pabna-murderস্ত্রীর সঙ্গে পরকীয়ার অভিযোগে পাবনার সাঁথিয়ায় আবু সাইদ (২৭) নামে এক যুবককে হত্যা করে মস্তক বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। ঘটনার ৩ মাস পর ওই যুবকের বিচ্ছিন্ন মস্তক উদ্ধার করেছে পুলিশ।

মঙ্গলবার (২৩ জানুয়ারি) উপজেলার করমজা ইউনিয়নের খয়েরবাগান গ্রামের একটি ডোবা থেকে এই মস্তক উদ্ধার করা হয়। নিহত আবু সাইদ একই ইউনিয়নের আতিয়া পাড়া গ্রামের মমতাজ আলীর ছেলে। হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে ফকরুল, রাজীব ও শামীম নামের ৩ যুবককে গ্রেফতার করা হয়েছে। তারা হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার স্বীকারোক্তি দিয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

chardike-ad

পুলিশ সুপার জিহাদুল কবির পিপিএম জানান, পাবনার সাঁথিয়া উপজেলার রায়া গ্রামের মমতাজ আলী গত ৪ ডিসেম্বর আবু সাঈদ নামের একজন নিখোঁজ হন। এ ঘটনায় উপজেলার রায়া গ্রামের মোস্তফার ছেলে রাজিবকে (২৪) গ্রেফতার করে। পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে রাজিব জানায়, ফখরুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তি ২০১৭ সালের মাঝামাঝি সময়ে একটি মাদক মামলায় জেলে যায়। জেলে থাকার সুযোগে ফখরুলের স্ত্রী ইবরিয়া খাতুন আবু সাঈদ নামের এক যুবকের সাথে পরকীয়া সর্ম্পক গড়ে তোলে। ফখরুল জেল থেকে ছাড়া পেয়ে ঘটনা জানার পর আবু সাঈদকে হত্যার পরিকল্পনা করে। এক পর্যায়ে ফখরুল, রাজিব ও শামীমসহ তাদের সহযোগীদের সাথে ২ লাখ টাকা শর্তে আবু সাঈদকে হত্যার চুক্তি করে।

চুক্তি মোতাবেক রাজিব গত ৩০ অক্টোবর সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে আবু সাঈদকে ডেকে নিয়ে যায় স্থানীয় রফিকুল ইসলামের ইউক্যালিপটাস বাগানে। গ্রেফতারকৃতরাসহ অন্যান্য হত্যাকারী আগেই ওই বাগানে অবস্থান করছিল। আসামিরা ওই বাগানে ইয়াবা ট্যাবলেট সেবন করে। রাত আনুমানিক ১০টার দিকে আসামি শামীমের নেতৃত্বে অন্য সহযোগীদের সহযোগিতায় আবু সাঈদের গলায় রশি দিয়ে ফাঁস লাগিয়ে পা বেঁধে হত্যা করে। হত্যার পর ফখরুলকে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে হত্যার কথা নিশ্চিত করে হত্যাকারীরা।

আসামি রাজিব পুলিশের কাছে আরও জানায়, মোবাইল ফোনে হত্যার বিষয়টি নিশ্চিত করার পরও ফখরুল বিশ্বাস না করায় লাশের মাথা ফখরুলের বাড়িতে নিয়ে যাওয়া জন্য আসামিরা প্রস্তাব দেয়। পরে আবু সাঈদের মাথা কেটে ফখরুলের বাড়িতে নিয়ে যেতে বলে। তখন আসামিরা আবু সাঈদের মাথা ধারালো অস্ত্র দিয়ে কেটে ফখরুলের বাড়িতে নিয়ে যায়। মাথা দেখার পর ফখরুল বিশ্বাস করে সত্যি আবু সাঈদকে হত্যা করা হয়েছে। ২ দিন পর চুক্তির টাকা আনার জন্য ফখরুলের বাড়িতে যায় রাজিবসহ হত্যাকারীরা। এ সময় ফখরুল তাদের ১৯ হাজার টাকা দিয়ে পরে দেবে বলে বিদায় করে দেয়। অবশিষ্ট টাকার জন্য ফখরুলের কাছে চাপ দিতে থাকে হত্যাকারীরা। সুচতুর ফখরুল হত্যাকারীদের জানায়, রাতের আঁধারে কার মাথা দেখিয়েছিস, বুঝতে পারিনি। আবার মাথা দেখাতে হবে। ঘটনার ৩/৪ দিন পর মাটির নিচ থেকে মাথা তুলে আবারও ফখরুলের বাড়িতে যায় রাজিবসহ অন্যরা। কিন্তু ফখরুল হত্যাকারী রাজিবসহ অন্যদের আর কোন টাকা না দিয়ে উল্টো ভয়ভীতি দেখাতে থাকে।

বেড়া-সাঁথিয়া সার্কেলের এএসপি মিয়া মোহাম্মদ আশিষ বিন হাসান জানান, নিখোঁজের ঘটনাটি হত্যাকাণ্ড এমন ক্লু পেয়ে এবং সংশ্লিষ্টদের মোবাইল কল লিস্ট পর্যালোচনা করেই রাজিবকে গ্রেফতার করি। রাজিবের স্বীকারোক্তি ও অন্যান্য তথ্যসূত্রের আলোকেই মাস্টারমাইন্ড রাজিব, শামীম ও ফখরুলকে গ্রেফতার করা হয় বলে তিনি জানান। তাদের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৯ টার দিকে আবু সাঈদের মাথা ফখরুলের বাড়ির পেছনের একটি পঁচা ডোবা থেকে উদ্ধার করা হয়েছে।

পুলিশ সুপার জিহাদুল কবির পিপিএম বলেন, ‘শুধু গ্রেফতার নয়, মামলার আরও ক্লু উদ্ধারে পুলিশ কাজ করছে। মামলার তদন্তের স্বার্থে কিছু বিষয় গোপন রেখে তদন্ত কাজ চলছে। গ্রেফতারকৃতদের আদালতে সোর্পদ করা হবে। একই সাথে এ ঘটনার সাথে আরও কয়েকজনকে পুলিশ গ্রেফতারের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। পুলিশের ধারণা, গ্রেফতারকৃতরা পেশাদার কিলার নয়। তারা মাদক সেবনকারী। মাদকের টাকা জোগাড় করতেই এই হত্যাকাণ্ডের সাথে তারা সম্পৃক্ত হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।’

https://www.facebook.com/100007376839164/videos/2064879620434579/