Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় বিরোধী দলবিহীন নির্বাচন আজ

সিউল, ৫ জানুয়ারী ২০১৪:

উৎসবের আমেজ নেই৷ নেই বিরোধী দল৷ ৫২ ভাগ ভোটারের ভোট নেই৷ ১৫৩ আসনে নির্বাচন নেই৷ আছে উদ্বেগ আর উৎকণ্ঠা৷ বিদেশি পর্যবেক্ষক আছেন মাত্র চারজন৷ ভোটের আগের দিন শনিবার কমপক্ষে ২০টি জেলায় ভোটকেন্দ্র হিসেবে নির্ধারিত প্রায ১০০ স্কুলে আগুন দেয়া হয়েছে।তবুও বাংলাদেশে আজ দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন হচ্ছে৷

chardike-ad

jatio_nirbachon_2014_bengalinews24_photo_28961ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ এই নির্বাচনকে বলছে সংবিধান রক্ষার নির্বাচন৷ তবে বিরোধী দল রবিবারের নির্বাচনকে বলছে একদলীয় শাসন কায়েমের নির্বাচন৷ বাংলাদেশের এই নির্বাচনে ভারত ও ভুটানের চার জন পর্যবেক্ষক ছাড়া আর কোনো বিদেশি পর্যবেক্ষক নেই৷ ভারত ছাড়া আর কোনো দেশ সমর্থন দেয়নি এই নির্বাচনে৷

বাংলাদেশে সাধারণত নির্বাচন মানেই উৎসব৷ ভোট কেন্দ্রে দীর্ঘ লাইন৷ দুই বড় দল আওয়ামী লীগ এবং বিএনপির মর্যাদার লড়াই৷ আর থাকে টান টান উত্তেজনা৷ সেই উত্তেজনা সহিংস নয়, বরং কে হারে কে জেতে তা দেখার অপেক্ষায়৷

কিন্তু এবার তার ব্যতিক্রম৷ নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত ৩৭টি রাজনৈতিক দলের মধ্যে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগসহ ১২টি দল এই নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে৷ আর প্রধান বিরোধী দল বিএনপিসহ ২৫টি দল এই নির্বাচন বর্জনের পর প্রতিহতে একই সঙ্গে হরতাল অবরোধ পালন করছে৷ বিরোধীরা চায় নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন৷ আর সরকারি দল সে দাবিতে কান না দিয়ে দলীয় সরকারের অধীনেই নির্বাচন করছে৷

এই রাজনৈতিক সংকট সমাধানে অনেক আলোচনা হয়েছে৷ বিদেশি কূটনীতিকরা চেষ্টা করেছেন, চেষ্টা করেছে জাতিসংঘ৷ শেষ পর্যন্ত জাতিসংঘের মধ্যস্থতায় দুই দলের মহাসচিব পর্যায়ে আলোচনাও হয়েছে৷ কিন্তু সমাধান আসেনি৷ কমেনি সংঘাত, সহিংসতা৷ গত ২৫ নভেম্বর নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর থেকে শনিবার পর্যন্ত রাজনৈতিক সহিংসতায় ১২২ জন নিহত হয়েছেন৷ আর সহিংসতা থেমে নেই৷ নির্বাচন কেন্দ্রে আগুন দেয়া হচ্ছে৷ পুড়িয়ে দেয়া হচ্ছে ব্যালট পেপার৷ কেন্দ্রগুলো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হওয়ায় পুড়ছে নতুন বছরের বই৷

কড়া নিরাপত্তা
সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন শেষ করতে তিন স্তরে সশস্ত্র বাহিনীসহ পৌনে চার লাখ সদস্য মোতায়েন করেছে নির্বাচন কমিশন। নির্বাচনে সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনীর ৫০ হাজারের বেশি সদস্য মাঠে রয়েছে। এছাড়া ১৬ হাজার ১৮১ বিজিবি, র্যাব আট হাজার, পুলিশ ৮০ হাজার, আনসার দুই লাখ ২০ হাজার ও উপকূলীয় এলাকায় কোস্টগার্ডের দুই শতাধিক সদস্য মোতায়েন রয়েছে। সাধারণ ও ঝুঁকিপূর্ণ ভোট কেন্দ্রে ২-৩ জন অস্ত্রসহ পুলিশ এবং পর্যাপ্ত আনসার নিয়োজিত থাকবে। মেট্রোপলিটন এলাকায় সাধারণ ও গুরুত্বপূর্ণ ভোট কেন্দ্রে যথাক্রমে ৪ ও ৬ জন অস্ত্রসহ পুলিশ এবং পর্যাপ্ত আনসার দায়িত্ব পালন করবে। পার্বত্য এলাকা, দ্বীপাঞ্চল ও হাওর এলাকায় সাধারণ ও গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রে যথাক্রমে তিন ও চার জন অস্ত্রসহ পুলিশ এবং পর্যাপ্ত আনসার নিয়োজিত থাকবে।

ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্র
বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার দেয়া প্রতিবেদনের ভিত্তিতে এবার ১৮ হাজার ২৮৩টি ভোট কেন্দ্রের মধ্যে ১৩ হাজার ভোটকেন্দ্রকে ঝুঁকিপূর্ণ বলে চিহ্নিত করা হয়েছে। এসব ভোটকেন্দ্রের নিরাপত্তা নিশ্চিতসহ ভোটার এলাকায় নিরবচ্ছিন্নভাবে নিবিড় টহলের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এছাড়া এসব কেন্দ্র ও আশেপাশের এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করে যেকোনো প্রকার অশুভ কার্যকলাপ প্রতিরোধ করার জন্য সদা সজাগ থাকতে ইতোমধ্যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে কড়া নির্দেশ দিয়েছে ইসি। অন্যদিকে এই ১৩ হাজার কেন্দ্রে মেটাল ডিটেক্টরের মাধ্যমে চেকিংয়ের ব্যবস্থা করা হবে।

গণমাধ্যম
নির্বাচনের সংবাদ কভার করতে নির্বাচন কমিশন কার্যালয়ে দেশের প্রায় গণমাধ্যমকেই বুথ দেয়া হয়েছে। টেলিভিশনগুলো নির্বাচনের সংবাদ কমিশন থেকেই লাইভ সম্প্রচার করবে। এছাড়া ল্যাপটপ নেট ব্যবহারের জন্য কমিশন থেকে ওয়াইফাই’র ব্যবস্থা করা হয়েছে। সর্বমোট ৩০টি বুথ তৈরি করা হয়েছে।

‘প্রহসনের নির্বাচন’
বিএনপির চেয়ানপার্সনের উপদেষ্টা ড. ওসমান ফারুক শনিবার সন্ধ্যায় এক সংবাদ সম্মেলনে রোববারের নির্বাচনকে ‘প্রহসনের নির্বাচন’ বলে তা বর্জন এবং প্রতিহতের আহ্বান জানিয়েছেন দেশবাসীর প্রতি৷ তিনি বলেছেন, ‘‘এই নির্বাচন হলো বর-বধু সাজিয়ে পুতুলের বিয়ের মতো৷”

তিনি অভিযোগ করেন, ‘‘ভোটারবিহীন এই নির্বাচনের ষড়যন্ত্র সফল করতে বিরোধী দলীয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে ‘গৃহবন্দি’ করা হয়েছে৷ শীর্ষ থেকে তৃণমূল পর্যন্ত কয়েক হাজার নেতা-কর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে৷ যৌথ বাহিনী অভিযানের নামে আন্দোলন দমাতে নেতা-কর্মীদের ওপর নির্মম নির্যাতন চালাচ্ছে৷”

ড. ফারুক দেশবাসীকে নির্বাচন বর্জন করার আহ্বান জানিয়ে চলমান হরতাল-অবরোধ সফল করায় দেশবাসীকে ধন্যবাদ জানান৷

‘যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচাতে নির্বাচন বর্জন’
এদিকে, আওয়ামী লীগ নেতা তোফায়েল আহমেদ বলেছেন, ‘‘বিরোধী দল যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচাতে এই নির্বাচন বর্জন করেছে৷ তাদের নির্বাচনে আনতে অনেক চেষ্টা এবং ছাড় দেয়া হয়েছে৷ তারা নির্বাচনে আসলে নির্বাচন ১০ দিন পিছিয়ে দেয়ারও প্রস্তাব করা হয়েছিল৷”

তিনি বলেন, ‘‘এই নির্বাচন গণতন্ত্র এবং সংবিধান রক্ষার নির্বাচন৷” খালেদা জিয়াকে গণতন্ত্রের ধারাবাহিকতা বাধাগ্রস্ত না করারও আহ্বান জানিয়েছেন তোফায়েল৷ ‘খালেদা জিয়া গৃহবন্দি’ এই অভিযোগ অস্বীকার করে তোফায়েল বলেন, ‘‘তিনি গৃহবন্দি হলে বিদেশি দূত ড্যান মজীনা, রবার্ট গিবসন তার সঙ্গে দেখা করেন কিভাবে৷ তিনি বিবৃতি দেন কিভাবে৷”

আজকে নির্বাচনে ৩০০ আসনের মধ্যে ১৫৩ আসনের প্রার্থীরা আগেই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন৷ তাই নির্বাচন হচ্ছে বাকি ১৪৭ আসনে৷ এতে মোট ভোটার ৪,৩৯,৩৭,৯৩৭ জন৷ প্রার্থী ৩৯০ জন৷ মোট ভোটারের ৫২ ভাগের ভোট দেয়ার সুযোগ নেই৷ নির্বাচন কমিশন নির্বাচন বিরোধীদের সহিংসতার আশঙ্কায় ১৯ জেলার ৮০টি ভোট কেন্দ্রকে ঝুঁকিপূর্ণ মনে করছে৷আর ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রের সংখ্যা কেবল বাড়ছে।

বিদেশি পর্যবেক্ষক ৪ জন
প্রসঙ্গত, ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিদেশি পর্যবেক্ষক ছিলেন ৫৮৫ জন৷ এবার ভারত ও ভুটান থেকে দু’জন করে মোট ৪ জন পর্যবেক্ষক এসেছেন৷
নির্বাচনের আগেই এবার সারা দেশে সেনা মোতায়েন করা হয়েছে৷ আরো আছে পুলিশ, ব়্যাব এবং বিজিবি৷ প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিব উদ্দিন আহমেদ আশা করেন, ভোটাররা শান্তিপূর্ণভাবে ভোট কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিতে পারবেন৷

নির্বাচন বিশ্লেষকরা মনে করেন, আজকের নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতিই হবে নির্বাচন কমিশনের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ৷ আর সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মহিউদ্দীন খান আলমগীর বলেছেন, সহিংসতায় শঙ্কিত না হয়ে জনগণ ভোট কেন্দ্রে গিয়ে শান্তিপূর্ণভাবে ভোট দেবে৷ তারা ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে চায়৷

এদিকে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এক বিবৃতিতে বলেছেন, রোববারের নির্বাচন হাস্য-কৌতুকে পরিণত হয়েছে৷ তিনি দাবি করেন, সরকার রাজনৈতিকভাবে দেউলিয়া এবং জনবিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে৷ সংবাদ সূত্রঃ নতুনবার্তা।