Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

অতিদারিদ্র্যের হার কমিয়ে আনার ক্ষেত্রে গত এক দশকে ঈর্ষণীয় সাফল্য দেখিয়েছে বাংলাদেশ। দেশে এখন অতিদারিদ্র্যের হার মাত্র ১২ দশমিক ৯ শতাংশ, যদিও বৈশ্বিক গড় হার এখনো ১৩ দশমিক ৮ শতাংশ।

chardike-ad

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য বলছে, এক দশক আগেও বাংলাদেশে অতিদারিদ্র্যের হার ছিল ২৫ দশমিক ১ শতাংশ, যা এখনকার চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ। অতিদারিদ্র্য কমানোর পাশাপাশি মোট দারিদ্র্য কমানোর ক্ষেত্রেও সাফল্য দেখিয়েছে বাংলাদেশ। এক দশকের ব্যবধানে দেশে দারিদ্র্যের হার ৪০ থেকে কমে বর্তমানে ২৪ দশমিক ৩ শতাংশে দাঁড়িয়েছে।

দারিদ্র্যের হার আরো কমিয়ে ২০২০ সালের মধ্যে ১৮ দশমিক ৬ ও অতিদারিদ্র্যের হার ৮ দশমিক ৯ শতাংশে নামিয়ে আনা হবে বলে জানিয়েছেন পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। তিনি বলেন, এজন্য সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি সম্প্রসারণ ও গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়নের মাধ্যমে (বিশেষ করে শিক্ষা, প্রযুক্তি ও স্বাস্থ্য খাতে) মানবসম্পদ উন্নয়নে জোর দেয়া হয়েছে। এছাড়া কর্মসংস্থানের জন্য বিভিন্ন মন্ত্রণালয় প্রকল্প ও কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে। অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধি ও কর্মসংস্থান বাড়াতে বিনিয়োগ পরিবেশ তৈরি করা হচ্ছে। এ লক্ষ্যে সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা গ্রহণ ও এসডিজি অর্জনে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে।

বিবিএস সূত্রে জানা গেছে, ২০০০ সালে দেশে দারিদ্র্যের হার ছিল ৪৮ দশমিক ৮ শতাংশ। পরবর্তী সময়ে এ হার কমে ২০০৫ সালে ৪০ শতাংশ, ২০১০ সালে ৩১ দশমিক ৫ ও সর্বশেষ জরিপ অনুযায়ী ২০১৬ সালে ২৪ দশমিক ৩ শতাংশে নেমে এসেছে। অন্যদিকে অতিদারিদ্র্যের হার ২০০০ সালে ছিল ৩৪ দশমিক ৩ শতাংশ। এটি ধারাবাহিকভাবে কমে ২০০৫ সালে ২৫ দশমিক ১, ২০১০ সালে ১৭ দশমিক ৬ ও ২০১৬ সালে ১২ দশমিক ৯ শতাংশে নেমে আসে।

দেশে দারিদ্র্যের হার উল্লেখযোগ্য হারে কমলেও দারিদ্র্যের ধরনে পরিবর্তন এসেছে। আবার কোথাও কোথাও দারিদ্র্যের নতুন পকেট সৃষ্টি হয়েছে। অঞ্চলভেদে দারিদ্র্যের চিত্র পরিবর্তন হচ্ছে। রংপুর অঞ্চল থেকে মঙ্গা বিদায় নিলেও দিনাজপুর, বরগুনা ও দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সাতক্ষীরা, মাগুরার মতো জেলাগুলোয় নতুন করে দারিদ্র্য হানা দিয়েছে। আবার গ্রামের দারিদ্র্য সম্পর্কে জানা গেলেও নগর দারিদ্র্যের বিষয়গুলো এখনো স্পষ্ট হয়ে উঠছে না।

এ অবস্থায় দারিদ্র্য বিমোচন কর্মসূচিতে এ বিষয়গুলোর প্রতি লক্ষ রাখতে হবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, চরম প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর উন্নয়নে খুব বেশি নজর দেয়া হচ্ছে না। আবার অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি দারিদ্র্য বিমোচনবান্ধব নয়। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বাড়াতে উৎপাদনশীল খাতে জোর দেয়ার পাশাপাশি দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে আরো বেশি অন্তর্ভুক্তিমূলক করতে হবে। এছাড়া শিল্প ও সেবা খাতে উৎপাদন প্রবৃদ্ধি বাড়িয়ে কর্মসংস্থান তৈরি, টেকসই কৃষি উন্নয়ন, আয়বৈষম্য কমিয়ে আনা, জমির পুনর্বণ্টন ও খাসজমি বরাদ্দে পরিবর্তন আনতে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।

এ বিষয়ে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও পিপিআরসির নির্বাহী চেয়ারম্যান ড. হোসেন জিল্লুর রহমান বণিক বার্তাকে বলেন, গত কয়েক বছরে দারিদ্র্য কমেছে বটে, তবে দারিদ্র্য কমার গতিটাও কমে গেছে। দেশে এখনো প্রায় চার কোটি দরিদ্র এবং দুই কোটি চরম দরিদ্র লোক বাস করছে। গত কয়েক বছরে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বেশ ভালো হলেও সেটি দারিদ্র্য বিমোচনে খুব বেশি কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারছে না। দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে সমগোত্রীয় হিসেবে না দেখে বরং ভিন্নভাবে বিবেচনায় নিয়ে তাদের জন্য পৃথক বিনিয়োগ ও কর্মসূচি গ্রহণ করতে হবে। এছাড়া পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে মূলধারায় আনতে হবে। নগর দারিদ্র্যকে গুরুত্ব দিয়ে কর্মসূচিগুলোর মধ্যে সমন্বয় ও ধারাবাহিকতা থাকতে হবে।

সূত্রঃ বণিকবার্তা।