সিউল, ১০ নভেম্বর ২০১৩:
রফতানিনির্ভর দক্ষিণ কোরিয়ার অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি মূলত স্যামসাং, এলজি কিংবা হুন্দাইয়ের মতো ম্যানুফ্যাকচারিং জায়ান্টদেরই অবদান। উত্পাদন ব্যয় হ্রাস ও বাজারে প্রবেশের জন্য বিভিন্ন দেশে কারখানাও স্থাপন করেছে স্থানীয়ভাবে চেবল নামে পরিচিত এসব কনগ্লোমারেট। তবে এসব কোম্পানির আধিপত্যে বেড়ে উঠতে পারছে না কোনো ক্ষুদ্র কিংবা মাঝারি কোম্পানি। ফলে উদীয়মান চীনা কোম্পানিগুলোর সঙ্গে তীব্র প্রতিযোগিতা করে কয়েক ডজন চেবল কোম্পানি কত দিন প্রবৃদ্ধির চাকা ঘুরিয়ে যেতে পারবে— প্রশ্নটি বেশ জোরেশোরে উঠছে। এক্ষেত্রে বিশ্লেষকরা বলছেন, প্রবৃদ্ধির ধারা অব্যাহত রাখতে দক্ষিণ কোরিয়াকে অবশ্যই তাদের ক্ষুদ্র ও মাঝারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে বাড়তে দিতে হবে। খবর দ্য ফিন্যান্সিয়াল টাইমসের।
স্বাধীনতার পর থেকেই চেবলদের প্রাধান্য দেয়ার নীতি দক্ষিণ কোরিয়া সরকারের। এর সুফলও পেয়েছে তারা। দক্ষতানির্ভর অগ্রযাত্রায় জাহাজ নির্মাণ, ফ্ল্যাট স্ক্রিন ডিসপ্লে, স্মার্টফোন কিংবা কম্পিউটার চিপসের জগতে অন্যতম শীর্ষ নাম দক্ষিণ কোরিয়া। এছাড়া জ্বালানি পরিশোধন, গাড়ি নির্মাণ কিংবা ইস্পাতশিল্পেও অনেক শীর্ষ দেশকে এক প্রকার চ্যালেঞ্জই ছুড়ে দিয়েছে চেবলরা।
এসব কোম্পানির প্রবৃদ্ধির হারও বেশি। তবে বিদেশের মাটিতেই এর প্রায় পুরোটা হচ্ছে। পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ম্যাককিঞ্জে অ্যান্ড কোম্পানির মতে, দক্ষিণ কোরিয়ার শীর্ষ ১০টি কনগ্লোমারেটের ব্যবসা ২০০০ সালের পর থেকে প্রতি বছর গড়ে ১৩ শতাংশ হারে বাড়ছে। বিদেশের বাজারগুলোয় বিক্রি বাড়িয়েই এটি সম্ভব হয়েছে। স্বদেশে দেয়া কর ও কিছু কর্মসংস্থানের সুফল পাওয়া গেলেও তাদের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় পেরে না ওঠা ক্ষুদ্র ও মাঝারি কোম্পানিগুলোর ব্যবসায় প্রবৃদ্ধি তুলনামূলক কম। অথচ দেশটির মোট কর্মসংস্থানের ৯০ শতাংশই করছে এসএমই কোম্পানিগুলো।
বিশ্লেষকরা বলছেন, আগামী বছরগুলোয়ও দক্ষিণ কোরিয়ার প্রবৃদ্ধিতে চেবলদের অবদানই সবচেয়ে বেশি থাকবে। কিন্তু অর্থনীতিতে প্রাণের সঞ্চার করতে হলে অবশ্যই এসএমই কোম্পানিগুলোর জন্য সুযোগ বাড়াতে হবে। অভ্যন্তরীণ সেবা খাতের বিকাশও একটি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু। সেখানেও এসএমই উদ্যোক্তাদের রক্ষা করতে হবে। নতুবা কর্মসংস্থান, সাধারণ কোরীয়দের প্রকৃত আয় ও অভ্যন্তরীণ ভোগ সন্তোষজনক হবে না। চেবলরা পিছিয়ে গেলে একটি সুস্থ্য প্রবৃদ্ধির জন্য এসএমই খাতই হবে ভরসা।
ম্যাককিঞ্জির সাম্প্রতিক এক বিশ্লেষণে বলা হয়, দক্ষিণ কোরিয়ার জায়ান্ট গ্লোবাল কনগ্লোমারেটগুলোর আয় অবশ্যই অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও মানুষের আয়স্তর বৃদ্ধিতে ভূমিকা রেখে আসছে। তবে এ মডেলের আবেদন স্পষ্টতই কমে আসছে। দক্ষিণ কোরিয়ার পরবর্তী সাফল্যের কাহিনী রচনা করতে হলে অবশ্যই কনগ্লোমারেটগুলোর প্রবৃদ্ধির সঙ্গে এসএমই ও সেবা খাতের প্রবৃদ্ধির ভারসাম্য রক্ষা করতে হবে।
স্যামসাং, হুন্দাই কিংবা এলজির মতো ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানিগুলো বৈশ্বিক বিক্রির কারণে প্রতি বছরই মোটা অঙ্কের মুনাফা করছে। তবে বিশ্লেষকরা সতর্ক করছেন, ম্যানুফ্যাকচারিংয়ের শক্তি কমছে। জাহাজ নির্মাণ, পেট্রোকেমিক্যাল কিংবা ইস্পাত কোম্পানিগুলো এরই মধ্যে চীনা প্রতিযোগীদের কাছে বাজার শেয়ার হারানোর খবর দেয়া শুরু করেছে।
কোরিয়া ইনস্টিটিউট অব ইন্ডাস্ট্রিয়াল ইকোনমিকস অ্যান্ড ট্রেডের গবেষক কিম জু-হানের মতে, ইলেকট্রনিকস কিংবা গাড়ি নির্মাণশিল্পেও ‘কস্ট লিডার’ চীনারা বেশি দিন পিছিয়ে থাকবে, এমনটি নিশ্চিত করে বলা কঠিন। চীনের পাশাপাশি অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশের কোম্পানিগুলোর কাছ থেকে তীব্র প্রতিযোগিতার মুখোমুখি হচ্ছে অন্যান্য ভারী শিল্প।
ফলে আগামী দিনগুলোয় কেবল কিছু মূলধনঘন কনগ্লোমারেটের হাতে প্রবৃদ্ধির চাবিটি তুলে দিয়ে নিশ্চিত থাকা কঠিন।
জু-হান অবশ্য দক্ষিণ কোরীয় কোম্পানিগুলোর গবেষণা ও উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে জোর দেয়ার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন। তার মতে, উচ্চমূল্যের শিল্পগুলোর ওপর দক্ষিণ কোরিয়ার বেশি জোর দেয়া উচিত। সূত্রঃ বণিকবার্তা।