Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

ঢাকার রাস্তায় ইরানি ছবির শুটিং

irani-cinema-dhakaছবির চিত্রনাট্যে লেখা ছিল, একটি লাল রঙের গাড়ি লাগবে। কিন্তু ঢাকায় এসে দেখা গেল, লাল গাড়ি জোগাড় করা যায়নি। তাই কী আর করা। গত মঙ্গলবার রাজধানীর পান্থপথের একটি আবাসিক হোটেলের পাশের খালি জায়গায় গিয়ে দেখা গেল, গাড়ি রং করতে করতে ঘেমে-নেয়ে একাকার কয়েকজন ইরানি। রাত তখন সাড়ে নয়টা। কিন্তু তাতেও ক্লান্তি নেই। কারণ, ভোর হলেই লাগবে লাল গাড়ি। সেই গাড়ি নিয়ে শুটিংয়ে বেরিয়ে পড়বে ইরানের শাবি কে ম’হ ক’মেল শোদ ছবির দল।

গত শনিবার ইরান থেকে বাংলাদেশে আসে ২২ সদস্যের একটি শুটিং দল। দলটি এখন ঢাকাসহ আশপাশের বিভিন্ন এলাকায় শাবি কে ম’হ ক’মেল শোদ নামের ছবিটির শুটিং করছে। ইরানের নারী চলচ্চিত্র নির্মাতা নার্গিস অবইয়ার দলটি নিয়ে এসেছেন ঢাকায়। এই দলে আট মাসের শিশুশিল্পী থেকে শুরু করে ইরানের এ সময়ের জনপ্রিয় ও ব্যস্ত অভিনয়শিল্পীরা পর্যন্ত আছেন।

chardike-ad

সবাই ঘুরে ঘুরে কাজ করছেন এই ছবির। কখনো যাচ্ছেন ধানমন্ডির লেকের পাড়ে, কখনো কারওয়ান বাজারের গলি-ঘুপচিতে। কখনো আবার তাঁদের পাওয়া যাচ্ছে মাওয়া ঘাটে। লাল গাড়ি নিয়ে তাঁরা ছুটে চলছেন শহরের নানা প্রান্তে। তাঁদের এই ঢাকা অভিযানের প্রতি মুহূর্তের খবর শিল্পীরা ইনস্টাগ্রামেও পোস্ট করছেন।

irani-cinemaগতকাল শুক্রবার ইনস্টাগ্রাম স্টোরিতে ছবির নায়ক হুতান শাকিবি ‘ইরানি বোরকা’ নামের একটি দোকানের ছবি পোস্ট করে নিজের অবস্থানের কথা জানান দিচ্ছিলেন। আর অভিনেত্রী এলনাজ শাকেরদুস্ত তো ঢাকায় এসে আমড়ার প্রেমে পড়ে গেছেন! তাঁরা ইংরেজিতে আলাপ করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন না। তাই শুটিং দলের উপদেষ্টা হিসেবে থাকা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের শিক্ষক মুমিত আল রশিদের মাধ্যমে কথা হয় ইরানি শিল্পী ও কুশলীদের সঙ্গে। তখনই ‘ইরানি বালিকা’ এলনাজ জানান, ঢাকার আমড়া তাঁর খুব ভালো লেগেছে। অন্যদিকে ছবির নির্মাতা নার্গিস অবইয়ার বলেন, ‘এই কয়েক দিনে বাংলাদেশের মানুষের আতিথেয়তায় আমি মুগ্ধ। এই কদিনে ঢাকার বিভিন্ন জনবহুল এলাকায় আমি গিয়েছি। কিন্তু কোথাও কোনো ধরনের অপ্রীতিকর পরিস্থিতিতে পড়িনি। শহরের প্রতিটি জায়গাতেই কাজ করার অনুকূল পরিবেশ পেয়েছি।’

এলনাজ শাকেরদুস্ত ও হুতান শাকিবি ইরানের এ সময়ের বাণিজ্যিক ছবির জনপ্রিয় তারকা। অন্যদিকে ছবির নির্মাতা নার্গিস অবইয়ারও ইরানের বাণিজ্যিক ঘরানার ছবির ব্যস্ত নির্মাতা। এর আগে তাঁর নির্মিত ট্র্যাক ১৪৩ ছবিটি ইরানের ঐতিহ্যবাহী ফজর চলচ্চিত্র উৎসবের উদ্বোধনী ছবি হওয়ার মর্যাদা অর্জন করে। এ পর্যন্ত নার্গিস তিনটি পূর্ণদৈর্ঘ্য ও তিনটি তথ্যচিত্র নির্মাণ করেছেন। ইরানে সাহিত্যিক হিসেবেও তাঁর রয়েছে বিশেষ সুনাম। লিখেছেন ৩১টি উপন্যাস।

irani-cinema-shootingশাবি কে ম’হ ক’মেল শোদ, বাংলায় যার অর্থ যে রাতে চাঁদ পূর্ণতা পেয়েছিল ছবির ২০ ভাগ শুটিং হবে বাংলাদেশে। নির্মাতা জানান, ছবিতে বাংলাদেশ একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। প্রেমের এই ছবিতে দেখা যাবে ছবির নায়ক-নায়িকাসহ বেশ কয়েকজন গল্পের স্বার্থে বাংলাদেশে পাড়ি জমায়। তাঁদের উদ্দেশ্য থাকে বাংলাদেশ থেকে অভিবাসী হিসেবে ইউরোপের কোনো দেশে স্থায়ীভাবে চলে যাবে। কিন্তু এই প্রক্রিয়ায় চলতে গিয়ে নানা বাধাবিপত্তি আসে তাঁদের জীবনে। নায়ক কাজ নেন ঢাকার নিউমার্কেটের একটি কসমেটিকসের দোকানে, নায়িকাকে নিয়ে ঘুরে বেড়ান ঢাকার কিছু দর্শনীয় স্থানে, নায়িকা বাংলাদেশি পোশাক পরেন-এমন অনেক কিছুই দেখা যাবে ছবিতে।

গতকাল কারওয়ান বাজারে ছবির শুটিংয়ে গিয়ে দেখা যায়, অভিনেতা অরমিন রাহিমির অংশের শুটিং শেষ হয়ে গেছে। তিনি ফিরে যাবেন ইরানে। তাঁর মাথায় এক গ্যালন পানি ঢেলে শুটিং দল শেষ করে গতকালের কাজ। এভাবে আরও এক সপ্তাহ বাংলাদেশে শুটিং করে যাবে দলটি।

নির্মাতা নার্গিস বলে রাখলেন, ‘বাংলাদেশ ও ইরানের কর্তৃপক্ষ সুযোগ করে দিলে ছবিটি সবাইকে দেখাতে আবারও এ দেশে আসতে চাই। আর বাংলাদেশের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য নিয়েও সিনেমা বানাতে চাই।’

সৌজন্যে- প্রথম আলো