যশোরে উদ্বোধন করা হয়েছে ‘দেশের প্রথম দীর্ঘতম ভাসমান সেতু’। মঙ্গলবার পড়ন্ত বিকেলে এক অনুষ্ঠানের মধ্যে দিয়ে ভাসমান সেতুটির উদ্বোধন করেন জেলা প্রশাসক আশরাফ উদ্দিন। উদ্বোধনের পর পরই ভাসমান সেতুর ওপর দিয়ে হালকা যানবাহন ও লোক চলাচল শুরু হয়।
জানা যায়, যশোরের মণিরামপুর উপজেলার রাজগঞ্জ বাজার সংলগ্ন দেশের বৃহত্তর জলামহল ঝাঁপা বাওড় বেষ্টিত ঝাঁপা গ্রাম। কপোতাক্ষ নদের তীরবর্তী মল্লিকপুর গ্রাম থেকে বাওড়টির উৎপত্তি হয়ে প্রায় ৬ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের বাওড়টি প্রায় ৩ বর্গ কিলোমিটার ঝাঁপা গ্রামকে বেষ্টিত করে ওই গ্রামেরই আরেক প্রান্ত কপোতাক্ষ নদের তীরবর্তী লক্ষ্মীকান্তপুর গ্রামে শেষ হয়েছে।
প্রায় ২০ হাজার জনঅধ্যুষিত গ্রামটিতে রয়েছে ৩টি ওয়ার্ড। গ্রামবাসী যুগ যুগ ধরে প্রাকৃতিক দুর্যোগ মাথায় নিয়ে ঝুঁকির মধ্যে নৌকায় পারাপার হয়ে আসছিল। অবশেষে সেই ঝাঁপা বাওড়ের ওপর দিয়ে ‘দেশের প্রথম দীর্ঘতম ভাসমান সেতু’ নির্মাণের মাধ্যমে তারা জয় করেছেন ঝাঁপা বাওড়। গ্রামবাসীর চেষ্টায় এ দুর্ভোগের অবসান ঘটলো বলে ভুক্তভোগীরা মনে করেন। এ সময় ওই গ্রামের আবাল-বৃদ্ধ-বনিতার চোখে-মুখে আনন্দের প্রতিচ্ছবি ফুটে উঠতে দেখা যায়।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত গ্রামবাসীর অনেকেই আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন। আবুল কাশেম নামের এক বয়োবৃদ্ধ আবেগাপ্লুত কণ্ঠে বলেন, জীবন সায়াহ্নের পড়ন্ত বেলায় এমন দৃশ্য দেখে যেতে পেরে নিজেকে ধন্য মনে করছি। এ সময় ঝাঁপা বাওড়ের দু’কূলে উৎসুক নানা বয়সীর নারী-পুরুষের ভিড় ছিল লক্ষণীয়।
ভাসমান এ সেতু নির্মাণের অন্যতম উদ্যোক্তা ঝাঁপা গ্রাম উন্নয়ন ফাউন্ডেশনের সভাপতি মেহেদী হাসান টুটুল বলেন, ভাসমান সেতু নির্মাণে গত বছরের ১৯ জানুয়ারি ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে মিটিং করা হয়। তাতে সাড়াও মেলে আশাতীত। সংগঠনের ৬০ জন সদস্যের অর্থায়নে শুরু করা হয় ১৩শ ফুট দৈর্ঘ্যের ভাসমান সেতু নির্মাণের কাজ। সংগঠনের বাইরেও অনেক কৃষক, শ্রমিক সামিল হন তাদের সঙ্গে। ৯ ফুট প্রস্থের সেতু নির্মাণে ব্যবহৃত হয়েছে ৮৮৯টি বড় আকারের প্লাস্টিকের ব্যারেল। যা সংযুক্ত রাখার জন্য লোহার শিট ব্যবহার করা হয়েছে। একই সঙ্গে ব্যারেলের ওপর দিয়ে চলাচলের জন্য দেয়া হয় ১৩শ ফুট দৈর্ঘ্যের লোহার পাত। প্রায় অর্ধ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত হয়েছে বৃহত্তর ভাসমান এ সেতুটি।
তবে, বর্ষা মৌসুমের আগেই ভাসমান সেতুটির দু’পাশে আরসিসি ব্রিজ নির্মাণ করতে হবে। এতে আরও প্রায় অর্ধকোটি টাকা ব্যয় হবে বলে তিনি দাবি করেন।
চলতি বছরের ৫ আগস্ট থেকে ভাসমান সেতু নির্মাণের কাজ শুরু হয়। দীর্ঘ প্রায় ৬ মাস অক্লান্ত পরিশ্রমের পর মঙ্গলবার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের মধ্যে দিয়ে সাধারণ মানুষ ও যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হয় সেতুটির।
স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান সামছুল হক মন্টুর সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- মণিরামপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মুহাম্মদ ওবায়দুর রহমান, সহকারী কমিশনার (ভূমি) হুসাইন মোহাম্মদ আল মুজাহিদ, জেলা সহকারী তথ্য অফিসার জাহারুল ইসলাম, আওয়ামী লীগ নেতা কামরুল হাসান বারী, ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল হামিদ সরদার, আব্দুস সাত্তার ও আসাদুজ্জামান প্রমুখ।