Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

কোরিয়া উপদ্বীপে শান্তির সম্ভাবনায় ক্ষতি কার?

kim-moon

যখন উত্তর ও দক্ষিণ কোরিয়ার দুই নেতা এক ঐতিহাসিক বৈঠকে মিলিত হলেন, এশিয়াজুড়ে পুঁজিবাজারে দেখা মিলল কেবল স্বস্তির সুবাতাস। কেনই বা হবে না? দুই নেতা যে কোরিয়ান উপত্যকাকে পারমাণবিক অস্ত্রমুক্ত করার পথে কাজ করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছেন! কিন্তু এই সংবাদে বিশ্বের বড় বড় সমরাস্ত্র নির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর শেয়ারের মূল্যপতন হয়েছে।

chardike-ad

মার্কিন সংবাদ মাধ্যম ফরচুন জানিয়েছে, শুক্রবার সামগ্রিকভাবে পুঁজিবাজার স্থিতিশীল থাকলেও, মহাকাশ ও প্রতিরক্ষা শিল্প সূচকের পতন হয়েছে প্রায় ১.৩ শতাংশ। শুধু শুক্রবারই যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ পাঁচ প্রতিরক্ষা কোম্পানির শেয়ারের দাম কমেছে প্রায় ১০২০ কোটি ডলার! লকহিড মার্টিনের শেয়ারের দাম কমেছে ২.৫ শতাংশ, নর্থরপ গ্রামম্যানের ৩.৪ শতাংশ, জেনারেল ডিন্যামিকসের ৩.৮ শতাংশ, রেথিওনের ৩.৬ শতাংশ ও বোয়িং-এর ১ শতাংশ।

জেনারেল ডিন্যামিকস, লকহিড মার্টিন ও নর্থআপ গ্রামম্যান এই বছরের প্রথম তিন মাসে যেই অর্থ আয় করেছে, তা বিশ্লেষকদের অনুমানের চেয়েও বেশি ছিল। তা সত্ত্বেও দুই কোরিয়ার মধ্যে উত্তেজনা হ্রাসের সম্ভাবনায় দাম কমেছে এই সমরাস্ত্র নির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলোরও।

ঐতিহাসিক এই বৈঠকে তারা কোরিয়া উপত্যকাকে পারমাণবিক অস্ত্রমুক্ত করার পথে কাজ করতে সম্মত হন। এমনকি কোরিয়া যুদ্ধের আনুষ্ঠানিক অবসান ঘোষণা করতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দরকষাকষি করতেও সম্মত হয়েছেন উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উন। এসব ঘটনার পরই প্রতিরক্ষা সামগ্রী নির্মাতা কোম্পানিগুলোর শেয়ারের দাম কমতে শুরু করে।

২০১৬ সালে ডনাল্ড ট্রাম্প মার্কিন প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর থেকেই, যুক্তরাষ্ট্র ও উত্তর কোরিয়ার মধ্যে উত্তেজনা বৃদ্ধি পায়। যুদ্ধের দামামা বৃদ্ধি পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তর তর করে দাম বাড়ছিল মারণাস্ত্র নির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর। এ কারণেই গত এক বছরে সামগ্রিকভাবে পুঁজিবাজারের মূল্যমান ১২ শতাংশ বাড়লেও, মহাকাশ ও প্রতিরক্ষা শিল্প সূচকের মূল্যমান বেড়েছে ২৭ শতাংশ!

এখনই শান্তি আলোচনা শুরু হবে না বলেই আশা করা হচ্ছে। তবুও ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রন ইরান পারমাণবিক চুক্তি টিকিয়ে রাখা ও উত্তর কোরিয়া ইস্যুতে আলাপ করতে যুক্তরাষ্ট্র সফর শুরুর পর থেকেই পুঁজিবাজারে প্রতিরক্ষা শিল্প সূচকের দাম কমা শুরু হয়। একই দিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পও এমন সব কথা বলতে শুরু করেন যা থেকে শান্তি আলোচনার সম্ভাবনা বাড়তে থাকে। যেমন, অতীতে যেখানে উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উনকে ‘ছোট রকেট ম্যান’ বলে ব্যাঙ্গ করেছেন ট্রাম্প, সেখানে এখন তাকে ‘সম্মানীয়’ ব্যক্তি বলে আখ্যা দিয়েছেন। এই বক্তব্যের পর থেকেই মহাকাশ ও প্রতিরক্ষা সূচকের মূল্যমান ৪.৩ শতাংশ পড়ে যায়। তা সত্ত্বেও অন্যান্য সূচকের চেয়ে ভালোই করছে এই সূচক।

এ প্রসঙ্গে মার্কিন বহুজাতিক বিনিয়োগ ব্যাংক মর্গান স্ট্যানলির বিশ্লেষকরা লিখেছেন, ‘চীন, মধ্যপ্রাচ্য, উত্তর কোরিয়া ও রাশিয়াকে কেন্দ্র করে যে বৈশ্বিক উত্তেজনা রয়েছে, তা কমার সম্ভাবনা কম। ফলে আমরা মনে করছি না, আমেরিকার প্রতিরক্ষা বাজেট শিগগিরই কমবে।’

আর দুই কোরীয় নেতার বক্তব্যে শান্তির বার্তা থাকলেও, এখনও অনেক খুঁটিনাটি নিয়ে কথা শোনা যায় নি। ফলে সংশয়বাদীরা এখনও বলছেন, কোরিয়া উপদ্বীপকে পারমাণবিক অস্ত্রমুক্ত করার সম্ভাবনা আদৌ কতটা বাস্তবায়িত হবে। এ কারণে দুই কোরিয়া প্রকৃত অর্থে শান্তির পথে অগ্রসর না হলে, যুদ্ধ বা অস্থিরতার সম্ভাবনা বাড়বে। আর তাতে অবধারিতভাবেই লাভজনক হবে আমেরিকার সমরাস্ত্র শিল্প।