চিঠি পাঠানোর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব মো. ইউনুসুর রহমান। গতকাল বণিক বার্তাকে তিনি বলেন, নতুন ব্যাংক অনুমোদনের ক্ষমতা বাংলাদেশ ব্যাংকের। এক্ষেত্রে সরকারের পক্ষ থেকে সুপারিশ থাকতে পারে। নতুন দুটি ব্যাংক অনুমোদন দেয়ার বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের বক্তব্য গত সপ্তাহে বাংলাদেশ ব্যাংকে পাঠানো হয়েছে। উত্তরে বাংলাদেশ ব্যাংক এখনো কিছু জানায়নি।

অনুমোদনের অপেক্ষায় থাকা ব্যাংকগুলোর একটি পিপলস ইসলামী ব্যাংকের আবেদনকারী এম এ কাশেম তার নিজ এলাকা সন্দ্বীপে একেবারেই অপরিচিত। ব্যাংক পাচ্ছেন, এমন খবরে নানা আলোচনা চলছে তার জন্মস্থানেও। অনেকেই বলছেন, যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সহসভাপতি এম এ কাশেমের কাছে ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করার মতো অর্থ থাকার কথা নয়। তৃতীয় কোনো পক্ষের স্বার্থরক্ষার জন্যই সাইনবোর্ড হিসেবে ব্যবহার হচ্ছেন তিনি।

অপরিচিত এম এ কাশেমের ব্যাংক পাওয়া নিয়ে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়তে হচ্ছে ওই নামে চট্টগ্রামের প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ীদেরও। এরই মধ্যে এ ধরনের পরিস্থিতিতে পড়তে হয়েছে সন্দ্বীপের বাসিন্দা ইয়ুথ গ্রুপের চেয়ারম্যান আবুল কাশেম হায়দারকে। সন্দ্বীপের এম এ কাশেম নামে একজন বাণিজ্যিক ব্যাংকের লাইসেন্স পেতে যাচ্ছেন, এমন খবর ছড়িয়ে পড়ার পর ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে শুভানুধ্যায়ীরা আবুল কাশেম হায়দারের সঙ্গে বিভিন্ন সময় যোগাযোগ করেছেন। ব্যাংকের লাইসেন্স পাওয়া নিয়ে বিভিন্ন প্রশ্নেরও উত্তর দিতে হয়েছে তাকে।

একই পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হচ্ছে একেএইচ গ্রুপের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সন্দ্বীপের আরেক ব্যবসায়ী আবুল কাশেমকে। যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, নতুন ব্যাংকের লাইসেন্সের জন্য আবেদন করেছি কিনা, একই প্রশ্ন অনেকেই করেছেন। এখনো অনেকেই মনে করছেন, আমিই ব্যাংক খাতে আসছি। প্রকৃতপক্ষে ব্যাংকের লাইসেন্সের জন্য আবেদন করা আবুল কাশেম আমি নই। একই নাম হওয়ার কারণে অনেকেই আমার বিষয়ে ভুল বুঝেছেন।

এলাকাবাসীর কাছেও প্রায় একেবারেই অপরিচিত যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী এম এ কাশেম। তার জন্মস্থান সন্দ্বীপের রহমতপুরে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এম এ কাশেমের পুরো পরিবারই দীর্ঘদিন ধরে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করছে। সন্দ্বীপে তাদের বাড়ি থাকলেও কেউই সেখানে আসেন না। ভাইবোনরা সন্দ্বীপের রহমতপুর হাইস্কুলে পড়াশোনা করলেও এম এ কাশেম পড়েছেন সন্দ্বীপ এবি হাইস্কুলে। তবে গ্র্যাজুয়েশন শেষ করার আগেই যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমান তিনি।

ব্যাংকের লাইসেন্সের বিষয়টি নিয়ে কয়েক মাস আগে সরকারের উচ্চপর্যায় থেকে এম এ কাশেমের ব্যাপারে খোঁজ নেয়া হয়েছিল বলে জানান সন্দ্বীপের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. নুরুল হুদা। তিনি বলেন, আমি সন্দ্বীপের দায়িত্ব নিয়েছি মাত্র দুই মাস। এম এ কাশেমের বিষয়ে বিস্তারিত আমার জানা নেই। তবে ব্যাংকের লাইসেন্স পাওয়ার বিষয়ে সরকারের উচ্চপর্যায় থেকে এর আগে যোগাযোগ করা হয়েছিল। আগের ইউএনও এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়কে তথ্য প্রদান করেছেন।

নব্বইয়ের দশকে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি দেয়া এম এ কাশেম নিউইয়র্কের ব্রুকলিনের বাঙালিপাড়ার অধিবাসী বলে জানা গেছে। নিউইয়র্কে বসবাসকারী সন্দ্বীপের একাধিক ব্যক্তির সঙ্গে যোগাযোগ করে জানা গেছে, এম এ কাশেম যুক্তরাষ্ট্রে ছোট পরিসরে ঠিকাদারি করতেন। তবে বর্তমানে তার ব্যবসায়িক কার্যক্রম সম্পর্কে কেউই কোনো তথ্য দিতে পারেননি। কয়েক বছর আগে সন্দ্বীপের একাধিক অভিবাসী ব্যবসায়ী ব্যাংকের লাইসেন্স নেয়ার বিষয়ে এম এ কাশেমের সঙ্গে যুক্ত হলেও পরবর্তীতে তারা সরে আসেন।

এম এ কাশেম বর্তমানে বাংলাদেশে অবস্থান করছেন জানতে পেরে তার সেলফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও পরিচয় দিতে চাননি তিনি।

এদিকে বাংলা ব্যাংকের জন্য আবেদনকারী বেঙ্গল গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান মো. জসিম উদ্দিন ২০১২ সালে অনুমোদন পাওয়া মেঘনা ব্যাংকেরও উদ্যোক্তা শেয়ারহোল্ডার। নতুন ব্যাংকের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এক বছর ধরেই আমরা ব্যাংক অনুমোদনের অপেক্ষায় আছি। আমাদের প্রত্যাশা, বাংলাদেশ ব্যাংক আমাদের আবেদনকৃত ব্যাংকের লাইসেন্স দেবে। এখনো বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে আমরা দৃশ্যমান কোনো সাড়া পাইনি। আমাদের দিক থেকে সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছি।

নতুন ব্যাংকের লাইসেন্স দেয়ার জন্য এ মুহূর্তে সরকারের পক্ষ থেকে বড় কোনো চাপ নেই বলে জানান বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র শুভঙ্কর সাহা। তিনি বলেন, এর আগে নতুন ব্যাংক অনুমোদন দেয়ার বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের অবস্থান ব্যাখ্যা করে সরকারকে জানানো হয়েছে। এর পরও সরকারের পক্ষ থেকে নতুন ব্যাংক অনুমোদন দেয়ার জন্য কোনো সুপারিশ এলে সে আলোকে বাংলাদেশ ব্যাংক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে।