Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

পাকিস্তানে আটকে পড়া বাঙালিদের নাগরিকত্ব দেয়ার ঘোষণা ইমরান খানের

imranপাকিস্তানে জন্মগ্রহণ করা কয়েক হাজার বাঙালিকে নাগরিকত্ব দেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। রোববার তার এই ঘোষণা জাতীয়তাবাদীদের ক্রোধের সম্মুখীন করতে পারে। খবর আল জাজিরা।

দেশটির দক্ষিণাঞ্চলীয় বন্দর নগরী করাচিতে এক অনুষ্ঠানে এ ঘোষণা দেন পাক প্রধানমন্ত্রী। এছাড়াও আফগান শরণার্থীদেরও নাগরিকত্ব প্রদানের ঘোষণা দেন তিনি। পাকিস্তানের করাচিতে আফগান শরণার্থী এবং আটকে পড়া বাঙালি অভিবাসীদের বাস সবচেয়ে বেশি।

chardike-ad

সিন্ধু প্রদেশের রাজধানী করাচির গভর্নর হাউসে এক নৈশভোজে ইমরান বলেন, অনেক আফগান এবং বাঙালি গত ৪০ থেকে ৫০ বছর ধরে এখানে বসবাস করছেন। এখানে তাদের ছেলে-মেয়েদের জন্ম হয়েছে। ইনশাআল্লাহ আমরা তাদের জাতীয় পরিচয়পত্র এবং পাসপোর্ট দিতে পারব।

বাঙালি ও আফগান নাগরিকদের জাতীয়তার অনুমোদন দিয়ে প্রাদেশিক আইন এবং অধ্যাদেশ যুক্ত করা হবে। আর এখানে মূলত গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে দেশটির বাণিজ্যিক রাজধানী করাচিকেই।

পাকিস্তানে বসবাসরত বাঙালিদের অবস্থার বর্ণনা করে ইমরান খান বলেন, পুরো প্রজন্ম (বাঙালি এবং আফগান) এখানে জন্মগ্রহণ করেছে এবং বেড়ে উঠেছে। কিন্তু তাদের জাতীয় পরিচয়পত্র এবং পাসপোর্ট নেই। যার কারণে তারা চাকরি পাচ্ছে না। যেটা শেষ পর্যন্ত তাদের সন্ত্রাসসহ বিভিন্ন অপরাধের দিকে ঠেলে দেবে।

করাচি হলো পাকিস্তানের সবচেয়ে জনবহুল শহর। এখানে দেড় কোটির বেশি মানুষ বসবাস করে। বিগত কয়েক দশকে এই অঞ্চলে রাজনৈতিক এবং অপরাধ কার্যক্রম বেড়ে গেছে। বিশেষ করে সড়ক সন্ত্রাসের মতো অপরাধগুলো।

এই নগরীতে ২০ লাখের বেশি আফগান শরণার্থী এবং বাঙালি অভিবাসী বসবাস করে। পাকিস্তানে ১৬ লাখ নিবন্ধিত এবং ১০ লাখের বেশি অবৈধ আফগান শরণার্থী রয়েছে।

ইমরান খানের এই ঘোষণা বিপুল পরিমাণ আফগান এবং বাঙালিদের জন্য সুখবর। বিশেষ করে বিহারীদের জন্য। কেননা ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান সৃষ্টির সময় প্রথবারের মতো তারা ভারত ছেড়ে বাংলাদেশ অর্থাৎ তৎকালীন পূর্ব-পাকিস্তানে আসে। এরপর ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতার সময় বাংলাদেশ ছেড়ে পাকিস্তানে যায়।

sentbe-adকরাচির লাখ লাখ বাঙালিকে পাকিস্তান এখনও তাদের নাগরিক হিসেবে মর্যাদা দেয়নি। এই বঞ্চনার সঙ্গে যতটা না রয়েছে জাতিসত্তার সম্পর্ক, তার চেয়ে বেশি রয়েছে পাকিস্তানের জটিল ইতিহাসের।

এলাকায় পাকিস্তানি বেঙ্গলি অ্যাকশন কমিটি নামে বাঙালিদের একটি সংগঠনের সমন্বয়কারী হিসেবে কাজ করছেন জয়নুল আবেদিন। উচ্চাভিলাষী, তৎপর এই যুবক পাকিস্তানের রাজনীতিতেও ঢুকতে চান। তিনি বলেন, বাঙালিদের সিংহভাগই বয়সে তরুণ। এরা সব পাকিস্তানে তৃতীয় প্রজন্মের বাঙালি। কিন্তু পরিচয়পত্র না থাকার কারণে তাদের অনেকেই লেখাপড়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।

এক নারী জানান, পরিচয়পত্র নেই বলে কলেজে ভর্তি হতে পারেননি তিনি। তার মতে, আমি কি পাকিস্তানি নই? আমার জন্ম এখানে। আমার বাবা-মার জন্মও এখানে। তারপরও কেন তারা আমাদের বাঙালি বলে ডাকে। কেন পরিচয়পত্র দেয় না? ভাবলে খুবই কষ্ট লাগে, কিন্তু কী করার আছে আমাদের?

নাগরিকত্বের প্রশ্নে প্রতি বছর হাজার হাজার বাঙালি তরুণ তরুণী কলেজ থেকে ঝরে পড়ছে। ফলে ছোটোখাটো কাজে লেগে যাচ্ছে তারা। এরা হয় রাস্তার পাশে সবজি বেচছে, না হয় চায়ের দোকানে বা মুদি দোকানে কাজ করছে।

একজন অবাঙালি শ্রমিক যেখানে মাসে ১২ থেকে ১৩ হাজার রুপি মজুরি পায়, একজন বাঙালি পায় তার অর্ধেক। বাঙালি মেয়েরা ফ্যাক্টরি, বাসাবাড়িতে কাজ করে। তারা যে শুধু পয়সা কম পাচ্ছে তা নয়, যৌন নিপীড়নের শিকারও হচ্ছে।

সস্তা শ্রমের সুবিধার জন্য পাকিস্তানে কেউ চায় না বাঙালিরা দেশ ছেড়ে চলে যাক, কিন্তু বৈধতার ক্ষেত্রে কেউ তাদের জন্য কিছু করছেও না। বাঙালিরা নাগরিক নয় বলে তাদের ভোটাধিকারও নেই। ফলে রাজনীতিকরা তাদের নিয়ে মাথাও ঘামায় না। এর আগেও বেশ কয়েকবার বাঙালিদের নাগরিকত্ব দেয়ার আশ্বাস দিলেও তা পূরণ করেনি পাকিস্তান।