Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

আওয়ামী সাধুলীগের ভালো মানুষ বৃত্তান্ত!

roni-colomপ্রয়াত সমাজকল্যাণমন্ত্রী সৈয়দ মহসীন আলীকে নিয়ে আওয়ামী-বিরোধী শিবিরের অভিযোগের অন্ত ছিল না। তিনি কেন সভামঞ্চে সিগারেটে ফুঁক দিয়ে মানবকুলে ধোঁয়া ছেড়ে চোখ বুজে ছিলেন, তা নিয়ে বড় বড় পত্রিকাগুলো তাদের প্রথম পৃষ্ঠায় ব্যানার হেডলাইন করে জনাব মহসীন আলীর বারোটা বাজানোর জন্য উঠেপড়ে লাগলেন। এ ঘটনার সূত্র ধরে একশ্রেণির সরকারবিরোধী চক্র এবং স্যাডিস্ট গ্রুপ যারা মূলত মানুষকে শারীরিক, মানসিক ও আর্থিক জুলম-নির্যাতন করে এক ধরনের পুলক অনুভব করে, তারা কুৎসিতভাবে মহসীন আলী-বিরোধী তাণ্ডব শুরু করল। তিনি কেন বিভিন্ন সরকারি অনুষ্ঠানে বিশেষত শিশুদের অনুষ্ঠানে গান গান, কেন সুযোগ পেলেই ইংরেজিতে কথা বলেন ইত্যাদি প্রশ্ন তোলার পাশাপাশি তার দৈহিক গঠন এবং গায়ের রং নিয়েও সমালোচনাকারীরা অমানবিক সব ঠাট্টা-মশকরা এবং টিটকারী-টিপ্পনী কাটতে শুরু করল। এমন একজন লোক কী করে এমপি পদে মনোনয়ন পান এবং সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হন, ইত্যাদি প্রশ্ন তুলে তারা আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতৃত্বকে পর্যন্ত বিব্রত করার চেষ্টা শুরু করল।

সমালোচকদের নির্মম অত্যাচার, জুলুম এবং তথাকথিত ভার্চুয়াল স্টুপিড যারা বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে হররোজ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশা ও বয়সের নারী-পুরুষকে নিয়ে ব্যঙ্গ-বিদ্রূপ করে বেড়ান তাদের কারণে সৈয়দ মহসীন আলীর হৃদয় কতটা ক্ষত-বিক্ষত হয়েছিল তা টের পাওয়া গেল তখন, যখন তিনি হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লেন। বার বার ক্ষমা চেয়ে কিংবা নিঃশর্ত আত্মসমর্থন করার পরও তিনি সমালোচকদের কতল থেকে রক্ষা পেলেন না। ফলে নিয়তির নির্মম পরিহাসে বেদনাবিধুর ক্ষত-বিক্ষত এবং রক্তাক্ত হৃদয়ে তিনি পৃথিবী থেকে চিরবিদায় নিলেন। তার মৃত্যুর পর তার সম্পর্কে যা জানা গেল তাতে প্রতিটি বিবেকবান মানুষের হৃদয় সৈয়দ মহসীন আলীর জন্য কান্না করতে আরম্ভ করল। তার মৃত্যুর মাধ্যমে হজরত আলী (রা.)-এর একটি অমিয় বাণীর যথার্থতা প্রায় ১৪০০ বছর পর বাংলার জমিনে নতুন করে নির্মম বাস্তবতা সৃষ্টি করল। হজরত আলী (রা.) বলেন, ‘আমরা বেশির ভাগ ক্ষেত্রে মানুষের বিরোধিতা করি এবং সমালোচনা করি কোনো কিছু না জেনেই।’

chardike-ad

সৈয়দ মহসীন আলীর মৃত্যুর পর জানা গেল, তিনি ছিলেন বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধের রণাঙ্গনের যুদ্ধজয়ী বীর মুক্তিযোদ্ধা। শত্রুর বিরুদ্ধে অস্ত্র হাতে লড়াই করে যে কজন বেসামরিক ব্যক্তিত্ব কিংবদন্তির বীরত্ব প্রদর্শন করেছিলেন তার মধ্যে তিনি ছিলেন অন্যতম। নিজের নির্বাচনী এলাকায় তার জনপ্রিয়তা ছিল হিমালয়ের মতো বিশাল ও ব্যাপক। মানুষের জন্যই তিনি জন্মেছিলেন এবং সারাটি জীবন মানুষের জন্য অকাতরে নিজের সর্বস্ব বিলিয়ে দিয়ে গেছেন। ধনাঢ্য পরিবারের সন্তান বীর মুক্তিযোদ্ধা সৈয়দ মহসীন আলী তার পৈতৃক সম্পত্তি বিক্রি করে সারা জীবন রাজনীতি করে গেছেন। ঘুষ, দুর্নীতি, অনিয়ম, জাল-জালিয়াতি, জুলুম-অত্যাচার ইত্যাদি বদ খাসলত থেকে তিনি ছিলেন সম্পূর্ণ মুক্ত। তার গ্রামের বাড়ির দরজা সর্বদা সাধারণ মানুষের জন্য খোলা থাকত। তার পুকুরের মাছ-ফলবান বৃক্ষের ফল-ফলারি এবং পকেট ম্যানিব্যাগ ইত্যাদি জনগণের সম্পত্তি বা পাবলিক প্রোপার্টির মতো ব্যবহৃত হতো। এমনকি মন্ত্রীপাড়ায় তার নামে বরাদ্দকৃত বাড়িটিও তিনি পাবলিক প্রোপার্টিতে পরিণত করেছিলেন। সরকারি বাড়ির বিশাল লনে তিনি তার নির্বাচনী এলাকার অসহায় দরিদ্র সাহায্যপ্রার্থী ও অসুস্থ রোগীদের জন্য টিনের ঘর বানিয়ে রীতিমতো লঙ্গরখানা চালু করেছিলেন। মরহুম সৈয়দ মহসীন আলীর মতো প্রায় একই পরিণতি ভোগ করে গেছেন সদ্যপ্রয়াত মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী ছায়েদুল হক। তিনিও ছিলেন একাত্তরের রণাঙ্গনের বীরযোদ্ধা। বার বার নির্বাচিত সংসদ সদস্য এবং অত্যন্ত জনপ্রিয় নেতা। বয়োবৃদ্ধ এই জনদরদি ও আপাদমস্তক সৎ-সজ্জন এবং নিপাট ভদ্রলোক বলে পরিচিত মানুষটিও কিন্তু জীবনসায়াহ্নে সমালোচকদের খপ্পরে পড়ে দ্রুত মৃত্যুর দিকে ধাবিত হয়েছিলেন। তার নির্বাচনী এলাকা, জেলা এবং সারা দেশের চিহ্নিত দুর্নীতিবাজ, লুটেরা, সাম্প্রতিক দাঙ্গাবাজ ও সুবিধাবাদীরা একত্র হয়ে তাকে ত্রিমাত্রিক আক্রমণে ধরাশায়ী করার প্রাণান্ত চেষ্টা শুরু করেছিল। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরের সাম্প্রতিক দাঙ্গার হোতারা জনাব ছায়েদুল হকের একটি মন্তব্যের জেরে নিজেদের পরিবর্তে এই নিরীহ ভদ্রলোককে আসামি বানানোর চেষ্টা করেছিল। রাজনীতির দুর্বৃত্তায়ন, ঘুষ-দুর্নীতি, দখল-চাঁদাবাজি, মাদক ব্যবসা ইত্যাদির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর অপরাধে তার জেলার চিহ্নিত অপশক্তিগুলো ঐক্যবদ্ধভাবে আক্রমণ করে বয়োবৃদ্ধ মানুষটির জীবনের শেষ দিনগুলোকে জাহান্নামে পরিণত করে দিয়েছিল।

বয়সের ভার ও বিরুদ্ধবাদীদের চতুর্মুখী চাপের কারণে জনাব ছায়েদুল হক তার জীবনের শেষ পরিণতির দিকে দ্রুত এগোতে থাকেন। তার সমালোচকদের খুশির জোয়ারে ভাসিয়ে দিয়ে তিনি যেদিন মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লেন ঠিক সেদিনই সামাজিক মাধ্যমগুলোয় তার জরাজীর্ণ পৈতৃক ভিটার দুটো ভাঙাচোরা টিনের ঘরের ছবি ভাইরাল হয়ে পড়ল। আমরা জানতে পারলাম, জনাব ছায়েদুল হক কতটা সততা ও নিষ্ঠা নিয়ে লোকচক্ষুর অন্তরালে কতটা দারিদ্র্যের জীবন অতিবাহিত করে গেছেন। সারা জীবনের বর্ণাঢ্য রাজনীতি, আজীবন বিজয়ী, বহুবারের নির্বাচিত একজন সংসদ সদস্য সেলাই করা শাল গায়ে জড়িয়ে বছরের পর বছর শীত নিবারণ করেন অথবা গ্রাম, জেলা শহর অথবা ঢাকা মহানগরীতে বাড়িবিহীন অবস্থায় নিঃস্ব ও রিক্তহস্তে দুনিয়া থেকে বিদায় নেন তা হয়তো আমরা কোনো দিন বিশ্বাসই করতাম না, যদি বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ নামক একটি দল না থাকত এবং সেই দলে ছায়েদুল হক নামের একজন নিবেদিতপ্রাণ নেতা না থাকতেন।

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগে সৈয়দ মহসীন আলী ও ছায়েদুল হকের মতো বহু শত জাতীয় ও স্থানীয় নেতা ছিলেন এবং আছেন যাদের সততা ও ন্যায়নিষ্ঠার বিমূর্ত প্রতীক হিসেবে বিবেচনা করা যায়। আমরা যদি বঙ্গবন্ধু এবং তাঁর পরিবারের কথা বিবেচনা করি, তবে রাজনীতির সততা সম্পর্কে এক অনন্য ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে ইতিবাচক রাজনীতির ব্যাপারে আশাবাদী হতে পারি। ১৯৭৫-পরবর্তী সরকারসমূহ শত চেষ্টা করেও যেমন বঙ্গবন্ধু পরিবার সম্পর্কে দুর্নীতির একটি বিন্দুও খুঁজে পায়নি, এটা যেমন সত্য, তার চেয়েও নির্মম সত্য যে, বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ রেহানা বেঁচে থাকার তাগিদে লন্ডনের হোটেলে বাসন মাজার চাকরি করতে বাধ্য হয়েছিলেন। অন্যদিকে জননেত্রী শেখ হাসিনা ভারত সরকারের রাজনৈতিক আশ্রয়ে কতটা দারিদ্র্যের মধ্যে জীবনযাপন করতেন তা হয়তো আওয়ামীবিরোধীরা বিশ্বাসই করতে চাইবেন না। কারণ তারা জেল-হাজত, স্বদেশ-প্রবাস সর্বত্রই তাদের দুর্নীতির বিত্ত-ব্যসনে সুখের প্রাসাদ তৈরি করে রাজসিক জীবনের দৃশ্য দেখতেই অভ্যস্ত হয়ে পড়েছেন।

আওয়ামী রাজনীতির শুরু থেকে অদ্যাবধি শত শত নয়, হাজার হাজার নেতার উদাহরণ দেওয়া যাবে, যারা রাজনীতিতে আসার আগে হয় জমিদারনন্দন ছিলেন, নতুবা মস্ত বড় ব্যবসায়ী ছিলেন। কিন্তু ক্ষমতালাভের পর তাদের বিত্ত-বৈভব এমনভাবে হ্রাস পেয়েছিল, যার কারণে তারা বলতে গেলে নিঃস্ব অবস্থাতেই মারা গেছেন। আমাদের ইতিহাসের জাতীয় চার নেতা কিংবা বঙ্গবন্ধুর মন্ত্রিপরিষদের প্রয়াত নেতাদের মৃত্যুকালীন সহায়-সম্পত্তির খোঁজখবর নিলেই সম্মানিত পাঠক আমার বক্তব্যের সত্যতা খুঁজে পাবেন। আমাদের দেশীয় রাজনীতির অন্যতম প্রবাদপুরুষ-মরহুম আবদুর রাজ্জাক লন্ডনে চিকিৎসাধীন অবস্থায় হাসপাতালের বিল পরিশোধ করতে পারছিলেন না। তিনি সেখানে মারা যাওয়ার পর তার পরিবারকে বিভিন্নজনের কাছ থেকে সাহায্য-সহযোগিতা নিয়ে হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেতে হয়েছিল।

প্রয়াত নেতাদের বাদ দিয়ে এবার জীবিত নেতৃবৃন্দ সম্পর্কে কিছু বলি। শুধু আওয়ামী লীগ নয়, সর্বদলীয় সৎ রাজনীতিবিদদের তালিকা করা হলে সবার আগে যার নামটি আসবে তিনি হলেন মতিয়া চৌধুরী। আওয়ামী লীগের বর্ষীয়ান এই নেত্রী তার বর্ণাঢ্য রাজনীতির জন্য এমনিতেই জীবন্ত কিংবদন্তিতে পরিণত হয়েছেন। তার সাদামাটা চালচলন, সোজা-সাপটা কথাবার্তা, সাহস এবং রাজনৈতিক প্রজ্ঞার সঙ্গে সততা যোগ হওয়ায় তিনি এক অনন্য মানবসত্তায় পরিণত হয়েছেন। তার ধর্মবোধ, নিষ্ঠাচার, অতিথিপরায়ণতা এবং ন্যায়নীতির প্রতি অবিচল আস্থা তাকে অনাগত দিনে অমর করে রাখবে। মতিয়া চৌধুরীর পর সাম্প্রতিক সময়ে যার সততা নিয়ে সর্বমহলে আলোচনা হয় তার নাম সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। বাংলাদেশের প্রথম অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি এবং জাতীয় চার নেতার অন্যতম মরহুম সৈয়দ নজরুল ইসলামের ছেলে হওয়ার পরও জনাব আশরাফ দেশে ও বিদেশে কতটা সাদামাটা জীবনযাপন করেন তা কমবেশি সবাই জানেন। কিন্তু দেশবাসী যা জানত না তা হলো— তার দরিদ্রতা। টানা নয় বছর মন্ত্রীর দায়িত্বে থাকা ব্যক্তির ঢাকা শহরে সরকারি/বেসরকারি প্লট, বাড়ি, ফ্ল্যাট এবং ব্যাংক ব্যালান্স নেই— এ কথা আমরা কেউ বিশ্বাসই করতাম না, যদি তার স্ত্রীর মৃত্যুকাহিনী মিডিয়ায় প্রকাশ না পেত।

আওয়ামী লীগের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সম্পর্কে দুর্নীতির কোনো অভিযোগ তার বিরুদ্ধপক্ষ অদ্যাবধি করতে পারেনি। তেমনিভাবে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ, প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান ফিজার এবং বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী ইমাজউদ্দিন প্রামাণিকের ব্যক্তিগত সততা প্রশ্নাতীত। বাংলাদেশের সবচেয়ে বিতর্কিত, ঝামেলাপূর্ণ এবং একই সঙ্গে জলুসময় মন্ত্রণালয় হিসেবে পরিচিত স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব গত চার বছর ধরে এককভাবে পালন করা সত্ত্বেও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল সম্পর্কে অদ্যাবধি দুর্নীতির ‘দ’ শব্দটিও উচ্চারিত হয়নি। একইভাবে এলজিআরডি মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ, প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসি এবং আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হকের সততা, দক্ষতা ও কর্মনিষ্ঠা সর্বমহলে প্রশংসিত।

আমরা যদি আমাদের অর্থমন্ত্রী, আবুল মাল আবদুল মুহিত, পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী এবং ধর্মমন্ত্রী অধ্যক্ষ মতিউর রহমানের কাজকর্ম নিয়ে বিশদ অনুসন্ধান করি তবে সততা ছাড়া অন্য কোনো কিছুরই সন্ধান পাব না। বর্তমান মন্ত্রী ছাড়াও বিগত সরকারের দায়িত্বে থেকে বিতর্ক ও সমালোচনার পাত্রে পরিণত হয়েছিলেন এমন সাবেক মন্ত্রীদের সম্পর্কে জনগণ নতুন করে জানতে পেরেছে যে, তারা আপাদমস্তক সৎ ছিলেন। এ ব্যাপারে প্রথমেই উল্লেখ করা যেতে পারে সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেনের কথা। বিশ্বব্যাংকের মধ্যে লুকিয়ে থাকা ধান্দাবাজ আন্তর্জাতিক মাফিয়া চক্র এবং তাদের এ-দেশীয় এজেন্টদের চক্রান্তে বিশ্বব্যাংক আমাদের পদ্মা সেতু প্রকল্পে দুর্নীতি হতে পারে এমন অভিযোগ তুলে পুরো আওয়ামী লীগ সরকারকে বিব্রত করে তোলে। চক্রটি সৈয়দ আবুল হোসেনকে টার্গেট করে এমন প্রচার-প্রপাগান্ডা চালাতে থাকে, যাতে বেচারাকে খুব অসম্মানজনকভাবে মন্ত্রিপরিষদ থেকে বিদায় নিতে হয়। বিষয়টি নিয়ে কানাডার একটি আদালতে বিচার শুরু হয়। সম্প্রতি সেই বিচারালয় রায় দিয়েছে, পদ্মা সেতু প্রকল্পে দুর্নীতি হয়নি এবং হওয়ার সম্ভাবনা ছিল না। আদালত মিথ্যা অভিযোগ এবং প্রপাগান্ডার দায়ে উল্টো বিশ্বব্যাংককে জরিমানা পর্যন্ত করেছে।

সৈয়দ আবুল হোসেনের মতো না হলেও তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনিও ঈর্ষাকাতর কিছু লোকের যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছিলেন। বিশেষত তার ঘন ঘন বিদেশযাত্রা নিয়ে একটি মহল এন্তার অভিযোগ করত। মূলত তরুণ বয়সে মস্তবড় একটি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পাওয়ার কারণে কিছু পরশ্রীকাতর লোক ডা. দীপু মনিকে যারপরনাই হিংসা করত। সময়ের বিবর্তনে সেই হিংসুটেরা বলছে যে, দীপু মনি ভালো ছিলেন। দীপু মনির ক্ষেত্রে সবচেয়ে অবাক করা তথ্য হলো— অদ্যাবধি তার ব্যক্তিগত সততা, কর্মনিষ্ঠা ও নীতিবোধ নিয়ে বদনাম করার সুযোগ কেউ পায়নি। সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন, পানিসম্পদমন্ত্রী রমেশ চন্দ্র, ভূমিমন্ত্রী রেজাউল করিম হীরা, আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ, প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী ডা. আফসারুল আমিন প্রমুখ আওয়ামী লীগ নেতা তাদের ব্যক্তিগত সততার জন্য অদ্যাবধি সর্বমহলে প্রশংসিত।

আমার আজকের নিবন্ধ নিয়ে হয়তো কারও মনে প্রশ্ন জাগতে পারে, কেন আমি হঠাৎ করে আওয়ামী সাধুলীগ সম্পর্কে উৎসাহী হলাম। মূলত দুটো কারণে আমি এমনটি করতে বাধ্য হয়েছি। প্রথমত, আমি লক্ষ্য করেছি, একশ্রেণির মানুষের ফ্যাশন হয়ে দাঁড়িয়েছে রাজনীতিবিদদের অকথ্য ভাষায় সর্বপ্রকার দুর্নীতির হোতা বলে গালিগালাজ করা। দ্বিতীয়ত, আওয়ামীবিরোধীরা উুঁচ গলায় ঝঙ্কার তুলে বলতে থাকেন, আওয়ামী লীগে কোনো সৎ ও ভালো মানুষ নেই। মানুষের নেতিবাচক প্রচারণায় একদিকে যেমন সাধারণ মানুষ বিশেষ করে নতুন প্রজন্ম রাজনীতিবিমুখ হয়ে পড়ছে অন্যদিকে কিছু মানুষ মিথ্যা প্রচারণার খপ্পরে পড়ে আওয়ামীবিরোধী হয়ে পড়ছে। মূলত একটি নৈতিক দায় থেকেই বিষয়টি লিখলাম। আমি যেহেতু কিশোর বয়স থেকে আওয়ামী লীগ করি, তাই আমাদের দলের নেতৃবৃন্দের সততা সম্পর্কে বিশদ তথ্য আমার জানা রয়েছে। দেশের অন্যান্য দলের সৎ ও নীতিবান রাজনীতিবিদ সম্পর্কে ওয়াকিবহাল দলীয় বুদ্ধিজীবী ও কলামিস্টরা যদি জাতীয় রাজনীতির এই ক্রান্তিকালে রাজনীতিবিদদের ইতিবাচক বিষয়গুলো ফুটিয়ে তোলেন তবে জাতি হিসেবে আমরা হয়তো সম্মান ও মর্যাদার আসনে বসার সুযোগ লাভের ক্ষেত্রে অগ্রগামী হতে পারব।

পাদটীকা : মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত সততা ও ভালোমানুষী নিয়ে আজকের নিবন্ধে আমি একটি শব্দও উচ্চারণ করিনি। আমার মতে তা দরকারও ছিল না। কারণ যিনি তার সঙ্গী ও সহযোগী হিসেবে সৎ, যোগ্য মানুষদের নিয়োগ দেন এবং সব বাধা-বিপত্তির সময়ে সর্বশক্তি দিয়ে সৎ ও যোগ্য লোকদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দিয়ে আগলে রাখেন তার সততা সম্পর্কে আলাদাভাবে কিছু লেখার প্রয়োজন নেই। কেবল অতি উঁচুস্তরের সৎ মানুষেরাই সৎ লোকদের চিনতে পারেন এবং আকাশের মতো বিশাল হৃদয়ের অধিকারী না হলে কেউ সৎ লোকদের ধারণ করতে পারবেন না— এই চিরন্তন সত্য যারা বিশ্বাস করেন না, তাদের বোঝানোর সাধ্য আমার মতো অধমের নেই।

লেখক: গোলাম মাওলা রনি, সাবেক সংসদ সদস্য ও কলামিস্ট।
সৌজন্যে: বাংলাদেশ প্রতিদিন