Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

বিশ্বের শীর্ষ পাঁচ ধনী দেশ

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) বিশ্বের শীর্ষ ধনী দেশগুলোর একটি তালিকা তৈরি করেছে। মোট জাতীয় উৎপাদনের ভিত্তিতে তৈরি ওই পরিসংখ্যানে বিবেচনায় নেয়া হয়েছে দেশগুলোর মানুষের ক্রয়সক্ষমতার বিষয়টিও। আইএমএফের র‌্যাঙ্কিং অনুযায়ী বিশ্বের শীর্ষ পাঁচ ধনী দেশ।

চীন: আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের হিসাব অনুযায়ী বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে ধনী দেশ চীন। দীর্ঘ দিনের একক মার্কিন আধিপত্যকে পেছনে ফেলে ২০১৪ সালে প্রথমবারের মতো তালিকার শীর্ষে ওঠে দেশটি। চলতি বছরেও বিশ্ব অর্থনীতির শীর্ষস্থান ধরে রেখেছে দেশটি। বিগত অর্থবছরে চীনের জিডিপির পরিমাণ ১৯ লাখ ৫১ হাজার কোটি মার্কিন ডলার, যা পূর্ববর্তী বছরের চেয়ে ৭ দশমিক নয় শতাংশ বেশি।

chardike-ad

বিংশ শতাব্দীর প্রথম দশক পর্যন্ত রাজতন্ত্র প্রচলিত ছিল চীনে। ১৯১১ সালে জাতীয়তাবাদীরা রাজতন্ত্রের পতন ঘটায়। এরপর দীর্ঘ গৃহযুদ্ধের পর ১৯২৮ সালে প্রজাতান্ত্রিক চীন রাষ্ট্র গঠন করে জাতীয়তাবাদীরা। তবে বেশ কিছু বছর যেতে না যেতেই আবার শুরু হয় গৃহযুদ্ধ। ১৯৪৯ সালে জাতীয়তাবাদীদের পরাজিত করে কমিউনিস্টরা গ প্রজাতন্ত্রী চীন রাষ্ট্র গঠন করে।

বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল দেশ চীন। দেশটির বর্তমান জনসংখ্যা প্রায় ১৩০ কোটি। বিশাল এই জনসংখ্যাকে সম্পদে পরিণত করে শিল্পায়ন আর পরিকল্পিত বিনিয়োগই গড়ে দিয়েছে চীনের বিশাল অর্থনীতির ভিত। ১৯৫০ সালে চীনের কমিউনিস্ট পার্টি দেশের সব আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে রাষ্ট্রায়ত্ত করে। সে সময়ই মূলত শক্ত অর্থনীতির ভিত্তি করে ওঠে। পরে ১৯৭৮ সালে সংস্কার কর্মসূচির আওতায় বাজারমুখী অর্থনীতিতে চলে আসে চীন। মুক্তবাজার অর্থনীতির সুবিধাকে কাজে লাগিয়ে নিজেদের অর্থনৈতিক অবস্থানকে দিনকে দিন উন্নত করেছে তারা।

বিগত বছরগুলোতে ব্যাপক হারে শিল্পায়ন হয়েছে আয়তনে বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম এই দেশটিতে। এসময় বিশ্বব্যাপী বাজার দখল করতে মরিয়া হয়ে ওঠে চীনা প্রতিষ্ঠানগুলো। ক্ষুদ্র শিল্প থেকে রোবটিক্স, মেশিনারিজ থেকে উড়োজাহাজ তৈরি কোনো খাতেই পিছিয়ে নেই তারা। দীর্ঘমেয়াদি অর্থনৈতিক পরিকল্পনা আর যথাযথ বাস্তবায়নের সুফল বেশ ভালোভাবেই ভোগ করেছে চীনারা। জনসংখ্যার সুবিধাকে কাজে লাগানোর জন্য চীন কর্মসংস্থানের দিকে বেশি গুরুত্ব দিয়েছে। জনশক্তির দক্ষতা ও যোগ্যতাকে সামনে রেখে স্থাপিত হয়েছে শিল্পপ্রতিষ্ঠান। প্রতি বছর এক কোটি যুবকের কর্মসংস্থান নিশ্চিত করার পরিকল্পনা ছিল চীন সরকারের।

ব্যাপক হারে নগরায়নও হয়েছে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে। ফলে মান বেড়েছে জীবনযাত্রার। একটি সূত্রে জানা গেছে, চলমান নগরায়নের এই ধারায় আগামী দুই দশকে অন্তত ৩১ কোটি চীনা নাগরিক গ্রাম থেকে শহরের বাসিন্দা হবে। পর্যটন খাতেও এখন বিশ্বের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় দেশ চীন। নতুন পর্যটন স্পট তৈরি ও পুরনো দর্শনীয় স্থানগুলোতে বিদেশী পর্যটকদের আকর্ষণ করতে কাজ করেছে সরকার।

এক নজরে চীন

নাম : গণপ্রজাতন্ত্রী চীন, রাজধানী : বেইজিং, ভৌগোলিক অবস্থান : পূর্ব এশিয়া, আয়তন : ৯৬ লাখ বর্গকিলোমিটার, জনসংখ্যা : ১৩০ কোটি, প্রধান ভাষা : মান্দারিন, মুদ্রা : রেনমিনবি, শাসনব্যবস্থা: একদলীয় (১৯৪৯ সাল থেকে চীনা কমিউনিস্ট পার্টি ক্ষমতায়), আইনসভা : ন্যাশনাল পিপলস কংগ্রেস, প্রদেশ : ২২টি, বিশেষ প্রশাসনিক অঞ্চল : হংকং, ম্যাকাও, তাইওয়ান। জাতীয়তা : জনসংখ্যার শতকরা ৯০ শতাংশ চৈনিক হান জাতি, অবিশষ্টদের মধ্যে রয়েছে আরো ৫৫টি সংখ্যালঘু জাতিগোষ্ঠী, প্রধান ধর্ম : প্রধানত বৌদ্ধ, মুসলমান জনসংখ্যা : দুই কোটি ৩৫ লাখ প্রায়।

যুক্তরাষ্ট্র: তৃতীয় বিশ্বের উন্নয়নশীল দেশগুলোর মানুষের কাছে স্বপ্নের দেশ হিসেবে পরিচিত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। বর্তমানে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ এটি। ১৮৭২ সাল থেকে টানা প্রায় দেড় শ’ বছর শীর্ষ ধনী দেশের স্থানটি ছিল তাদের দখলে। ২০১৪ সালে প্রথমবার চীন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে পেছনে ফেলে শীর্ষে উঠে।

২০১৫ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মোট জাতীয় উৎপাদন ছিল ১৭ লাখ ৯৬ হাজার ৮০০ কোটি মার্কিন ডলার, যা আগের বছরের চেয়ে তিন দশমিক ছয় শতাংশ বেশি।৫০টি অঙ্গরাজ্য নিয়ে গঠিত ইউনাইটেড স্টেটস অব আমেরিকা বা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। বিভিন্ন জাতি, ধর্ম ও সংস্কৃতির সমন্বয়ে গঠিত যুক্তরাষ্ট্রের সমাজব্যবস্থা। বহু সংস্কৃতির মিশেল রয়েছে এর জনজীবনে।

বহু যুদ্ধবিগ্রহ আর প্রাণহানি পাড়ি দিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আজকের সভ্য সমাজের প্রতিনিধিত্ব করছে। ধারণা করা হয়, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আদিম অধিবাসীরা এশীয় বংশোদ্ভূত। অন্তত চার হাজার বছর আগে তারা এখানে এসেছিল। তবে ধীরে ধীরে ইউরোপের বিভিন্ন দেশের উপনিবেশ স্থাপনের ফলে এখানে ইউরোপীয়দের সংখ্যা বেড়ে যায়। উপনিবেশিকদের সাথে স্থানীয়দের সংঘর্ষে বহু মানুষ প্রাণ হারিয়েছে এই ভূখণ্ডে।

১৭৭৬ সালে ১৩টি ব্রিটিশ উপনিবেশ সম্মিলিতভাবে গ্রেট ব্রিটনের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করে। সে বছর ৪ জুলাই ওই ১৩টি রাজ্য নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র গৃহীত হয়। এরপর দীর্ঘ দিনের যুদ্ধে এই উপনিবেশগুলো গ্রেট ব্রিটেনকে পরাজিত করে আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার লাভ করে। ১৭৮৭ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর মার্কিন সংবিধান গৃহীত হয় এবং ১৭৮৮ সালের চূড়ান্তভাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জন্ম হয়।

মিশ্র অর্থনীতিরি দেশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। অর্থনীতির সব শাখায় বিশ্বব্যাপী আধিপত্য মার্কিনিদের। তাদের রয়েছে প্রচুর প্রাকৃতিক সম্পদ ও তা ব্যবহারের সর্বোচ্চ কাঠামোগত সুবিধা। আর এ কারণেই প্রাকৃতিক সম্পদের যথাযথ ব্যবহারের ফলে মার্কিন অর্থনীতি এতটা অগ্রসর। বিশ্বের তেল উৎপাদনকারী দেশগুলোর মধ্যে শীর্ষে যুক্তরাষ্ট্র। প্রাকৃতিক গ্যাস উত্তোলনেও সেরা অবস্থানে তারা। বাণিজ্যে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে দেশটি, বিশ্বের শীর্ষ ৫০০টি ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ১২৮টির প্রধান কার্যালয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে।

শিল্প উৎপাদনের দিক থেকেও বিশ্বের অন্যতম, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। প্রযুক্তিপণ্য, বিমান শিল্প, পর্যটন, মহাকাশ বিজ্ঞান, গবেষণা, স্টিল, টেলিযোগাযোগ, রাসায়নিক পদার্থ, অস্ত্র প্রস্তুত, ইলেকট্রনিকস, গাড়ি নির্মাণসহ উৎপাদনের সব শাখায় দেশটির রয়েছে শক্ত অবস্থান।

২০০৭-০৮ সালের বিশ্বমন্দার সময় মার্কিন অর্থনীতি বড় ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছিল। তবে যথাযথ পরিকল্পনা ও সুষ্ঠু বাস্তবায়নের মাধ্যমে ইতোমধ্যেই সেই ক্ষতি কাটিয়ে ওঠার পথে তারা।

এক নজরে:

নাম: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, রাজধানী : ওয়াশিংটন ডিসি, ভৌগোলিক অবস্থান : উত্তর আমেরিকা, আয়তন : ৯৮ লাখ ৫৭ হাজার ৩০৬ বর্গকিলোমিটার, জনসংখ্যা ৩০ কোটি ৯ লাখ, রাষ্ট্রভাষা : ইংরেজি, মুদ্রা : মার্কিন ডলার, শাসনব্যবস্থা : প্রজাতান্ত্রিক, আইনসভা : দুই কক্ষবিশিষ্ট (উচ্চকক্ষ-সিনেট ও নিম্নকক্ষ-হাউজ অব রিপ্রেজেন্টেটিভস), ধর্ম : প্রধানত খ্রিষ্টান, মুসলমান জনসংখ্যা : ২৮ লাখ।

ভারত: আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের হিসাব অনুযায়ী ২০১৫ সালে ভারত বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ। এ বছর ভারতের মোট জাতীয় উৎপাদনের পরিমাণ ৮ লাখ ২ হাজার ৭০০ কোটি মার্কিন ডলার, যা আগের বছরের চেয়ে শতকরা ৮ শতাংশেরও বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে।

আয়তনে ভারত দক্ষিণ এশিয়ার বৃহত্তম ও পৃথিবীর সপ্তম। জনসংখ্যার দিক থেকে বিশ্বে চীনের পরই ভারতের অবস্থান।

অতি প্রাচীনকাল থেকে প্রাকৃতিক সম্পদ, ব্যবসায় বাণিজ্য ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যে ভরপুর ভারতীয় ভূখণ্ড। ভৌগোলিক অবস্থানের কারণেও এই দেশটি এশিয়ার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এলাকা। এ কারণেই ষোড়শ শতক থেকেই এখানে ব্রিটিশ, পর্তুগিজ, ডাচ, ফরাসিসহ বিভিন্ন ইউরোপীয় বণিকেরা আসতে শুরু করে। সে সময় প্রবল পরাক্রমশালী মুঘল সম্রাটরা ভারতীয় উপমহাদেশ শাসন করছিল। তবে ইউরোপীয় ঔপনিবেশিকেরা ধীরে ধীরে এখানে তাদের অবস্থান শক্ত করতে থাকে। দেশীয় শাসকদের কোন্দলের সুযোগ নিয়ে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি দেশের অনেক এলাকা তাদের দখলে নেয়। ১৭৫৭ সালে পলাশির যুদ্ধে পরাজয়ের মধ্য দিয়ে ভারতবর্ষ পুরোপুরি ব্রিটিশ শাসনের অধীনে চলে যায়।

প্রায় ২০০ বছর ব্রিটিশ শাসনের পর ১৯৪৭ সালের ১৫ আগস্ট ভারত স্বাধীনতা লাভ করে। ১৯৫০ সালের ২৬ জানুয়ারি ভারতের সংবিধান প্রণয়ন করা হয়।

বিগত শতাব্দীর নব্বইয়ের দশকে পুরোপুরি মুক্তবাজার অর্থনীতিতে প্রবেশ করে ভারত। এর আগে অর্থনীতিরি বিভিন্ন খাতে বিধিনিষেধ থাকলেও এসময় প্রতিষ্ঠিত সংসদীয় গণতন্ত্রের সুবিধা নিয়ে দেশটি উন্নত বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে নিজেদের অর্থনীতিকে সামনে এগিয়ে নেয়। প্রচুর পরিমাণে বিদেশী বিনিয়োগ ও দেশীয় উদ্যোক্তা গড়ে উঠেছে এ সময়কালে।

স্টিল, গাড়ি, সিমেন্ট, রাসায়নিক, ইলেকট্রিক পণ্য, যন্ত্রশিল্প, বস্ত্রশিল্প ভারতের অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি। খনিজ সম্পদের মধ্যে রয়েছে পেট্রোলিয়াম, কয়লা, হীরা, চুনাপাথর, প্রাকৃতিক গ্যাস ইত্যাদি। এ ছাড়া বেকারত্ব হ্রাস, পর্যটন ও পরিবহন শিল্পের বিকাশ, কৃষির আধুনিকায়ন, বিদ্যুৎ উৎপাদন প্রভৃতি খাতে ব্যাপক উন্নতি করেছে ভারত। ফলশ্রুতিতে বিশ্বঅর্থনীতিরি বাঘা বাঘা শক্তিগুলোর সাথে পাল্লা দিয়ে চলছে দক্ষিণ এশিয়ার এই দেশটি।

এক নজরে:

নাম : ভারতীয় প্রজাতন্ত্র, রাজধানী : নয়াদিল্লি, ভৌগোলিক অবস্থান : দক্ষিণ এশিয়া, আয়তন : ৩৩ লাখ ৬৬ হাজার ৪১৪ বর্গকিলোমিটার, জনসংখ্যা : ১২৫ কোটি প্রায়, মুদ্রা : ভারতীয় রুপি, প্রধান ভাষা : হিন্দি, শাসনব্যবস্থা : বহুদলীয় গণতন্ত্র, আইনসভা : দ্বিকক্ষবিশিষ্ট (উচ্চকক্ষ- লোকসভা, নিম্নকক্ষ-বিধান সভা), ধর্ম : প্রধানত হিন্দু, মুসলমান জনসংখ্যা : ১৮ কোটি।

জাপান: বিশ্বের ধনী দেশের তালিকার চতুর্থ অবস্থানে রয়েছে সূর্যোদয়ের দেশ জাপান। শিল্পসমৃদ্ধ দেশটির এ বছরে মোট জাতীয় উৎপাদন চার লাখ ৮৪ হাজার ২০০ কোটি মার্কিন ডলার, যা পূর্ববর্তী বছরে চেয়ে এক দশমিক ছয় শতাংশ বেশি।

প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপরাষ্ট্র জাপান। চারটি বৃহৎ দ্বীপসহ প্রায় ছয় হাজার ক্ষুদ্র দ্বীপ নিয়ে গঠিত জাপান। হোনশু, হোক্কাইদো, কুশু ও শিকোকু দ্বীপগুলোতেই জাপানের মূল ভুখণ্ড। ১২ শ’ শতাব্দী থেকে উনবিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি পর্যন্ত শোগুন নামক একক শাসকেরা জাপানকে শাসন করতেন। ১৮৬৮ সালে দীর্ঘ দিনের গৃহযুদ্ধের পর মেইজি সম্রাট ক্ষমতায় এলে জাপান সাম্রাজ্য পনঃপ্রতিষ্ঠিত হয়। দিনে দিনে সামরিক শক্তিতে বলীয়ান হয়ে ওঠে জাপান। প্রথম বিশ্বযুদ্ধে তারা জয়ী হয় তবে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে দেশটির হিরোশিমা ও নাগাসাকি শহরে মার্কিন পারমাণবিক বোমা আঘাত হানার পর পাল্টে যায় জাপানের রাজনৈতিক দৃশ্যপট। ১৯৪৭ সালে সাংবিধানিক রাজতন্ত্র গৃহীত হয় জাপানে।

এর পর থেকে সামরিক দিক থেকে নিজেদের মনোযোগ পুরোপুরি সরিয়ে নেয় জাপান। মনোযোগী হয় অর্থনৈতিক উন্নতিতে। শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক ও কুটনৈতিক অবস্থার মাধ্যমে অর্থনীতিতে উত্তোরোত্তর উন্নতি হয় জাপানের অর্থনীতি। সামরিক খাতে ব্যয় কমিয়ে তা অর্থনীতি উন্নয়নে কাজে লাগায় জাপান সরকার।

বাজার অর্থনীতি ছিল জাপানের অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রধান পথ। এর মাধ্যমে দেশটি বিশ্বব্যাপী নিজেদের পণ্য প্রসার ও নিজ দেশে বিদেশী বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করতে সমর্থ হয়। টোকিও স্টক এক্সচেঞ্জ এশিয়ার সবচেয়ে বড় শেয়ার মার্কেট। এ ছাড়া পরিবহন শিল্পেও বিপ্লব সাধন করেছে জাপান। পাশাপাশি ইলেকট্রনিকস, পরিবহনব্যবস্থা, সড়ক ও সেতু শিল্প, পর্যটন ইত্যাদিতেও বিশ্বের সেরাদের কাতারে জাপান। তথ্যপ্রযুক্তি খাতে জাপানের অর্জন বিশ্বের অনেক ক্ষমতাধর দেশের চেয়ে অনেক বেশি। দেশটিতে বেকারত্ব মাত্র তিন শতাংশ।

এক নজরে:

নাম : জাপান, রাজধানী : টোকিও, ভৌগোলিক অবস্থান : পূর্ব এশিয়া, আয়তন : ৩ লাখ ৭৭ হাজার ৯৪৪ বর্গকিলোমিটার, জনসংখ্যা : ১২ কোটি ৭০ লাখ, শাসনব্যবস্থা : সাংবিধানিক রাজতন্ত্র, পার্লামেন্ট : দুই কক্ষবিশিষ্ট (উচ্চকক্ষ হাউজ অব কাউন্সিলরস, নিম্নকক্ষ হাউজ অব রিপ্রেজেন্টেটিভস)। মুদ্রা : ইয়েন, প্রধান ভাষা : জাপানিজ, ভাষা : মুসলিম, জনসংখ্যা : ২ লাখ।

জার্মানি: সেরা পাঁচ ধনী দেশের তালিকায় পঞ্চম অবস্থানে রয়েছে পশ্চিম ইউরোপের দেশ জার্মানি। এ বছর সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী জার্মানির মোট জাতীয় উৎপাদন ৩ লাখ ৮৪ হাজার ২০০ কোটি মার্কিন ডলার, যা পূর্ববর্তী বছরের চেয়ে দুই দশমিক পাঁচ শতাংশ বেশি।

জাতি হিসেবে জার্মানির রয়েছে সুপ্রাচীন ইতিহাস। ঐতিহাসিক রোমান সাম্রাজ্যসহ বেশ কিছু প্রাচীন সাম্রাজ্যের কেন্দ্রবিন্দু ছিল জার্মানি। তবে সে সময় বিভিন্ন অংশে বিভক্ত ছিল দেশটি। ১৮১৫ সালে প্রথম জার্মানির রাজ্যগুলোকে নিয়ে একটি কনফেডারেশন গঠিত হয়। এরপর দেশটি শিল্প ও সামরিক খাতে ব্যাপক উন্নত হয়। তবে সমগ্র ইউরোপ আধিপত্য বিস্তার শুরু করলে ১৯১৮ সালের প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়।

সেই যুদ্ধে পরাজয়ের পর আবার বিশৃঙ্খলা শুরু হয় দেশটিতে। ৩০-এর দশকে এডলফ হিটলারের নেতৃত্বে উগ্র জাতীয়তাবাদী নাৎসি পার্টি ক্ষমতায় আসে জার্মানিতে। একনায়ক হিটলারের অধীনে আবার শুরু হয় জার্মানির আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা। তবে সে চেষ্টাও সফল হয়নি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে আবার পরাজিত হয় তারা। এরপর মিত্রশক্তি জার্মানিকে চারটি অঞ্চলে ভাগ করে নেয়। ব্রিটিশ, ফরাসি, মার্কিন ও সোভিয়েত রাশিয়া একেকটি অঞ্চলের দায়িত্ব পায়। সোভিয়েত রাশিয়ার সাথে পশ্চিমাদের বিরোধের জের ধরে চল্লিশের দশকের শেষ দিকে তাদের নিয়ন্ত্রিত অংশটি পূর্ব জার্মানি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে আর অন্য তিনটি অংশ নিয়ে জন্ম নেয় পশ্চিম জার্মানি নামক দেশ। রাজধানী বার্লিনকে দুই দেশের মধ্যে ভাগ করে দেয়া হয়।

১৯৮৯ সালে জনগণ বার্লিন প্রাচীর ভেঙে ফেলে। ’৯০ সালের ৩ অক্টোবর দুই জার্মানি একত্রিত হয়ে গঠিত হয় ফেডারেল জার্মান প্রজাতন্ত্র।

ইউরোপের সবচেয়ে শিল্পোন্নত দেশগুলোর একটি জার্মানি। তাদের রয়েছে খনিজ সম্পদ, যন্ত্রপাতি, গাড়ি, রাসায়নিক দ্রব্য, ধাতু, ইলেকট্রনিকস শিল্পের ব্যাপক উৎপাদন ক্ষমতা। মার্সিডিজ বেঞ্জ, বিএমডব্লিউ, ভক্সওয়াগন, সিমেন্স, এডিডাসের মতো বিশ্বসেরা কোম্পানিগুলো জার্মানিতে অবস্থিত।

এক নজরে

নাম : সংযুক্ত প্রজাতন্ত্রী জার্মানি, রাজধানী : বার্লিন, অবস্থান : পশ্চিম ইউরোপ, আয়তন : ৩ লাখ ৫৭ হাজার ১৬৮ বর্গকিলোমিটার, শাসনব্যবস্থা : প্রজাতান্ত্রিক, পার্লামেন্ট : দুই কক্ষবিশিষ্ট (উচ্চকক্ষ-বুন্দেসরাট, নিম্নকক্ষ-বুন্দেসতাগ), অঙ্গরাজ্য : ১৬টি, মুদ্রা : ইউরো, প্রধান ভাষা : জার্মান, ধর্ম : প্রধানত খ্রিষ্টান, মোট জনসংখ্যা : ৮ কোটি ১০ লাখ, মুসলিম জনসংখ্যা : ৪৪ লাখ প্রায়।