jordan-bangladeshiজর্ডান থেকে অসহায় অবস্থায় গত ১৯ অক্টোবর দেশে ফিরেই আত্মহত্যার চেষ্টা করে মেয়েটি। বয়স ১৫ বছর হলেও পাসপোর্টে লেখা ছিল ২৭ বছর। ২০১৭ সালের ১২ জুন তাকে কাজের উদ্দেশ্যে জর্ডান পাঠায় তার দূর সম্পর্কের চাচা। কিন্তু, দেশে ফিরে এসেই সেই চাচার কাছে ফিরে যেতে অস্বীকৃতি জানায় মেয়েটি। ৩০ দিন পর সেই চাচার কাছেই তার ঠাঁই হলো।

সোমবার (১৯ নভেম্বর) বিকালে এপিবিএন কার্যালয়ে মেয়েটিকে সেই চাচার কাছেই বুঝিয়ে দেওয়া হয়। এসময় এপিবিএনের সিনিয়র এএসপি আবদুর রহমান, ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের একজন সহকারী পরিচালক ও একজন উপ-পরিচালক এবং ব্র্যাকের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

chardike-ad

বিমানবন্দরে অস্বাভাবিক আচরণ করে মেয়েটি, দেশে ফিরে চাচার কাছে যাবে না বলেও জানায় বিমানবন্দরের আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের কাছে। তার ভয়, চাচা তাকে আবার বিদেশ পাঠিয়ে দেবে। মেয়েটি তাদের জানায়, চাচার কাছে গেলে সে আবার বিদেশ পাঠাবে, আর টাকা চাইতে গেলে তাকে মারধর করবে। এয়ারপোর্ট আর্মড পুলিশের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে এসব জানা গেছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এয়ারপোর্ট আর্মড পুলিশ তাৎক্ষণিক বিষয়টি বিমানবন্দরের প্রবাসী কল্যাণ ডেস্কে জানায়। সেখান থেকে বিষয়টি জানানো হলে ব্র্যাকের তথ্য কর্মকর্তা আল আমিন নয়ন মেয়েটিকে নিয়ে যায় বিমানবন্দরের উলটো পাশে আশকোনার ব্র্যাক লার্নিং সেন্টারের সেফ হোমে।

আল আমিন নয়ন বলেন, ‘মেয়েটিকে আমরা এখানে নিয়ে আসি, কিন্তু সেদিন সে আত্মহত্যার চেষ্টা করে। প্রথমে তাকে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়, সেখানেও মেয়েটি দুইবার আত্মহত্যার চেষ্টা করে। পরদিন ২১ অক্টোবর আমরা মেয়েটিকে জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইন্সটিটিউটে ভর্তি করি। তখন থেকে এই ৩০ দিন ব্র্যাক অভিবাসন প্রোগ্রামের তত্ত্বাবাধানে ছিল মেয়েটি।’

মেয়েটির চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ভর্তির পর দিন মেডিক্যাল বোর্ড গঠন করে কর্তৃপক্ষ। বিদেশে থাকা অবস্থায় সে শারীরিক ও যৌন নির্যাতনের শিকার হয়। বিদেশে থাকা অবস্থায় চাচার কাছে টাকাও পাঠিয়েছিল। কিন্তু, দেশে ফেরত আসার পর চাচা তাকে নিতে চাননি। টাকা দিতেও অস্বীকৃতি জানিয়েছেন। এটাও তার জন্য বড় ধাক্কা। সব কিছু মিলিয়ে সে এসব ধাক্কা সামলাতে পারেনি। মেয়েটির অসুস্থতাকে ‘একুইট স্ট্রেস রিয়্যাকশন’ বলেই প্রাথমিকভাবে তারা ডায়াগনোসিস করেছেন। ধীরে ধীরে কিছুটা সুস্থ হয়েছে সে।

এর আগে ২১ অক্টোবর প্রবাসী কল্যাণ ডেস্কের সহকারী পরিচালক মো. তানভীর হোসেন মেয়েটির বিষয়ে বিস্তারিত জানিয়ে জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো (বিএমইটি) মহাপরিচালক বরাবর চিঠি দেন। সে চিঠির অনুলিপি প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ও সচিবের একান্ত সচিব এবং ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের মহাপরিচালক বরাবর দেওয়া হয়। সেদিনই ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের পরিচালক (প্রশাসন ও উন্নয়ন) মো. জহিরুল ইসলাম মেয়েটিকে তার পরিবার অথবা নিকট আত্মীয়রে কাছে হস্তান্তরের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও জগন্নাথপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে চিঠি দেন।

৩০ দিন ব্র্যাকের অধীনে হাসপাতালে চিকিৎসা শেষে কিছুটা সুস্থ হলে তাকে সোমবার (১৯ নভেম্বর) বিকালে তারা চাচার কাছে হস্তান্তর করা হয়। মেয়েটির বিষয়ে জগন্নাথপুরের ইউএনও তদারকি করবেন বলে জানিয়েছেন ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের তথ্য ও জনসংযোগ বিভাগের উপ-পরিচালক জাহিদ আনোয়ার।

জাহিদ আনোয়ার বলেন, ‘মেয়েটিকে ১ লাখ টাকা দেওয়া হবে। এই টাকার চেক ইউএনও’র মাধ্যমে মেয়েটির কাছে পৌঁছে দেওয়া হবে। এছাড়া মহিলা সংস্থার মাধ্যমে তাকে সেলাইয়ের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হবে।

ব্র্যাক মাইগ্রেশন প্রোগ্রামের প্রধান শরিফুল হাসান বলেন, ‘প্রথম দিকে আমরা মেয়েটিকে যেভাবে পেয়েছিলাম, এখন তার থেকে অনেকটা সুস্থ সে। চিকিৎসকরা বলছেন, সে এখন পুরোপুরি সুস্থ আছে।’

শরিফুল হাসান আরও বলেন, ‘এখানে একটা বিষয় দেখতে হবে। আমরা জানি, আমাদের মেয়েরা বিদেশে কাজে যাচ্ছে। কালকে যদি আবার একটি মেয়ে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে ফিরে আসে, তার জন্য আমাদের ম্যাকানিজমটা কী? আমাদের কৌশলটা কি হবে তার জন্য? আমাদের কি তা আছে? আমাদের তো তা নাই। কালকেও যদি একটা মেয়ে এভাবে ফিরে, একইভাবে আমাদের হাসপাতালে নিতে হবে, কোনও একটা কিছু করতে হবে। এভাবে আমরা কতদিন করবো? আমি মনে করি আমাদের একটি স্থায়ী কৌশল অবলম্বন করা উচিৎ সরকারের পক্ষ থেকে। একটা মেয়ে নিপীড়িত হয়ে দেশে ফিরে এলে কোথায় যাবে। কোথায় চিকিৎসা করাবে। খরচ কে দেবে, এটার একটা স্থায়ী ম্যাকানিজম থাকা উচিৎ। এটা ঠিক করতে না পারলে ভবিষ্যতে বিপদ বাড়বে। কারণ আমাদের টাকায় কতজনের জন্য করবো। আমরা এখন পর্যন্ত ১৪ জন পেয়েছি এরকম মানসিকভাবে বিপর্যস্ত। এই উদ্যোগ সরকারকেই নিতে হবে। এক্ষেত্রে আমরা সরকারকে সহযোগিতা করবো।’

সৌজন্যে- বাংলা ট্রিবিউন