সরাসরি দক্ষিণ কোরিয়ার রাজধানী সিউলে হামলার সুড়ঙ্গ রয়েছে উত্তর কোরিয়ার। এমন শত শত সামরিক সুড়ঙ্গ খুঁড়েছে পিয়ংইয়ং। এসব সুড়ঙ্গের কোনো কোনোটা দক্ষিণের রাজধানী সিউল শহর পর্যন্ত পৌঁছে গেছে।
উত্তর কোরিয়ার ডিমিলিটারাইজড জোন বা বেসামরিকীকৃত এলাকা থেকে সিউলের ওই এলাকার দূরত্ব প্রায় ৪০ মাইল। তবে এসব সুড়ঙ্গ কোথায়, কীভাবে রয়েছে তা এখনও অনাবিষ্কৃত রয়ে গেছে।
অজানা এসব সুড়ঙ্গ ব্যবহার করে সরাসরি সিউলে হামলা চালাতে পারবে উত্তরের সেনাবাহিনী- দক্ষিণ কোরিয়ার সেনাবাহিনীর সাবেক জেনারেল হ্যান সাং চু এ দাবি করেছেন।
জেনারেল চু’র বরাত দিয়ে মার্কিন সাময়িকী দ্য ন্যাশনাল ইনটারেস্টের সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
বিশ্বের সবচেয়ে বিচ্ছিন্ন ও গোপন অঞ্চলগুলোর মধ্যে উত্তর কোরিয়া অন্যতম। মাটির নিচে দেশটির সামরিক স্থাপনা গড়ে তোলা নতুন কোনো ব্যাপার নয়। অনেক আগে থেকেই মাটির নিচে সুড়ঙ্গসহ নানাবিধ সামরিক স্থাপনা গড়ে তুলেছে দেশটি।
পরমাণু অস্ত্রের অধিকারী দেশটি তার পরমাণু অস্ত্র কর্মসূচি ও ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচিগুলো পরিচালনা করে পাহাড়ের নিচে। এছাড়া মাটির নিচে দেশটির কয়েকটি বিমানঘাঁটি রয়েছে।
প্রতিবেশী দেশ জাপান ও অন্য কয়েকটি দেশের অভিযোগ, গোপনে হাজার হাজার টন রাসায়নিক অস্ত্রের মজুদ গড়ে তুলেছে পিয়ংইয়ং।
প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রধানত যুদ্ধকালে কিংবা আপৎকালে ব্যবহারের জন্য এসব স্থাপনা গড়ে তোলা হয়েছে। যুদ্ধের সময় জরুরিভাবে এসব সুড়ঙ্গ দিয়ে ঘণ্টায় কয়েক হাজার সেনা চলাচলের সুবিধা রয়েছে। রয়েছে এমন সব বাঙ্কার যেখানে আপৎকালীন মুহূর্তে আশ্রয় নিতে পারবেন দেশটির নেতারা।
উত্তর কোরিয়া ও দক্ষিণ কোরিয়ার মধ্যে সীমানা নিরূপণকারী রেখা হচ্ছে ৩৮ ডিগ্রি অক্ষরেখা। এটা ডিমিলিটারাইজ জোন বা বেসামরিকীকৃত এলাকা হিসেবেও পরিচিত।
এই বেসামরিকীকৃত এলাকার নিচে দিয়ে দক্ষিণ কোরিয়ার অনেক ভেতরে প্রবেশ করেছে এমন বহু সুড়ঙ্গ রয়েছে। এরকম প্রথম সুড়ঙ্গটি খুঁজে পাওয়া যায় এখন থেকে চার দশক আগে ১৯৭৪ সালে।
ওই সুড়ঙ্গটি বেসমারিকীকৃত এলাকা থেকে দক্ষিণের প্রায় এক কিলোমিটার পর্যন্ত প্রবেশ করেছিল। সুড়ঙ্গটি এতটাই চওড়া ও গভীর ছিল যে, ঘণ্টায় দুই হাজার পর্যন্ত সেনা চলাচলের যথেষ্ট ছিল।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সুড়ঙ্গটির ব্যাপারে তদন্ত করতে গিয়ে উত্তরের পাতা ফাঁদে পড়ে যুক্তরাষ্ট্রের নৌবাহিনীর কর্মকর্তা ও দক্ষিণ কোরিয়ার নৌবাহিনীর এক কর্পোরাল নিহত হন।
এরপর উত্তর কোরিয়া থেকে দক্ষিণ কোরিয়ায় পালিয়ে আসা এক সেনার দেয়া তথ্য থেকে ১৯৭৮ সালে আগের চেয়ে আরও বড় সুড়ঙ্গের খোঁজ পাওয়া যায়। এ সুড়ঙ্গটির দৈর্ঘ্য ছিল এক মাইল ও প্রস্থ সাত ফুট। এর পর থেকে এখন পর্যন্ত চারটি সুড়ঙ্গ খুঁজে পাওয়া গেছে। আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে এগুলো গড়ে তোলা হয়েছে।
কংক্রিটের স্লাব, বিদ্যুৎ ও আলোর ব্যবস্থা ছিলে সুড়ঙ্গগুলোতে। এমনকি সুড়ঙ্গ খোঁড়ার পর মাটি ও পাথর খণ্ড সরানোর জন্য চিকন রেলরোডও বসানো ছিল এগুলোতে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পিয়ংইয়ংয়ের ঠিক কতগুলো সুড়ঙ্গ রয়েছে তা নির্দিষ্ট করে বলা কঠিন। এক রিপোর্ট মতে, কোরীয়া যুদ্ধের পর উত্তর কোরিয়ার প্রতিষ্ঠাতা ও কিম জং উনের দাদা কিম ইল সাং তার সেনাবাহিনীর সামনের সারির ১০টি ডিভিশনের প্রত্যেকটিকে এমন দুটো করে সুড়ঙ্গ খননের নির্দেশ দিয়েছিলেন।
যদি তা আসলেই খোঁড়া হয়ে থাকে তাহলে কিমের দাদার সময়েই প্রায় দুই ডজন সুড়ঙ্গ ছিল। জেনারেল হ্যান সাং চু দাবি করেছেন, এমন অন্তত ৮৮টি সুড়ঙ্গ রয়েছে এবং এগুলো কোনোটা তাদের রাজধানী সিউল পর্যন্ত লম্বা।
তবে চুয়ের এ দাবি বিশ্বাস করেনি দক্ষিণের সরকার। কারণ ৪০ মাইল লম্বা সুড়ঙ্গ খুঁড়লে এটা থেকে প্রায় সাতশ’ হাজার টন পাথর ও মাটি বের হওয়ার কথা। কিন্তু স্যাটেলাইট থেকে তেমন কোনো ছবি ধরা পড়েনি।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, উ. কোরিয়ার সীমান্ত ঘিরে ভূ-গর্ভ সুড়ঙ্গে অন্তত ৮০০ সেনাঘাঁটি আছে। প্রত্যেক ঘাঁটিতে ১৫০০ সুসজ্জিত সেনা থাকার সুব্যবস্থা আছে। উত্তর কোরিয়ার বিমান বাহিনী ‘পিপল’স লিবারেশন আর্মি এয়ার ফোর্সে’র তিনটি আলাদা আলাদা বিমানঘাঁটিও রয়েছে মাটির নিচে।
এগুলোর অবস্থান দেশটির ওনসান, জ্যাঙ্গিন ও ওনচুন এ তিনটি স্থানে। ওনসান বিমানঘাঁটিতে বিমানগুলোর মধ্যে কোরীয় যুদ্ধে ব্যবহৃত এনকে প্লাফসহ মিগ-২৯ ও সু-২৫-এর মতো অত্যাধুনিক মডেলের যুদ্ধবিমান মোতায়েন রয়েছে বলে জানা গেছে। মা
টির উপরে যেসব বিমানঘাঁটি রয়েছে সেগুলো থেকে উড্ডয়ন করে অপারেশনের পর এগুলো মাটির নিচের এ বিমানঘাঁটিতে অনায়াসে অবতরণ করতে সক্ষম।