Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

ইউরোপের বাজার ধরে রেখেছে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক

yourope-marketনেদারল্যান্ডসের দ্য হেগে বাংলাদেশ দূতাবাসের উদ্যোগে ‘সাসটেইনিবিলিটি, ট্রান্সপারেন্সি অ্যান্ড ট্রান্সফরমেশন অব অ্যাপারেল ইন্ডাস্ট্রি অব বাংলাদেশ’ শীর্ষক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। ২২ অক্টোবর আয়োজিত এ সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ডেনিম এক্সপার্ট লিমিটেড বাংলাদেশের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোস্তাফিজ উদ্দিন।

মোস্তাফিজ উদ্দিন বলেন, শ্রমিকদের নিরাপত্তা, টেকসই অগ্রযাত্রা, কর্মপরিবেশ ও স্বচ্ছতার বিচারে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাত সবচেয়ে নিরাপদ। ইউরোপের বাজার ধরে রেখেছে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক। তৈরি পোশাক খাতে উৎপাদনমূল্য ও আমদানিমূল্যের তারতম্যকে ‘প্রাইস প্যারাডক্স’ বলে অভিহিত করে তিনি বলেন, বাংলাদেশ যেখানে বিগত নয় বছরে মজুরি বৃদ্ধি করেছে ২৬৩ শতাংশ, সেখানে আমেরিকা ও ইউরোপে তৈরি পোশাকের আমদানিমূল্য কমেছে যথাক্রমে ৬ দশমিক ৬৩ ও ৭ দশমিক ৩৩ শতাংশ। এই প্রাইস প্যারাডক্স যথাযথভাবে মূল্যায়িত না হলে টেকসই উন্নয়ন অর্জন সম্ভব নয়।

chardike-ad

সভায় ডাচ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, সিবিআই (উন্নয়নশীল দেশ থেকে আমদানি প্রবৃদ্ধিতে সহায়তাকারী ডাচ প্রতিষ্ঠান), মডিন্ট (পোশাক ও ফ্যাশন সামগ্রী উৎপাদনকারী, আমদানিকারক ডাচ ব্যবসায়ী সংগঠন), ইন্টারন্যাশনাল অ্যাপারেলস ফেডারেশন, ফ্যাশন হাউস, পোশাক উৎপাদনকারী ইন্ডাস্ট্রি ইত্যাদির প্রায় ৪০ জন প্রতিনিধি অংশগ্রহণ করেন।

বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাতে কর্মরত ৪ দশমিক ৪ মিলিয়ন শ্রমিকদের জীবনমানের উন্নয়ন এবং এই খাতে বাংলাদেশের অর্জিত সাফল্য ও কীভাবে এর গুণগত মান আরও উন্নয়ন করা সম্ভব তা তুলে ধরার জন্য এ আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়।

বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের জন্য ইউরোপ একটি বিশাল বাজার। প্রতিনিয়ত পরিবর্তনশীল ফ্যাশন জগতে ইউরোপিয়ান বাজারে বাংলাদেশের অবস্থান ধরে রাখাসহ আরও বিস্তার লাভের নিমিত্তে বাংলাদেশের পোশাক খাত যে সকল সমস্যা মোকাবেলা করছে যেমন উন্নত প্রযুক্তির প্রয়োগ, প্রায়োগিক প্রটোকল, আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতা, গবেষণা এবং উদ্ভাবনা ইত্যাদি ক্ষেত্রে পোশাক শিল্পের ধারাবাহিকতা রক্ষার্থে বাংলাদেশের প্রাপ্য সাহায্য সহযোগিতা নিয়ে এ সভায় আলোচনা হয়।

সভায় স্বাগত বক্তব্যে দেশটিতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত শেখ মুহম্মদ বেলাল বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের উন্নতিতে ডাচ ক্রেতা-ব্যবসায়ী ও ফ্যাশন হাউসের ধারাবাহিক সহযোগিতার জন্য এবং এই শিল্পের আরও উন্নয়নে অবদান রাখার জন্য ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন। তিনি মন্তব্য করেন, ডাচ তথা ইউরোপিয়ান ক্রেতাদের কার্যকর সহযোগিতামূলক সম্পর্ক বাংলাদেশের পোশাক খাতে বিদ্যমান সমস্যাসমূহ যথাযথ উপায়ে সমাধানে ভূমিকা রাখবে।

রানা প্লাজা দুর্ঘটনার প্রতি আলোকপাত করে রাষ্ট্রদূত বেলাল দুর্ঘটনা পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশে ব্যবসা চালিয়ে যাওয়া ও সহযোগিতা অব্যাহত রাখার জন্য ডাচ ব্যবসায়ীদের আহ্বানের জন্য প্রাক্তন ডাচ মন্ত্রী লিলিয়ান প্লুমেনের ভূমিকা কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করেন। তিনি মডিন্টের গঠনমূলক ও উদ্ভাবনাময়ী ভূমিকায় সন্তোষ প্রকাশ করে আশাবাদ ব্যক্ত করেন, বিভিন্ন ডাচ বিশ্ববিদ্যালয় ও প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে প্রাতিষ্ঠানিক সম্পর্ক, প্রযুক্তি বিনিময় ও নতুন ধারণা; যেমন ব্লকচেইন, অটোমেশন ইত্যাদি তুলে ধরার মাধ্যমে মডিন্ট বিজিএমইএ-এর দক্ষতা বৃদ্ধিতে এগিয়ে আসবে। বাংলাদেশ সরকার এই খাতের টেকসই উন্নয়ন ধরে রাখতে অত্যন্ত গুরুত্ব দিচ্ছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।

মোস্তাফিজের উদ্দিনের মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন শেষে প্রশ্নোত্তর পর্বে অংশগ্রহণকারীরা এই খাতের ভবিষ্যৎ ও এর আরও উন্নয়নবিষয়ক নানা ধরনের প্রশ্ন ও মতামত ব্যক্ত করেন। কোনো কোনো অংশগ্রহণকারী বাংলাদেশের পোশাক খাতে অ্যাকর্ডের আসন্ন সমাপ্তি বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। রাষ্ট্রদূত শেখ বেলাল ও মোস্তাফিজ উদ্দিন পোশাক খাতের ধারাবাহিক টেকসই উন্নয়ন ও স্বচ্ছতা ইত্যাদি নিশ্চিতে বাংলাদেশ সরকারের গৃহীত কার্যক্রম তুলে ধরেন এবং আশ্বাস প্রদান করেন, তৈরি পোশাক শিল্প ও বাংলাদেশ সরকার নিজ সক্ষমতায় এই শিল্পের টেকসই উন্নয়ন অব্যাহত রাখতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ।

অংশগ্রহণকারীরা বাংলাদেশ দূতাবাসের এ ধরনের আলোচনা আয়োজনের প্রশংসা করে উল্লেখ করেন, এর মাধ্যমে তারা বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাতের বর্তমান অবস্থা, চাহিদা ও এর ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা সম্পর্কে সম্যক ধারণা লাভে সক্ষম হয়েছেন।