Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

ভারতে খ্রিস্টানদের হিন্দু বানানোর অভিযোগ

india-newsভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য ত্রিপুরাতে বিশ্ব হিন্দু পরিষদসহ বিভিন্ন হিন্দুত্ববাদী সংগঠনের উদ্যোগে অন্তত ৯৬ জন খ্রিস্টান নারী-পুরুষকে ধর্মান্তরিত করে হিন্দু বানানো হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। গত রোববার ওই রাজ্যের কৈলাশহরের কাছে একটি চা-বাগান এলাকায় ধর্মান্তরিত করার এই অনুষ্ঠান আয়োজিত হয়েছে, যাকে হিন্দুত্ববাদীরা ‘ঘর ওয়াপসি’ বা ‘ঘরে ফেরানোর অভিযান’ বলে বর্ণনা করছেন।

ত্রিপুরায় বিরোধী সিপিএম অবশ্য বলছে, বছর-খানেক আগে রাজ্যে বিজেপি প্রথমবারের মতো ক্ষমতায় আসার পর থেকে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার ঘটনা অনেকে বেড়ে গেছে, আর এই ধর্মান্তরিত করানোর অভিযানও তারই অংশ।

chardike-ad

ত্রিপুরার রাজধানী আগরতলা থেকে প্রায় দেড় শ’ কিলোমিটার দূরে উনকোটিতে রবিবার আয়োজন করা হয়েছিল ওই তথাকথিত ‘ঘর ওয়াপসি’ অভিযান।

সেখানে মূলত বিহার-ঝাড়খন্ড থেকে আসা চা-বাগানের শ্রমিক ২৩টি আদিবাসী পরিবারের প্রায় একশোর কাছাকাছি মানুষজনকে ধর্মীয় যাগযজ্ঞ করে প্রকাশ্য অনুষ্ঠানের মাধ্যমে খ্রিষ্ট ধর্ম থেকে হিন্দু ধর্মে ধর্মান্তরিত করা হয়।

গোটা অনুষ্ঠানটির আয়োজন করে হিন্দু জাগরণ মঞ্চ ও বিশ্ব হিন্দু পরিষদ বা ভিএইচপি। দিল্লিতে ভিএইচপির কেন্দ্রীয় নেতা ও মুখপাত্র ড: সুরেন্দ্র জৈন বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন, এই মানুষজন সম্পূর্ণ স্বেচ্ছায় হিন্দু ধর্মে ফিরে এসেছেন।

তার কথায়, “সারা বিশ্ব জুড়েই এখন ‘ব্যাক টু দ্য রুটস’ বা শেকড়ে ফেরার আন্দোলন চলছে। একদিন যারা হিন্দুধর্ম ছেড়ে অন্য কোথাও চলে গিয়েছিলেন তাদের মধ্যেও হতাশা দেখা দিয়েছে, ফলে তারাও নিজেদের শেকড়ে ফিরতে চাইছেন। এর জন্য আমাদের কোনও লোভও দেখাতে হয়নি, জোরও করতে হয়নি।”

“কারণ মানুষকে হয়তো পেছন থেকে ধাক্কা মেরে কুয়োতে ফেলে দেওয়া যায় – কিন্তু সেই কুয়ো থেকে তারা নিজেরাই হাঁসফাঁস করে একটা সময় উঠে আসতে চান, তার জন্য কোনও জোর খাটাতে হয় না!” বলছিলেন ড: জৈন।

তবে ত্রিপুরায় বহু বছর ক্ষমতায় থাকা বামপন্থীরা মনে করছেন, গত মার্চে বিজেপি রাজ্যে সরকার গঠন করার পর থেকেই ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার ঘটনা অনেক বেড়ে গেছে।

ত্রিপুরার সিপিআইএম এমপি জিতেন্দ্র চৌধুরী বিবিসিকে বলছিলেন, আসলে রাজ্যের বিজেপি সরকারের মদতেই এই সব কর্মকাণ্ড চালাচ্ছে হিন্দু জাগরণ মঞ্চ বা ভিএইচপির মতো ভুঁইফোড় নানা সংগঠন।

চৌধুরীর কথায়, “বিজেপি ক্ষমতায় আসার পর থেকেই হিন্দু জাগরণ, ভিএইচপি বা বজরং দলের মতো সংগঠনগুলো এখানে ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে উঠেছে আর তাদের কর্মীরা মাইনরিটিদের ওপর লাগাতার আক্রমণ চালাচ্ছে।”

“মুসলিমরা তো আক্রান্ত হচ্ছেনই, তার সঙ্গে যে খ্রিষ্টানরা বহু বহু বছর ধরে বংশ পরম্পরায় সেই ধর্ম পালন করে আসছেন তাদের ওপরও হামলা চলছে। সোজা কথায়, একটা অসহিষ্ণুতার পরিবেশ বিরাজ করছে যেখানে পরিষ্কার বার্তা দেওয়া হচ্ছে যে অন্য কোনো ধর্ম বা সম্প্রদায় চলবে না – ত্রিপুরায় থাকতে গেলে হিন্দুত্বের লাইনেই তোমাকে থাকতে হবে।”

ত্রিপুরার বিজেপি সরকারের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক যে বন্ধুত্বপূর্ণ, তা অবশ্য ভিএইচপিও অস্বীকার করছে না। কিন্তু তাদের বক্তব্য ‘ঘর ওয়াপসির’ সঙ্গে রাজনীতির কোননো সম্পর্ক নেই, কারণ মানুষ “হিন্দু ধর্মে ফিরতে চাইছেন” সম্পূর্ণ নিজের ইচ্ছায়, নিজেদের “ভুল বুঝতে পেরে।” এমপি জিতেন্দ্র চৌধুরী অবশ্য বলছিলেন, রাজ্যে বিজেপির অপশাসন চরম আকার নিয়েছে বলেই খ্রিস্টান বা মুসলিমরা ভীষণ ভয়ে আছেন, তাদের জানমালও বিপন্ন।

“বিজেপির গুন্ডাবাহিনী এখানে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের একটা প্রচণ্ড আতঙ্কের মধ্যে রেখেছে। তাদের ধর্মীয় বিশ্বাস বলুন, অস্তিত্ব বলুন বা বাড়িঘর, সম্পদ – সবই আজ প্রবল হুমকির মুখে”, বলছিলেন তিনি।

দিন-কয়েক আগেই দিল্লিতে এক অনুষ্ঠানে ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও বিজেপি নেতা রাজনাথ সিং বলেছিলেন, গণহারে ধর্মান্তরিত করার জন্য দেশের নানা প্রান্তে যে সব অভিযান চলছে তাতে তারা উদ্বিগ্ন ও বিষয়টি নিয়ে জাতীয় স্তরে বিতর্কও প্রয়োজন। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে, তাদের ‘বন্ধু’ সংগঠনগুলো সেই উদ্বেগের পরোয়া না-করে ইতিমধ্যেই ত্রিপুরায় জোর কদমে ‘ঘর ওয়াপসি’ শুরু করে দিয়েছে।

সূত্র: বিবিসি