Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

কিমের চীন সফর এবং মুনের প্রত্যাশা

kim-moon
ফাইল ছবি

চীনে ঝটিকা সফর করে এলেন উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উন। দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট মুন জায়ে ইন মনে করছেন, এ সফরের পর যুক্তরাষ্ট্র ও উত্তর কোরিয়ার দ্বিতীয় শীর্ষ সম্মেলন শিগগিরই অনুষ্ঠিত হবে। গত জুনে সিঙ্গাপুরে অনুষ্ঠিত প্রথম শীর্ষ সম্মেলনের চেয়ে দ্বিতীয় শীর্ষ সম্মেলনের অর্জন আরো সুনির্দিষ্ট হবে বলে তিনি আশা করেন। নতুন বছরের প্রারম্ভিক সংবাদ সম্মেলনে মুন বলেন, দক্ষিণ কোরিয়া ও সংলগ্ন এলাকায় মার্কিন সেনা উপস্থিতি ও উত্তর কোরিয়ার অপারমাণবিকীকরণ সংশ্লিষ্ট বিষয় নয়। তবে উত্তর কোরিয়াকে এ ব্যাপারে উৎসাহিত করার জন্য পরিপূরক কাজ যুক্তরাষ্ট্রকে করতে হবে। সংবাদ সম্মেলনে তিনি জাতীয় অর্থনীতির বিষয়ে তাঁর পরিকল্পনা ও প্রত্যাশার কথাও বলেন।

মুনের অভিমত, কিম জং উনের চীন সফর একটি সংকেত। এ সংকেতের সার কথা হলো, কিছুদিনের মধ্যেই উত্তর কোরিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে দ্বিতীয় শীর্ষ বৈঠক অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে।

chardike-ad

চীনে কিমের সফরটি ছিল ‘ওভারনাইট ভিজিট’, দিনে গেলেন, রাতে ফিরে এলেন। এটি তাঁর আরেকটি চকিত সফর তথা সারপ্রাইজ ভিজিট। এবারও ট্রেনে করেই গিয়েছিলেন তিনি, উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা সঙ্গে ছিলেন। প্রেসিডেন্ট শি চিনপিংয়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ এবং একটি ওষুধ কারখানা পরিদর্শন করেই যেমন ঝটিতে গেলেন, তেমনই ঝটিতে ফিরে এলেন। কিমের দেশে ফিরে আসার ঘণ্টাকয়েক পরেই সংবাদ সম্মেলনে বসেন দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট মুন জায়ে ইন।

এ সফর নিয়ে যথেষ্ট কথা বলেছেন মুন; উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে বাণিজ্য বিষয়েও কিছু কথা বলেছেন। তিনি মনে করেন, দ্বিতীয় শীর্ষ সম্মেলনে অপারমাণবিকীকরণের বিষয়ে উত্তর কোরিয়াকে ‘সংহত ও সুদূরপ্রসারী’ কিছু প্রস্তাব নিয়ে হাজির হতে হবে। পরবর্তী সম্মেলনে দুই পক্ষেরই উচিত ‘স্পষ্ট ও সুনির্দিষ্ট’ ধারাযুক্ত সমঝোতায় পৌঁছা।

উত্তর কোরিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিতীয় শীর্ষ সম্মেলন কোথায় অনুষ্ঠিত হবে তা এখনো ঠিক করা হয়নি। তবে কিছু ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। ভিয়েতনামের রাজধানী হ্যানয়ে হতে পারে। প্রথম শীর্ষ সম্মেলন আশাব্যঞ্জক নানা কথাবার্তার মধ্যে শেষ হয়েছিল, কিন্তু সুনির্দিষ্ট ঘোষণা ছিল না। বাধ্যবাধকতার কোনো ধারা বা সময়সীমা ছিল না। মাস কয়েকের মধ্যে ফলাফল যা দাঁড়াল তাকে ‘প্রায় স্থবির দশা’ বলা যায়।

উত্তর কোরিয়ার ওপর আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা জারি রয়েছে। এসব নিষেধাজ্ঞাকে যদি প্রত্যাহার করাতে হয়, তাহলে অপারমাণবিকীকরণের ব্যাপারে তাকে আরো বেশি কিছু করতে হবে। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রকে উত্তর কোরিয়ার ব্যবস্থার পরিপূরক ব্যবস্থা নিয়ে এগোতে হবে; সেগুলোকে উত্তর কোরিয়ার উদ্যোগের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ হতে হবে।

অপারমাণবিকীকরণ ইস্যুতে ক্ষেপণাস্ত্র উেক্ষপণ ও পারমাণবিক পরীক্ষা স্থগিত করা, ইয়ংবিয়নে পরমাণু কর্মসূচির মূল কেন্দ্র বন্ধ করা, আন্তর্জাতিক পরিদর্শকদের পরিদর্শনের অনুমোদন দেওয়া, আন্তর্মহাদেশীয় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ও ক্ষেপণাস্ত্র উৎপাদন কেন্দ্র নিষ্ক্রিয় করা—এসব থাকা উচিত বলে মুন মনে করেন।

মুন বলেন, চেয়ারম্যান কিম জানেন, অপারমাণবিকীকরণ ও যুদ্ধ সমাপ্তিবিষয়ক চুক্তি এবং দক্ষিণ কোরিয়ায় মার্কিন সেনা উপস্থিতি আলাদা বিষয়। মার্কিন সেনা উপস্থিতির সঙ্গে কোরীয় উপদ্বীপের অপারমাণবিকীকরণ সম্পর্কিত নয়। যুক্তরাষ্ট্র ও কোরিয়া প্রজাতন্ত্রের সমঝোতার সূত্রেই মার্কিন সেনারা রয়েছে। এটা উত্তর কোরিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে সংলাপে বাধা সৃষ্টি করবে না।

গুয়াম ও অন্যান্য স্থানে মার্কিন সামরিক স্থাপনা রয়েছে; এগুলো উত্তর-পূর্ব এশিয়ার শান্তি ও স্থিতিশীলতার জন্যই। তবে এসব প্রসঙ্গ যুক্তরাষ্ট্র ও উত্তর কোরিয়ার সংলাপের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নয়। দ্বিতীয় শীর্ষ সম্মেলনে সত্যিকার অর্থেই অগ্রগতি হবে বলে আশাবাদী মুন। কারণ এখন যুক্তরাষ্ট্র-উত্তর কোরিয়া সংলাপ পরিচালনায় রয়েছেন শীর্ষ নেতারা; কিম জং উন ও ডোনাল্ড ট্রাম্প এর উদ্যোক্তা। আগের বিভিন্ন আলোচনার নেতৃত্বে ছিলেন ভাইস মিনিস্টার পর্যায়ের কর্মকর্তারা।

ডিসেম্বরে দক্ষিণ কোরিয়ায় যাওয়ার কথা ছিল কিমের, তবে যাওয়া হয়নি। মুন বলেন, এটা একটা চ্যালেঞ্জের বিষয়—উত্তর কোরিয়ার নেতারা কখনো সিউল সফর করেননি। তবে পণ্ডিত মহল বলছে, উত্তরের ওপর বৈশ্বিক অবরোধ রয়েছে, এ পরিপ্রেক্ষিতে দুই নেতার মধ্যে আলোচনার তেমন কিছু ছিল না। তিনি আশা করেন, যুক্তরাষ্ট্র-উত্তর কোরিয়া দ্বিতীয় শীর্ষ বৈঠকের পর দুই কোরিয়ার মধ্যে আরেকটি বৈঠক হবে।

উত্তর কোরিয়ায় দক্ষিণ কোরিয়ার সম্ভাব্য বিনিয়োগ প্রসঙ্গে মুন বলেন, এটি নতুন একটি ক্ষেত্র। এটি অনন্য সুযোগ। কবে এ সুযোগের সদ্ব্যবহার করা যাবে তা বলা এখনই সম্ভব নয়, তবে এটা আশীর্বাদস্বরূপ। উত্তর কোরিয়ায় দক্ষিণ কোরিয়ার একটি শিল্পাঞ্চল ও একটি পর্যটন কমপ্লেক্স ফের খোলার আশাবাদ ব্যক্ত করলেও অবরোধের কারণে তা এখনই করা যাচ্ছে না বলে জানান তিনি। তবে প্রস্তুতিমূলক কাজ করে রাখা হচ্ছে, যাতে অবরোধ প্রত্যাহার হওয়া মাত্র কাজ শুরু করা যায়।

লেখক: জাতিসত্তায় ইংরেজ; সিউলে বাস করেন; সাংবাদিক ও লেখক
সূত্র: দি এশিয়া টাইমস (অনলাইন)
ভাষান্তর: সাইফুর রহমান তারিক