Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

ট্রাম্প-কিম মুখোমুখি হওয়ার সম্ভাব্য কয়েকটি স্থান

trump-kimমার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, পারমাণবিক অস্ত্রধারী উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উনের সঙ্গে তার প্রত্যাশিত বৈঠকের জন্য পাঁচটি স্থান বিবেচনাধীন রয়েছে। তবে ঠিক কোন স্থানে তাদের এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হতে পারে, সে ব্যাপারে কোনো ইঙ্গিত দেননি তিনি। তবে বেশ কয়েকটি জায়গার নাম নিয়ে গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়েছে; যেখানে বসতে পারেন প্রতিদ্বন্দ্বী এ দুই প্রেসিডেন্ট। চলুন দেখে নেই সম্ভাব্য কয়েকটি স্থান:

পানমুনজম: দুই কোরিয়ার সীমান্তের অসামরিক এলাকা ও যুদ্ধবিরতি গ্রাম হিসেবে পরিচিত ‘পানমুনজমে’ আগামী সপ্তাহে বৈঠকে বসছেন কিম জং উন ও দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট মুন জায়ে ইন। এই গ্রামে উভয় পক্ষের যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ এবং উচ্চ নিরাপত্তা ব্যবস্থা রয়েছে।

chardike-ad

তবে কূটনৈতিক সূত্রগুলো ট্রাম্প-কিমের বৈঠকের স্থান হিসেবে পানমুনজমে বসার সম্ভাব্না নাকচ করে দিয়েছেন। তারা ১৯৭৬ সালে এই স্থানের একটি খুনের ঘটনার দিকে ইঙ্গিত করেছেন। ওই বছর উত্তর কোরিয়ার সেনাবাহিনী মার্কিন দুই কর্মকর্তাকে পানমুনজমে বেদম মারপিট করে হত্যা করে। পানমুনজমের অতীত ইতিহাসের কারণে ওয়াশিংটন এই স্থানের ব্যাপারে আগ্রহী নয়। এছাড়া এ গ্রামটি কোরীয় উপদ্বীপকে বিভাজনের স্মৃতিচিহ্ন।

সিউল: চলতি বছরে কিম জং উনের পরিবারের একজন সদস্য দক্ষিণ কোরিয়ার রাজধানী সিউল সফর করেছেন। দক্ষিণ কোরিয়ায় অনুষ্ঠিত শীতকালীন অলিম্পিকে কিমের প্রতিনিধি হিসেবে সফরে গিয়েছিলেন তার বোন কিম ইয়ো জং। উত্তর কোরীয় নেতার বোনের এই সফর ঘিরে কোরীয় দ্বীপে কূটনীতির শীতল হাওয়া বইতে শুরু করে।

কিমের সিউলে যাওয়ার সম্ভাবনা অত্যন্ত কম, তবে রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে দক্ষিণে তার এই সফরে ঝুঁকি নিয়েও ব্যাপক বিতর্ক হতে পারে। এটি হলে ট্রাম্পের চেয়ে মনোযোগের কেন্দ্রবিন্দুতে চলে আসতে পারেন কিম। যা হোয়াইট হাউস এড়াতে চায়। এছাড়া এর ফলে আলোচনা ফলপ্রসূ নাও হতে পারে।

বেইজিং: গত ছয় মাসে চীনের রাজধানী বেইজিং সফর করেছেন ট্রাম্প এবং কিম। কিন্তু সেখানে এ ধরনের একটি সম্মেলন জটিলতা তৈরি করতে পারে- কোরীয় যুদ্ধের অংশীদার ছিল চীন; এবং যুদ্ধের সময় কিমের বাবা কিম ইল সুংকে পরাজিত হওয়া থেকে রক্ষা করে বেইজিংয়ের সামরিক বাহিনী। ১৯৫৩ সালে কোরীয় দ্বীপে যে শান্তিচুক্তি স্বাক্ষরিত হয়, চীনও তাতে অংশ নেয়; বন্ধ হয়ে যায় যুদ্ধ।

দীর্ঘদিন ধরে পিয়ংইয়ংয়ের প্রধান কূটনৈতিক রক্ষাকর্তা, ব্যবসা-বাণিজ্য ও সহায়তার উৎস চীন। তবে সম্প্রতি এ দুই দেশের সম্পর্ক আরো ঘনিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। ২০১১ সালে উত্তর কোরিয়ার ক্ষমতায় আসার পর প্রথমবারের মতো বিদেশ সফরে গত মাসে বেইজিংয়ে যান কিম জং উন। বেইজিং সফরে গিয়ে তিনি চীনের নেতা শি জিনপিংকে শ্রদ্ধা জানান।

বেইজিংয়ে যদি ট্রাম্প-কিমের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয় তাহলে প্রভাবের দিক থেকে আরো বেশি ফুলে-ফেঁপে উঠবেন শি জিনপিং। চীনকে উত্তর কোরিয়ার প্রধান মিত্র ও পৃষ্ঠপোষক হিসেবে মনে করা হয়। ওয়াশিংটন-পিয়ংইয়ং চুক্তিতে পৌঁছালে এই সফলতার ক্রেডিট দাবি করতে পারে বেইজিং।

তবে চীনা ভূখণ্ডে কূটনৈতিক কোনো অনুষ্ঠান বা বৈঠকে গণমাধ্যমের প্রবেশে কড়াকড়ি আরোপের পাশাপাশি ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়। বেইজিং কিম-ট্রাম্প বৈঠক অনুষ্ঠিত হলে একই ধরনের পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে।

উলান বাটোর: কোরিয়ার নজরদারির আওতায় বাইরের একটি জনপ্রিয় স্থান মঙ্গোলিয়ার রাজধানী উলান বাটোর। উত্তর কোরিয়া থেকে ট্রেন অথবা আকাশপথে পৌঁছানো যায় শহরটিতে। পিয়ংইয়ং এবং ওয়াশিংটনের সঙ্গে দেশটির সুসম্পর্ক রয়েছে।

২০১৩ সালে উত্তর কোরিয়া সফর করেন মঙ্গোলিয়ার প্রেসিডেন্ট সাখিয়াজিন এলবেদোরজ। গত বছর পিয়ংইয়ংয়ের ওপর জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের নিষেধাজ্ঞা আরোপের পূর্ব পর্যন্ত উত্তর কোরিয়ার প্রায় এক হাজার ২০০ নাগরিক স্থলবেষ্টিত মঙ্গোলিয়ায় কর্মরত ছিলেন।

সুইজারল্যান্ড: বাবার মতো বিমানে চেপে বসার ভয় নেই কিম জং উনের। তবে দেশে ভেতরে বিমানে করে ভ্রমণ করতেন তার পূর্বসূরি কিম জং ইল। সেদিক বিবেচনায় ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠকের জন্য সুইজারল্যান্ড গন্তব্য হতে পারে কিমের।

১৯৯০ সালে সুইজারল্যান্ডে পড়াশোনা করেছেন কিম জং উন। দেশটির ইন্টারন্যাশনাল স্কুল অব বার্নিতে তার ভাই ও বোনের সঙ্গে শিক্ষাজীবনের একটি অংশ পার করেছেন। সুতরাং এ দেশটির সঙ্গে তার পরিচিতি অনেকদিনের। শতাব্দি কাল থেকে দেশটি নিরপেক্ষতা ধরে রেখেছে; একই সঙ্গে সেখানে উত্তর কোরিয়ার একটি দূতাবাসও আছে।

সিঙ্গাপুর: ট্রাম্প-কিমের বৈঠকের সম্ভাব্য স্থান হিসেবে এশিয়ার আরেক দেশ সিঙ্গাপুর ইতোমধ্যে গণমাধ্যমে উঠে এসেছে। ২০১৫ সালে দেশটিতে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং ও তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট মা ইং জিও স্বাক্ষাৎ করেন। ১৯৪৯ সালে চীনের গৃহযুদ্ধের অবসান ও বিভক্তির পর প্রথমবারের মতো দুই দেশের এ দুই রাষ্ট্রনেতা বৈঠক করেন।

ভিয়েতনাম: এদিকে, কমিউনিস্ট শাসিত ভিয়েতনামও বিবেচনায় রয়েছে। ১৯৭৫ সালে ভিয়েতনাম যুদ্ধ শেষের পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দেশটির সম্পর্কের ব্যাপক উন্নতি ঘটেছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ভিয়েতনামের অর্থনৈতিক প্রসার তুমুল বৃদ্ধি পেয়েছে।

স্ক্যান্ডিনেভিয়া: গত মাসে উত্তর কোরিয়া জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা স্ক্যান্ডিনেভিয়ান অঞ্চলের দেশ সুইডেন এবং ফিনল্যান্ড সফর করেছেন। উত্তর কোরিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রী রি ইয়ং হো স্টকহোম এবং হেলসিঙ্কিতে মার্কিন বিশেষজ্ঞ ও উত্তরের প্রতিনিধি দল নিয়ে অনানুষ্ঠানিক বৈঠক করেছেন। গত বছর নরওয়েতেও একই ধরনের বৈঠক হয়েছে।

উত্তর কোরিয়ায় মার্কিন নাগিরকদের সুরক্ষার লক্ষ্যে পিয়ংইয়ং এবং ওয়াশিংটনের মধ্যে মধ্যস্থতার দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে সুইডেনের। দেশটিতে ১৯৭৫ সালে প্রথমবারের মতো পিয়ংইয়ংয়ের দূতাবাস চালু করা হয়।

সূত্র : এএফপি।