Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

কলকাতা টু ঢাকা, বিমানে এক ঘন্টার জায়গায় ১৫ ঘণ্টা

Biman-Bangladesh-Airlinesস্ত্রী, মেয়ে আর বোনকে নিয়ে ভারতে গিয়েছিলেন শাহাদত হোসেন। ঢাকায় ফিরে আসার কথা ছিল মঙ্গলবার রাত ১০টায়। কিন্তু কলকাতা থেকে নির্ধারিত সময়ে সপরিবারে ফিরে আসতে পারেননি তিনি। ১৫ ঘণ্টা পর বুধবার বেলা দেড়টায় তাঁদের বহনকারী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের বোয়িং ৭৩৭-৮০০ মডেলের উড়োজাহাজটি হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে। সাধারণত কলকাতা থেকে ঢাকায় আসতে এক ঘণ্টার কম সময় লাগে।

দেশে ফিরতে শুধু শাহাদত হোসেনকে নয়, তাঁর মতো দেড় শতাধিক যাত্রীকে রাত কাটাতে হয়েছে দমদমে নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসু বিমানবন্দরে। শীতের রাতে ১৪ ঘণ্টা সময়ে এসব যাত্রীর থাকার জন্য হোটেলে থাকার ব্যবস্থা করেনি বিমান কর্তৃপক্ষ।

chardike-ad

দেশে ফিরে এসে তিনি জানান, ‘ভারতের সময় রাত নয়টার দিকে আমাদের বিজি ০৯৬ নম্বর ফ্লাইটটি কলকাতা ছাড়ার কথা ছিল। বিমানবন্দরে আসার পর জানতে পারি, দেড় ঘণ্টা দেরি হবে। বোর্ডিং পাস নিয়ে ইমিগ্রেশন শেষে বসার পর আবার জানানো হয় পৌনে ১১টার দিকে আমাদের ফ্লাইট ছাড়বে। পরে আবার বলা হয়, পৌনে ১২টায় ফ্লাইট ছাড়বে। কিন্তু দেরি হওয়ার কারণ জানতে পারছিলাম না।’

একই ফ্লাইটে ঢাকা আসেন মহিলা ও শিশুবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকী, একটি ব্যান্ড সংগীতের দল, অনূর্ধ্ব-১৯ দলের চারজন দাবাড়ু। এ ছাড়া ১৫ জন বাচ্চা, পাঁচজন বৃদ্ধ যাত্রী ছিলেন। দুই শিশু কলকাতা বিমানবন্দরে বমি করে অসুস্থ হয়ে পড়ে। এরপরও বিমানের কোনো কর্মকর্তাকে কারণ জানার জন্য পাওয়া যায়নি বলে জানান শাহাদত হোসেন। তিনি বলেন, ‘রাত ১১টার দিকে জানতে পারি বিমানের যাত্রীদের ডিনার (রাতের খাবার) দেওয়া হচ্ছে। আমি রাত ১২টার দিকে খাবার পাই। এ সময় বিমানের স্টেশন ম্যানেজার ফখরুল আলমকে দেখে ফ্লাইট ছাড়ার কারণ জিজ্ঞেস করি। তিনি কুয়াশার কথা বলেন। ছাড়ার সময় জানতে চাইলে তিনি বলেন, পাইলটের সঙ্গে কথা বলে জানাবেন।’

প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকীর সঙ্গে একসময় ফখরুল আলমকে দেখা যায়। তাঁর সঙ্গে কথা বলে বিমানবন্দর থেকে চলে যান মন্ত্রী। এ কথা জানিয়ে শাহাদত হোসেন বলেন, কখনো রাত একটা, রাত দুইটায় বিমান ছাড়ার কথা জানানো হয়। কিন্তু বিমান আর ছাড়ে না। একপর্যায়ে ফখরুল আলমের দেখা মিললে হোটেলে থাকার ব্যবস্থা করার জন্য তাঁকে বলা হয়। তিনি জানান, হোটেল নেই। সকালে নাশতা পাবেন। বাচ্চারা অসুস্থ হয়ে যাচ্ছে বলা হলেও স্টেশন ম্যানেজার চলে যান। এরপর আর তাঁর দেখা পাওয়া যায়নি।

কলকাতায় আরও কয়েকটি বিদেশি বিমান সংস্থার ফ্লাইট ছাড়তে দেরি হয়েছিল। কিন্তু তাদের ফ্লাইটের যাত্রীদের হোটেলে নিয়ে যাওয়া হয়। শাহাদত হোসেন বলেন, ‘আমাদের পাশে ছিল ব্যাংককগামী এয়ার এশিয়ার ২০০ যাত্রী। ছাড়তে দেরি হবে, তাই সব যাত্রীকে হোটেলে নেওয়া হয়। বিমান কর্তৃপক্ষ আমাদের খবর নেয়নি। কিন্তু আমাদের দুর্দশা দেখে এয়ার ইন্ডিয়ার কর্মকর্তারা খাবার দিতে চান।’

বাংলাদেশ সময় দুপুরে সাড়ে ১২টার দিকে ঢাকায় অবতরণ করে বিজি ০৯৬ নম্বর ফ্লাইটটি। কিন্তু শাহজালাল বিমানবন্দরে দুর্ভোগের আরেকটি পর্ব শুরু হয়। বেশ কয়েকজন যাত্রী বলেন, উড়োজাহাজ থেকে নামার জন্য সিঁড়ি পাওয়া যায়নি। দেড়টার দিকে সিঁড়ি আসার পর নামতে হয়। নেমে আবার বাস পাওয়া যায়নি। ৮-১০ জনের দল করে যাত্রীদের ছোট মাইক্রোবাসে করে টার্মিনালে নেওয়া হয়। বেলা পৌনে তিনটার দিকে বিমানবন্দর থেকে বের হন যাত্রীরা।

কুয়াশার কারণে বিমানের ফ্লাইটটি ছাড়তে দেরি হয়েছে বলে জানান বিমানের মহাব্যবস্থাপক (জনসংযোগ) শাকিল মেরাজ। তিনি বলেন, যাত্রীদের খাবার দেওয়া হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে কলকাতায় বিমানের কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে।

হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের এক কর্মকর্তা বলেন, ফ্লাইটগুলোর আসা-যাওয়ায় দেরি হওয়ায় আজ দুপুর পর্যন্ত পরিস্থিতি সামাল দেওয়া কঠিন হয়ে পড়ে। অন্যান্য এয়ারলাইনস তাঁদের যাত্রীদের হোটেলে রাখাসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা দ্রুত নিয়েছে। তবে বিমানের যাত্রীদের জন্য এ ধরনের কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। তাই বিমানের যাত্রীরা অনেকটা মারমুখী হয়ে ওঠেন। অবশ্য দুপুরের পর পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে ওঠে।