শনিবার । ডিসেম্বর ২০, ২০২৫
বাংলা টেলিগ্রাফ ডেস্ক প্রবাস ৯ মার্চ ২০১৪, ১২:২১ অপরাহ্ন
শেয়ার

বাহরাইনে কর্মহীন হয়ে পড়ছেন বাংলাদেশী শ্রমিকরা


সিউল, ৯ মার্চ, ২০১৩:

লক্ষ্মীপুরের বাসিন্দা মো. রেজাউল করিম। চার লাখ টাকা খরচ করে বাহরাইনে যান ২০১২ সালে। তিন মাস বেকার থাকার পর কাজ পান একটি রেস্তোরাঁয়। তাও দৈনিক মজুরিতে। সেখানে দুই মাস কাজ করার পর আবারো বেকার হয়ে পড়েন। পরে কাজ নেন একটা পেপার মিলে, সামান্য বেতনে। এভাবে টিকতে না পেরে কয়েক দিন হলো দেশে ফিরে এসেছেন রেজাউল। ৪ লাখ টাকা খরচ করে বাহরাইনে গেলেও দেশে পাঠাতে পেরেছেন সাকল্যে ৫০ হাজার টাকা।

url_34331বেশ কিছুদিন বেকার থাকার পর সম্প্রতি দেশে ফিরতে বাধ্য হয়েছেন নোয়াখালীর বাসিন্দা জসিম উদ্দিনও। তিন বছর দেশটিতে থাকলেও বেশ কিছুদিন কর্মহীন অবস্থায় কাটাতে হয়েছে তাকে।
রেজাউল কিংবা জসিম উদ্দিনই শুধু নয়, বাহরাইনে কর্মহীন হয়ে পড়ছেন আরো অনেক বাংলাদেশী। তাদের মধ্যে কেউ কেউ দেশে ফিরে আসছেন। যারা থেকে যাচ্ছেন, তাদের লিপ্ত হতে হচ্ছে কর্ম খোঁজার কঠিন এক সংগ্রামে।

বাংলাদেশের প্রধান বৈদেশিক শ্রমবাজার সৌদি আরবে জনশক্তি রফতানি কার্যত বন্ধ থাকায় শ্রমিকরা পাড়ি জমাচ্ছেন বাহরাইনে। জনশক্তি রফতানিকারকরা বিভিন্ন কাজের কথা বলে দেশটিতে শ্রমিক পাঠালেও, সেখানে গিয়ে কাঙ্ক্ষিত কাজ মিলছে না। নির্মাণ খাত ছাড়া অন্য পেশায় দেশটিতে কাজের সুযোগও সীমিত। বাহরাইনে বাংলাদেশ দূতাবাসের তথ্যমতে, দেশটিতে বর্তমানে কর্মরত আছেন প্রায় ৯০ হাজার বাংলাদেশী শ্রমিক।

জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) তথ্যমতে, ২০১১ সালে বাহরাইনে শ্রমিক রফতানি হয় ১৩ হাজার ৯৯৬ জন। পরের বছর তা বেড়ে দাঁড়ায় ২১ হাজার ৭৭৭ জনে। ২০১৩ সালে দেশটিতে পাড়ি জমান ২৫ হাজার ১৫৫ জন শ্রমিক। আর চলতি বছরের প্রথম দুই মাসে বাহরাইনে গেছেন ৩ হাজার ৯২ জন বাংলাদেশী শ্রমিক।

জানতে চাইলে বিএমইটির মহাপরিচালক বেগম শামছুন নাহার বণিক বার্তাকে বলেন, ‘বাংলাদেশী শ্রমিকরা বাহরাইনে কর্মহীন কিংবা মানবেতর জীবনযাপন করছেন, এমন কোনো তথ্য আমাদের কাছে নেই। কোনো শ্রমিক যদি দেশটিতে কর্মহীন থাকেন বা কোনো ধরনের বিপদে পড়েন, তাহলে তারা যেন দূতাবাসে যোগাযোগ করেন।’

বাহরাইনে শিয়া-সুন্নি বিবাদ সেখানকার বাংলাদেশী শ্রমিকদের জন্য পরিস্থিতি আরো খারাপ করে তুলেছে। সম্প্রতি বাহরাইন থেকে ফিরে আসা নোয়াখালীর জসিম উদ্দিন বলেন, এ বিবাদের কারণে শিয়ারা অনেক সময় প্রবাসী শ্রমিকদের বাসায় আগুন ধরিয়ে দেয়। এছাড়া সেখানে কোনো কাজও সেভাবে নেই। যারা নির্মাণ শ্রমিকের কাজ করেন, তারা কিছুটা রোজগার করতে পারেন। কিন্তু এটা করতে গিয়েও অনেকে অসুস্থ হয়ে পড়েন।

যেসব শ্রমিক ব্যক্তিগতভাবে বা পরিচিতদের মাধ্যমে ভিসা নিয়ে বাহরাইনে যান, তারাই মূলত বেকার থাকেন বলে জানান জনশক্তি রফতানিকারকদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব রিক্রুটিং এজেন্সিজের (বায়রা) প্রেসিডেন্ট মো. শাহজালাল মজুমদার। তিনি বলেন, রিক্রুটিং এজেন্সিগুলো সাধারণত চাহিদার ভিত্তিতে বিদেশে শ্রমিক পাঠিয়ে থাকে। এ কারণে তারা বেকার থাকার কথা নয়। কেউ যদি বেকার থাকে, তাহলে আইন অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট এজেন্সি ক্ষতিপূরণ দিতে বাধ্য। সূত্রঃ বণিকবার্তা।