Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

আম উৎপাদনে শীর্ষ দশে বাংলাদেশ

সিউল, ২৮ ফেব্রুয়ারী, ২০১৪:

বসন্তের ভরা মৌসুমে মুকুলে ভরে উঠেছে আমের বাগান। দিন কয়েক পরই আসবে গুঁটি। তার পরই আকার পাবে সুস্বাদু আম। স্বাদ দিয়ে বিশ্ববাসীকে জয় করা এ আম এবার উৎপাদনেও নজর কাড়ছে। সারা বিশ্বে মোট আম উৎপাদনের অর্ধেকের বেশি হচ্ছে দক্ষিণ এশিয়ায়। ফলটির উৎপাদনে শীর্ষ দশে অবস্থান করছে বাংলাদেশও। প্রায় সাড়ে নয় লাখ টন আম উৎপাদনের মাধ্যমে এ অর্জন সম্ভব হয়েছে বলে কৃষি ও খাদ্য সংস্থা (এফএও) সূত্রে জানা গেছে।

chardike-ad

1_33446এফএওর চলতি মাসে প্রকাশিত আম উৎপাদনের সর্বশেষ তথ্যমতে, বর্তমানে পৃথিবীর প্রায় সব উষ্ণ জলবায়ুপ্রধান অঞ্চলে আমের আবাদ হচ্ছে। তবে বিশ্বের সিংহভাগ আম উৎপাদন হচ্ছে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোয়। পাশের দেশ ভারত রয়েছে শীর্ষে। ২০১২-১৩ মৌসুমে দেশটিতে আম উৎপাদনের পরিমাণ ১ কোটি ৫৫ লাখ ৫০ হাজার টন। পরের অবস্থানগুলোয় রয়েছে যথাক্রমে চীন ৪৪ লাখ, কেনিয়া ২৭ লাখ ৮১ হাজার, থাইল্যান্ড ২৬ লাখ ৫০ হাজার, ইন্দোনেশিয়া ২৩ লাখ ৭৬ হাজার, পাকিস্তান ১৯ লাখ ৫০ হাজার, মেক্সিকো ১৭ লাখ ৬০ হাজার ও ব্রাজিল ১১ লাখ ৭৫ হাজার টন উৎপাদন নিয়ে। নবম স্থানে থাকা বাংলাদেশের পর রয়েছে নাইজেরিয়ার উৎপাদন ৮ লাখ ৬০ হাজার টন।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আমের বিভিন্ন জাত অবমুক্ত করা, সম্ভাবনাময় অঞ্চলগুলোয় আবাদ বাড়ানো ও প্রক্রিয়াজাত শিল্প সম্প্রসারণ করা গেলে উৎপাদন আরো বাড়ানো সম্ভব। মূল্যসংযোজনের মাধ্যমে মুনাফা বাড়াতে হেক্টরপ্রতি ফলনও বাড়াতে হবে। পাশাপাশি মুকুল থেকে শুরু করে ফল পাড়ার আগ পর্যন্ত বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির ব্যবহার জনপ্রিয় করতে হবে। আমের চারা উৎপাদন, বালাই ব্যবস্থাপনা এবং বিপণন ও সংরক্ষণ ব্যবস্থা শক্তিশালী করা গেলে বর্তমানে আবাদকৃত জমিতেই আরো বেশি উৎপাদন সম্ভব।

এ বিষয়ে উদ্যানতত্ত্ববিদ ও শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ড. এএম ফারুক বণিক বার্তাকে বলেন, আবহাওয়া উপযোগী আমের নতুন জাত উদ্ভাবন এবং পাহাড়ি অঞ্চলে আমের আবাদ করতে হবে। এখন পাহাড়ি অঞ্চলের উপযোগী একটিমাত্র জাত আম্রপালি রয়েছে। নতুন নতুন জাত এনে ফলন বাড়াতে হবে। মূল্যসংযোজনের ক্ষেত্রে পাল্প মেকিং শিল্পকে আরো বিকশিত হওয়ার সুযোগ দিতে হবে। উৎপাদন ও সংরক্ষণ প্রক্রিয়ায় সচেতনতাও বাড়াতে হবে। সব মিলিয়ে সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি খাত এগিয়ে এলে উৎপাদন বাড়ার সঙ্গে কর্মসংস্থান ও অর্থনৈতিক সুফল আসবে।

উৎপাদন ও ভোগ: বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্যমতে, ২০০৬-০৭ সালে দেশে আমের উৎপাদন ছিল ৭ লাখ ৮১ হাজার ও ২০০৭-০৮ অর্থবছরে ৮ লাখ ৩ হাজার টন। পরের অর্থবছরে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৮ লাখ ২৮ হাজার টন। ফলন বাড়ার ধারাবাহিকতায় ২০০৯-১০ অর্থবছরে উৎপাদন হয় ৮ লাখ ৪২ হাজার আর ২০১০-১১তে ৮ লাখ ৮৯ হাজার টন। ২০১১-১২ অর্থবছরে তা আরো বেড়ে প্রায় সাড়ে ৯ লাখ টনে উন্নীত হয়।

জানা গেছে, দেশে গড়ে ৩২ হাজার একর জমিতে আমের আবাদ হলেও সবচেয়ে বেশি হচ্ছে বৃহত্তর রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায়। তবে সব জেলায় আবাদ বাড়াতে বিভিন্ন জাত উদ্ভাবনে গবেষণা চলছে। এমনকি উপকূলীয় লবণাক্ত ভূমিতেও এখন মিষ্টি আমের আবাদ শুরু হয়েছে। অন্যদিকে বারোমাসি আম উৎপাদন নিশ্চিত করতে কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট গবেষণা করছে। এরই মধ্যে বারি আম-১১ নামের একটি জাত অবমুক্তের চেষ্টা করছে প্রতিষ্ঠানটি। দেশে শতাধিক প্রজাতির আম রয়েছে। ৪৫টির বেশি প্রজাতির আম টিকে আছে। এর মধ্যে ল্যাংড়া, ফজলি, ক্ষীরসাপাত, হিমসাগর, লক্ষ্মণভোগ, মোহনভোগ, গোপালভোগ ও বোম্বাই রয়েছে জনপ্রিয়তার শীর্ষে।

এদিকে জনসংখ্যা বাড়ার কারণে কমছে মাথাপিছু ভোগ। বর্তমানে বাংলাদেশের মাথাপিছু আম উৎপাদনের পরিমাণ দেড় কেজি; যা পাশের দেশগুলোর তুলনায় অনেক কম। ভারত ও পাকিস্তানে এ হার যথাক্রমে ১১ ও ৬ কেজি। তানজানিয়ায় মাথাপিছু উৎপাদন ৭ কেজি, সুদানে সাড়ে ৭, ফিলিপাইনে ৬ ও জায়ারে ৫ কেজি।

প্রক্রিয়াজাত শিল্পে আম: দুই দশক ধরেই দেশে কৃষি প্রক্রিয়াজাত শিল্পের বিকাশ ঘটছে। এ শিল্প বিকাশে যেসব ফসল বা ফল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে, তার মধ্যে আম রয়েছে বিশেষ অবস্থানে। এ ফলের ওপর নির্ভর করেই গড়ে উঠেছে জুস শিল্প। দেশের চাহিদা মিটিয়ে আমের জুস এখন রফতানি হচ্ছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে। বর্তমানে দেশ ও রফতানি মিলে জুসের বাজার দাঁড়িয়েছে প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকার। জুসের বাজারে প্রাণ-আরএফএল, আকিজ, একমি, সজীব, ট্রান্সকম ও পারটেক্স গ্রুপ এগিয়ে রয়েছে।

বাংলাদেশের জুস রফতানি হচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি দেশ— আরব আমিরাত, আবুধাবি, দুবাই, সৌদি আরব, কুয়েত, কাতার, বাহরাইন, ওমান ছাড়াও ইউরোপিয়ান ইউনিয়নভুক্ত দেশ ইতালি, জার্মানি ও যুক্তরাজ্যের বাজারে। ২০১১-১২ অর্থবছরে রফতানি হয় ৮০ হাজার ৮৬ টন। এ থেকে আয় হয়েছে ৮ কোটি ৬৯ লাখ ১০ হাজার ডলার।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ এগ্রো প্রসেসর অ্যাসোসিয়েশনের (বাপা) সাধারণ সম্পাদক রাজু আহমেদ বলেন, অর্থনীতিতে হাজার কোটি টাকার মূল্যসংযোজন ছাড়াও আমের সঙ্গে জড়িত অর্ধ লক্ষ মানুষের কর্মসংস্থান।

প্রসঙ্গত, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় আমের প্রচলন হয় খ্রিস্ট-পূর্ব পঞ্চম-চতুর্থ শতাব্দী থেকে এবং আবাদ শুরু হয় আরো পরে খ্রিস্টাব্দ দশম শতাব্দীতে। প্রখ্যাত চীনা পর্যটক হিউয়েন সাং ৬৩২ থেকে ৬৪৫ সালের মধ্যে ভ্রমণে এসে এ অঞ্চলের আমকে বিশ্ববাসীর কাছে পরিচিত করে তোলেন। মোগল সম্রাট আকবর (১৫৫৬-১৬০৫) এক লাখ আমের চারা রোপণ করে এ উপমহাদেশে প্রথম একটি উন্নত জাতের আমবাগান সৃষ্টি করেন। সূত্রঃবণিকবার্তা।